বলিউডের ‘সবচেয়ে দামি’ গান বলে কথা! গানটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল দু’বছর। বিশেষ পদ্ধতিতে শুটিং করা হবে বলে আলাদা ভাবে তৈরি করা হয়েছিল ‘আয়নার প্রাসাদ’। বলিপাড়া সূত্রে খবর, একটি গান শুট করতে সব মিলিয়ে যা খরচ হয়েছিল তা আজকের দিনের ৫৫ কোটি টাকার সমান।
ফিরে যাওয়া যাক হিন্দি চলচ্চিত্রজগতের ৬৫ বছরের পুরনো ইতিহাসের পাতায়। ১৯৬০ সালের অগস্ট মাসে প্রেক্ষাগৃহে কে আসিফের পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘মুঘল-এ-আজ়ম’। মধুবালা-দিলীপ কুমার-পৃথ্বীরাজ কপূর অভিনীত এই ছবিটি বলিপাড়ার অন্যতম ‘কাল্ট ক্লাসিক’।
বলিপাড়ায় গুঞ্জন, ‘মুঘল-এ-আজ়ম’ ছবিটি তৈরি করতে সেই সময় প্রায় দে়ড় কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। ষাটের দশকের এই মূল্য এখনকার কয়েকশো কোটি টাকার সমান। এই ছবিতেই রয়েছে বলিউডের ‘সবচেয়ে দামি’ গান।
লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে এবং মধুবালার অভিনয়ে ‘প্যার কিয়া তো ডরনা কয়া’ গানটির জুড়ি মেলা ভার। বলিপাড়ার জনশ্রুতি, ‘মুঘল-এ-আজ়ম’ ছবির এই গানটি এখনও পর্যন্ত খরচের দিক দিয়ে বলিউডের ‘সবচেয়ে দামি’ গানের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘প্যার কিয়া তো ডরনা কয়া’ গানের দৃশ্য শুটের জন্য চারদিকে কাচ লাগানো একটি ‘আয়নার প্রাসাদ’ তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সেটে শুট করার সময় বাধে সমস্যা। আলো ফেলা হলেই চারদিক থেকে প্রতিবিম্ব তৈরি করে দৃশ্যটি নষ্ট করে দিচ্ছিল।
বলিপাড়ার অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, শুটিংয়ের সমস্যার সমাধানের জন্য ডাক পড়েছিল হলিউডের বিশারদদের। কিন্তু সেই সমস্যা মিটিয়েছিলেন ভারতীয় ক্যামেরাম্যান আরডি মাথুর।
মাথুর সেট ঘুরে ঘুরে এমন একটি কোণের সন্ধান পেয়েছিলেন, যেখান থেকে শুট করলে কোনও প্রতিবিম্বই ক্যামেরায় ধরা পড়বে না। তার পর সেই কোণে ক্যামেরা রেখে গান শুট করা হয়েছিল বলে জানা যায়।
‘প্যার কিয়া তো ডরনা কয়া’ গানের কলি লিখেছিলেন শকীল বদায়ূনী। বলিপাড়ার গুঞ্জন, গানের কলি ১০৫ বার বদলেছিলেন শাকীল। তার পর তা সঙ্গীত পরিচালক নওশাদ আলির মনে ধরেছিল।
মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ের মোহন স্টুডিয়োজ়ে ‘প্যার কিয়া তো ডরনা কয়া’ গানের সেট তৈরি করা হয়েছিল। বলিউড সূত্রে খবর, ১৫০ ফুট দীর্ঘ এবং ৮০ ফুট চওড়া এই সেটের উচ্চতা ছিল ৩৫ ফুট। এই বিশেষ সেটটি তৈরি করতেই নাকি দু’বছর সময় লেগেছিল।
বলিপাড়ার জনশ্রুতি, ‘প্যার কিয়া তো ডরনা কয়া’ গানের সেট তৈরি করতে নাকি এত খরচ হয়েছিল, যা দিয়ে সেই সময় একটি পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবির শুটিং শেষ হয়ে যেত।
বলিউডের অধিকাংশের দাবি, ‘প্যার কিয়া তো ডরনা কয়া’ গানের শুট যদি বর্তমান কালে করা হত তা হলে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা খরচ হত।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘প্যার কিয়া তো ডরনা কয়া’ গানটি রেকর্ড করার জন্য একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন সঙ্গীত পরিচালক। গায়িকার কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনিও রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন তিনি।
শৌচালয়ের ভিতর গলা ছেড়ে গান করলে যে ধরনের ধ্বনি সৃষ্টি হয়, সেই ধরনের শব্দ চেয়েছিলেন ‘প্যার কিয়া তো ডরনা কয়া’র সঙ্গীত পরিচালক। স্টুডিয়োর ভিতর সেই ‘ইকো এফেক্ট’ আনার জন্য ‘বাথরুম স্টুডিয়ো’ তৈরি করা হয়েছিল। সেই স্টুডিয়োয় গানটি গেয়েছিলেন লতা।
কানাঘুষো শোনা যায়, ‘মুঘল-এ-আজ়ম’ ছবির জন্য দিল্লি থেকে তারকাদের পোশাক আনানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ছবিতে তারকারা যে গয়না পরেছিলেন, সেগুলির অধিকাংশই নাকি হায়দরাবাদ থেকে আনানো হয়েছিল।
বলিপাড়ায় জনশ্রুতি, ‘মুঘল-এ-আজ়ম’ ছবিতে চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে দু’হাজার উট এবং চার হাজার ঘোড়া আনানো হয়েছিল। ষাট বছর অতিক্রম করার পরেও এই ছবিটি এখনও বলিউডের অন্যতম সেরা ছবি হিসাবে দর্শকমনে দাগ কেটে রয়েছে।