Jonbeel Mela

ডিজিটাল যুগেও চালু বিনিময় প্রথা, অসমের এ মেলায় তিন দিন ধরে চলে পণ্যের বিনিময়ে বিকিকিনি

এ মেলায় কোনও কিছু কিনতে বা বিক্রি করতে হলে ক্রেতা এবং বিক্রেতা দুইয়েরই হাতে থাকে কোনও না কোনও পণ্য। সেগুলি অদলবদল করে মনের মতো জিনিস নিয়ে ঘরে ফেরেন ক্রেতা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:০৫
Share:
০১ ১৭

প্রতি বছরের গোড়ায় অসমের ঝিমন্ত শহরটি যেন জেগে ওঠে। এক প্রাচীন মেলাকে ঘিরে শুরু হয় ব্যস্ততা। তিন দিন ধরে সে মেলায় চলে পুজোপাঠ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং অবশ্যই হরেক রকম জিনিসের কেনাবেচা।

০২ ১৭

তবে এই ডিজিটাল যুগেও সেখানে বিক্রিবাটায় টাকাপয়সার লেনদেন হয় না। বদলে চলে পণ্যের বিনিময়ে পণ্য কেনাবেচা।

Advertisement
০৩ ১৭

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি! অসমের মোরিগাঁও জেলায় জোনবিল মেলায় আজও চালু রয়েছে বিনিময় প্রথা। এ মেলায় কোনও কিছু কিনতে বা বিক্রি করতে হলে ক্রেতা এবং বিক্রেতা দুইয়েরই হাতে থাকে কোনও না কোনও পণ্য। সেগুলি অদলবদল করে মনের মতো জিনিস নিয়ে ঘরে ফেরেন তাঁরা।

০৪ ১৭

এই মেলায় মূলত অসমের তিয়া জনজাতির মানুষজন অংশ নিলেও মেঘালয় তথা উত্তর-পূর্বের কার্বি, খাসি এবং জয়ন্তিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনও হাজির হন। মেলা ঘিরে তিন দিন ধরে সরগরম হয়ে ওঠে অসমের জাগিরোডের মতো আপাত ঝিমন্ত শহরটি।

০৫ ১৭

গুয়াহাটি থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে জোনবিল নামের এলাকাটি। প্রতি বছর জানুয়ারির মাঝামাঝি সপ্তাহান্তে এখানে বসে জোনবিল মেলা।

০৬ ১৭

মেলার নামকরণ ঘিরেও নানা গল্প ছড়িয়ে রয়েছে। জোনবিল মেলাটি যে জায়গায় হয়, তার অদূরে রয়েছে আধফালি চাঁদের আকারের এক জলাভূমি। অসমিয়া ভাষায় ‘জোন’ শব্দের অর্থ চাঁদ এবং ‘বিল’ বলতে বোঝায় জলাভূমি। জনশ্রুতি, এই দু’টি শব্দ জুড়ে মেলার নামকরণ করা হয়েছে।

০৭ ১৭

ফি বছর মাঘ মাসে ভোগালি বিহুর সময় এই বাৎসরিক মেলার নেপথ্যে আরও ইতিহাস রয়েছে। অনেকের মতে, জোনবিল মেলা শুরু হয়েছিল পঞ্চদশ শতকে।

০৮ ১৭

গোড়ায় দয়াং বেলগুড়ি এলাকায় এ মেলার জড়ো হওয়া তিয়া, কার্বি, খাসি এবং জয়ন্তিয়া সম্প্রদায়ের মানুষজন নাকি মূলত রাজনৈতিক আলোচনায় ব্যস্ত থাকতেন। পরে এতে নানা সংযোজন হয়।

০৯ ১৭

জোনবিল মেলাটি আড়েবহরে বৃদ্ধি পেলেও এতে পুরনো দিনের নানা রীতিনীতিই মেনে চলা হয়। মেলার উদ্বোধন করেন তিয়া সম্প্রদায়ের রাজা।

১০ ১৭

কথিত, এককালে এই অঞ্চলে রাজত্ব ছিল তিয়াদের। আদতে তাঁরা নাকি তিব্বত এবং তৎকালীন বর্মার বাসিন্দা ছিলেন। পরে এ দেশের উত্তর-পূর্বের অসম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর এবং নাগাল্যান্ডে বসতি গড়ে তোলেন। এমনকি, বাংলাদেশ এবং মায়ানমারেও বসবাস শুরু করেছিলেন তাঁরা।

১১ ১৭

আজও তিয়া রাজার হাতেই প্রতি বছর এ মেলার শুরু হয়। জোনবিলা মেলার শুরুতে চিরাচরিত প্রথা মেনে প্রথমে অগ্নিপুজো করা হয়। এর পর পুরনো দিনের মতো ‘প্রজাদের’ কাছ থেকে কর আদায় করেন তিয়া সম্প্রদায়ের রাজা। প্রতীকী অনুষ্ঠান হলেও তাতে শামিল হন ‘প্রজারা’।

১২ ১৭

প্রতি বারের মতো এ মেলায় অগ্নিপুজোর মাধ্যমে মানব সম্প্রদায়ের মঙ্গলকামনা করা হয়। এর পর প্রথা অনুযায়ী, আধফালি চাঁদের আকারের জলাভূমিতে মাছ ধরতে নেমে পড়েন এলাকার মানুষজন।

১৩ ১৭

মাছ ধরার সময়ও পুরনো প্রথার কথা মাথায় রাখেন স্থানীয়েরা। ছিপ বা বড়শির বদলে পুরনো দিনের মতো মাছ ধরতে বাঁশের ফাঁদ তৈরি করে জলে ডুব দেন তাঁরা। এ ছাড়া, চলে মোরগের লড়াই। আয়োজন করা হয় নাচের অনুষ্ঠান।

১৪ ১৭

ভিড় সামলাতে মেলার অদূরে অসংখ্য বাঁশের চালা তৈরি করা হয়। মেলা চলাকালীন তিন দিন ধরে সেখানেই ডেরা বাঁধেন অনেকে।

১৫ ১৭

জোনবিল মেলা চালু রাখতে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে অসম সরকার। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে এলাকার এককালের গোভা রাজত্বের ১৯ সম্প্রদায়ের রাজাকে রাজকীয় অর্থসাহায্যের ঘোষণা করেছিল তারা।

১৬ ১৭

মেলার জন্য স্থায়ী জমির বন্দোবস্ত করতে চায় অসম সরকার। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মেলায় হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। সংবাদমাধ্যমের কাছে হিমন্ত বলেন, ‘‘জোনবিল মেলার জন্য একটি জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাতে সেখানে পাকাপাকি ভাবে মেলার আয়োজন করা যায়।’’

১৭ ১৭

মেলার ক’দিন কেনাকাটির জন্য এখনও কেন বিনিময় প্রথার চলন রয়েছে? অনেকের মতে, এলাকার নানা জনজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেই চিরাচরিত প্রথাকে জিইয়ে রেখেছেন স্থানীয়েরা।

সব ছবি সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement