India US Row

মোদী-পুতিনের হাত ধরাধরিতে আতঙ্কে পশ্চিমি বিশ্ব! ভারতকে পাশে চেয়ে ট্রাম্পকে দুষছে ‘মস্তান’ মস্কোর ইউরোপীয় প্রতিবেশী

‘সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা’ বা এসসিও বৈঠকে যোগ দিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজ়ান্ডার স্টাব। ভারতের মতো ‘কৌশলগত অংশীদার’-এর সঙ্গে সম্পর্কে শীতলতা আসায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দুষেছেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:২২
Share:
০১ ১৯

এক দিকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিম ইউরোপীয় শক্তিজোট ‘উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা’ বা নেটো (নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজ়েশন)। অন্য দিকে রাশিয়া, চিন এবং ‘ডেমোক্র্যাটিক পিপল্স রিপাবলিক অফ কোরিয়া’ বা ডিপিআরের (পড়ুন উত্তর কোরিয়া) অক্ষশক্তি। ধীরে ধীরে দুই মেরুতে ভাগ হয়ে পড়ছে গোটা দুনিয়া। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা। এই আবহে ভারতকে দলে টানতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিশানা করল নেটোভুক্ত ফিনল্যান্ড, যা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জল্পনা।

০২ ১৯

সম্প্রতি ট্রাম্প জমানার মার্কিন বিদেশনীতির কড়া সমালোচনা করেন ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজ়ান্ডার স্টাব। রাজধানী হেলসিঙ্কিতে একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘ইউরোপ এবং আমেরিকাকে বৈশ্বিক দক্ষিণ (পড়ুন গ্লোবাল সাউথ) এবং ভারতের প্রতি আরও সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নইলে আমরা হেরে যাব।’’ পরাজয় কোন দিক থেকে আসবে, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি আলেকজ়ান্ডার। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, স্টাবের এই মন্তব্যের সময় তাঁর পাশে ছিলেন লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট গীতানাস নৌসেদা।

Advertisement
০৩ ১৯

চলতি বছরের ৩১ অগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চিনের তিয়ানজ়িনে চলা ‘সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা’ বা এসসিওর (সাংহাই কো-অপারেটিভ অর্গানাইজ়েশন) বৈঠকে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে ড্রাগন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাদা করে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, মোদীকে নিজের গাড়িতে করে হোটেলে নিয়ে যান মস্কোর দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। সেই ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই নয়াদিল্লি ও ক্রেমলিনের সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে কাটাছেঁড়ায় বসে একাধিক পশ্চিমি দেশ।

০৪ ১৯

গত ২৭ অগস্ট থেকে ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ করে শুল্ক ধার্য করেছে ট্রাম্পের আমেরিকা। শুধু তা-ই নয়, নয়াদিল্লি অবিলম্বে রাশিয়ার থেকে অপরিশোধিত খনিজ তেল ‘উরাল ক্রুড’ কেনা বন্ধ না করলে নিষেধাজ্ঞার অঙ্ক আরও বৃদ্ধি পাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে ওয়াশিংটন। যদিও এই হুমকির কাছে মাথা নোয়াতে নারাজ মোদী সরকার। কেন্দ্রের সাফ যুক্তি, জাতীয় স্বার্থে মস্কোর থেকে সস্তা দরে ‘তরল সোনা’ আমদানি করা হচ্ছে, যা কোনও অবস্থাতেই বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব নয়।

০৫ ১৯

ভারতীয় পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র শুল্কের অঙ্ক বৃদ্ধি করতেই বিকল্প বাজারের সন্ধানে কোমর বেঁধে লেগে পড়ে নয়াদিল্লি। এই পরিস্থিতিতে সাত বছর পর প্রধানমন্ত্রী মোদীর চিন সফরের দিকে তাকিয়েছিল গোটা বিশ্ব। সেখানে শি এবং পুতিনের সঙ্গে তাঁকে খোশগল্প করতে দেখে প্রমাদ গুনেছে ফিনল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ার মতো রুশ সীমান্ত লাগোয়া পূর্ব ইউরোপের একাধিক দেশ। মস্কোর দিকে নয়াদিল্লির এ ভাবে ঝুঁকে পড়ার জন্য সম্পূর্ণ ভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দায়ী করছে তারা।

০৬ ১৯

আর তাই রাজধানী হেলসিঙ্কিতে দেওয়া বিবৃতিতে এসসিও বৈঠকের প্রসঙ্গ তোলেন ফিনল্যান্ড প্রেসিডেন্ট। স্টাবের কথায়, ‘‘চিনের বৈঠকে কী হয়েছে সেটা আমরা সবাই দেখেছি। পশ্চিম ইউরোপ কিন্তু যথেষ্ট ঝুঁকির মুখে রয়েছে। ভারতের মতো উদীয়মান শক্তির সঙ্গে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হলে সমূহ বিপদ। আমাদের পুরনো ব্যবস্থার কথা মাথায় রাখতে হবে।’’

০৭ ১৯

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, এসসিও সম্মেলনে পুতিন যোগ দেওয়া ইস্তক নতুন করে ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়েছে আতঙ্ক। ইউক্রেন সংঘাতকে রাশিয়া আরও সম্প্রসারিত করতে পারে বলে মনে করছে সেখানকার একাধিক দেশ। সে ক্ষেত্রে মস্কোর পরবর্তী নিশানা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড বা লিথুয়ানিয়ার। আর তাই পরমাণু শক্তিধর বিশ্বের পঞ্চম অর্থনীতির দেশ ভারতকে পাশে পেতে চাইছে তারা।

০৮ ১৯

ফিনল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ার এই আশঙ্কা অমূলক নয়। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পুতিনের নির্দেশে রুশ সৈন্য ইউক্রেন আক্রমণ করলে নেটোয় যোগ দেয় হেলসিঙ্কি। অন্য দিকে, ২০০৪ সালের মার্চে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের সদস্যপদ পায় এককালে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত লিথুয়ানিয়া। দু’টি ক্ষেত্রেই প্রবল আপত্তি জানিয়েছিল মস্কো।

০৯ ১৯

পুতিনের পক্ষে নেটোর বিস্তার মেনে নেওয়া কঠিন। এতে রাশিয়ার একেবারে দরজার সামনে এসে ঘাঁটি গাড়বে আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের বাহিনী। আর তাই ইউক্রেন নেটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করতেই সেখানে সেনা অভিযান করেন তিনি। ফলে, গত সাড়ে তিন বছর ধরে যুদ্ধের আগুনে পুড়ছে কিভ।

১০ ১৯

পূর্ব ইউরোপের যুদ্ধ যে সম্প্রসারিত হতে পারে, ইতিমধ্যেই তার ইঙ্গিত দিয়েছে ফ্রান্স। ইতিমধ্যেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে প্যারিস। পুতিনের চিন সফরের মধ্যেই দেশের সমস্ত হাসপাতালগুলির জন্য একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করে ফরাসি সরকার। সেখানে বলা হয়েছে, আগামী বছরের (পড়ুন ২০২৬) মার্চের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষ বেধে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে যাবতীয় হাসপাতালগুলিকে প্রস্তুত হতে নির্দেশ দিয়েছে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ প্রশাসন।

১১ ১৯

সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে যে, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বিদেশি সৈনিকদেরও চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ফরাসি স্বাস্থ্য মন্ত্রকের জারি করা এ-হেন নির্দেশিকার খবর প্রকাশ্যে আসতেই দুনিয়া জুড়ে শুরু হয়েছে হইচই। কূটনৈতিক মহলের জল্পনা, আগামী বছরের মধ্যেই নেটো বনাম রাশিয়ার যুদ্ধে রক্তাক্ত হবে ইউরোপ। মস্কো-বিরোধী জোটটির অন্যতম সদস্য রাষ্ট্র হল ফ্রান্স। আর তাই আসন্ন লড়াইয়ের কথা মাথায় রেখে তার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মাকরঁ। এ ব্যাপারে ব্রিটেন এবং জার্মানির পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছেন তিনি।

১২ ১৯

মাকরঁ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বিশেষ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ফরাসি ব্যঙ্গাত্মক সংবাদপত্র ‘লে ক্যানার্ড এনচাইনে’। তাদের দাবি, দেশের যাবতীয় হাসপাতালকে ১০ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে কয়েক হাজার সৈনিকের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাস টার্মিনাস, বড় রেলস্টেশন, বিমানবন্দর এবং সমুদ্রবন্দরের কাছে নতুন চিকিৎসাকেন্দ্র তৈরি করবে প্রশাসন। মূলত যুদ্ধে আহত বিদেশি সৈনিকদের সেখানে ভর্তি করা হবে।

১৩ ১৯

ইউরোপে রুশ আগ্রাসন বৃদ্ধির আশঙ্কার নেপথ্যে অবশ্য একাধিক কারণ রয়েছে। পশ্চিমি দুনিয়াকে ‘চ্যালেঞ্জ’ ছুড়ে দিয়ে চিনের তিয়েনআনমেন স্কোয়্যারে তিন ‘শক্তিশালী’ রাষ্ট্রনেতাকে একমঞ্চে দেখা গিয়েছে। পুতিনের সঙ্গে সেখানে ছিলেন ড্রাগন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং উত্তর কোরিয়ার ‘সুপ্রিম লিডার’ কিম জং-উন। এক ফ্রেমে এই তিন নেতা ধরা পড়তেই পশ্চিমি দুনিয়ার রক্তচাপ যে কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।

১৪ ১৯

বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। জিনপিংকে আমেরিকার বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রকারী’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। অন্য দিকে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন শি-ও। তিয়েনআনমেন স্কোয়্যারের বিজয় উৎসবের মঞ্চ থেকে হুঁশিয়ারির সুরে তিনি বলেন, ‘‘চিন কখনওই কোনও গুন্ডামিতে ভয় পায় না। সর্বদা এগিয়ে যাবে।’’

১৫ ১৯

ইউক্রেন যুদ্ধে অবশ্য ইতিমধ্যেই খোলাখুলি ভাবে রাশিয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন কমরেড কিম। মস্কোর হয়ে বিভিন্ন রণাঙ্গনে সৈনিক এবং গোলা-বারুদ পাঠিয়েছেন তিনি। আগামী দিনে এই প্রক্রিয়া যে অব্যাহত থাকবে, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছে পিয়ংইয়ং। এ ছাড়া পশ্চিম-বিরোধী এই অক্ষে রয়েছে ইরানও।

১৬ ১৯

১৯৭৯ সালে তেহরানে ‘ইসলামীয় বিপ্লব’-এর পর থেকে সাবেক পারস্য দেশে ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের সরকার পাল্টে দেওয়ার কম চেষ্টা করেনি আমেরিকা। বর্তমানে পরমাণু হাতিয়ার তৈরির খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছে ইরান, যা নিয়ে প্রবল আপত্তি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। আর তাই শিয়া মুলুকটির উপর নানা রকমের নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে ওয়াশিংটন।

১৭ ১৯

সেই কারণেই তেহরানের শিয়া ধর্মগুরু তথা ‘সর্বোচ্চ নেতা’ (পড়ুন সুপ্রিম লিডার) আয়াতোল্লা আলি খামেনেই বহু বার আমেরিকাকে ‘শয়তান’ বলে কটাক্ষ করেছেন। বিশ্লেষকদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার জেরে অপরিশোধিত খনিজ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রি করতে পারছে না ইরান। ফলে আর্থিক দিক দিয়ে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পারস্য উপসাগরের ওই শিয়া মুলুক।

১৮ ১৯

কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, বারুদের স্তূপে দাঁড়িয়ে থাকা দ্বিধাবিভক্ত বিশ্বে ভারতের পাল্লা যে দিকে ঝুঁকবে সংঘর্ষে তাঁদের জয়ের সম্ভাবনা ষোলো আনা। আর তাই ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের জেরে নয়াদিল্লির মতো ‘কৌশলগত অংশীদার’-এর সম্পর্কের শীতলতা মানতে পারছে না ফিনল্যান্ড।

১৯ ১৯

গত অগস্টের একেবারে শেষ দিকে এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজ়ান্ডার। ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার বার্তা দিয়েছেন তিনি। অন্য দিকে, এসসিও বৈঠকে পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন মোদী। বলেছেন, ‘‘দ্রুত যুদ্ধ শেষ করতে মস্কো ও কিভ পদক্ষেপ করবে বলে আমি আশাবাদী।’’

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement