২০০৪ সালে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রথম শুরু হয় ‘ইন্ডিয়ান আইডল’। শুরু থেকেই জনপ্রিয় ছিল গানের এই রিয়্যালিটি শো। সোনু নিগম, অনু মালিক এবং ফারহা খানকে বিচারকের আসনে বসিয়ে শুরু হয়েছিল প্রথম সিজ়ন।
সুরের জাদুতে আপামর ভারতবাসীকে মাতিয়ে রেখেছিলেন এই সিজ়নের প্রতিযোগীরা। এই সিজ়নে বিজয়ী হয়েছিলেন অভিজিৎ সাবন্ত। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে ছিলেন যথাক্রমে অমিত সনা এবং রাহুল বৈদ্য। সঙ্গীতজগতে তাঁদের এর পরের যাত্রাপথের গল্প জানেন কি? জনপ্রিয়তার নিরিখে আজ কে কোথায় রয়েছেন?
মহারাষ্ট্রের সিন্ধুদুর্গ জেলায় জন্ম অভিজিৎ সাবন্তের। ছোটবেলা থেকেই গানবাজনায় আগ্রহী ছিলেন। মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। গানকেই পেশা হিসাবে গ্রহণ করবেন, এই ভাবনা থেকে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংও পড়েন তিনি। স্নাতক হওয়ার পর সঙ্গীতের জগতে তাঁর যাত্রা শুরু হয়।
শুধু ‘ইন্ডিয়ান আইডল’ই নয়, ‘জো জিতা ওহি সুপারস্টার’ নামে আর একটি গানের রিয়্যালিটি শোয়ে দ্বিতীয় হন তিনি। ‘এশিয়ান আইডল’-এ হন তৃতীয়।
‘ইন্ডিয়ান আইডল’-এ বিজয়ী হওয়ার পরে ২০০৫ সালে তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম ‘আপকা অভিজিৎ সাবন্ত’ প্রকাশিত হয়। ‘জুনুন’ এবং ‘ফরিদা’ নামে আরও দু’টি একক অ্যালবাম রয়েছে অভিজিতের। ‘আশিক বনয়া আপনে’ ছবির একটি গানে নেপথ্যকণ্ঠও ছিল তাঁর।
শুধু গানই নয়, ‘লটারি’ নামে একটি ছবিতে মুখ্যভূমিকায় অভিনয়ও করেন তিনি। ‘তিস মার খান’ ছবিতে একটি ছোট্ট চরিত্রে ছিলেন। ‘ক্যায়সা ইয়ে প্যার হ্যায়’ এবং ‘সিআইডি’তে অতিথিশিল্পী হিসাবেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
স্ত্রী শিল্পার সঙ্গে জুটি বেঁধে নাচের একটি রিয়্যালিটি শো-তে অংশগ্রহণ করেন অভিজিৎ। মরাঠী ‘বিগ বস্’-এর পঞ্চম সিজ়নে দ্বিতীয় হন তিনি। ‘সেলেব্রিটি মাস্টারশেফ’-এও প্রতিযোগী হিসাবে ছিলেন। হুসেন কুয়াজ়েরওয়ালার সঙ্গে ‘ইন্ডিয়ান আইডল’-এর পঞ্চম সিজ়ন সঞ্চালনা করেন তিনি। যুবসমাজকে দলের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য শিবসেনায় যোগদান করেন। অভিজিৎ-শিল্পার এক কন্যাসন্তান রয়েছে।
নিয়মিত স্টেজ পারফর্ম করেন অভিজিৎ। এ ছাড়া মরাঠী ভাষায় বেশ কিছু একক গানও আছে তাঁর। বিখ্যাত ‘ফুলোঁ কা তারোঁ কা’ গানটির মরাঠী সংস্করণ গেয়েছেন তিনি। কিছু দিন আগে ‘বন্ধুত্ব দিবস’ উপলক্ষেও একটি মরাঠী গান গেয়েছেন। বর্তমানে সমাজমাধ্যমে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা সাত লক্ষের কাছাকাছি।
প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন অমিত সনা। ছত্তীসগঢ়ের (তৎকালীন মধ্যপ্রদেশ) ভিলাইয়ের বাসিন্দা অমিত মাত্র তিন বছর বয়স থেকে গান গাওয়া শুরু করেন। আট বছর বয়সে ভিলাই স্টিল প্ল্যান্টের একটি অনুষ্ঠানে গান করেন অমিত। তখন ছেলের প্রতিভা সম্পর্কে সচেতন হন তাঁর বাবা।
এর পর ৮ বছর বয়স থেকেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নেওয়া শুরু করেন অমিত। আঞ্চলিক এবং রাজ্য স্তরের নানা সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় যোগ দিতেন। ‘কাটনি অল ইন্ডিয়া কিরণ সঙ্গীত সমারোহ’ প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হন তিনি।
স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে পড়ার জন্য জামশেদপুর চলে যান তিনি। সেখানেই একটি গানের রিয়্যালিটি শো-এর জন্য অডিশন দেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। এর পরে ‘ইন্ডিয়ান আইডল’-এর প্রথম সিজ়নে সুযোগ পান তিনি। মজার বিষয় হল, ভিলাইয়ের বাসিন্দা অমিত অডিশন দেন কলকাতা শহর থেকে।
‘ইন্ডিয়ান আইডল’-এর পরে তাঁর প্রথম অ্যালবাম ‘চল্ দিয়ে’ প্রকাশিত হয়, যার সুরকার ছিলেন বিশাল-শেখর। এর পরে ‘ইয়াদেঁ’ নামে আরও একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয় তাঁর। গানের একটি রিয়্যালিটি শো ‘জো জিতা ওহি সুপারস্টার’-এ যোগ দেন অমিত। কিন্তু কয়েকটি পর্বের পরেই বাদ পড়েন। ‘কলযুগ’, ‘জান-এ-মন’, ‘ডেল্হি হাইট্স’ প্রভৃতি ছবিতে নেপথ্যশিল্পী ছিলেন অমিত।
২০১১ সালে মনীষা বনসল নামে এক তরুণীকে বিয়ে করেন অমিত। তবে সে বিয়ে সুখের হয়নি। ২০১৮ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয় তাঁদের। ‘ইন্ডিয়ান আইডল’-এর একটি পর্বে সোনু নিগম তাঁকে বলেছিলেন যে তিনি ‘লম্বা রেসের ঘোড়া’। অনু মালিক বলেন, আহত মানুষকে শুশ্রূষা দিতে পারে তাঁর কণ্ঠ। স্টেজ পারফর্ম করেন অমিত, তবে পেশাগত জীবনে খুব বেশি সফল হতে পারেননি তিনি। বর্তমানে সমাজমাধ্যমে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা বারে হাজারের কিছু বেশি।
প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থানে ছিলেন রাহুল বৈদ্য। রাহুলের বেড়ে ওঠা মুম্বইয়ে। বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী সুরেশ ওয়াডকরের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নেন তিনি।
‘ইন্ডিয়ান আইডল’-এর আট মাস পরে রাহুলের প্রথম একক অ্যালবাম ‘তেরা ইন্তেজ়ার’ প্রকাশিত হয়। এই অ্যালবামের গানগুলির সুরকার ছিলেন সাজিদ-ওয়াজিদ। ‘শাদি নম্বর ওয়ান’ ছবির একটি গানে শ্রেয়া ঘোষালের সঙ্গে ডুয়েট গান করেন তিনি। ‘জিজ্ঞাসা’, ‘হট মানি’, ‘ক্রেজ়ি ৪’, ‘রেস ২’ প্রভৃতি ছবিতে নেপথ্যকণ্ঠও ছিল তাঁর। ‘এক লড়কী আনজানি সি’ নামে একটি টেলি সিরিয়ালের শীর্ষসঙ্গীত গান তিনি।
‘ইন্ডিয়ান আইডল’-এ তৃতীয় হলেও ‘জো জিতা ওহি সুপারস্টার’ নামে আর একটি গানের রিয়্যালিটি শো-তে বিজয়ী হন রাহুল। ‘মিউজ়িক কা মহা মুকাবলা’ নামে একটি গানের রিয়্যালিটি শো-তেও তাঁর দল বিজয়ী হয়।
‘ঝুম ইন্ডিয়া’ নামে একটি গানের রিয়্যালিটি শো-তে সঞ্চালকের ভূমিকায় এবং ‘আ জা মাহিবেঁ’ নামে একটি নাচের রিয়্যালিটি শো-তে সহ-সঞ্চালকের ভূমিকায়ও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ‘বিগ বস্ ১৪’-এ দ্বিতীয় হন রাহুল। ‘খতরোঁ কা খিলাড়ি ১১’-তেও শেষ পর্ব পর্যন্ত গিয়েছিলেন তিনি। ২০২৪ সালে ‘লাফ্টার শেফ’-এ অংশগ্রহণ করেন তিনি। এই শো-এর মাধ্যমে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন রাহুল।
‘বিগ বস্ ১৪’-তেই হিন্দি ছোট পর্দার পরিচিত মুখ দিশা পারমারকে প্রেমপ্রস্তাব দেন রাহুল। ২০২১ সালে সাত পাকে বাঁধা পড়েন তাঁরা। ২০২৩ সালে তাঁদের ঘরে আসে কন্যাসন্তান, শিশুকন্যার নাম রাখা হয় নব্যা।
‘ইন্ডিয়ান আইডল’-এ তৃতীয় হলেও বর্তমানে জনপ্রিয়তার নিরিখে এগিয়ে রয়েছেন রাহুলই। ‘ইন্ডিয়ান আইডল’-এ যে দু’জন তাঁকে পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন, তাঁদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন বলা চলে। সমাজমাধ্যমে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা ৫১ লক্ষের গণ্ডি ছুঁয়েছে।