China Taiwan Tension

দু’টি বিমানবাহী রণতরী, ৭০টি যুদ্ধজাহাজ, ডজন ডজন লড়াকু জেট! তাইওয়ানের ঘাড়ের কাছে হঠাৎ ‘রণসজ্জা’ চিনের

ফের তাইওয়ানের উপর চাপ বাড়াতে বিপুল সংখ্যায় যুদ্ধজাহাজ দিয়ে ঘিরে ধরে চিন। জাপান সীমান্তেও ‘উৎপাত’ চালিয়েছে ড্রাগনের আগ্রাসী নৌসেনা। এই নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে আমেরিকা। পাল্টা জবাব দিতে সময় নেয়নি শি জিনপিঙের সরকারও।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫ ১৪:৩২
Share:
০১ ১৮

ফের ড্রাগনের রক্তচক্ষু দেখল সাবেক ফরমোজা দ্বীপ! একগুচ্ছ রণতরীতে গোটা এলাকা ঘিরে চিনা নৌসেনা শাসানি দেওয়ায় তাইওয়ানের বেড়েছে রক্তচাপ। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা অবশ্য মনে করেন, এর মাধ্যমে আমেরিকাকে খোলা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে ড্রাগন। ফলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থা যে জটিল হতে চলেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

০২ ১৮

চলতি বছরের ২ জুন এই ইস্যুতে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেন তাইওয়ান সেনাবাহিনীর এক পদস্থ কর্তা। তিনি জানিয়েছেন, মে মাসে দু’টি বিমানবাহী যুদ্ধপোত এবং অন্তত এক ডজন রণতরী গিয়ে গোটা দ্বীপকে ঘিরে ফেলে চিনের ‘পিপল্‌স লিবারেশন আর্মি’ বা পিএলএ-র নৌবাহিনী। ১ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত পীত সাগর এবং দক্ষিণ চিন সাগরে ৭০-এর বেশি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রেখেছিল বেজিং। পরে ধীরে ধীরে সেগুলিকে অন্যত্র সরিয়ে দেয় ড্রাগন।

Advertisement
০৩ ১৮

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাইওয়ান ফৌজের ওই কর্তার দাবি, গোটা দ্বীপটিকে কব্জা করার জন্য মূলত দুটো পন্থা নিয়েছে চিন। প্রথমত, নৌবাহিনী দিয়ে ঘিরে ধরে মানসিক চাপ তৈরি করছে বেজিং। এর ফলে তাইওয়ানবাসীর লড়াকু মানসিকতায় চিড় ধরবে বলে মনে করেন ড্রাগন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। দ্বিতীয়ত, ছলে বলে কৌশলে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দ্বীপরাষ্ট্রের শাসনভার ছাড়তে বাধ্য করার চেষ্টাও চালাচ্ছেন তিনি।

০৪ ১৮

তাইওয়ানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, মে মাসে শুধু যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেই ক্ষান্ত হয়নি বেজিং। দ্বীপরাষ্ট্রের উপর দিয়ে যখন-তখন লড়াকু জেট উড়িয়েছে ড্রাগন সেনা। সেগুলির অধিকাংশকেই বিমানবাহী রণতরী থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল। তবে কিছু লড়াকু জেটকে মূল চিনা ভূখণ্ড থেকেও উড়িয়েছিল পিএলএ। জিনপিং ফৌজের এ হেন আগ্রাসী মনোভাবে দ্বীপরাষ্ট্র জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

০৫ ১৮

সাবেক ফরমোজা দ্বীপের সেনা সূত্রকে উদ্ধৃত করে দ্য ইউরেশিয়ান টাইমস লিখেছে যে, তাইওয়ানবাসীর পালানোর সমস্ত রাস্তা বন্ধ করতে মিয়াকো প্রণালীতে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে চিন। প্রশান্ত মহাসাগরের এই এলাকার অপর নাম কেরামা গ্যাপ। দু’টি জাপানি দ্বীপের মধ্যবর্তী ওই জায়গাটির আলাদা ভূ-কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে। একে জাপান সাগরের প্রবেশদ্বার বলা যেতে পারে। এই নিয়ে টোকিয়ো আপত্তি জানালেও তাতে আমল দেয়নি ড্রাগনের নৌসেনা।

০৬ ১৮

পিএলএ নৌবাহিনীর কমান্ডারদের যুক্তি ছিল, দূরপাল্লার মহড়ায় অংশ নিয়েছেন তাঁরা। সেই কারণে সম্মিলিত বাহিনীকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ১৯ মে তাইওয়ান প্রণালী সংলগ্ন পেংহু দ্বীপ থেকে অন্তত ৩০টি চিনা যুদ্ধজাহাজকে চিহ্নিত করে সেখানকার সেনা। সেগুলির উপর কড়া নজর রাখা হয়েছিল। তাইপের ফৌজি জেনারেলদের দাবি, ইচ্ছাকৃত ভাবে হয়রানির জন্য সেগুলিকে ওখানে পাঠানো হয়েছিল।

০৭ ১৮

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মে মাসে অন্তত ৭৫টি চিনা যুদ্ধবিমান তাঁদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। অন্য দিকে, মিয়াকো প্রণালীতে জাপানি উপকূলরক্ষীবাহিনীর রণতরীর মুখোমুখি হয় ড্রাগনের যুদ্ধজাহাজ। পিএলএ নৌবাহিনীকে টোকিয়োর জলযোদ্ধারা ফিরে যেতে বললে তারা তা অস্বীকার করে। ফলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ওই সময় বেজিঙের বিরুদ্ধে আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় ‘সূর্যোদয়ের দেশ’।

০৮ ১৮

গত বছরের ২০ মে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন লাই চিং-তে। সেই ঘটনার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজধানী তাইপে-তে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঠিক সেই সময়ে চিনা নৌসেনার দ্বীপরাষ্ট্রটিকে ঘিরে ধরার ঘটনাকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও সরকারি ভাবে এখনও এই নিয়ে কোনও বিবৃতি দেয়নি সাবেক ফরমোজার রাজনৈতিক নেতৃত্ব।

০৯ ১৮

অন্য দিকে, সিঙ্গাপুরের ‘শাংগ্রি-লা’ নিরাপত্তা বৈঠকে এই ইস্যুতে মুখ খোলেন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট করার চেষ্টা করছে চিন৷ ক্রমাগত হুমকিও দিয়ে চলেছে বেজিং৷ এই হুমকিকে হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়। পরবর্তী কালে তা আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে৷’’

১০ ১৮

‘শাংগ্রি-লা’ নিরাপত্তা বৈঠকে ড্রাগনকে নিশানা করতে কোনও রাখঢাক করেননি পিট। চিন তাইওয়ান দখলের চেষ্টা করছে বলে স্পষ্ট অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘এতে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত রাষ্ট্রগুলির উপর চরম আঘাত নেমে আসবে। শুধু তা-ই নয়, এর ফল ভুগতে হবে বিশ্বকেও।’’

১১ ১৮

আগ্রাসী ড্রাগনের হাত থেকে বাঁচতে এই এলাকার আমেরিকার মিত্রদেশগুলিকে নিরাপত্তা খাতে আরও বেশি ব্যয় করার পরামর্শ দিয়েছেন পিট। এই লড়াইয়ে তাদের পাশে যে যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে এবং থাকবে, তা-ও স্পষ্ট করে দেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মসনদে থাকাকালীন তাইওয়ানের উপর চিন কোনও ভাবেই দখল কায়েম করতে পারবে না বলে স্পষ্ট করে ‘সুপার পাওয়ার’ দেশটির প্রতিরক্ষা সচিব।

১২ ১৮

পিটের এ হেন মন্তব্যের পর পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেয় বেজিং। সিঙ্গাপুরের চিনা দূতাবাসের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘‘পিট হেগসেথ বার বার আমাদের দেশকে কটাক্ষ এবং উপর্যুপরি আক্রমণ করেছেন। আদতে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার ক্ষেত্রে আমেরিকা নিজেই সবচেয়ে বড় সমস্যা সৃষ্টিকারী!’’ এর পরই আগুন নিয়ে খেলা উচিত নয় বলে ওয়াশিংটনকে হুমকি দেয় বেজিং।

১৩ ১৮

তাইওয়ানের সরকারি দফতরের পদস্থ কর্তাদের দাবি, একটা সময়ে মনে হয়েছিল যে কোনও মুহূর্তে সৈন্য নিয়ে ঢুকে পড়বে চিন। চারদিক থেকে আক্রমণ শানালে বহির্শক্তির সাহায্য ছাড়া তা যে ঠেকানো সম্ভব হত না, তা একরকম মেনে নিয়েছেন তাঁরা। গত ১৫ মে এ ব্যাপারে ড্রাগনের মানসিকতা যে কত দূর ভয়ানক হতে পারে, তার রূপরেখা দেন অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন নৌসেনা অফিসার রিয়ার অ্যাডমিরাল মার্ক মন্টগোমারি। ‘তাইওয়ানের উপর কমিউনিস্ট পার্টি অফ চায়নার (সিপিসি) আগ্রাসন’ শীর্ষক একটি লেখা প্রকাশ করেছেন তিনি।

১৪ ১৮

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনটিতে মার্ক লিখেছেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার ছাউনিগুলিতে আমাদের দ্রুত সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। যেখানে ৫০০ জন মোতায়েন রয়েছেন, সেখানে হাজার জনকে নিয়ে যেতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের অবিলম্বে কোটি কোটি ডলারের অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম তাইওয়ানের হাতে তুলে দেওয়া উচিত। এতে প্রাথমিক ভাবে চিনকে ধাক্কা দিতে পারবে তারা। যুদ্ধের সময়ে এই সময়টুকুর খুবই প্রয়োজন হবে। সাহায্য পৌঁছোনোর আগেই গোটা দ্বীপ ড্রাগন ফৌজের হাতে গেলে তা পুনর্দখল করা মোটেই সহজ হবে না।

১৫ ১৮

চিনা বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, গত বছর তাইওয়ানকে সাত হাজার কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করে আমেরিকা। সেই হাতিয়ারগুলির অধিকাংশই এখনও হাতে পায়নি দ্বীপরাষ্ট্রের সেনা। এই ঘটনাকে ‘যুদ্ধের উস্কানি’ বলে কড়া সমালোচনা করেছে বেজিং। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রের থেকে পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেল্‌থ’ শ্রেণির এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পেতে চলেছে তাইপে ফৌজ।

১৬ ১৮

তাইওয়ানকে আলাদা দেশ হিসাবে মান্যতা দিতে রাজি নয় চিন। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রটিকে তাদের দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করে বেজিং। কয়েক বছর আগে এই নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন ড্রাগনভূমির প্রেসিডেন্ট তথা সিপিসির চেয়ারম্যান শি। তিনি বলেন, ‘‘তাইওয়ানের চিনের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় কেউ বাধা দিতে পারবে না।’’

১৭ ১৮

প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রটির উপর বেজিঙের এ হেন ‘অবৈধ’ দাবিকে আমেরিকার পাশাপাশি মানতে অস্বীকার করেছে জাপানও। টোকিয়ো মনে করে, ড্রাগন ফৌজ তাইওয়ান দখল করলে তাঁদের পরবর্তী লক্ষ্য হবে জাপান। ইতিমধ্যেই তাদের বেশ কয়েকটি দ্বীপের উপর অধিকার দাবি করেছে জিনপিং সরকার। এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে তীব্র হচ্ছে সংঘাত।

১৮ ১৮

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা মনে করেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজের হাতে নিতে তাইওয়ানকে দখল করতে চায় চিন। বেজিং এই লক্ষ্যে সফল বলে সেখানে আমেরিকার প্রবেশ কঠিন হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে অর্থনীতি, সামরিক এবং মহাকাশ গবেষণা-সহ প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে ড্রাগন। ফলে আগামী দিনে দুই ‘সুপার পাওয়ার’-এর সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউই।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement