Indrajaal Ranger

বাতাসে ভর করে আসা হুমকিকে ধাওয়া করে জবাব দেবে ‘ম্যাজিক গাড়ি’! পাক-চিনের ড্রোন নিকেশে অতন্দ্র প্রহরী পেল নয়াদিল্লি

ড্রোন-বিরোধী সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে নয়াদিল্লি। মৌমাছির ঝাঁকের মতো ড্রোনের হানাদারি রুখতে এ বার ভারতের তুরুপের তাস হতে চলেছে চলন্ত ড্রোন-বিরোধী সুরক্ষা ব্যবস্থা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৫৩
Share:
০১ ১৯

আধুনিক সমরকৌশলের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকল বা মানববিহীন উড়ুক্কু যান। সমরসজ্জা ও রণকৌশল যত আধুনিক হয়েছে ততই উন্নত হয়েছে ড্রোন। আধুনিক যুদ্ধকৌশলের রূপরেখা পাল্টে দিয়েছে ড্রোনের ব্যবহার। সংঘাত শুরু হলে বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় ড্রোন পাঠিয়ে শত্রুশিবিরকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলতে চায় প্রতিটি দেশই।

০২ ১৯

হালের ভারত-পাক সংঘাত থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন ‘যুদ্ধ’ কিংবা পশ্চিম এশিয়ায় ইজ়রায়েল-হামাস লড়াই— সর্বত্র খেলা ঘুরিয়ে দিয়েছে ড্রোন। মানববিহীন উড়ুক্কু যানগুলিকে আরও প্রাণঘাতী ও অত্যাধুনিক করে তুলতে এ বার তাতে কৃত্রিম মেধার সংমিশ্রণ ঘটাচ্ছেন দুনিয়ার তাবড় প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। উড়ন্ত মারণাস্ত্রগুলি যত শক্তিশালী হচ্ছে ততই আঁটসাঁট করে গড়ে তুলতে হচ্ছে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে।

Advertisement
০৩ ১৯

জম্মু-কাশ্মীর, পঞ্জাব, রাজস্থান এবং গুজরাতের সীমান্তবর্তী একাধিক বায়ুসেনা ঘাঁটিকে ঝাঁকে ঝাঁকে ড্রোন পাঠিয়ে নিশানা করেছিল পাক সেনা। ড্রোন-বিরোধী সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে এ বার কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে নয়াদিল্লি। মৌমাছির ঝাঁকের মতো ড্রোনের হানাদারি রুখতে এ বার ভারতের তুরুপের তাস হতে চলেছে চলন্ত ড্রোন-বিরোধী সুরক্ষা ব্যবস্থা। শত্রুশিবিরের যুদ্ধাস্ত্রকে জালে বন্দি করতে ভারতের নয়া হাতিয়ার ইন্দ্রজাল রেঞ্জার।

০৪ ১৯

ইন্দ্রজাল রেঞ্জার ভারতের প্রথম অ্যান্টি-ড্রোন পেট্রল ভেহিকল (এডিভিপি) বা ড্রোন-বিরোধী টহলযান। নজরদারি যানটি চলন্ত অবস্থাতেই শত্রুপক্ষের ড্রোন শনাক্ত করতে সক্ষম। চার চাকার বাহনে চড়ে আকাশসীমায় শত্রুকে নিকেশ করতে জাল বিছিয়ে রাখে ইন্দ্রজাল। বেশ বড় আকারের পিক-আপ ট্রাকেই একজোট করে রাখা রয়েছে সমস্ত প্রযুক্তি।

০৫ ১৯

হায়দরাবাদের একটি স্টার্ট আপ, ইন্দ্রজাল ড্রোন ডিফেন্সের মস্তিষ্কপ্রসূত এই অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি। সংস্থার তরুণ গবেষকেরা যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি দেখে আঁচ করেছিলেন ভবিষ্যতের সবচেয়ে বিপজ্জনক ক্ষেপণাস্ত্রের জায়গা নিতে চলেছে ছোট ছোট উড়ন্ত ড্রোন। গুপ্তচরবৃত্তির কাজ থেকে শুরু করে আত্মঘাতী যুদ্ধাস্ত্রে পরিণত হতে পারে উড়ুক্কু যানগুলি। ভুল হাতে পরিচালিত হলে সন্ত্রাসবাদের নতুন মুখ হয়ে উঠতে পারে ড্রোনগুলি।

০৬ ১৯

সেই হুমকি থেকে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাত শক্ত করতে একটি প্রোটোটাইপ ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার (ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন বা ডিআরডিও) হাতে তুলে দিয়েছিল হায়দরাবাদের এই স্টার্ট আপ সংস্থা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, ‘অপারেশন সিঁদুর’-পরবর্তী পর্যায়ে শত্রুপক্ষের ড্রোনের আকাশসীমা লঙ্ঘন রুখতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করা হয়েছে। তারই অন্যতম, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ইন্দ্রজাল রেঞ্জার।

০৭ ১৯

হাইলাক্স প্ল্যাটফর্মের উপর নির্মিত, ইন্দ্রজালে ৪৪টি মোবিলিটি প্ল্যাটফর্ম দিয়ে রেঞ্জারটিকে চলমান অভিযানের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ড্রোনকে নিরস্ত করতে গাড়ি থামানোর প্রয়োজন পড়বে না। আকাশপথে আসা শত্রুর হুমকিকে যেমন শনাক্ত করবে তেমনই ড্রোনের গতিবিধির উপর লক্ষ রাখবে রেঞ্জার। এমনকি ড্রোনকে চিহ্নিত করে তা নিশ্চিহ্ন করতে সক্ষম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর এই যানটি।

০৮ ১৯

সাইবার টেকওভার ইউনিট, জিএনএসএস স্পুফিং, আরএফ জ্যামিং এবং একটি স্প্রিং-লোডেড কিল সুইচ দিয়ে সাজানো রেঞ্জারটি ১০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ড্রোনকে শনাক্ত করতে পারে। দুই কিমি বা তার কম দূরত্বে থাকা ড্রোনের উপর সরাসরি আঘাত হানতে সক্ষম। তিন কিলোমিটার পাল্লার মধ্যে থাকা ড্রোনকে এআই সম্বলিত আরএফ জ্যামিংয়ের জাল বিছিয়ে রুখে দেবে ইন্দ্রজাল রে়ঞ্জারটি।

০৯ ১৯

সাইবার টেকওভার ইউনিটটি দূরে থাকা শত্রু ড্রোনগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ বিস্তার করতে সক্ষম। কোনও রকম আঘাত ছাড়াই নিরাপদে শত্রু অস্ত্রগুলিকে নিধন করা সম্ভব। কোন পর্যায়ে এসে ড্রোনকে ধ্বংস করা হবে সেই সিদ্ধান্ত নেয় ইন্দ্রজাল নিজেই।

১০ ১৯

কৃত্রিম মেধাভিত্তিক ড্রোন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। ফলে যে কোনও অপারেশনের সময় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় রেঞ্জারটি। এতে নিখুঁত নিশানায় হামলা চালানো সহজ হয়।

১১ ১৯

রেঞ্জারটি সেনা কনভয় যাওয়ার পথে, সীমান্ত এলাকায় গা ঘেঁষে থাকা সেনাছাউনিগুলিতে মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত। ইন্দ্রজাল এমন সমস্ত জায়গায় নজরদারি করে বেড়াতে পারে যেখানে স্থির অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেমগুলির কার্যকারিতা সীমিত বা অপ্রতুল। চলমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রস্তুতকারী সংস্থার মতে, গাড়িটি মোবাইল প্ল্যাটফর্মগুলিতে স্বায়ত্তশাসিত হওয়ায় আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে প্রসারিত করেছে। আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম)-র মাধ্যমে শত্রুর হামলা প্রতিরোধের ক্ষমতাকে আরও উন্নত করে তুলবে।

১২ ১৯

ইন্দ্রজাল রেঞ্জার সীমান্ত নিরাপত্তা এবং শহরাঞ্চলের প্রতিরক্ষা উভয়েরই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে পারে। সম্পূর্ণ ভাবে ভ্রাম্যমাণ হওয়ায় প্রচলিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ফাঁক পূরণ করেছে ইন্দ্রজালের নিশ্ছিদ্র নজরদারি। ড্রোন অনুপ্রবেশের ঝুঁকিযুক্ত অঞ্চলগুলির পক্ষে এটি একটি বহুমুখী সমাধান বলে বিবেচিত হয়েছে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে। এটি বিশেষ করে সেই অঞ্চলে কার্যকর যেখানে দ্রুত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মোতায়েন করা জরুরি হয়ে পড়ে।

১৩ ১৯

রোদ-ঝড়-জল সহ্য করে দিন হোক বা রাত, সমস্ত ধরনের প্রতিকূল আবহাওয়ায়, যে কোনও পরিস্থিতিতে নির্ভরযোগ্য এই হাতিয়ারটি। ক্রমাগত আকাশসীমা পর্যবেক্ষণ করবে মোবাইলযানটি। ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসা ড্রোন হোক বা একটি ড্রোন ভারতের আকাশসীমায় প্রবেশ করলেই তা স্বয়ংসম্পূর্ণ ইন্দ্রজালের রাডারে বন্দি হয়ে অকেজো হয়ে পড়বে।

১৪ ১৯

ড্রোন হামলা আটকাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে ‘স্ট্যাটিক সি-ইউএএস সিস্টেম’ মোতায়েন করা রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ‘দিগন্তের বাইরে’ (‘ওভার দ্য হরাইজ়ন’ বা ওটিএইচ) নজরদারি এবং প্রত্যাঘাতের ক্ষমতাসম্পন্ন ‘ইন্টিগ্রেটেড এয়ার ডিফেন্স ওয়েপন সিস্টেম’ (আইএডিডব্লিউএস) বা ভারতীয় সেনার ‘সুদর্শন চক্র’।

১৫ ১৯

সুপারসনিক (শব্দের চেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন) যুদ্ধবিমান, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসা ড্রোন থেকে শুরু করে শত্রুপক্ষের ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ২০১৮ সালে মস্কোর থেকে পাওয়া এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রায় নির্ভুল ভাবে বহুমুখী হামলার মোকাবিলায় সক্ষম।

১৬ ১৯

বিরাট এলাকা জুড়ে ভারতীয় আকাশকে দুর্ভেদ্য বর্মে ঢেকে রেখেছে এটি। বর্তমানে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে এই ধরনের একটি ‘আকাশ প্রতিরক্ষা’ ব্যবস্থা তৈরির দিকে নজর দিয়েছে নয়াদিল্লি। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, আধুনিক যুদ্ধে ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ বা এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের গুরুত্ব অপরিসীম। গত তিন বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গত দেড় বছর ধরে চলা ইজ়রায়েল-হামাসের মধ্যে লড়াইয়েও ‘গেম চেঞ্জার’-এর ভূমিকা নিয়েছে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম।

১৭ ১৯

দুর্ভেদ্য বর্মে ঢেকে রাখা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাতেও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেখানে সিস্টেমটি বসানো থাকে তার পাল্লা থেকে ড্রোনটি বেরিয়ে গেলে অথবা হঠাৎ দিক পরিবর্তন করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে গেলে গতিবিধি লক্ষ করতে অসমর্থ হয়ে পড়ে সেটি। আর এই সীমাবদ্ধতা থেকেই ইন্দ্রজাল রেঞ্জারের জন্ম। ভেতরের সরঞ্জামগুলি টেক-থ্রিলারের অস্ত্রের মতো।

১৮ ১৯

দীর্ঘস্থায়ী হার্ডওয়্যার দিয়ে তৈরি করা বলে এর রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কম। বেশ কয়েকটি ইন্দ্রজাল রেঞ্জার একত্রিত হয়ে একটি বৃহৎ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে পারে। ড্রোন ধ্বংসকারী সামরিক সরঞ্জামগুলিকে একটি টয়োটা হাইলাক্সের উপর বসানো হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং শক্তিশালী পিকআপ ট্রাকগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয় টয়োটা হাইলাক্সকে।

১৯ ১৯

ইন্দ্রজাল রেঞ্জারের মতো উচ্চ-প্রযুক্তি প্রতিরক্ষা প্ল্যাটফর্মের জন্য হাইলাক্সকে বেছে নেওয়ার কারণ হল সমতল, পাহাড় এবং মরুভূমিতে স্বচ্ছন্দে বিচরণ করতে পারে গাড়িটি। ভারতীয় বাজারে এই পিকআপ ট্রাকের দাম ২৮ লক্ষ টাকা (এক্স-শোরুম) থেকে শুরু হয়।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement