Indian Army

Chandrashekhar Harbola: ‘বাবা কবে ফিরবে মা?’ ৩৮ বছর পর কফিনবন্দি হয়ে ফেরেন ‘অপারেশন মেঘদূতের’ ল্যান্সনায়েক

কবিতা-ববিতার বাবা ল্যান্সনায়েক চন্দ্রশেখর হরবোলা বাড়ি ফিরে এসেছেন বটে। তবে সশরীরে নয়। ফিরেছে তাঁর নিথর দেহ। ৩৮ বছর পর!

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২২ ১৩:২০
Share:
০১ ১৫

‘বাবা কবে বাড়ি ফিরবে মা?’ বছরের পর বছর ধরে মায়ের কাছে এই একই প্রশ্ন করে গিয়েছেন কবিতা এবং ববিতা। মেয়েদের প্রশ্নের জবাবে শান্তিদেবীর বাঁধা বুলি ছিল, কাজের জন্য বাইরে গিয়েছেন তাঁদের বাবা। শীঘ্রই ফিরে আসবেন তিনি। বছরের পর বছর গড়িয়ে গিয়েছে। বদল হয়নি মা-মেয়েদের প্রশ্নোত্তরে।

০২ ১৫

অবশেষে ফিরলেন কবিতা-ববিতার বাবা। তবে সশরীরে নয়। ফিরেছে তাঁর নিথর দেহ। ৩৮ বছর পর! প্রায় চার দশক ধরে কবিতা-ববিতার বাবা তথা ভারতীয় সেনাবাহিনীর ল্যান্সনায়েক চন্দ্রশেখর হরবোলার দেহ চাপা পড়েছিল সিয়াচেনের হিমবাহের তুষারে।

Advertisement
০৩ ১৫

সম্প্রতি সিয়াচেন থেকে ল্যান্সনায়েকের দেহ উদ্ধার করতে পেরেছেন সেনা জওয়ানেরা। ১৯৮৪ সালের ২৯ মে ‘অপারেশন মেঘদূতের’ অঙ্গ হিসাবে সিয়াচেনে নিয়মমাফিক টহলদারি চালাচ্ছিলেন চন্দ্রশেখর। সে সময়ই এক তুষারঝড়ে চাপা পড়েছিলেন সেনাবাহিনীর ২০ জন। তাঁদের মধ্যে ১৫ জনের দেহ উদ্ধার করা গেলেও বাকিদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ওই পাঁচ জনের মধ্যে ছিলেন ল্যান্সনায়েক চন্দ্রশেখরও।

০৪ ১৫

সিয়াচেনে ওই অভিযানকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তকমা দেওয়া হয়। পাকিস্থানের সেনাবাহিনীর হাত থেকে হিমবাহের ‘পয়েন্ট ৫৯৬৫’ অঞ্চলকে উদ্ধার করাই ছিল ল্যান্সনায়েক চন্দ্রশেখরদের দায়িত্ব। ওই অভিযানে সাফল্যের জেরে শত্রুপক্ষের কবলে যেতে পারেনি সিয়াচেন। তবে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু যুদ্ধের ময়দান সিয়াচেন ভারত-পাক দু’দেশেরই বহু সেনারই প্রাণ কেড়েছে।

০৫ ১৫

ভারতীয় সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, গত সপ্তাহে সিয়াচেনে রুটিন টহলদারির সময় একটি বাঙ্কারের ভিতরে এক জনের দেহ পড়ে থাকতে দেখেন জওয়ানেরা। সেখানে পড়ে থাকা একটি ধাতব পাতে খোদিত ছিল ল্যান্সনায়েকের আইডি নম্বর। সমস্ত রেকর্ড খতিয়ে দেখে সেনা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হন, দেহটি চন্দ্রশেখরেরই।

০৬ ১৫

ল্যান্সনায়েক চন্দ্রশেখরকে ‘নিখোঁজ’ ঘোষণা করার সময় কবিতার বয়স ছিল আট। ববিতা তখন মোটে চার। প্রায় চার দশক পর, ১৩ অগস্ট বাবার ফিরে আসার খবর জানতে পারেন তাঁরা। তবে তিনি যে এ ভাবে ফিরে আসবেন, তা কল্পনাও করতে পারেননি কবিতারা।

০৭ ১৫

এত দিন ধরে কবিতারা এই আশায় বেঁচেছেন যে হয়তো তাঁদের বাবা বেঁচে রয়েছেন। হয়তো তাঁদের বাবাকে পাক সেনারা বন্দি করে রেখেছেন। হয়তো কোনও এক দিন তিনি ফিরে আসবেন। তবে উত্তরাখণ্ডের হলদোয়ানি জেলায় সে খবর আর আসেনি। উল্টে এসেছে কফিনবন্দি দেহ। সেখানেই পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় ল্যান্সনায়েক চন্দ্রশেখরের অন্ত্যেষ্টি করা হয়েছে।

০৮ ১৫

এই ৩৮ বছরে শান্তিদেবীর জীবনে দু’টিই লক্ষ্য ছিল। মেয়েদের সাধ্যমতো পড়াশোনা করিয়ে মানুষ করে তোলা। এবং প্রার্থনা করা, যাতে স্বামী ফিরে আসেন।

০৯ ১৫

সংসার চালানোর জন্য বাগেশ্বর জেলায় এক সরকারি হাসপাতালে নার্সের কাজ করতেন শান্তিদেবী। মেয়েদের পড়াশোনায় নজর দিতে নতুন করে সংসার পাতার কথা ভাবারও ফুরসত হয়নি।

১০ ১৫

সংবাদমাধ্যমে শান্তিদেবী বলেন, ‘‘মেয়েদের বলতাম, তোমাদের বাবা ফিরে আসবে।’’ শেষ বার ল্যান্সনায়েক যে পথ দিয়ে কাজে গিয়েছিলেন, প্রায়শই সেখানে চলে যেতেন তিনি। শেষ বার স্ত্রীকে বলেছিলেন, শীঘ্রই ফিরে আসবেন। তবে সে কথা রাখেননি ল্যান্সনায়েক।

১১ ১৫

দিনের পর দিন কেটে গেলেও আশাহত হননি শান্তিদেবী। তিনি বলেন, ‘‘ভাবতাম, ওকে বোধ হয় পাক সেনারা বন্দি করে রেখেছেন। এমন নানা চিন্তাই আসত মনে।’’ তবে ১৩ অগস্ট ল্যান্সনায়েকের দেহ পাওয়ার খবর শুনে তাঁদের সমস্ত আশা শেষ হয়ে গিয়েছে। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রতি মুহূর্তে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন শান্তিদেবীরা।

১২ ১৫

ল্যান্সনায়েকের ভাইপো হরিশচন্দ্র হরবোলা জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর তরফে কাকার মৃত্যুর খবর জেনে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। তবে শোকের মধ্যেও গর্বিত ল্যান্সনায়েকের আত্মীয়পরিজনেরা। দেশের জন্য প্রাণ গিয়েছে চন্দ্রশেখরের।

১৩ ১৫

ল্যান্সনায়েকের শেষকৃত্যে উপস্থিত সেনার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, বছরের পর বছর গড়িয়ে গেলেও চন্দ্রশেখরের সন্ধান চালিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘নিখোঁজ সেনাদের জন্য তল্লাশি অভিযান কখনই থামানো হয়নি। আশা করি ল্যান্সনায়েকের চন্দ্রশেখরের মতো অন্যদেরও খুঁজে পাব।’’

১৪ ১৫

সে দিনের সেই ছোট্ট মেয়েরা আজ মধ্যবয়সে পৌঁছেছেন। ৪৬-এর কবিতা এবং ৪২-এর ববিতার সঙ্গে স্বামীর শেষকৃত্যে ছিলেন শান্তিদেবীও। ৬৩ বছরের সেই মহিলার সঙ্গে ল্যান্সনায়েকের দেহ নিতে ভেঙে পড়েছিল গোটা এলাকা। শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সময় বার বারই সমবেত ধ্বনি উঠেছে— ‘ল্যান্সনায়েক অমর রহে’।

১৫ ১৫

গোটা এলাকার বাসিন্দাদের মতোই কান্নাভেজা চোখে বাবাকে বিদায় জানিয়েছেন কবিতা এবং ববিতা। প্রায় চার দশক ধরে যে প্রশ্নের জবাব চাইতেন তাঁরা, তা-ও পেয়ে গিয়েছেন তাঁরা। তবে সে জবাব যে এ ভাবে আসবে, তা কল্পনাও করতে পারেননি কবিতারা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement