সমাজমাধ্যম বা বিভিন্ন ধরনের খবরের ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে অদ্ভুত এক ভিডিয়ো কখনও না কখনও চোখে পড়েছে দর্শকের। লাল রঙের টপ ও কালো প্যান্ট পরা এক তরুণী চার হাত-পায়ে ভর দিয়ে হেঁটে চলেছেন। ঠিক যেন চারপেয়ে কোনও পশু।
ভিডিয়োগুলি দেখে প্রথমে ভুয়ো বলে মনে হতে পারে। এমনও মনে হতে পারে যে, তরুণী মজা করে বা হাঁটা বিকৃত করে নজর কাড়তে চেয়েছেন। ফেসবুক, টুইটার এবং ইউটিউবে একাধিক পোস্টে তাঁর এই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে। সত্যিই কি বাস্তবে এমন কোনও তরুণীর অস্তিত্ব রয়েছে? এর উত্তর, হ্যাঁ। একাধিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে তরুণীর পরিচয়।
চার হাত-পায়ে ভর দিয়ে হাঁটা বা ঘোড়ার মতো দৌড়োনোর কৌশল আয়ত্ত করা এই তরুণী নরওয়ের বাসিন্দা। নাম আয়লা কার্স্টিন। মাঠে চার হাত-পা দিয়ে ঘোরাঘুরি এবং বেড়া ডিঙিয়ে ঘোড়ার মতো লাফিয়ে লাফিয়ে চলার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে তাঁর।
তিনি নিজেই তাঁর ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে ঘোড়ার মতো দৌড়োনো এবং লাফিয়ে লাফিয়ে চলার ভিডিয়ো শেয়ার করতেন। তরুণীর দক্ষতা প্রথম বার এক জার্মান এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটারে) নজরে আসে। পরে বিশ্ব জুড়ে তা ভাইরাল হয়ে যায়।
কার্স্টিন তাঁর এই অদ্ভুত শখ সম্পর্কে কখনও কোনও ব্যাখ্যা দিয়ে পোস্ট করেননি। অনেকেই তাঁকে জার্মান ভাষায় ‘ফেরডেমেডশেন’ অর্থাৎ ‘হর্স গার্ল’ বলে সম্বোধন করেন। কার্স্টিনের ইনস্টাগ্রাম পেজে তাঁর সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য ছিল না, তবে তাঁর ঘোড়ার মতো হাঁটাচলা বা দৌড়ের প্রচুর ভিডিয়ো ছিল। সেই ভঙ্গি প্রায় নিখুঁত।
তাঁকে নিয়ে ২০১৯ সালে ‘ইনসাইডার’ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘‘এক জন নরওয়েজীয় মহিলার ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে কারণ তিনি ঘোড়ার মতো দৌড়োতে এবং লাফাতে পারদর্শী।’’ তিনি হাত ও পায়ের সমন্বয়ে এমন ভাবে দৌড়োন, যেন মনে হয় সত্যিকারের ঘোড়া দৌড়োচ্ছে। অনেকেই বিস্মিত হয়ে তাঁর ভারসাম্য ও গতি দেখে মন্তব্য করেছেন যে এটি এক ধরনের শারীরিক কসরত।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, কার্স্টিনের একটি অস্বাভাবিক দক্ষতা আছে। ঘোড়ার মতো দৌড়োনো এবং লাফানো ছাড়াও সামনে বাধা এলে তিনি ঘোড়ার মতো চার পায়ে লাফ দিয়ে তা অতিক্রম করতেও পারেন। কার্স্টিন ‘ইনসাইডার’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন তাঁর অদ্ভুত এক ইচ্ছার কথাও।
কার্স্টিন বলেন, ‘‘আমি যখন ৪ বছরের ছিলাম তখন আমি কুকুর প্রচণ্ড পছন্দ করতাম। নিজেও কুকুর হতে চেয়েছিলাম। পরে আমার পছন্দের পরিবর্তন হয়। পছন্দের প্রাণীর হাঁটাচলা ও দৌড়োনোর ভঙ্গি আয়ত্ত করেছি।’’ কৈশোর থেকেই ঘোড়ার চলাফেরা, ভঙ্গি ও গতি লক্ষ করতেন কার্স্টিন। তা নকল করার চেষ্টা করতেন। ধীরে ধীরে তিনি শরীরকে এমন ভাবে তৈরি করেন যাতে চার হাত-পায়ে ভর দিয়ে চলাফেরা করা তাঁর কাছে স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।
কার্স্টিন নিয়মিত ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং করেন যাতে তাঁর শরীর এই ভাবে চলার জন্য নমনীয় থাকে। এই ভঙ্গিতে চলা শরীরের ওপর বিশেষ চাপ ফেলে। বিশেষত কব্জি, কাঁধ ও পায়ের পেশিতে। তবুও বছরের পর বছর অনুশীলনের মাধ্যমে এটিকে স্বাভাবিক করে তুলেছেন তিনি। তাঁর গতিবিধি এতটাই নিখুঁত যে দূর থেকে দেখলে মনে হয় সত্যিই কোনও ঘোড়া দৌড়োচ্ছে।
তবে ২০২০ সালে তিনি তাঁর ভিডিয়োগুলি শেষ বারের মতো পোস্ট করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁর এই ক্ষমতাকে কুর্নিশ করে হাজার হাজার মন্তব্য জমা পড়েছিল ভিডিয়োয়। বহু মানুষ তাঁর দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাসের প্রশংসা করেছিলেন। অনেকেই জানিয়েছিলেন, এটি শুধু অভিনব দক্ষতা নয়, বরং শরীরের নিয়ন্ত্রণ ও মনোযোগের এক অনন্য উদাহরণ।
তাঁর ভিডিয়ো দেখে যেমন প্রচুর মানুষ তাঁকে উৎসাহ জুগিয়েছিলেন, তেমনই বহু কটু মন্তব্যও ধেয়ে এসেছিল তাঁর পোস্টগুলিতে। কিছু মানুষ মজা করে তাঁকে ‘পাগল’, ‘অদ্ভুত’, ‘খাপছাড়া’ বলে মন্তব্য করতেও ছাড়েননি। তাতেই কিছুটা দমে গিয়েছিলেন কার্স্টিন। সমালোচনা সহ্য করতে না পেরে বহু বারই তিনি সমাজমাধ্যমে এসে তাঁর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শ চাইতেন।
তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন “আমি জানি আমি আলাদা। কিন্তু আমি যা ভালবাসি, তা করতে লজ্জা পাই না। এটা আমার স্বাধীনতার প্রকাশ। ঘোড়ারা আমায় শেখায় স্বাধীনতার অর্থ। আমি শুধু সেটাই আমার শরীর দিয়ে প্রকাশ করতে চেয়েছি।”
বর্তমানে কার্স্টিন সমাজমাধ্যম থেকে সরে গিয়ে কিছুটা গোপন জীবন যাপন করছেন। ২০২০ সালের পর থেকে তিনি নিয়মিত ভিডিয়ো পোস্ট করেন না। সমালোচনা সইতে না পেরে তিনি তাঁর ইনস্টাগ্রামের অ্যাকাউন্টটিও বন্ধ করে দিয়েছেন। যদিও তাঁর পুরনো ভিডিয়ো এখনও ভাইরাল হয়।
তবে শুধু কার্স্টিনেরই এমন প্রতিভা রয়েছে ভাবলে ভুল হবে। তাঁর মতো আরও এক জন রয়েছেন যিনি চতুষ্পদী প্রাণীর মতো হাঁটাচলায় উৎসাহী। তিনি আনা স্যালান্ডার। ১০ বছর বয়সে ঘোড়ার মতো দৌড়োনো শুরু করেছিলেন তিনি। এমনকি তাঁর দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য টিভিতেও উপস্থিত হয়েছিলেন। ইউটিউবে খুঁজলে তাঁর ভিডিয়ো পাওয়া যায় এখনও।