Fact check

রাফাল-সহ পাঁচ ভারতীয় জেট ধ্বংসের ছবি, ভিডিয়ো খারিজ করল টুইটারই! মার খেয়ে ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে পাকিস্তান

‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে সমাজমাধ্যম এবং গণমাধ্যমে ভুয়ো খবর ছড়ানোর অভিযোগ উঠল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। এই অভিযানে রাফাল-সহ নয়াদিল্লির মোট পাঁচটি যুদ্ধবিমানকে ধ্বংস করা গিয়েছে বলে দাবি ইসলামাবাদের। ইতিমধ্যেই এই খবরকে ভুয়ো বলে জানিয়ে দিয়েছেন এক্স কর্তৃপক্ষ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২৫ ১২:০৫
Share:
০১ ২০

পহেলগাঁও কাণ্ডের বদলা নিতে পাকিস্তানের জঙ্গি নেটওয়ার্কের কোমর ভাঙল ভারত। নয়াদিল্লির এ হেন প্রত্যাঘাতের পরে মুখ বাঁচাতে ‘মিথ্যাচার’কে আঁকড়ে ধরেছে ইসলামাবাদ। গণমাধ্যম এবং সমাজমাধ্যমে ভারতীয় বায়ুসেনার একাধিক লড়াকু জেটকে ধ্বংস করা হয়েছে বলে খবর ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তাদের বিরুদ্ধে। তবে তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। খুব দ্রুত এই চাল ধরা পড়ে যাওয়ায় গোটা বিশ্বের সামনে বেআব্রু হয়েছেন তাঁরা।

০২ ২০

গত ৭ মে মধ্যরাতে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের (পাক অকুপায়েড জম্মু-কাশ্মীর বা পিওজেকে) মোট ৯টি জায়গায় জঙ্গিদের গুপ্ত ঘাঁটিতে হামলা চালায় ভারতীয় ফৌজ। এই অভিযানের পোশাকি নাম রাখা হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে নয়াদিল্লি কোনও সরকারি বিবৃতি দেওয়ার আগেই ‘স্কাই নিউজ়’-এ একটি খবর সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় পাক সেনার জনসংযোগ শাখা (ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন বা আইএসপিআর)।

Advertisement
০৩ ২০

ইসলামাবাদের সেনা সূত্রকে উদ্ধৃত করে ‘স্কাই নিউজ়’ দাবি করে, ভারতীয় বিমানবাহিনীর দু’টি রাফাল লড়াকু জেটকে গুলি করে নামিয়েছে পাকিস্তান। শুধু তা-ই নয়, ঘটনার সময় এবং ছবিও প্রকাশ করে ওই গণমাধ্যম। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৭ মে রাত ১২টা ৪৫ মিনিট নাগাদ পাক পঞ্জাব প্রদেশের কাছে বহাওয়ালপুরে ভারতীয় যুদ্ধবিমানটিকে ধ্বংস করা হয়। এই খবর প্রকাশের কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঝড়ের বেগে তা নেটাগরিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

০৪ ২০

কিন্তু বেলা গড়াতেই এই খবরকে পুরোপুরি ভুয়ো বলে স্পষ্ট করে দেয় এক্স হ্যান্ডল (সাবেক টুইটার)। পাক নেটাগরিকদের একাংশ ভেঙে পড়া বিমানের জ্বলন্ত ছবি দেখিয়ে সেগুলিকে রাফাল বলে দাবি করছিলেন। কিন্তু, ওই ছবিগুলির নীচে ‘মিথ্যা তথ্য’ লিখে ইসলামাবাদের কুকীর্তি দুনিয়ার সামনে ফাঁস করে দেয় মার্কিন সমাজমাধ্যম সংস্থা। ফলে প্রবল অস্বস্তির মুখে পড়েন রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা।

০৫ ২০

চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল পঞ্জাব প্রদেশের লাহোর সংলগ্ন বহাওয়ালপুরে ভেঙে পড়ে পাক বায়ুসেনার একটি মিরাজ-৫ যুদ্ধবিমান। মাটিতে আছাড় খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওই লড়াকু জেটে আগুন ধরে যায়। এক্স হ্যান্ডলের তরফে জানানো হয়েছে, সেই ছবিকেই রাফালের ধ্বংসাবশেষ বলে চালানোর চেষ্টা করছে ইসলামাবাদ। এর সঙ্গে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর কোনও সম্পর্ক নেই।

০৬ ২০

অন্য দিকে এই ইস্যুতে সাবেক টুইটারে পোস্ট করে মুখ পুড়িয়েছেন পাকিস্তানের খ্যাতনামী সাংবাদিক হামিদ মীর। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘‘মাঝ-আকাশের ডগফাইটে ভারতীয় যুদ্ধবিমানকে হারিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানের লড়াকু জেট। ফলে জম্মু-কাশ্মীরের আখনুর এবং পঞ্জাবের ভাতিন্ডায় ভারতের দু’টি যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ে।’’ এ ছাড়া নিয়ন্ত্রণরেখার (লাইন অফ কন্ট্রোল বা এলওসি) কাছে একটি ড্রোন ভেঙে পড়েছে বলেও ওই পোস্টে উল্লেখ করেন তিনি।

০৭ ২০

৭ তারিখ ভোর ৪টে নাগাদ এই পোস্ট করেন হামিদ। কিছু ক্ষণের মধ্যেই তা ১০ লক্ষ পাক নেটাগরিকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তাঁদের আনন্দ বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ভারতের ইংরেজি সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’র একটি লিঙ্ক পোস্ট করে এক্স হ্যান্ডল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছেন পাকিস্তানের এই সাংবাদিক। গত বছর রাজস্থানের বাড়মেরে ভারতীয় বায়ুসেনার একটি মিগ যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ে। সেই ছবি হামিদ ব্যবহার করেছেন বলে জানিয়ে দিয়েছে বহুজাতিক মার্কিন টেক জায়ান্ট সংস্থা।

০৮ ২০

এক্স হ্যান্ডলের এ হেন ‘ফ্যাক্ট চেক’-এর চাবুক খেয়েও হামিদ মীর যে দমে গিয়েছিলেন, এমনটা নয়। সকাল ৫টা ৩৩ মিনিট নাগাদ ফের পোস্ট করেন তিনি। লেখেন, ‘পাঁচটা নেমেছে’। কিন্তু, কিছু ক্ষণ পর সেই পোস্ট মুছে দেন এই পাক সাংবাদিক। এর পর তেজস্বী প্রকাশ নামের এক ভারতীয় নেটাগরিকের পোস্টকে আশ্রয় করে ফের ভুয়ো খবর ছড়াতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েন হামিদ।

০৯ ২০

ভারতীয় সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারী তেজস্বী প্রকাশ এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘অপারেশন সিঁদুরে বদলা নেওয়ার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু আমাদের একটি রাফাল এবং একটি এসইউ-৩০ যুদ্ধবিমানকে আখনুরের কাছে গুলি করে নামিয়েছে পাক ফৌজ। উড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনার ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার।’’ ‘ভেঙে পড়া’ লড়াকু জেটের দাউদাউ করে জ্বলতে থাকার ভিডিয়ো এবং‌ ছবিও পোস্ট করেন তিনি।

১০ ২০

তেজস্বীর এই পোস্টকে ট্যাগ করে এ বার এক্স হ্যান্ডলের মাধ্যমে ভুয়ো খবর চড়ানোর চেষ্টা করেন হামিদ। লেখেন, ‘‘ইসলামাবাদ যে সত্যি কথা বলছে এটাই তার প্রমাণ।’’ কিন্তু ফের সক্রিয় হয়ে মার্কিন সমাজমাধ্যম সংস্থাটি জানিয়ে দেয়, তেজস্বীর ওই খবর ভুয়ো। তিনি যে ছবি ও ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন তা গত বছরের সেপ্টেম্বরের এবং ২০২১ সালের। পঞ্জাব এবং রাজস্থানে মিগ ২১ এবং মিগ ২৯ যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ার ছবি দেখিয়ে বর্তমান ঘটনার সঙ্গে তার তুলনা টানা হচ্ছে।

১১ ২০

উল্লেখ্য, এই পোস্টটির ক্ষেত্রে হামিদ মীরকে একরকম সতর্কই করেন এক্স হ্যান্ডল কর্তৃপক্ষ। সংস্থার তরফে তাঁর দেওয়া ছবি এবং পোস্টের নীচে লেখা হয়, ‘‘দ্বিতীয় বার একই ভুল করা হল।’’ তবে পাক সাংবাদিককে শাস্তি দিয়ে তাঁর অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়নি। অন্য দিকে ওই সতর্কবার্তার পর আর কোনও খবর সমাজমাধ্যমে দেননি তিনি।

১২ ২০

এ ছাড়া ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর মাঝ-আকাশে ডগফাইটের একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানেও লড়াই করার সময়ে ভারতীয় জেট ধ্বংস হয়েছে বলে দেখানো হয়। কিন্তু, এক্স হ্যান্ডল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, ইউটিউবের একটি পুরনো ভিডিয়ো থেকে ওটি নেওয়া হয়েছে। এটি সম্ভবত কোনও ভিডিয়ো গেমের অংশ।

১৩ ২০

পাক সমাজমাধ্যম এবং গণমাধ্যমে যখন এই ধরনের ছবি ও ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ছে, তখন তৎপর হয় প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো বা পিআইবিও। ধরে ধরে প্রতিটি ছবির ব্যাখ্যা, সময় এবং ঘটনাক্রম জানিয়েছে এই সরকারি সংস্থা। ভুয়ো ছবির তালিকা এক্স হ্যান্ডলে পোস্টও করেছে কেন্দ্র। পাশাপাশি, ভুয়ো খবরের ব্যাপারে নাগরিকদের আরও বেশি সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে পিআইবি।

১৪ ২০

ভারতীয় যুদ্ধবিমানকে ধ্বংস করার ব্যাপারে বেশ কিছু অদ্ভুত তথ্য দিয়েছে পাকিস্তানের অন্যতম বড় সংবাদমাধ্যম ডন। করাচির গণমাধ্যমটির দাবি, এ দেশের কোনও লড়াকু জেট পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেনি। ফলে ইসলামাবাদের বিমানবাহিনীকেও আকাশসীমা লঙ্ঘন করতে হয়নি। কিন্তু মাঝ-আকাশের ডগফাইটে ২টি রাফাল এবং ৩টি সুখোই যুদ্ধবিমানকে ধ্বংস করেন তাঁরা। শুধু তা-ই নয়, পাকিস্তানের তাড়া খেয়ে পালায় আরও দু’টি লড়াকু জেট।

১৫ ২০

বিষয়টি নিয়ে পাক পার্লামেন্ট ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’তে বিবৃতি দেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। তিনি বলেন, ‘‘মোট ৮০টি যুদ্ধবিমান নিয়ে পাকিস্তানের ছ’টি জায়গায় হামলা চালিয়েছে ভারত। এর মধ্যে মোট পাঁচটি বিমানকে উড়িয়ে দেওয়া গিয়েছে, যার দু’টি রাফাল। সেগুলি ভারতের জম্মু-কাশ্মীর এবং পঞ্জাবের ভাতিন্ডায় ছিটকে গিয়ে পড়ে।’’ এর জন্য পাক বায়ুসেনার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।

১৬ ২০

কিন্তু, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর খবর প্রকাশ্যে আসতেই বিবৃতি দিয়েছিল পাক সেনার জনসংযোগ বিভাগ বা আইএসপিআর। সেখানে বলা হয়, মোট ৪টি জায়গায় হামলা চালিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। এ দেশের কোনও বিমান ধ্বংস করার ব্যাপারে সেখানে উচ্চবাচ্য করেননি ইসলামাবাদের ফৌজি জেনারেলরা। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শাহবাজ়ের বয়ানে অন্য তথ্য থাকায় সন্দেহ দানা বেঁধেছে।

১৭ ২০

পাকিস্তানের তরফে বার বার রাফাল যুদ্ধবিমান ধ্বংসের কথা বলার নেপথ্যে সুনির্দিষ্ট একটি কারণ রয়েছে বলে মনে করেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা। সূত্রের খবর, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ দু’টি বিশেষ হাতিয়ার ব্যবহার করেছে দেশের ফৌজ। সেগুলি হল, হ্যামার ও স্ক্যাল্প ক্ষেপণাস্ত্র। এগুলি মূলত রাফাল লড়াকু জেটে থেকে ছোড়া হয়ে থাকে। আর তাই এই অভিযানে নয়াদিল্লি ফরাসি যুদ্ধবিমানটিকে ময়দানে নামায় বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এই অভিযানে রাফাল ব্যবহার করা হয়েছে কি না তা নিয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি।

১৮ ২০

বর্তমানে ভারতীয় বায়ুসেনার আধুনিকতম যুদ্ধবিমান হল রাফাল। বিশ্লেষকদের দাবি, সেই কারণেই ফরাসি লড়াকু জেটকে ধ্বংস করা গিয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে দিয়ে বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে পাকিস্তানের সেনা ও সরকার। অন্য দিকে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ এই ধরনের কোনও ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেনি নয়াদিল্লি।

১৯ ২০

অভিযান শেষে এই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য প্রকাশ করেন ভারতীয় সেনার কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং বায়ুসেনার উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ। তাঁরা জানিয়েছেন, রাত ১টা বেজে পাঁচ মিনিটে শুরু হওয়া ‘অপারেশন সিঁদুর’ শেষ হয়ে যায় মাত্র ২৫ মিনিটেই। এতে মূলত পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠী লশকর-এ-ত্যায়বা ও জইশ-ই-মহম্মদের প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলিকে নিশানা করে সশস্ত্র বাহিনী।

২০ ২০

সেনার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের শুভান আল্লা মসজিদ, বিলাল মসজিদ, কোটলির একটি মসজিদ এবং মুজফ্‌ফরাবাদের জঙ্গিঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়। এ ছাড়া বহাওয়ালপুর, মুরিদকে, গুলপুর, ভিম্বর, চক আমরু এবং বাগ এলাকার সন্ত্রাসীদের গোপন আস্তানগুলিকে নিশানা করে সশস্ত্র বাহিনী। এর জন্য আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করতে হয়নি। তবে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ কোন কোন যুদ্ধবিমান ব্যবহার হয়েছে, তার কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার।

সব ছবি: রয়টার্স, এএফপি, পিটিআই, সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement