Emilia Clarke

মৃত্যু হচ্ছিল মস্তিষ্কের, বাঁচেন অলৌকিক ভাবে! বিশ্বের ‘সবচেয়ে জনপ্রিয়’ সিরিজ়ে অভিনয় করে খ্যাতির শিখরে পৌঁছোন ‘ড্রাগনরানি’

স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা কেউই এড়াতে পারেন না, তা তিনি যত বড়ই তারকা হন না কেন! সে রকমই এই অভিনেত্রী। কঠিন ‘ব্রেন অ্যানিউরিজ়ম’ রোগে আক্রান্ত হন তিনি

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:৩১
Share:
০১ ২১

একটি সিংহাসন, সাতটি রাজ্য আর সেই সিংহাসনের অধিকার নিয়ে লড়াই। প্রেম, রাজনীতি আর ক্ষমতার খেলা নিয়ে তৈরি সিরিজ় ‘গেম অফ থ্রোন্‌স’-এর ভক্তের অভাব নেই। আটটি পর্বের এই সিরিজ়ের বেশ কয়েকটি চরিত্র বেশ জনপ্রিয়। তাদের নিয়ে মাতামাতি চলতেই থাকে দর্শকের মধ্যে। অনেকেরই মতে, ‘গেম অফ থ্রোন্‌স’ বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ়।

০২ ২১

এই সিরিজ়েরই অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র ডেনেরিস টারগেরিয়ান ওরফে ‘দ্য ড্রাগন কুইন’। ওই চরিত্রে অভিনয় করে বিশ্বজোড়া জনপ্রিয়তা পেয়েছেন অভিনেত্রী এমিলিয়া ক্লার্ক। কিন্তু অনেকেই জানেন না, এই এমিলিয়াই আক্রান্ত দুরারোগ্য এক ব্যাধিতে। ধীরে ধীরে মৃত্যু হচ্ছিল তাঁর মস্তিষ্কের। তা-ও আবার ‘গেম অফ থ্রোন্‌স’-এর শুটিং চলার সময়েই।

Advertisement
০৩ ২১

স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা কেউই এড়াতে পারেন না, তা তিনি যত বড়ই তারকা হন না কেন! সে রকমই এমিলি। কঠিন ‘ব্রেন অ্যানিউরিজ়ম’ রোগে আক্রান্ত হন তিনি। এই রোগে আক্রান্ত হলে তিন জনের মধ্যে এক জন মারা যান। কিন্তু মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে জিতেছিলেন এমিলি।

০৪ ২১

মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজ়ম বলতে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে রক্তনালীর ফোলা ভাবকে বোঝায়, যা রক্তনালীর প্রাচীরের দুর্বলতার ফলে হয়। ভয়াবহ ব্যাপার হল কোনও লক্ষণ ছাড়াই মস্তিষ্কে বাসা বাঁধে এই রোগ। মারাত্মক জায়গায় না পৌঁছোনো পর্যন্ত এই রোগ নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। সেই রোগেই আক্রান্ত হয়েছিলেন এমিলিয়া।

০৫ ২১

১৯৯৬ সালে লন্ডনে এমিলিয়ার জন্ম। এমিলিয়ার বাবা লন্ডনের বিভিন্ন থিয়েটারে শব্দ সংক্রান্ত কাজ করতেন। মা-ও ছোটখাটো একাধিক কাজ করতেন সংসার চালানোর জন্য। ছোটবেলা থেকে আর্থিক অনটনের মধ্যে বড় হতে হয়েছে এমিলিয়াকে।

০৬ ২১

মাত্র তিন বছর বয়সে একটি সিনেমা দেখার পর বাবা-মায়ের কাছে অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন এমিলিয়া। কন্যার আগ্রহ দেখে এমিলিয়ার মা-বাবাও তাঁকে উৎসাহ জোগান। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে লন্ডনের ড্রামা সেন্টারে ভর্তি হন তিনি।

০৭ ২১

২০০৯ সালে লন্ডনের ড্রামা সেন্টার থেকে স্নাতক হন এমিলিয়া। এর পর থেকেই শুরু হয় অভিনেত্রী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই। সে সময় একের পর এক অডিশন দিচ্ছিলেন এমিলিয়া। কিন্তু সব জায়গা থেকেই প্রত্যাখ্যাত হতে হচ্ছিল তাঁকে। কোনও জায়গা থেকেই ইতিবাচক উত্তর পাচ্ছিলেন না।

০৮ ২১

এর পর একদিন ‘গেম অফ থ্রোন্‌স’-এর অডিশন দিতে যান এমিলিয়া। ডেনেরিস টারগেরিয়ান চরিত্রের জন্য সেই অডিশন তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। চরিত্রটিতে অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে যান তিনি।

০৯ ২১

২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি। ‘গেম অফ থ্রোন্‌স’-এর প্রথম সিজ়নের জন্য শুটিং তত দিনে শেষ হয়ে গিয়েছে। মুক্তির অপেক্ষায় দিন গুনছেন কলাকুশলীরা। এমন সময় একদিন জিম করার সময় এমিলিয়ার মাথায় মাত্রাতিরিক্ত যন্ত্রণা শুরু হয়। অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে যান তিনি। মাথা ফেটে রক্ত বেরোতে শুরু করে। তড়িঘড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় এমিলিয়াকে।

১০ ২১

চিকিৎসকেরা দেখেন, এমিলিয়া ‘ব্রেন অ্যানিউরিজ়ম’-এ আক্রান্ত। সত্বর অস্ত্রোপচার না করালে বাঁচানো যাবে না অভিনেত্রীকে। এর পর তিন ঘণ্টার অস্ত্রোপচার করা হয় এমিলিয়ার মস্তিষ্কে। প্রাণ বাঁচে এমিলিয়ার।

১১ ২১

জ্ঞান ফেরার পর এমিলিয়া দেখেন, তিনি কথা বলতে পারছেন না। এমনকি, নাম বলতে গেলেও কথাবার্তা জড়িয়ে যাচ্ছে তাঁর। চিকিৎসকেরা জানান, সাময়িক ভাবে তাঁর মস্তিষ্ক ভাষাগঠনের ক্ষমতা হারিয়েছে।

১২ ২১

চিকিৎসকদের কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন এমিলিয়া। তাঁর মনে হয়, এক ওয়েব সিরিজ়েই মনে হয় তাঁর কেরিয়ার শেষ হয়ে যাবে। আর কোনও দিন অভিনয় করতে পারবেন না তিনি। তবে কয়েক সপ্তাহ অতিক্রান্ত হওয়ার পর এমিলিয়ার কথাবার্তা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

১৩ ২১

এর মধ্যেই ২০১১ সালের এপ্রিলে ‘গেম অফ থ্রোন্‌স’-এর প্রথম সিজ়ন যখন মুক্তি পায়, তখন এমিলিয়ার বয়স ২৩। সিরিজ়টি মুক্তির পর রাতারাতি পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় মহিলায় পরিণত হন তিনি।

১৪ ২১

কিন্তু খ্যাতির সঙ্গে আসে বি়ড়ম্বনাও। মস্তিষ্কে প্রথম অস্ত্রোপচারের ছ’সপ্তাহের মধ্যেই ‘গেম অফ থ্রোন্‌স’-এর দ্বিতীয় সিজ়নের শুটিং শুরু করেন এমিলিয়া। কাজের চাপ এবং ক্লান্তি বৃদ্ধি পাচ্ছিল তাঁর জীবনে। মানসিক চাপও বাড়ছিল।

১৫ ২১

এর মধ্যেই চিকিৎসকেরা দেখেন, এমিলিয়ার মস্তিষ্ক দ্বিতীয় বারের জন্য অ্যানিউরিজ়মে আক্রান্ত হয়েছে। আবার তৈরি হয় মৃত্যুর আশঙ্কা। তবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে তখনও পর্যন্ত সিরিজ়ের সঙ্গে যুক্ত কাউকেই শারীরিক অসুস্থতার কথা টের পেতে দেননি অভিনেত্রী।

১৬ ২১

২০১৩ সালের শুরুর দিক। ‘গেম অফ থ্রোন্‌স’-এর তৃতীয় সিজ়নের শুটিং শেষ করেছেন এমিলিয়া। এক দিন হঠাৎই অ্যানিউরিজ়মের কারণে তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। চিকিৎসকেরা আবার এমিলিয়ার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করেন। দীর্ঘ সেই অস্ত্রোপচারের পর তাঁর মস্তিষ্কের একটি হাড় সরিয়ে সেখানে টাইটেনিয়ামের প্লেট বসানো হয়।

১৭ ২১

দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার সফল হওয়ার পর আবার এমিলিয়ার কথা বলায় সমস্যা তৈরি হয়। তবে কিছু দিন পর বাক্‌শক্তি ফিরেও পান তিনি। চিকিৎসকদের কাছে এমিলিয়ার প্রাণ বাঁচা ছিল অলৌকিক। তবে দ্বিতীয় অস্ত্রোপচারের পরেও দমিয়ে রাখা যায়নি এমিলিয়াকে। আবার অভিনয়ে ফেরেন তিনি।

১৮ ২১

এর পর ‘গেম অফ থ্রোন্‌স’-এর একের পর এক সিরিজ়ে কাজ করেন তিনি। ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় ডেনেরিস টারগেরিয়ান চরিত্রটি। অন্যতম প্রধান চরিত্রেও পরিণত হয়। তবে অনেকেরই কোনও ধারণা ছিল না যে এর মাঝে কত শারীরিক লড়াই লড়তে হয়েছিল এমিলিয়াকে।

১৯ ২১

২০১৯ সালে ‘গেম অফ থ্রোন্‌স’-এর ফাইনাল সিজ়নের পর তাঁর শারীরিক অসুস্থতার কথা প্রকাশ্যে আনেন এমিলিয়া। তাঁর লড়াইয়ের কাহিনি প্রচুর মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। অনেকে চিঠিও লেখেন তাঁকে।

২০ ২১

২০১৯ সালেই অসরকারি একটি সংস্থা শুরু করেন এমিলিয়া। মস্তিষ্কের রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে সংস্থাটি। ২০২৪ সালে সমাজসেবামূলক কাজের জন্য ব্রিটিশ রাজপরিবারের তরফে বিশেষ সম্মান অর্জন করেন এমিলিয়া।

২১ ২১

এখনও এমিলিয়ার মস্তিষ্কের বেশ কিছুটা অংশ নেই। তাঁর মস্তিষ্কের কিছুটা অংশ মৃতও বলা যায়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর মস্তিষ্ক কোনও দিনই পুরোপুরি ঠিক না-ও হতে পারে। তবে লড়াই থামাননি অভিনেত্রী। অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন সমাজসেবামূলক কাজ।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement