Indian Pakistan Tensions

‘ড্রাগন জেটে ধ্বংস ভারতের রাফাল’! পাক মন্ত্রীর মিথ্যাচার ওড়াল চিন, ‘বন্ধু’র হাতেই বেআব্রু পাকিস্তান

চিনের তৈরি জে-১০সি যুদ্ধবিমানের সাহায্যে ভারতের রাফাল ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেন পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার। কিন্তু, ইসলামাবাদ যে মিথ্যাচার করছে, তা জানিয়ে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে বেজিং।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৫ ১৬:১৩
Share:
০১ ১৯

ক্ষমতায় এঁটে উঠতে না-পেরে লাগাতার ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে ইসলামাবাদ। কিন্তু, সেখানে ‘বন্ধু’ চিনের নাম করতেই ফুঁসে উঠল ড্রাগন। শুধু তা-ই নয়, রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তাদের মিথ্যাচারকে সারা দুনিয়ার সামনে বেআব্রু করেছে বেজিং।

০২ ১৯

গত ৭ মে মধ্যরাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের (পাক অকুপায়েড জম্মু-কাশ্মীর বা পিওজেকে) মোট ন’টি জায়গায় হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের গুপ্ত ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় ফৌজ। এই অভিযানকে ‘অপারেশন সিঁদুর’ বলে উল্লেখ করেছে বাহিনী। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, সংশ্লিষ্ট অভিযানের খবর প্রকাশ্যে আসতেই কোমর বেঁধে মিথ্যাচারে নেমে পড়ে ইসলামাবাদ।

Advertisement
০৩ ১৯

ঘটনার দিনই ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে পাক পার্লামেন্ট ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’তে বিবৃতি দেন শাহবাজ় শরিফ। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘মোট ৮০টি যুদ্ধবিমান নিয়ে পাকিস্তানের ছ’টি জায়গায় হামলা চালিয়েছে ভারত। এর মধ্যে মোট পাঁচটি বিমানকে উড়িয়ে দেওয়া গিয়েছে, যার দু’টি ফরাসি জেট রাফাল। সেগুলি ভারতের জম্মু-কাশ্মীর এবং পঞ্জাবের ভাতিন্ডায় ছিটকে গিয়ে পড়ে।’’ এর জন্য পাক বায়ুসেনার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।

০৪ ১৯

‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’তে শাহবাজ়ের ওই মন্তব্যের পর আরও এক কদম এগিয়ে বিবৃতি দেন পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার। তিনি বলেন, ‘‘ভারতীয় যুদ্ধবিমান, বিশেষত ফরাসি জেট রাফাল ধ্বংস করতে আমাদের বিমানবাহিনী জে-১০সি লড়াকু জেট ব্যবহার করেছে। চিনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এগুলি আমরা তৈরি করেছি।’’ তাঁর এ হেন বক্তব্যের পরেই পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়ে বিষয়টিকে পুরোপুরি ভুয়ো বলে উড়িয়ে দেয় বেজিং।

০৫ ১৯

এই ইস্যুতে চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র লিন জ়িয়ান বলেন, ‘‘জে-১০সি লড়াকু জেট নিয়ে যে দাবি করা হচ্ছে, সেই সংক্রান্ত কোনও তথ্য আমাদের হাতে নেই।’’ তবে সন্ত্রাসবাদের তীব্র সমালোচনা করে ভারত ও পাকিস্তান দু’টি দেশকেই সংযত হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তাঁর ওই বক্তব্যের পর মিথ্যাচার ধরা পড়ায় প্রবল অস্বস্তির মুখে পড়ে ইসলামাবাদ।

০৬ ১৯

‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবাল টাইমস’ও ভুয়ো খবর প্রচার করেছিল। একটি ভেঙে পড়া যুদ্ধবিমানের ছবি দিয়ে সেটি রাফালের ধ্বংসাবশেষ বলে দাবি করে তাঁরা। অন্যান্য পাক গণমাধ্যমের মতো সেখানেও ভারতের পাঁচটি রাফাল জেটকে ইসলামাবাদের বিমানবাহিনী উড়িয়েছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। কিন্তু, অচিরেই তাদের ভুল ধরিয়ে দেয় প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (পিআইবি)।

০৭ ১৯

পাকিস্তানের তরফে বার বার রাফাল যুদ্ধবিমান ধ্বংসের কথা বলার নেপথ্যে সুনির্দিষ্ট একটি কারণ রয়েছে বলে মনে করেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা। সূত্রের খবর, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ দু’টি বিশেষ হাতিয়ার ব্যবহার করেছে দেশের ফৌজ। সেগুলি হল, হ্যামার বোমা ও স্ক্যাল্প ক্ষেপণাস্ত্র। এগুলি মূলত রাফাল লড়াকু জেট থেকে ছোড়া হয়ে থাকে। আর তাই এই অভিযানে নয়াদিল্লি ফরাসি যুদ্ধবিমানটিকে ময়দানে নামায় বলে মনে করা হচ্ছে।

০৮ ১৯

বর্তমানে ভারতীয় বায়ুসেনার আধুনিকতম যুদ্ধবিমান হল রাফাল। বিশ্লেষকদের দাবি, সেই কারণেই ফরাসি লড়াকু জেটকে ধ্বংস করা গিয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে দিয়ে বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে পাকিস্তানের সেনা ও সরকার। অন্য দিকে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ এই ধরনের কোনও ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেনি নয়াদিল্লি।

০৯ ১৯

২০০২ সাল থেকে জে-১০ সিরিজের যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে আসছে চিনের ‘পিপল্স লিবারেশন আর্মি’ বা পিএলএর বিমান এবং নৌবাহিনী। এক ইঞ্জিন বিশিষ্ট বহুমুখী (মাল্টিরোল) এই লড়াকু জেটটির নির্মাণকারী সংস্থার নাম চেংডু এয়ারক্রাফ্‌ট কর্পোরেশন। এতে রয়েছে অত্যাধুনিক এইএসএ রেডার। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে চিন বাদে একমাত্র পাকিস্তানের বায়ুসেনাই এই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে।

১০ ১৯

বিশ্লেষকদের দাবি, প্রথম দিকে ইচ্ছাকৃত ভাবেই পাক বায়ুসেনার রাফাল ধ্বংস সংক্রান্ত ভুয়ো তথ্য ‘গ্লোবাল টাইমস’-এর মাধ্যমে প্রচার করেছে চিন। এর মাধ্যমে অস্ত্রবাজারে নিজের অবস্থান মজবুত করার পরিকল্পনা ছিল বেজিঙের। কিন্তু, এই সংক্রান্ত কোনও সরকারি তথ্য হাতে না আসায় শেষে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরতে বাধ্য হয়েছে ড্রাগন সরকার।

১১ ১৯

অন্য দিকে, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর এক দিনের মাথাতেই (পড়ুন ৮ মে) লাহৌরের ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’কে (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) ধ্বংস করে নয়াদিল্লি। ইসলামাবাদের দাবি, এতে ইজ়রায়েলি মানববিহীন উড়ুক্কু যান ব্যবহার করেছে ভারতীয় সেনা। সূত্রের খবর, লাহৌর সেনাছাউনি সংলগ্ন এলাকায় মোতায়েন ছিল চিনের এইচকিউ-৯পি নামের ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’। ড্রোন হামলায় সেটিকে ভারত উড়িয়েছে বলে খবর প্রকাশ্যে এসেছে।

১২ ১৯

পাক ফৌজ়ের দাবি, লাহৌরে হামলা চালাতে ইজ়রায়েলি ‘হারোপ’ আত্মঘাতী ড্রোন ব্যবহার করেছে ভারতীয় বাহিনী। তবে ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ ধ্বংস হওয়ার কথা স্বীকার করেনি ইসলামাবাদ। এই সংক্রান্ত তথ্য দিয়েছে ভারতীয় ফৌজ। গত ৮ মে রাতে ফের উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের একাধিক শহরকে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে নিশানা করে পাকিস্তান। ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ ব্যবহার করে সেগুলিকে মাঝ-আকাশেই ধ্বংস করতে সক্ষম হয় এ দেশের সেনা।

১৩ ১৯

৮ মে রাতের হামলার সময়ে পাক বিমানবাহিনীর একটি জেএফ-১৭ লড়াকু জেট গুলি করে নামায় ভারতীয় ফৌজ। বিবৃতি দিয়ে এ কথা স্বীকার করে ইসলামাবাদ। এই যুদ্ধবিমান চিনের তৈরি। বিশ্লেষকদের দাবি, একের পর এক হাতিয়ার ধ্বংস হওয়ায় মুখ পুড়েছে বেজিঙের। আর তাই তড়িঘড়ি রাফাল ওড়ানোর ভুয়ো খবর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে ড্রাগন।

১৪ ১৯

অন্য দিকে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত তীব্র হওয়ায় এক সপ্তাহের জন্য আইপিএল স্থগিত করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। নিরাপত্তা এবং মানবিক কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কুড়ি-বিশের এই ক্রিকেট লিগে এখনও ১২টি ম্যাচ বাকি রয়েছে। এক সপ্তাহ পর ফের আইপিএল শুরু হলে সূচি যে বদলাবে তা বলাই বাহুল্য।

১৫ ১৯

৮ মে রাতে জম্মু-কাশ্মীর, পঞ্জাব এবং রাজস্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় পাকিস্তান। তাতে জম্মুর পুঞ্চে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত লাগোয়া জম্মু, পঠানকোট, উধমপুরে সেনাঘাঁটিগুলিকে নিশানা করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানোর চেষ্টা করে ইসলামাবাদের বাহিনী। ভারতীয় সেনা অবশ্য তার মোকাবিলা করেছে।

১৬ ১৯

জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা জানিয়েছেন, পাক আগ্রাসন আটকানো গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি জায়গা। তাঁর কথায়, ‘‘পুঞ্চের অবস্থা ভাল নয়। পাক গোলায় আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।’’ উপমুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করবেন বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি।

১৭ ১৯

গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান পর্যটক-সহ মোট ২৬ জন। ৭ মে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে সেই ঘটনার বদলা নেয় ভারত। তার পর থেকেই পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে তীব্র হয়েছে সংঘর্ষ। জম্মু-কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অফ কন্ট্রোল বা এলওসি) থেকে শুরু করে যা পঞ্জাব-রাজস্থান সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়েছে।

১৮ ১৯

এই সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই খবরের শিরোনামে চলে এসেছে বিশ্বের অন্যতম অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ। সূত্রের খবর, রাশিয়ার তৈরি এই হাতিয়ারের সাহায্যে পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা বানচাল করেছে ভারতীয় সেনা। বাহিনীতে অস্ত্রটি ‘সুদর্শন চক্র’ নামে পরিচিত।

১৯ ১৯

সূত্রের খবর, এস ৪০০ ছাড়াও পাকিস্তানের ড্রোন হামলা রুখে দিতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে এল-৭০ বন্দুক, জ়ু-২৩এমএম অ্যান্টি এয়ারক্রাফ্‌ট বন্দুকের মতো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। পাশাপাশি, ‘আনম্যান্‌ড এরিয়াল সিস্টেম’ (ইউএএস)-কেও কাজে লাগিয়েছে ভারতীয় ফৌজ।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement