Cockroach Spy

পিঠে ‘ব্যাকপ্যাক’ বেঁধে দুর্গম এলাকায় টহলদারি, শত্রুর হাঁড়ির খবর জোগাড়ে আসরে এ বার আরশোলার গুপ্তচরবাহিনী!

আরশোলার গুপ্তচরবাহিনী তৈরিতে মন দিয়েছে জার্মান স্টার্টআপ। এর জন্য বিশেষ ব্যাকপ্যাক তৈরি করছে তারা। এটি পিঠে বেঁধে শত্রুর ঘরে ঢুকে খবর সংগ্রহ করে আনবে গুপ্তচর তেলাপোকা!

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২৫ ১০:০৮
Share:
০১ ১৮

মশা-ড্রোনের পর গুপ্তচর আরশোলা! শত্রুর হাঁড়ির খবর জোগাড় করতে কৃত্রিম মেধা বা এআই (আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স) ভিত্তিক সরঞ্জাম পিঠে নিয়ে এ বার ময়দানে নামছে তেলাপোকার দল। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই দুনিয়া জুড়ে পড়ে গিয়েছে শোরগোল। সাবেক সেনাকর্তাদের দাবি, গোটা প্রক্রিয়াটা সফল হলে বদলে যাবে গুপ্তচরবৃত্তির সংজ্ঞা। ফলে আরও ভয়াবহ আকার নেবে যুদ্ধ।

০২ ১৮

সম্প্রতি আরশোলাদের গুপ্তচরবাহিনী তৈরিতে আদাজল খেয়ে লেগে পড়েছে মধ্য ইউরোপের দেশ জার্মানি। সেখানকার ‘সোয়ার্ম বায়োট্যাকটিক্স’ নামের স্টার্ট আপ সংস্থা তৈরি করেছে বিশেষ ধরনের একটি ‘ব্যাকপ্যাক’। এটি বাঁধা হবে তেলাপোকার পিঠে। এর পর শত্রু দেশে কায়দা করে ওই সন্ধিপদ পতঙ্গগুলিকে ছেড়়ে দিতে পারলেই কেল্লাফতে।

Advertisement
০৩ ১৮

সংবাদসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘সোয়ার্ম বায়োট্যাকটিক্স’-এর তৈরি ওই ব্যাকপ্যাকে থাকছে সেন্সর, ক্যামেরা এবং নিউরাল স্টিমুলেটর। রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বহু দূর থেকে এগুলি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সংশ্লিষ্ট ব্যাকপ্যাকটিতে কৃত্রিম মেধা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে তারা। গুপ্তচরবৃত্তির জন্য ওই ব্যাকপ্যাকই আরশোলার পিঠে বাঁধা হবে বলে জানা গিয়েছে।

০৪ ১৮

তবে যে কোনও ধরনের তেলাপোকাকে জার্মানরা গুপ্তচরবৃত্তিতে নামাচ্ছে, তা ভাবলে ভুল হবে। এর জন্য পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কার থেকে হিসিং প্রজাতির আরশোলা আমদানি করেছে বার্লিনের ওই স্টার্টআপ। ‘সোয়ার্ম বায়োট্যাকটিক্স’ জানিয়েছে, যে কোনও ধ্বংসস্তূপ, দেওয়াল বা সঙ্কীর্ণ জায়গায় চলাফেরা করতে পারে তেলাপোকা। ফলে পতঙ্গটিকে ব্যবহার করে ‘রিয়্যাল টাইম ডেটা’ সংগ্রহ করা সম্ভব।

০৫ ১৮

জার্মান সংস্থাটির দাবি, যুদ্ধক্ষেত্রে যেখানে ড্রোনে নজরদারি করা সম্ভব নয়, সেখানে তথ্য পাচারের কাজ করবে আরশোলা গুপ্তচরবাহিনী। শত্রু ফৌজের গোপন আস্তানা খুঁজে বার করা বা পণবন্দিদের উদ্ধারের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি দুর্দান্ত ভাবে কাজ করবে। এ ছাড়া পতঙ্গগুলির পাঠানো তথ্যের উপরে ভিত্তি করে জঙ্গি দমন অভিযানও পরিচালনা করা যাবে বলে দাবি করেছে ওই সংস্থা।

০৬ ১৮

আরশোলাকে গুপ্তচরবৃত্তির কাজে লাগানোর নেপথ্যে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, দুর্গম ভূখণ্ডে চলাচল করার ক্ষমতা রয়েছে এই পতঙ্গের। দ্বিতীয়ত, চরম পরিস্থিতিতেও বেঁচে থাকে তেলাপোকা। এমনকি মাথা কেটে ফেলার পরেও অন্তত এক সপ্তাহ জীবিত থাকতে পারে এই অমেরুদণ্ডী পতঙ্গ। এর কারণ, আরশোলার খাদ্যাভ্যাস এবং হৃদ্‌যন্ত্র মাথা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়।

০৭ ১৮

বর্তমানে সারা পৃথিবীতে প্রায় ৪,৬০০ প্রজাতির তেলাপোকা রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩০টি প্রজাতির আরশোলাকেই আমজনতার ঘরের কোণে দেখতে পাওয়া যায়। বাকিগুলি থাকে বন-জঙ্গলে। বিজ্ঞানীরা চারটি বিশেষ প্রজাতির আরশোলাকে মানুষের জন্য ক্ষতিকর হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। যে কোনও পরিবেশে অভিযোজন করার ক্ষমতা রয়েছে এই অমেরুদণ্ডী পতঙ্গের।

০৮ ১৮

বিজ্ঞানীদের দাবি, পৃথিবীতে আরশোলার আবির্ভাব হয় ৩২ কোটি বছর আগে। বর্তমানে রাশিয়ার উত্তরে সুমেরু সাগর এলাকায় একধরনের তেলাপোকা পাওয়া যায়, যারা হিমাঙ্কের ১২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচেও দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে। বিশ্বের সমস্ত দেশেই আরশোলা দেখতে পাওয়া যায়।

০৯ ১৮

ভবিষ্যতের যুদ্ধের কথা মাথায় রেখে তেলাপোকা গুপ্তচরবাহিনী তৈরি করতে স্টার্টআপ সংস্থাটিকে আপাতত ১ কোটি ৩০ লক্ষ ইউরো অনুদান দিয়েছে জার্মান সংস্থা। প্রাথমিক ভাবে শুধুমাত্র নজরদারির জন্য আরশোলার ব্যাকপ্যাক তৈরি করবে তারা। পরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে উদ্ধারকাজ, রাসায়নিক হামলা থেকে শহরকে রক্ষা করা এবং অগ্নিনির্বাপণের কাজেও ওই তেলাপোকা বাহিনীকে কাজে লাগাবে বার্লিন।

১০ ১৮

চলতি বছরের জুনে বেজিঙের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা মশা-ড্রোন তৈরি করেছে বলে খবর প্রকাশ্যে আনে ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’। মধ্য চিনের হুনান প্রদেশের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ ডিফেন্স টেকনোলজির (এনইউডিটি) একটি রোবোটিক্স ল্যাবরেটরি এই মানববিহীন মাইক্রো উড়ুক্কু যানটি তৈরি করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে তারা।

১১ ১৮

‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’-এর খবর অনুযায়ী, জুনের শেষ সপ্তাহে বেজিঙের সরকার নিয়ন্ত্রিত ‘চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশন’ নামের সামরিক টিভি চ্যানেলে ওই ড্রোনের প্রোটোটাইপটি প্রদর্শন করেন এক জন বিজ্ঞানী। সেখানে এনইউডিটির পড়ুয়া লিয়াং হেক্সিয়াংকে সংশ্লিষ্ট অতি ক্ষুদ্র উড়ুক্কু যানটি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। ক্যামেরার সামনে তিনি বলেন, ‘‘আমার হাতে রয়েছে মশা-রোবট। যুদ্ধক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহ এবং অন্যান্য গোপন অভিযানের জন্য এটিকে তৈরি করা হবে।’’

১২ ১৮

মশার আকারের ড্রোনটিতে রয়েছে একাধিক ছোট ছোট ডানা। সেগুলিকে মূল কাঠামোর মাথার দু’পাশে লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া তিনটে ছোট ছোট পা রয়েছে ওই ড্রোনের। অতি ক্ষুদ্র উড়ুক্কু যানটি প্রায় ১.৩ সেন্টিমিটার লম্বা। একে স্মার্টফোন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে জানা গিয়েছে।

১৩ ১৮

চিনা প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীদের দাবি, সহজে এই ড্রোনকে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। গুপ্তচরবৃত্তি এবং বিশেষ সামরিক অভিযানের কথা মাথায় রেখে এর নকশা তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়াও জরুরি পরিস্থিতিতে ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে থাকা ব্যক্তিদের খুঁজে বার করার জন্যেও কাজে লাগানো যাবে এই ড্রোন।

১৪ ১৮

তবে চিনা মাইক্রো ড্রোনগুলির বাণিজ্যিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বাধা রয়েছে। আকারে ছোট হওয়ার কারণে এগুলির পেলোড ক্ষমতা সীমিত। এমনকি, সেন্সর বহন করার ক্ষেত্রেও বাধার মুখে পড়তে পারে মশা-ড্রোন।

১৫ ১৮

এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট মানববিহীন ডিভাইসগুলির ব্যাটারি ছোট হওয়ায় ড্রোনগুলি কত ক্ষণ কার্যকর থাকবে, তা নিয়ে বেশ সন্দেহ রয়েছে। চিনা গবেষকদের তৈরি মশা-ড্রোনে কোনও কৃত্রিম মেধা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে কি না, তা-ও স্পষ্ট নয়।

১৬ ১৮

এর আগে সামরিক কাজে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডলফিনবাহিনী মোতায়েন করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল রাশিয়া। ২০১৮ সালে সিরিয়ার যুদ্ধের সময় টারটাস নৌঘাঁটিতে ওই সামুদ্রিক প্রাণীগুলিকে পাঠায় মস্কো। উপগ্রহচিত্রে সেই ছবি ধরাও পড়েছিল। বর্তমানে কৃষ্ণসাগর এলাকায় ওই ডলফিনবাহিনীকে মোতায়েন করেছে ক্রেমলিন।

১৭ ১৮

গত শতাব্দীর ৬০-এর দশকে আমেরিকার সঙ্গে ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ চলাকালীন ডলফিনকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। ক্রাইমিয়ার সেভাস্তিপোলেই ছিল সেই প্রশিক্ষণকেন্দ্র। সেখানে শত্রুপক্ষের ডুবুরিকে চিহ্নিত করা বা সমুদ্রের নীচে বিস্ফোরক চিহ্নিত করা এবং তা উদ্ধার করে নিয়ে আসার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ডলফিনগুলিকে। এমনকি, সমুদ্রের তলায় বিস্ফোরক বসানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাদের।

১৮ ১৮

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, গুপ্তচরবৃত্তি বা জটিল সামরিক অভিযানের জন্য শুধু প্রাণী বা শুধু রোবট ব্যবহারের বদলে হাইব্রিড মডেলের দিকে ঝুঁকছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। সেখানে আরশোলা নিয়ে জার্মান বিজ্ঞানীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কতটা সফল হয়, তার উত্তর দেবে সময়।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement