দরজা ভাঙার অভিনব কায়দার কারণে টেলিভিশনের পর্দায় ট্রেডমার্ক গড়ে তুলেছিলেন তিনি। কঠিন পরিস্থিতির উদয় হলে ডাক পড়ত তাঁর। ‘দয়া, দরওয়াজ়া তোড়’ এই সংলাপও কম সময়ের মধ্যে লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে। এই সংলাপের জনপ্রিয়তার নেপথ্যে রয়েছেন দয়ানন্দ চন্দ্রশেখর শেট্টী, জনপ্রিয় হিন্দি ধারাবাহিকের চরিত্র ইনস্পেক্টর দয়া।
১৯৯৮ সাল থেকে ছোট পর্দায় সম্প্রচার শুরু হয়েছে ‘সিআইডি’ ধারাবাহিকের। দু’দশক ধরে এই ধারাবাহিকের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন দয়ানন্দ। বড় পর্দায় অভিনয় করলেও ওই ধারাবাহিকের মাধ্যমেই রাতারাতি পরিচিতি তৈরি হয়ে যায় তাঁর। অথচ অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়ার কোনও স্বপ্নই ছিল না তাঁর।
ছোট থেকেই খেলাধুলার প্রতি টান ছিল দয়ানন্দের। ১৯৯৬ সালে মহারাষ্ট্রে ডিসকাস ছোড়ার এক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি নাটক এবং বিজ্ঞাপনে অভিনয়ও করতেন। কিন্তু পেশা হিসাবে খেলোয়াড়ের জীবনকেই বেছে নিতে চেয়েছিলেন।
স্বপ্নপূরণ হয়নি দয়ানন্দের। খেলতে গিয়ে পায়ে চোট পেয়েছিলেন। সেখান থেকে খেলাধুলা নিয়ে কেরিয়ার তৈরির স্বপ্ন চিরতরে মিলিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত অভিনয়ের দিকেই ঝুঁকে পড়েন তিনি।
১৯৯৬ সালে মুক্তি পাওয়া অজয় দেবগন অভিনীত ‘দিলজলে’ ছবিতে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান দয়ানন্দ। পাশাপাশি ছোটপর্দায় ধারাবাহিকের জন্যও অডিশন দিতে শুরু করেন।
১৯৯৮ সালে ‘সিআইডি’ ধারাবাহিকের জন্য অডিশন দিয়ে সুযোগ পেয়ে যান দয়ানন্দ। এই ধারাবাহিকে ইনস্পেক্টর দয়ার চরিত্রে অভিনয় করে কম সময়ের মধ্যে দর্শকের মনে জায়গা করে নেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি এই ধারাবাহিকের কয়েকটি পর্বের চিত্রনাট্যও নাকি রচনা করেছিলেন তিনি।
২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে ‘সিআইডি’ ধারাবাহিকের ৫০০তম পর্ব সম্প্রচারিত হয়। ১০ বছরের মাথায় ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ১,৫৪৭তম পর্বের মাধ্যমে ধারাবাহিকটি শেষ হয়ে যায়।
জনপ্রিয় ধারাবাহিক শেষ হওয়ার পর আবার ছ’বছরের অপেক্ষা। ওটিটির পর্দায় নতুন ভাবে ফিরে এসেছে ‘সিআইডি’। সঙ্গে ফিরে এসেছেন দয়ানন্দ। তাঁর সঙ্গে আবার নতুন করে ফিরে এসেছে অভিনেতাকে জড়িয়ে থাকা পুরনো বিতর্ক-সমালোচনাও।
হিন্দি ধারাবাহিকের পাশাপাশি বড়পর্দায় অভিনয় করেছেন মোনা আম্বেগাওকর। কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে যে, মোনার সঙ্গে নাকি পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন দয়ানন্দ। এমনকি, সেই সম্পর্ক থেকে এক কন্যাসন্তানেরও জন্ম দিয়েছিলেন মোনা।
‘সিআইডি’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে দয়ানন্দের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল মোনার। এই ধারাবাহিকে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ অঞ্জলিকা দেশমুখের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে মোনাকে। মোনার সঙ্গে দয়ানন্দের বেশ ভাল সম্পর্ক ছিল।
ধারাবাহিক চলাকালীন অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিলেন মোনা। ২০০৫ সালে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি ছিলেন অবিবাহিতা। সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিল মোনাকে।
সন্তানের পিতার নাম কোনও ভাবেই প্রকাশ্যে আনতে চাননি মোনা। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেছিলেন, ‘‘আমার সন্তান হয়েছে সে বিষয় নিয়ে জানাজানি হতেই পারে। কিন্তু আমি ওর পিতৃপরিচয় নিয়ে কোনও রকম আলোচনা করতে চাই না। ওর পিতা চাইলে নিজে থেকেই সেই পরিচয় স্বীকার করবে।’’
কন্যাসন্তানের জন্মের পর মোনার সঙ্গে দয়ানন্দের পরকীয়া সম্পর্ক নিয়ে জলঘোলা হতে শুরু করেছিল। ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, এই ধারাবাহিক থেকে দু’জনের প্রেমের সম্পর্ক। মোনাও নাকি তাঁর ঘনিষ্ঠমহলে স্বীকার করেছিলেন যে, দয়ানন্দ তাঁর সন্তানের পিতা। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করে কিছুই জানাননি অভিনেত্রী।
অন্য দিকে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে থাকার অভিযোগ উঠলে তা অস্বীকার করেছিলেন দয়ানন্দ। সাক্ষাৎকারে তিনি এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘আমার সঙ্গে মোনার নাম জড়িয়ে নানা রকম কথা ছড়িয়ে পড়ছে। ওর সঙ্গে কাজ ছাড়া আর কোনও সম্পর্ক ছিল না আমার। তা ছাড়া আমি বিবাহিত।’’
স্মিতা শেট্টী নামে এক তরুণীকে বিয়ে করেছেন দয়ানন্দ। তাঁদের এক কন্যাসন্তানও রয়েছে। বর্তমানে ‘সিঙ্গল মাদার’ মোনা। ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে এখনও রাজি নন অভিনেত্রী। তাঁর কন্যার পিতা আসলে কে তা রহস্যই রয়ে গিয়েছে।