মডেলিং দিয়ে কেরিয়ার শুরু। তার পর অভিনয়। কিন্তু মডেল অথবা অভিনেতা কোনওটাই হতে চাননি অর্জুন রামপাল। তিনি চেয়েছিলেন অ্যাথলিট হতে। কৈশোরের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি তিনি। অভিনয়জগতে পা দিয়েও সাফল্যের চেয়ে বেশি ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়েছেন। বার বার তাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে বিতর্ক। দীর্ঘ ছ’বছর একত্রবাসের পর প্রেমিকার সঙ্গে বাগ্দান পর্ব সেরে ফেলার কথা প্রকাশ্যে এনে ফের চর্চার কেন্দ্রবিন্দু অর্জুন।
১৯৭২ সালের নভেম্বরে মধ্যপ্রদেশে জন্ম অর্জুনের। কম বয়সে বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ায় পরে মায়ের সঙ্গেই থাকতেন অর্জুন। দিল্লির এক কলেজ থেকে অর্থনীতি নিয়ে স্নাতক হন তিনি।
কৈশোরে অ্যাথলিট হতে চেয়েছিলেন অর্জুন। এমনকি, রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণও করেছিলেন তিনি। কিন্তু ছোটবেলার স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মডেলিং নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয় তাঁর। পরে তা নিয়েই কেরিয়ার গড়ে তোলেন অর্জুন।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, দিল্লির এক পার্টিতে পোশাকশিল্পী রোহিত বালের নজরে পড়েন অর্জুন। তাঁকে মডেলিং নিয়ে কেরিয়ার গড়ার পরামর্শ দেন রোহিত। সেই পথেই পা বাড়ান অর্জুন।
মডেলিংয়ের জগতে সুনাম গড়তে বেশি সময় লাগেনি অর্জুনের। কম সময়ের মধ্যেই মিউজ়িক ভিডিয়ো থেকে শুরু করে নামী সংস্থার বিজ্ঞাপনে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
মডেল হিসাবে অর্জুনের জনপ্রিয়তা এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যে, ছবিনির্মাতাদের নজরেও পড়তে শুরু করেন তিনি। দু’টি হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পান অর্জুন। অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়তে চান বলে প্রশিক্ষণ নিতে নিউ ইয়র্ক চলে যান তিনি।
বিদেশ থেকে অভিনয় শিখে ফেরার পর মুম্বই চলে যান অর্জুন। সেখানে গিয়ে আলাদা ভাবে অভিনয় এবং নাচের প্রশিক্ষণ নেন তিনি। ২০০১ সালে বড়পর্দায় প্রথম দেখা যায় তাঁকে। ৪০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছেন তিনি। কিন্তু অভিনেতা হিসাবে কখনও প্রথম সারিতে নাম লেখাতে পারেননি অর্জুন।
অভিনয়ে বিশেষ সুবিধা করতে না পেরে ২০০৬ সালে অর্জুন তাঁর স্ত্রী মেহর জেসিয়ার সঙ্গে প্রযোজনা সংস্থা নির্মাণ করেন। অভিনয়ে আসার আগেই মেহরের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল অর্জুনের। পেশায় মডেল মেহর। মডেলিংয়ের সূত্রেই দু’জনের আলাপ হয়েছিল।
১৯৯৮ সালে মেহরকে বিয়ে করেন অর্জুন। বিয়ের পর দুই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন মেহর। কিন্তু দু’দশকের দাম্পত্যে ভাঙন ধরে। কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে যে, অর্জুন নাকি এক বলি অভিনেতার প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়়িয়ে পড়েছেন।
বলিপাড়ার জনশ্রুতি, হৃতিক রোশন এবং সুজ়ান খানের বিবাহবিচ্ছেদের নেপথ্যে ছিলেন অর্জুন। সেই সময় নাকি সুজ়ানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন অর্জুন। পরে অবশ্য দু’পক্ষই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তাঁদের মধ্যে নিখাদ বন্ধুত্ব ছাড়া আর কিছুই নেই।
অর্জুন তাঁর রেস্তরাঁর ভাড়া দু’বছর ধরে দেননি, এমন অভিযোগও উঠেছিল নায়কের বিরুদ্ধে। অর্জুনের বকেয়া ছিল চার কোটি টাকা। তাঁর নামে নাকি মামলাও হয়। শোনা যায়, তিনি সে সময় দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিলেন। যদিও সেই দাবি তিনি পরে অস্বীকার করেছিলেন।
সুজ়ানের সঙ্গে অর্জুনের সম্পর্কের গুঞ্জন ওঠার পর ২০১৫ সালে মেহর বাপের বাড়ি চলে যান। কেরিয়ার নিয়েও হতাশ হয়ে পড়েছিলেন অর্জুন। ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় নিজের প্রযোজনা সংস্থার তরফে ‘ড্যাডি’ নামের একটি হিন্দি ছবি বানান অর্জুন। ছবিমুক্তির পর আবার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন অভিনেতা।
২০১৭ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ড্যাডি’। এই ছবিতে একটি নাচের দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন মডেল অভিনেত্রী এবং ক্রিকেটার হার্দিক পাণ্ড্যের প্রাক্তন স্ত্রী নাতাশা স্ট্যাঙ্কোভিচ। কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে, নাতাশার সঙ্গেও নাকি পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন অর্জুন। পরে অভিনেতা জানিয়েছিলেন যে, এ সমস্ত খবরই ভুয়ো।
২০১৮ সাল থেকে ছাদ আলাদা হয়ে যায় অর্জুন এবং মেহরের। ২০১৯ সালে আইনি ভাবে বিবাহবিচ্ছেদ হয় তাঁদের। কন্যাদের দায়িত্ব পান মেহর। সেই সময় অর্জুনের জীবনে আসেন নতুন নারী।
কানাঘুষো শোনা যায়, আইপিএল-এর এক পার্টিতে অর্জুনের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার মডেল গ্যাব্রিয়েলা ডিমিট্রিয়েডসের। আইপিএল-এ চিয়ারলিডার ছিলেন গ্যাব্রিয়েলা। গুঞ্জন, মেহরের সঙ্গে বিচ্ছেদের আগেই নাকি অর্জুনের সঙ্গে সম্পর্কের জেরে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েছিলেন গ্যাব্রিয়েলা।
২০১৯ সালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন গ্যাব্রিয়েলা। সম্পর্কে জড়ানোর পর থেকে অর্জুনের সঙ্গে একত্রবাসে থাকতে শুরু করেন তিনি। ২০১৯ সালে আবার অভিনেতার বিরুদ্ধে এক কোটি টাকা অনাদায়ের অভিযোগ উঠেছিল। সে বছরেই মেহরের সঙ্গে তাঁর ২১ বছরের দাম্পত্যে দাঁড়ি পড়ে।
একের পর এক ছবি ব্যর্থ হওয়ায় ২০০৬ সালে ‘কভি অলবিদা না কহেনা’ ছবিতে অর্জুনকে অভিনয়ের সুযোগ দেন কর্ণ জোহর। এই ছবিতে অভিনয়ের সূত্রে কর্ণ এবং শাহরুখ খানের সঙ্গে অর্জুনের সম্পর্কের ভিত মজবুত হয়।
অর্জুনকে কেরিয়ারের সাফল্যের স্বাদ দিতে তাঁকে ‘রা ওয়ান’ ছবিতে খলনায়কের ভূমিকায় মনোনীত করেছিলেন শাহরুখ। কিন্তু এই ছবিতে কাজ করার সময় থেকেই তাঁদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরে।
‘রা ওয়ান’ ছবিতে অর্জুনের যা দৃশ্য ছিল, ছবিমুক্তির আগে নাকি অধিকাংশ দৃশ্যে কাঁচি চালিয়ে দেওয়া হয়। তা নিয়ে ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন অভিনেতা। এমনকি, পারিশ্রমিক নিয়েও প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে অর্জুনের বচসা হয়েছিল। এমনটাই কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে।
শাহরুখের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী গৌরী খানের সঙ্গেও বন্ধুত্ব ছিল অর্জুনের। শুধু অর্জুন নন, শাহরুখের বাড়িতে কোনও পার্টি হলে সেখানে অর্জুন-সহ উপস্থিত থাকতেন মেহরও। শোনা যায়, মেহরই নাকি ‘রা ওয়ান’-এর জন্য অর্জুনের পারিশ্রমিক নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।
বলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি, কঠিন পরিস্থিতিতে গৌরীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বলে অর্জুনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ভেঙে ফেলেন শাহরুখ। ইন্ডাস্ট্রিতে যখন শাহরুখ এবং প্রিয়ঙ্কা চোপড়া জোনাসের সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন গৌরীকে সমর্থন করেছিলেন অর্জুন।
বলিপাড়ার অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, অর্জুন নাকি শাহরুখকে পরামর্শ দিয়েছিলেন পরকীয়া সম্পর্ক থেকে সরে আসতে। এই পরামর্শ নাকি ভাল ভাবে গ্রহণ করতে পারেননি শাহরুখ। অর্জুনের সঙ্গে বন্ধুত্বেও চিড় ধরে যায় বলিউডের ‘বাদশা’র।
ছ’বছর ধরে গ্যাব্রিয়েলার সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন অর্জুন। সম্প্রতি রিয়া চক্রবর্তীর পডকাস্টে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন দু’জনেই। বিয়ের প্রসঙ্গ উঠতেই গ্যাব্রিয়েলা বলেন, “আমরা এখনও বিবাহিত নই। কিন্তু ভবিষ্যতে কী হবে তা কে বলতে পারে?” সঙ্গে সঙ্গে অর্জুন বলে ফেলেন, “আমাদের বাগ্দান হয়ে গিয়েছে। তোমার অনুষ্ঠানেই এই কথাটা প্রথম জানালাম।”
মেহরের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের কয়েক মাস পরেই গ্যাব্রিয়েলার কোলে আসে প্রথম সন্তান। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে গ্যাব্রিয়েলার দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়। দুই সন্তানের বাবা-মা হলেও এখনও বিয়ে করেননি অর্জুন-গ্যাব্রিয়েলা।
অর্জুনের কথায়, ‘‘বিয়ে কাগজের টুকরো মাত্র। আইনি মতে আবদ্ধ হলে একে অপরের প্রতি মনোভাব বদলে যায়, এমন ধারণায় আমি বিশ্বাসী নই। আমরা দু’জনে মনে মনে বিবাহিত। আমাদের দুই সন্তান রয়েছে। আমি ধন্য। আমার মেয়েদের সঙ্গে গ্যাব্রিয়েলার সম্পর্ক ভাল। এমনকি মেহরের সঙ্গেও গ্যাব্রিয়েলার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।’’
বিয়ে প্রসঙ্গে অর্জুন আরও বলেছিলেন, ‘‘২৪ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলাম আমি। খুব কম বয়সেই বিয়ে হয়েছিল। আরও অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রয়োজন ছিল। আরও পরিণতমনস্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল। তাড়াহুড়ো না করে সময় নিয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’’
চলতি মাসে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘ধুরন্ধর’। এই ছবিতে আইএসআই আধিকারিকের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে অর্জুনকে। অভিনয়ের জন্য বিপুল প্রশংসাও অর্জন করেছেন তিনি। শোনা যাচ্ছে, এই ছবির দ্বিতীয় পর্বে নাকি আরও ভয়ঙ্কর রূপে দেখা যাবে তাঁকে।