India vs Turkey

পর্যটন-শিক্ষা-বিমান পরিবহণে তুরস্কের হাত ছাড়ছে ভারত, একধাক্কায় কয়েক হাজার কোটির লোকসান পাকিস্তানপ্রেমীর!

পর্যটন, শিক্ষা থেকে শুরু করে বিমান পরিবহণ, পাকিস্তানের ‘প্রিয় বন্ধু’ তুরস্কের সঙ্গে ধীরে ধীরে সম্পর্ক ছিন্ন করছে ভারত। আর তাতে আঙ্কারার আর্থিক লোকসানের অঙ্ক বেড়ে দাঁড়াচ্ছে কয়েক হাজার কোটি টাকা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৫৫
Share:
০১ ১৮

কাশ্মীর সমস্যা থেকে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা। ক্রমাগত ভারত-বিরোধী অবস্থান নিয়ে চলেছে তুরস্ক। অন্য দিকে, ‘ইসলামীয় ভ্রাতৃত্ববোধ’-এর জেরে ‘ইউরোপের রুগ্ন মানুষ’টির সমর্থন পেতে সমস্যা হচ্ছে না পাকিস্তানের। এই পরিস্থিতিতে ‘কুচক্রী’ আঙ্কারাকে শায়েস্তা করতে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ দেশের ভ্রমণপিপাসু আমজনতা। তাঁদের জন্যই এক ধাক্কায় কয়েক হাজার কোটি টাকা লোকসানের মুখ দেখতে হয়েছে তুরস্ককে, যা আগামী দিনে আরও বাড়বে বলে মনে করছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।

০২ ১৮

পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার প্রতিশোধ নিতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তাকে কেন্দ্র করে চলা ‘যুদ্ধে’ খোলাখুলি ভাবে পাকিস্তানের পাশে ছিল আঙ্কারা। লড়াই শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগে ইসলামাবাদকে বিপুল সংখ্যায় ‘বের‌্যাক্টার টিবি-২’ ড্রোন সরবরাহ করেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্ডোগান। সেই খবর প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে আপামর ভারতবাসী। সমাজমাধ্যমে শুরু হয় ‘বয়কট তুরস্ক’ প্রচার।

Advertisement
০৩ ১৮

এশিয়া মাইনর সংলগ্ন ‘ইউরোপের রুগ্ন মানুষ’টির অর্থনীতির বড় অংশ জুড়ে রয়েছে পর্যটন ব্যবসা। এত দিন পর্যন্ত বিদেশে বিবাহের ক্ষেত্রে ভারতীয়দের অন্যতম পছন্দের জায়গা ছিল তুরস্ক। এ ছাড়া চলচ্চিত্র নির্মাতারাও সেখানে শুটিং করতে ভালবাসতেন। চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে ভারত-পাক সংঘাতের সময় সেখানেই আঘাত করেন এ দেশের ভ্রমণপিপাসুরা। ওই সময়ে তুরস্কযাত্রার বুকিং বাতিল করার ধুম পড়ে গিয়েছিল।

০৪ ১৮

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, লড়াই বন্ধ হতেই পর্যটন ব্যবসার সূচক ফের ঊর্ধ্বমুখী হবে বলে আশাবাদী ছিল আঙ্কারা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে উল্টো চিত্র। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ‘বিষাক্ত সাপ’ তুরস্ককে এত দিনে চিনতে পেরেছেন এ দেশের মানুষ। আর তাই দক্ষিণ ইউরোপের দেশটি থেকে স্বেচ্ছায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা। এ দেশের আমজনতার এই স্বতঃস্ফূর্ত মনোভাবই প্রেসিডেন্ট এর্ডোগানের আর্থিক সর্বনাশ ডেকে এনেছে।

০৫ ১৮

২০২৪ সালের জুনে ভারত থেকে তুরস্কে পাড়ি দেওয়া পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৩৮ হাজার ৩০৭। এ বছরের জুনে সেটাই কমে ২৪ হাজার ২৫০-এ এসে ঠেকেছে। অর্থাৎ, বছর থেকে মাসের হিসাবে পর্যটক কমেছে প্রায় ৩৭ শতাংশ, গত মে মাসের তুলনায় যা সামান্য বেশি। মেকমাইট্রিপ বা ইজ়িমাইট্রিপের মতো পর্যটন সংস্থাগুলিও ভ্রমণপিপাসুদের সে ভাবে আঙ্কারায় নিয়ে যেতে চাইছেন না। উল্টে ‘বয়কট তুরস্ক’ প্রচার চালাচ্ছে তারা।

০৬ ১৮

পর্যটন সংস্থাগুলির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের পুজোয় কলকাতা থেকে তুরস্ক বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন ১,৫০০ জন। এতে আঙ্কারার অনুমানিক লোকসান হয়েছে ৬০ থেকে ৭৫ কোটি টাকা। উত্তরপ্রদেশের কানপুরে বাতিল হয়েছে মোট ৩৫ লক্ষ টাকার পর্যটন প্যাকেজ। এই আবহে আবার দক্ষিণ ইউরোপের দেশটিকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন এ দেশের ধনকুবের শিল্পপতি হর্ষ গোয়েঙ্কা।

০৭ ১৮

আরপিজি গ্রুপের চেয়ারম্যানের দাবি, প্রতি বছর ভারতীয় পর্যটকদের থেকে চার হাজার কোটি টাকা রোজগার করে এর্ডোগান সরকার। পাকিস্তানের থেকে কানাকড়িও উপার্জন হয় না তাদের। অথচ প্রয়োজন হলেই আঙ্কারাকে পাশে পায় ইসলামাবাদ। ‘বয়কট তুরস্ক’-এর মাধ্যমে আর্থিক দিক থেকে ‘ইউরোপের রুগ্ন মানুষ’টির যে কোমর ভাঙা যেতে পারে, তার ইঙ্গিতও দিয়েছেন শিল্পপতি গোয়েঙ্কা।

০৮ ১৮

‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন তুরস্কের পাশাপাশি পাকিস্তানকে সমর্থন করে আজ়ারবাইজানও। ফলে আঙ্কারার মতোই কাস্পিয়ান সাগরের কোলের দেশটিতে পা রাখাও বন্ধ করেছেন ভারতীয়েরা। ভ্রমণ সংস্থাগুলি জানিয়েছে, এ বছরের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে এই দু’টি দেশের ক্ষেত্রে টিকিট বাতিল হয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। মে মাস থেকে হিসাব করলে ওই সূচকে ২৫০ শতাংশ বৃদ্ধি লক্ষ করা যাবে। শুধুমাত্র ইজ়িমাইট্রিপে তুরস্ক ভ্রমণ বাতিল হয়েছে ২২ শতাংশ।

০৯ ১৮

তুরস্কের মোট পর্যটন অর্থনীতিতে ভারতীয়দের অবদান ০.৬ শতাংশ। তবে গত কয়েক বছর ধরেই দক্ষিণ ইউরোপের দেশটিতে এখানকার ভ্রমণপিপাসুদের সফরসংখ্যা বাড়ছিল। ২০১৯ সালে ভারত থেকে আঙ্কারা গিয়েছিল ২.৩ লক্ষ পর্যটক। ২০২৪ সালে সেই অঙ্ক বেড়ে দাঁড়ায় ২.৭ লক্ষ। কিন্তু এ বছর এখনও পর্যন্ত ৮৫ হাজার ভ্রমণপিপাসুর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

১০ ১৮

পর্যটনের পাশাপাশি তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে এখানকার একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উদাহরণ হিসাবে প্রথমেই আসবে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। এর্ডোগান সরকার অনুমোদিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ‘সমঝোতা স্মারক’ বা এমওইউ (মেমরেন্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং) সই করেছিল তারা। জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে আপাতত তা স্থগিত করেছে দিল্লির ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

১১ ১৮

একই রকমের পদক্ষেপ করতে দেখা গিয়েছে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তরপ্রদেশের কানপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে। প্রথমটির সঙ্গে ইননো বিশ্ববিদ্যালয় এবং দ্বিতীয়টির সঙ্গে ইস্তানবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ ভাবে গবেষণা এবং উচ্চ শিক্ষার কাজ করার কথা ছিল। এ ছাড়া আইআইটি রুরকি, আইআইটি বম্বে, মৌলানা আজ়াদ জাতীয় উর্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং লাভলি প্রফেশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ও তুরস্কের হাত ছেড়ে দিয়েছে।

১২ ১৮

গত ১৬ মে দেশের সমস্ত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে একটি বিশেষ আহ্বান জানায় ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ান ইউনিভার্সিটিজ়’ বা এআইইউ। সেখানে তুরস্ক, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করতে বলা হয়েছিল। তবে এ দেশের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। ফলে এ ব্যাপারে জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা সরকার বা এআইইউয়ের মতো সংস্থার হাতে নেই।

১৩ ১৮

এত দিন তুরস্কের বিমান পরিষেবা সংস্থা ‘টার্কিশ এয়ারলাইন্স’-এর থেকে দু’টি বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজ লিজে নিয়ে যাত্রী পরিবহণের কাজ চালাচ্ছিল ‘ইন্ডিগো’। কিন্তু, এ বছরের ৩১ অগস্টের পর আর সেই সুবিধা পাবে না ভারতের উড়ান পরিষেবা সংস্থা। কেন্দ্রের ‘ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন’ তড়িঘড়ি ওই লিজ় বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে তাদের। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত সময় চেয়ে আবেদন করেছিল ‘ইন্ডিগো’, যা পত্রপাঠ খারিজ করেছে মোদী সরকার।

১৪ ১৮

গত মে মাসে বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড অপারেশনের সঙ্গে যুক্ত তুরস্কের সংস্থা ‘সেলেবি অ্যাভিয়েশন হোল্ডিংস’ নিরাপত্তা সংক্রান্ত ছাড়পত্র তাৎক্ষণিক ভাবে বাতিল করে কেন্দ্র। এই নিয়ে ‘ব্যুরো অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি’-এর (বিসিএএস) তরফে জারি হয় বিশেষ নির্দেশিকা। ভারতে ব্যবসা বন্ধ হতেই আঙ্কারার সংস্থাটির শেয়ারে নামে ধস।

১৫ ১৮

তুরস্কের এই সংস্থাটির সদর দফতর রয়েছে ইস্তানবুলে। সেখান থেকে জারি করা একটি বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘নয়াদিল্লির নিরাপত্তা প্রত্যাহারের যাবতীয় প্রশাসনিক এবং আইনি রাস্তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ গত বছর (পড়ুন ২০২৪) প্রাপ্ত রাজস্বের দুই তৃতীয়াংশ ভারতের ব্যবসা থেকে এসেছে বলে জানিয়েছে সেলেবি।

১৬ ১৮

অন্য দিকে সংশ্লিষ্ট সংস্থাটির ভারতীয় শাখা জানিয়েছে, ‘‘আমাদের দফতর এবং পরিষেবা এ দেশের পেশাদারদের দ্বারা পরিচালিত হয়। এর সঙ্গে তুরস্কের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ গত বছর ভারতে ব্যবসা করা পাঁচটা শাখা থেকে সেলেবির প্রাপ্ত রাজস্বের পরিমাণ ছিল ৫৮ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার। ওই সংস্থাগুলি হল, সেলেবি এয়ারপোর্ট সার্ভিসেস ইন্ডিয়া, সেলেবি জিএইচ ইন্ডিয়া, সেলেবি ন্যাস এয়ারপোর্ট সার্ভিসেস ইন্ডিয়া, সেলেবি দিল্লি কার্গো টার্মিনাল ম্যানেজমেন্ট ইন্ডিয়া এবং সেলেবি জিএস চেন্নাই।

১৭ ১৮

তুরস্কের সংস্থাটির প্রায় ৩৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে এই পাঁচটি সংস্থার কাছে। ভারতের মোট ন’টি বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড পরিষেবার কাজ করত সেলেবি। সেগুলি হল দিল্লি, মুম্বই, কোচি, কুন্নুর, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, অহমদাবাদ, চেন্নাই এবং গোয়া। এর মধ্যে ছ’টি বিমানবন্দরে সক্রিয় ছিল সেলেবি এয়ারপোর্ট সার্ভিসেস ইন্ডিয়া।

১৮ ১৮

ভারতে ফের ব্যবসা চালু করতে দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় সেলেবি। সেখান তারা জানায়, ১৭ বছর ধরে এ দেশে পরিষেবা দিচ্ছে তারা। কোনও দিন তাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ ওঠেনি। সমস্যা সমাধানে আলোচনার দাবি করে সেলেবি। কিন্তু আদালতে কেন্দ্র সাফ জানিয়ে দেয় যে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই ওই পদক্ষেপ করা হয়েছে। ফলে এখনই এখানে ব্যবসার ছাড়পত্র পাচ্ছে না তুরস্কের ওই সংস্থা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement