Digital Gold Risk

কাগুজে সোনায় লুকিয়ে বিপদ, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কেনাবেচায় সব কিছুই হতে পারে ‘ফক্কা’! সেবির সতর্কবার্তায় শোরগোল

ডিজিটাল সোনার দেদার কেনাবেচার মধ্যেই এ বার লগ্নিকারীদের সতর্ক করে বিজ্ঞপ্তি জারি করল বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা সেবি। সেখানে বলা হয়েছে ঝুঁকির কথা। পাশাপাশি ডিজিটাল ‘হলুদ ধাতু’তে বিনিয়োগের রূপরেখাও তুলে ধরেছে ওই কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:৫১
Share:
০১ ১৭

ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সোনা-রুপোর দাম। দর বৃদ্ধির বহর দেখে চুপ করে বসে নেই লগ্নিকারীরা। মোটা মুনাফার লোভে ডিজিটাল ‘হলুদ ধাতু’ এবং ‘সাদা ধাতু’তে দেদার বিনিয়োগ করে যাচ্ছেন তাঁরা। বিষয়টি নিয়ে এ বার সতর্ক করল শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ‘সিকিউরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া’ বা সেবি। বেশি লাভ করতে গিয়ে বিনিয়োগকারীরা কী ভাবে ঝুঁকির মুখে পড়ছেন, তা স্পষ্ট করেছে এই কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান।

০২ ১৭

ডিজিটাল সোনা বা ই-গোল্ডে লগ্নি নিয়ে ৮ নভেম্বর বিশেষ একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে সেবি। বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাটি সেখানে জানিয়েছে, হলুদ ধাতুর দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই অনলাইনে দেদার সোনা কেনা শুরু করেছেন। বেশ কয়েকটি সংস্থা এই নিয়ে প্রচারও চালাচ্ছে। কিন্তু, তাদের উপর সেবির কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে এতে লগ্নি কতটা সুরক্ষিত, তা নিয়েই প্রশ্ন থাকছে।

Advertisement
০৩ ১৭

সেবির জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, শেয়ার বাজার বা মিউচুয়াল ফান্ডে বিক্রি হওয়া ডিজিটাল সোনার সঙ্গে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ‘হলুদ ধাতু’র যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। প্রথমটির সিকিউরিটিজ় এবং ডেরিভেটিভ সামগ্রী হিসাবে স্বীকৃতি রয়েছে। দ্বিতীয়টির এই ধরনের কোনও তকমা নেই। ফলে অনলাইন সোনার মূল্য কী ভাবে নির্ধারিত হচ্ছে, বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাটির তা পুরোপুরি অজানা।

০৪ ১৭

শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকে সুরক্ষিত রাখতে সেবির হাতে রয়েছে বেশ কিছু কঠিন আইন। সেই কারণে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সেখানে লগ্নি করতে পিছপা হয় না আমজনতা থেকে শুরু করে তাবড় তাবড় সংস্থা। ৯ তারিখের বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানটি অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে ডিজিটাল সোনা কিনলে পাওয়া যাবে না ওই রক্ষাকবচ। তবে সেখান থেকে ‘হলুদ ধাতু’ ক্রয় বন্ধ করার কোনও নির্দেশ অবশ্য দেওয়া হয়নি।

০৫ ১৭

উল্লেখ্য, সেবির নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে অবশ্য ডিজিটাল সোনার সুবিধা রয়েছে। সেগুলি হল, মিউচুয়াল ফান্ড এবং শেয়ার বাজারের এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড তহবিল (ইটিএফ), এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড কমোডিটি ডেরিভেটিভ চুক্তি ও ইলেকট্রনিক গোল্ড। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানটির তালিকাভুক্ত কোনও ব্রোকারেজ ফার্মের মাধ্যমেও ডিজিটাল ‘হলুদ ধাতু’ কেনার সুযোগ পেয়ে থাকেন বিনিয়োগকারীরা।

০৬ ১৭

প্রথাগত স্বর্ণালঙ্কার বা ‘হলুদ ধাতু’র বারের সঙ্গে কিন্তু ডিজিটাল সোনার যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। এটি প্রকৃতপক্ষে অনলাইনে বিক্রি হওয়া ডিজিটাল রূপে থাকা সোনা, যার মূল্য সুরক্ষিত ভল্টে সংরক্ষিত সমপরিমাণ স্বর্ণের সমান। উদাহরণ হিসাবে, কোনও ব্যক্তি যদি ৫০০ টাকার ডিজিটাল সোনা কেনেন, তা হলে সেই মূল্যের সোনা সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের নামে নিরাপদে সংরক্ষিত রাখবে বিক্রয়কারী সংস্থা।

০৭ ১৭

ডিজিটাল ‘হলুদ ধাতু’র ক্ষেত্রে বিশুদ্ধতার কোনও প্রশ্ন নেই। এতে লগ্নির একাধিক সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, ই-গোল্ডে বিনিয়োগের ঝুটঝামেলা অনেকটাই কম। মাত্র এক টাকা দিয়েও ডিজিটাল সোনা কিনতে পারেন গ্রাহক। এর ফলে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের নাগালের মধ্যে চলে এসেছে হলুদ ধাতু। গয়না ক্রয়ের ক্ষেত্রে সেই সুবিধা নেই।

০৮ ১৭

দ্বিতীয়ত, অলঙ্কারের ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট পরিমাণ সোনা কিনতেই হয়। সেখানে হলুদ ধাতুর ভগ্নাংশ কেনার কোনও সুযোগ নেই। ডিজিটাল সোনায় সেই সুবিধা থাকায় এর প্রতি আমজনতার আকর্ষণ বাড়ছে। তৃতীয়ত, লগ্নিকারী বছরের যে কোনও সময়ে ডিজিটাল সোনা কিনতে বা বিক্রি করতে পারেন। অলঙ্কারের ক্ষেত্রে হলুদ ধাতু বিক্রির মাধ্যমে মুনাফা করা বেশ জটিল। কারণ, এতে গয়নার মজুরি বাদ দিয়ে সোনার দাম হিসাব করা হয়।

০৯ ১৭

অনেক সময়ে দামি পাথরে অলঙ্কারের নকশা তৈরি করা হয়। বিক্রির সময় সেগুলিকে বাদ দিয়ে সোনার দর হিসাব করতে হবে। কিন্তু ডিজিটাল সোনায় এ সব ঝামেলা নেই। গ্রাহকের হাতে যে পরিমাণ হলুদ ধাতু রয়েছে, তার দাম পেয়ে যাবেন তিনি। ফলে এতে মুনাফার সুযোগ অনেকটাই বেশি।

১০ ১৭

ডিজিটাল সোনার আর একটি ভাল দিক হল, সব সময় তার মূল্য দেখতে পান গ্রাহক। অর্থাৎ, এই মুহূর্তে হলুদ ধাতু কী দামে খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে, তা জানার সুবিধা রয়েছে তাঁর। আবার লগ্নিকারী ইচ্ছা করলে ডিজিটাল সোনাকে ভৌত হলুদ ধাতুতে বদলে নিতে পারেন। অর্থাৎ, একে সোনার বার বা কয়েনে বদলে নেওয়ার সুযোগ পাবেন তিনি। ডিজিটাল সোনাকে গয়না সোনায় রূপান্তরিত করলে অবশ্য ‘মেকিং চার্জ’ দিতে হবে তাঁকে।

১১ ১৭

তবে ই-গোল্ডে বিনিয়োগ আয়করের আওতার বাইরে নয়। ডিজিটাল সোনা বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ অর্থাৎ মূলধনী আয়ের থেকে দিতে হবে কর। তবে সেটা দীর্ঘমেয়াদি না কি স্বপ্নমেয়াদি, তার উপর নির্ভর করবে করের পরিমাণ। ডিজিটাল সোনায় অবশ্য বিমার সুবিধা পেতে পারেন গ্রাহক।

১২ ১৭

গোল্ড ইটিএফে আবার লগ্নি করতে গেলে বিনিয়োগকারীর থাকতে হবে ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট। এটি আবার পরোক্ষ ভাবে নিয়ন্ত্রিত একটি তহবিল। এতে সাধারণত ৯৯.৫ শতাংশ খাঁটি সোনার এক গ্রামের দামকে ইউনিট হিসাবে ধরা হয়। আবার অনেক সময়ে এক গ্রামের এক হাজার ভাগের এক ভাগকে ইউনিট মেনে গোল্ড ইটিএফে করা হয় লগ্নি। স্টকের মতো সারা দিন এই ডিজিটাল ‘হলুদ ধাতু’ কেনাবেচা করার সুযোগ পেয়ে থাকেন গ্রাহক।

১৩ ১৭

অন্য দিকে মিউচুয়াল ফান্ডে ডিজিটাল সোনায় বিনিয়োগের ঝঞ্ঝাট আরও কম। এখানে ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট ছাড়াই লগ্নি করতে পারবেন গ্রাহক। কেউ ইচ্ছা করলে মিউচুয়াল ফান্ডের ‘সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান’ বা এসআইপিতে মাত্র ১০০ টাকা দিয়েও ডিজিটাল ‘হলুদ ধাতু’ কিনতে পারেন।

১৪ ১৭

আর্থিক বিশ্লেষকদের কথায়, গোল্ড ইটিএফের তুলনায় মিউচুয়াল ফান্ডের ‘হলুদ ধাতু’র লগ্নিতে তুলনামূলক ভাবে খরচ হয় কিছুটা বেশি। কারণ প্রথমটির ক্ষেত্রে ব্যয়-অনুপাত বা এক্সপেন্স রেশিয়ো অনেকটাই কম। সেটা সাধারণত ০.৪ থেকে ০.৭ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করে থাকে। এর সঙ্গে আবার যুক্ত হয় ইটিএফের ব্রোকারেজ চার্জ এবং ডিম্যাট অ্যাকাউন্টের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ। তবে বর্তমানে অধিকাংশ সংস্থাই অ্যাকাউন্ট রক্ষণাবেক্ষণের খরচ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

১৫ ১৭

অন্য দিকে গোল্ড মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে ব্যয় অনুপাত বা এক্সপেন্স রেশিয়ো থাকে ০.৮ থেকে ১.৫ শতাংশ। এর সঙ্গে যোগ হতে পারে ডিস্ট্রিবিউটারের কমিশন। এই বিনিয়োগে মাঝেমধ্যেই ধরা পড়ে ট্র্যাকিং এরর, যা আসলে বেঞ্চমার্কের রিটার্ন বা প্রকৃত রিটার্নের সঙ্গে ফান্ডের রিটার্নের পার্থক্য। এই ধরনের ক্ষেত্রে মিউচুয়াল ফান্ডের স্বর্ণ তহবিলগুলি ইটিএফে লগ্নি করা শুরু করে।

১৬ ১৭

গত এক দশকে গোল্ড ইটিএফ এবং মিউচুয়াল ফান্ড উভয়ই বছরে গড়ে প্রায় ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ হারে রিটার্ন দিয়েছে। তবে সামগ্রিক খরচের বহর হিসাব করলে দেখা যাবে ইটিএফের বিনিয়োগকারীরা বেশি লাভবান হয়েছেন। যে হেতু দীর্ঘমেয়াদি এবং স্বল্পমেয়াদি মূলধনী আয়ের উপর করের মাত্রা আলাদা, তাই ডিজিটাল সোনা থেকে প্রাপ্ত রিটার্নের পরিমাণ আরও কিছুটা কমতে পারে।

১৭ ১৭

এ বছরের ৯ নভেম্বর কলকাতার বাজারে ১০ গ্রাম খুচরো পাকা সোনার (পড়ুন ২৪ ক্যারেট) দাম ওঠে ১.২১ লক্ষ টাকা। সেখানে হলমার্কযুক্ত ‘হলুদ ধাতু’র (২২ ক্যারেট) দর ১.১৫ লক্ষ টাকায় ঘোরাফেরা করছে। এ ছাড়া ১০ গ্রাম পাকা সোনার বাট কিনতে হলে লাগছে ১.২ লক্ষ টাকা। শীতে বিয়ের মরসুমে এই দাম আরও ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement