প্রথমে লোকেশ রাহুল-শুভমন গিল এবং পরে রবীন্দ্র জাডেজা-ওয়াশিংটন সুন্দরের ব্যাটে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাঞ্চেস্টারে ড্র ছিনিয়ে নিয়েছে ভারত। শতরান করেছেন শুভমন, জাডেজা এবং ওয়াশিংটন। অল্পের জন্য শতরান হাতছাড়া হয়েছে রাহুলের।
চলতি সিরিজ়ে স্বপ্নের ফর্মে রয়েছেন ভারতের অধিনায়ক শুভমন গিল। ব্যাট হাতে একের পর এক নজির গড়ে চলেছেন তিনি। আগামী বৃহস্পতিবার তাঁর নেতৃত্বেই টেস্ট সিরিজ়ের শেষ ম্যাচে নামবে ভারত। মরণবাঁচন ম্যাচেও তরুণ অধিনায়কের থেকে ভাল পারফরম্যান্স আশা করবে দল।
ইংল্যান্ড সফরে এখনও পর্যন্ত ৭২২ রান করে ফেলেছেন শুভমন। কোনও একটি টেস্ট সিরিজ়ে সর্বাধিক রান করা ব্যাটরদের তালিকায় এই মুহূর্তে তিনি রয়েছেন ২৬ নম্বরে। ভারতীয়দের মধ্যে তাঁর সামনে আছেন একমাত্র সুনীল গাওস্কর। ১৯৭০-৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৪ টেস্টে ৭৭৪ রান করেন তিনি। কোনও একটি টেস্ট সিরিজ়ে ভারতীয়দের মধ্যে এটাই সর্বাধিক রান।
ওভাল টেস্টে কি গাওস্করকে টপকে যেতে পারবেন শুভমন? কত জনকে টপকে যেতে পারবেন ডানহাতি ব্যাটার? কারা আছেন ভারতের তরুণ অধিনায়কের সামনে? দেখে নেওয়া যাক সেই কিংবদন্তিদের তালিকা।
শুভমনের ঠিক আগেই রয়েছেন গ্যারি সোবার্স। ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেই ৭২২ রান করেন ক্যারিবীয় কিংবদন্তি অলরাউন্ডার। পাঁচ ম্যাচে ৮ ইনিংসে ৭২২ রান করেন তিনি। সিরিজ়ে তিনটি শতরান করেন সোবার্স। সর্বোচ্চ ১৭৪। সিরিজ়ে তাঁর গড় ছিল ১০৩.১৪।
তালিকায় সোবার্সের ঠিক উপরেই রয়েছেন সাউথ আফ্রিকার জর্জ ফকনার। তিনি আছেন ২৩ নম্বরে। ১৯১০-১১ মরসুমে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ়ে ৭৩২ রান করেন তিনি। দু’টি শতরান এবং পাঁচটি অর্ধশতরান করেছিলেন ডানহাতি অলরাউন্ডার। কেরিয়ারের সেরা ২০৪ রানের ইনিংসটিও তিনি এই সিরিজ়েই গড়েছিলেন।
২৩ নম্বরেই রয়েছেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক ডেভিড গাওয়ার। ১৯৮৫ সালে অ্যাশেজ়ে ছ’ম্যাচে ৭৩২ রান করেছিলেন তিনিও। সিরিজ়ে তিনটি শতরান করেছিলেন বাঁহাতি ব্যাটার। এর মধ্যে ছিল একটি দ্বিশতরানও।
শুভমনের আগে এই তালিকায় থাকা একমাত্র ভারতীয় সুনীল গাওস্করও রয়েছেন ২৩ নম্বরেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১৯৭৮-৭৯ মরসুমে তিনিও ৭৩২ রান করেন। সিরিজ়ে চারটি শতরান করেন তিনি। ২০৫ রানের একটি অসাধারণ ইনিংসও খেলেছিলেন ভারতীয় ওপেনার। তবে এই তালিকায় আরও এক বার রয়েছে গাওস্করের নাম।
তালিকার ২২ নম্বরে রয়েছেন ইংল্যান্ডের ডানহাতি ব্যাটার হার্বার্ট শাটক্লিফ। ১৯২৪-২৫ মরসুমের অ্যাশেজ়ে ৭৩৪ রান করেছিলেন ডানহাতি ইংরেজ ব্যাটার। চারটি শতরান এবং দু’টি অর্ধশতরান করেছিলেন শাটক্লিফ। সিরিজ়ে তাঁর গড় ছিল ৮১.৫৫।
২১ নম্বরে রয়েছেন বর্তমান ইংল্যান্ড দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটার জো রুট। ২০২১-২২ মরসুমে ভারতেরই বিরুদ্ধে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ়ে ১০৫.২৮ গড়ে ৭৩৭ রান করেন রুট। চারটি শতরান এবং একটি অর্ধশতরান করেছিলেন ডানহাতি ইংরেজ ব্যাটার।
২০ নম্বরে রয়েছেন আর এক ইংরেজ কিংবদন্তি গ্রাহাম গুচ। তিনিও রেকর্ড গড়েন ভারতেরই বিরুদ্ধে। ১৯৯০ সালে মাত্র তিন ম্যাচে ৭৫২ রান করেন ডানহাতি ইংরেজ ব্যাটার। তিনটি শতরান এবং দু’টি অর্ধশতরান করেন গুচ। কেরিয়ারের সেরা ৩৩৩ রানের ইনিংসটিও এই সিরিজ়েই করেন তিনি।
১৯ নম্বরেও রয়েছেন এক ইংরেজ ব্যাটার। তিনি ডেনিস কম্পটন। ১৯৪৭ সালে সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ়ে ৭৫৩ রান করেন ডানহাতি ব্যাটার। সিরিজ়ে ৪টি শতরান এবং দু’টি অর্ধশতরান করেছিলেন ডেনিস। করেছিলেন একটি দ্বিশতরানও।
এই তালিকায় যে নামটা বার বার এসেছে তিনি ডন ব্র্যাডম্যান। ১৯৩৪ সালের অ্যাশেজ়ে আট ইনিংসে ৭৫৮ রান করে তালিকার ১৮ নম্বরে নাম লিখিয়েছেন প্রবাদপ্রতিম অসি ব্যাটার। দু’টি শতরানের পাশাপাশি সিরিজ়ে সর্বোচ্চ ৩০৪ রানের ইনিংসও খেলেছিলেন তিনি।
তালিকায় থাকা একমাত্র পাকিস্তানি ব্যাটার হলেন মুদস্সর নজ়র। ১৯৮২-৮৩ মরসুমে ভারতের বিরুদ্ধে ছ’ম্যাচের সিরিজ়ে ৭৬১ রান করেছিলেন ডানহাতি অলরাউন্ডার। কেরিয়ারের সেরা ২৩১ রানের ইনিংসটিও এই সিরিজ়েই করেছিলেন তিনি।
১৬ নম্বরে রয়েছেন আর এক ক্যারিবীয় কিংবদন্তি। তিনি ব্রায়ান লারা। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৯৫ সালে ছ’ম্যাচের সিরিজ়ে ৭৬৫ রান করেছিলেন বাঁহাতি ব্যাটার। সিরিজ়ে তিনটি শতরান এবং তিনটি অর্ধশতরান করেছিলেন লারা।
অ্যালিস্টার কুক রয়েছেন ১৫ নম্বরে। ইংল্যান্ডের বাঁহাতি ওপেনার ২০১০-১১ মরসুমের অ্যাশেজ়ে করেছিলেন ৭৬৬ রান। তিনটি শতরানের পাশাপাশি অপরাজিত ২৩৫ রানের একটি ইনিংসও এই সিরিজ়ে খেলেছিলেন কুক।
২০১৪-১৫ মরসুমের বর্ডার-গাওস্কর ট্রফিতে ভারতকে প্রায় একাই হারিয়ে দিয়েছিলেন স্টিভ স্মিথ। চার ম্যাচে ৭৬৯ রান করেছিলেন ডানহাতি অসি। আট ইনিংসের মধ্যে চারটি শতরান এবং দু’টি অর্ধশতরান করেছিলেন স্মিথ। সিরিজ়ে তাঁর গড় ছিল ১২৮.১৬। তিনি রয়েছেন তালিকার ১৪ নম্বরে।
২৩ নম্বরের পর ১২ নম্বরেও রয়েছেন সুনীল গাওস্কর। ১৯৭০-৭১ মরসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৪ ম্যাচে ৭৭৪ রান করেন তিনি। এর মধ্যে চারটি শতরান-সহ ছিল একটি দ্বিশতরানও। সিরিজ়ে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল প্রায় ১৫৫।
একই সংখ্যক রান করে ১২ নম্বরেই রয়েছেন স্টিভ স্মিথ। অ্যাশেজ়ে চার ম্যাচে ৭৭৪ রান করেছিলেন তিনিও। করেছিলেন তিনটি করে সেঞ্চুরি এবং হাফ সেঞ্চুরি। ওই সিরিজ়ে ডানহাতি অসির গড় ছিল ১১০.৫৭।
স্মিথের আগে রয়েছেন এভার্টন উইক্স। ভারতের বিরুদ্ধে ১৯৪৮-৪৯ মরসুমে মাত্র সাত ইনিংসে ৭৭৯ রান করেন ক্যারিবীয় ব্যাটার। সিরিজ়ে চারটি শতরান করেছিলেন তিনি।
১০ নম্বরে আবার রয়েছে ক্যারিবীয় রাজপুত্রের নাম। ১৯৯৩-৯৪ সালে উইজ়ডেন ট্রফিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আট ইনিংসে ৭৯৮ রান করেছিলেন তিনি। তাঁর দাপটে সিরিজ় জেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
তালিকার পরবর্তী দুই নাম এক জনেরই। তিনি ডন ব্র্যাডম্যান। সাউথ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যথাক্রমে ৮০৬ এবং ৮১০ রান করেন ডন। দুই সিরিজ় মিলিয়ে করেছিলেন সাতটি শতরান। সর্বোচ্চ অপরাজিত ২৯৯।
সাত নম্বরে আবার রয়েছেন গ্যারি সোবার্স। ১৯৫৭-৫৮ মরসুমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আট ইনিংসে ৮২৪ রান করেন ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার। এর মধ্যে ছিল তাঁর কেরিয়ারের সর্বোচ্চ অপরাজিত ৩৬৫ রানের ইনিংসও। সিরিজ়ে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ১৩৭.৩৩।
ছ’নম্বরে রয়েছেন ছ’ফুট দু’ইঞ্চির ক্যারিবীয় উইকেটরক্ষক ক্লিড ওয়ালকট। ১৯৫৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৮২৭ রান করেছিলেন তিনি। পাঁচ টেস্টের সিরিজ়ে করেছিলেন পাঁচটি শতরান।
চার নম্বরে রয়েছেন আর এক ক্যারিবীয় কিংবদন্তি। তিনি ভিভিয়ান রিচার্ডস। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৭৬ সালের উইজ়ডেন ট্রফিতে মাত্র সাতটি ইনিংসে ৮২৯ রান করেন মারকুটে ডানহাতি। তাঁর ব্যাটিং তাণ্ডবে ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজ়ে একাধিক ডাবল সেঞ্চুরি করেন তিনি।
চার নম্বরে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার নিল হার্ভে। ১৯৫২-৫৩ মরসুমে সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ়ে ৮৩৪ রান করেছিলেন বাঁহাতি অসি ব্যাটার। ন’টি ইনিংসের মধ্যে চারটিতে শতরান এবং তিনটিতে অর্ধশতরান করেন হার্ভে।
তিন নম্বরেও রয়েছেন এক বাঁহাতি অস্ট্রেলীয়। তিনি প্রাক্তন অসি অধিনায়ক মার্ক টেলর। ১৯৮৯ সালে ছ’ম্যাচের অ্যাশেজ়ে ১১ ইনিংসে ৮৩৯ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার। এর মধ্যে রয়েছে ২১৯ রানের একটি ইনিংসও।
দু’নম্বরে রয়েছেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ওয়াল্টার হ্যামন্ড। ১৯২৮-২৯ মরসুমের অ্যাশেজ়ে ৯০৫ রান করেছিলেন ডানহাতি অলরাউন্ডার। সিরিজ়ের ন’ইনিংসে করেছিলেন চারটি শতরান। ব্যটিং গড় ছিল ১১৩.১২।
এক নম্বরে আবার রয়েছে সেই ডন ব্র্যাডম্যানেরই নাম। ১৯৩০ সালের অ্যাশেজ়ে মাত্র সাত ইনিংসে ৯৭৪ রান করেছিলেন সর্বকালের সেরা ব্যাটার। চার শতরান-সহ কেরিয়ারের সর্বোচ্চ ৩৩৪ রানের ইনিংসও এসেছিল এই সিরিজ়েই। সিরিজ়ে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ১৩৯.১৪।
এই মুহূর্তে ৭২২ রানে দাঁড়িয়ে রয়েছেন শুভমন। অর্থাৎ, এক নম্বরে থাকা ডনের চেয়ে ২৫২ রানে পিছিয়ে রয়েছেন তরুণ ভারতীয় ব্যাটার। ওভাল টেস্টে কি তিনি অসাধ্যসাধন করতে পারবেন? অপেক্ষা আর কয়েক দিনের।