এক দিকে বর্ষীয়ান অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ, অন্য দিকে তাঁর স্ত্রী এবং অভিনেত্রী রত্না পাঠক। টিনসেল নগরীর এই তারকা জুটির অভিনয় দক্ষতা অসামান্য। অভিনেতা হিসাবে তাঁরা দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু তাঁদের প্রেমকাহিনি যে রোম্যান্টিক ঘরানার কোনও ছবির চিত্রনাট্যকে হার মানায় তা অনেকেরই অজানা।
থিয়েটারে অভিনয় করার সূত্রে রত্নার সঙ্গে আলাপ হয় নাসিরুদ্দিনের। ১৯৭৫ সালে একসঙ্গে থিয়েটার করেছিলেন দু’জনে। রত্নাকে প্রথম দেখার পরেই তাঁর প্রেমে পড়ে যান নাসিরুদ্দিন।
প্রাথমিক আলাপচারিতার পর নাসিরুদ্দিন এবং রত্নার মধ্যে বন্ধুত্ব গাঢ় হয়ে ওঠে। থিয়েটারের সূত্রে পরিচয় গড়িয়ে যায় প্রেমে। একে অপরকে ডেটও করতে শুরু করেন তাঁরা।
সাত বছর সম্পর্কে থাকার পর নাসিরুদ্দিন এবং রত্না তাঁদের জীবনে নতুন অধ্যায় শুরু করেন। তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে ঠাট্টা করে রত্না এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমরা ‘সম্ভোগ সে সন্ন্যাস তক’ নাটকে একসঙ্গে প্রথম অভিনয় করি। সেখানেই প্রথম আলাপ আমাদের। আমাদের প্রেমকাহিনিও সে রকম। শুধু সন্ন্যাসটাই নেওয়া হল না।’’
এমনকি নিজের বিয়ের কথাও সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন রত্না। অভিনেত্রীর কথায়, এমন বিয়ের অনুষ্ঠান খুব কম দেখা যায় যেখানে পাত্র এবং পাত্রী দু’জনেই চুটিয়ে আনন্দ করে।
রত্না বলেন, ‘‘আমাদের বিয়েতে আমরা দু’জনেই ব্যাপক মজা করেছিলাম। বল ড্যান্সের আয়োজন করা হয়েছিল। সমুদ্রের ধারে ঘুরতে গিয়েছিলাম। সমুদ্রে সাঁতারও কেটেছিলাম। এমনকি পরে ওয়াইনও খেয়েছিলাম।’’
কিন্তু রত্না এবং নাসিরুদ্দিন যে সাত বছর সম্পর্কে ছিলেন, সে সময় তাঁরা কোন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলেন তা এত বছর গোপন রেখেছিলেন দুই তারকা। সম্প্রতি হিউম্যান্স অফ বম্বেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন নাসিরুদ্দিন।
নাসিরুদ্দিন জানান, তাঁর সঙ্গে যখন রত্নার পরিচয় হয় সেই সময় বিবাহিত ছিলেন অভিনেতা। শুধু তাই নয়, মাদকের প্রতি আসক্তিও ছিল তাঁর। সব জানার পরেও রত্না তাঁর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন।
নাসিরুদ্দিনের দাবি, তাঁর জীবনে রত্না যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছিলেন। দুই তারকা একত্রবাসও করতে শুরু করেন বলে জানান অভিনেতা।
রত্না যে নাসিরুদ্দিনকে তাঁর জীবনসঙ্গী হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন তা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল রত্নার পরিবার। অভিনেতা জানান, তিনি খুব মেজাজি স্বভাবের ছিলেন। মাদকের নেশা করতেন। তার উপর আবার বিবাহিত।
রত্নার বাবা-মা কন্যার জীবনসঙ্গী হিসাবে পছন্দ করতেন না নাসিরুদ্দিনকে। অভিনেতা বলেন, ‘‘রত্নার পরিবারের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও আমরা একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম। একসঙ্গে থাকাও শুরু করি আমরা। রত্না আর আমি আসলে এত ভাল বন্ধু, যে সব কিছুই খুব সহজ মনে হয়েছিল।’’
প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর রত্নাকে ১৯৮২ সালে বিয়ে করেন নাসিরুদ্দিন। মাঝেমধ্যেই সমাজমাধ্যমে রত্নার সঙ্গে তোলা পুরনো ছবি অনুরাগীদের সঙ্গে ভাগ করে নেন অভিনেতা।
নাসিরুদ্দিন জানান, এখনও তাঁদের সম্পর্ক নতুন রয়েছে। অভিনেতা বলেন, ‘‘আমি রত্নাকে যত দেখি, তত অবাক হই। প্রতি মুহূর্তে ওকে নতুন করে চিনতে পারি আমি। বন্ধুত্ব এখনও রয়ে গিয়েছে বলেই এগুলো সম্ভব।’’
সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তাজ: ডিভাইডেড বাই ব্লাড’ ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে নাসিরুদ্দিনকে। কিছু দিনের মধ্যেই এই ওয়েব সিরিজ়ের দ্বিতীয় পর্বের শুটিং নিয়েও অভিনেতা ব্যস্ত হয়ে পড়বেন।
তরুণ দুদেজা পরিচালিত ‘ধক ধক’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যাবে রত্নাকে। চলতি বছরেই এই ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা। রত্নার পাশাপাশি এই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যাবে সঞ্জনা সাঙ্ঘি, ফতিমা সানা শেখ এবং দিয়া মির্জ়াকে।