বেড়াতে গিয়ে নানা রকমের হোটেলে থাকার অভিজ্ঞতা সকলেরই কমবেশি আছে। কেউ পছন্দ করেন বিলাসিতায় মোড়া নামীদামি হোটেল। কারও আবার ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধার বন্দোবস্ত থাকলেই যথেষ্ট।
অভিজ্ঞেরা বলেন, ঘুরতে যাওয়ার সময় অনেকে ভেবেচিন্তে হোটেল বুক করতে হয়। না হলে বিপদে পড়তে হতে পারে। তবে পৃথিবীতে এমন হোটেলেরও অস্তিত্ব রয়েছে যা দেখলে বা যার বর্ণনা শুনলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য।
অনেকে পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে হোটেলে থাকেন, আবার কাউকে কর্মসূত্রে বাইরে গিয়ে একা একাই দীর্ঘ দিন হোটেলে থাকতে হয়। অনেক দিন হোটেলে একা থাকতে থাকতে বিরক্তও বোধ করেন তাঁরা।
একা একা হোটেলে যাঁদের কাটাতে হয় তাঁদের জন্য এ বার মুশকিল আসান করল চিনের একটি হোটেল। চিনের উহানের ওই হোটেলে একা থাকতে গেলে হোটেল কর্তৃপক্ষের তরফে ‘বিশেষ বন্ধু’র ব্যবস্থা করা হয়। সব ক্ষেত্রেই সঙ্গ দেয় সেই বন্ধু। একই কামরায় থাকেও।
তবে এ বন্ধু যে-সে বন্ধু নয়। মানুষের বিশ্বস্ত প্রাণী হিসাবে পরিচিত সে। সেই বন্ধু একটি কুকুর। ‘কান্ট্রি গার্ডেন ফিনিক্স’ নামে চিনের উহানের ওই হোটেলে একা পর্যটকদের সঙ্গ দেওয়ার জন্য একটি করে প্রশিক্ষিত কুকুরের ব্যবস্থা করা হয়।
অতিথিরা চাইলে গোল্ডেন রিট্রিভার, হাস্কি বা ওয়েস্ট হাইল্যান্ড টেরিয়ারের মতো সারমেয় প্রজাতির সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন ওই হোটেলে। তার জন্য প্রতি দিন খরচ করতে হবে অতিরিক্ত ৪,৭০০ টাকা।
চিনের ওই হোটেলে পরিষেবাটি চালু হয়েছে গত জুলাই মাস থেকে। ইতিমধ্যেই ৩০০ জনের বেশি অতিথি সেই পরিষেবা নিয়েছেন বলে খবর। হোটেল ম্যানেজার ডং সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, বেশির ভাগ অতিথিই নাকি ওই পরিষেবা পছন্দ করেছেন।
উদ্যোগটি চিনের দ্রুত বর্ধনশীল পোষ্য সংক্রান্ত অর্থনীতির সঙ্গেও যুক্ত, যা ২০২৪ সালে শুধুমাত্র শহরাঞ্চলে ৩০ হাজার কোটি ইউয়ানে পৌঁছেছে এবং বার্ষিক ৭.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে ২০২৭ সালের মধ্যে এটি ৪০ হাজার কোটি ইউয়ানে পৌঁছোবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কুকুরদের ক্যাফে এবং পোষ্যের সঙ্গে যোগব্যায়াম করা থেকে শুরু করে পোষ্যের সাজসজ্জার খেয়াল রাখা— চিনে পোষ্য নিয়ে ধ্যানধারণা ক্রমশ বিকশিত হচ্ছে।
সেই আবহেই চিনের অনেক হোটেল প্রশিক্ষিত সারমেয়দের সঙ্গে অতিথিদের একই কামরায় থাকার এবং সময় কাটানোর সুযোগ দিচ্ছে। সে রকমই একটি হোটেল উহানের ‘কান্ট্রি গার্ডেন ফিনিক্স’।
অতিথিরাও জানাচ্ছেন, কোনও কোনও সারমেয় বেশি খেলাধুলা করতে পছন্দ করে। অনেকে আবার শান্ত এবং বাধ্য সঙ্গীর মতো চুপচাপ শুধু সঙ্গই দেয়। গা-হাত চেটে আদর করে।
‘কান্ট্রি গার্ডেন ফিনিক্স’ হোটেলে বর্তমানে ১০টি কুকুর রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রিট্রিভার, হাস্কি এবং টেরিয়ার। কুকুরগুলির প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষকও নিয়োগ করেছেন কর্তৃপক্ষ। পোষ্যের সাহচর্যে অতিথির হোটেলবাস যাতে সুন্দর হয়, তা নিশ্চিত করতে সারমেয়র স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয় নিয়মিত।
কুকুরের মালিকেরাও এই ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট। পোষ্যকে হোটেলে পাঠানোর বিনিময়ে টাকা পাচ্ছেন তাঁরা। পোষা সারমেয় যে অতিথিদের বন্ধু হয়ে উঠছে, তা-ও তাঁদের ভাল লাগছে।
এক সারমেয়র মালিকের কথায়, ‘‘আমি আগে পোষ্যকে ক্যাফেতে পাঠাতাম, কিন্তু এখন সে হোটেলে যায়। অতিথিদের সঙ্গে খেলা করে। তাঁদের সঙ্গে সময় কাটায়।’’
জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও পুরো বিষয়টিতে আইনি জটিলতাও রয়েছে। এক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, কোনও কুকুরের সঙ্গে হোটেলে থাকার সময় দুর্ঘটনা ঘটলে তার জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করা হবে। তাই হোটেলগুলিতে পেশাদার প্রশিক্ষক নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়েছেন অনেকে।
মজার বিষয় হল, সরকারি তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে চিনে শিশুদের চেয়ে বেশি পোষ্য রয়েছে। ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, পোষ্যের সংখ্যা চার বছরের কম বয়সি শিশুদের চেয়ে বেশি। আট জন শহুরে বাসিন্দার মধ্যে এক জন পোষ্যের মালিক বলেও ওই রিপোর্টে উঠে এসেছিল।