বলিউডের আসন্ন ছবি ‘ধুরন্ধর’-এর মূল ঝলক প্রকাশ্যে আসতেই তা হইচই ফেলেছে। গোলাগুলি, বিস্ফোরণ, মারপিট, রক্ত, ভয়ঙ্কর সব চরিত্র— আদিত্য ধর পরিচালিত এই ছবির ট্রেলার দেখেই শিউরে উঠছেন দর্শক। ছবিটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই।
‘ধুরন্ধর’ ছবিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করছেন রণবীর সিংহ। রণবীর ছাড়াও ‘ধুরন্ধর’ ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন সঞ্জয় দত্ত, আর মাধবন, অক্ষয় খন্না এবং অর্জুন রামপাল। তাঁদের প্রত্যেকেরই ‘লুক’ সাড়া ফেলেছে। ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় রয়েছেন সারা অর্জুন। ২৮০ কোটি টাকার বাজেটে তৈরি হয়েছে ‘ধুরন্ধর’। আগামী ৫ ডিসেম্বর এই ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার কথা।
‘ধুরন্ধর’ এই বছরের বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমাগুলির মধ্যে একটি। ছবিটি তৈরি হয়েছে সত্য ঘটনা অবলম্বনে। অন্তত তেমনটাই দাবি করা হয়েছে ছবির ট্রেলারে। মনে করা হচ্ছে, পাকিস্তানে গিয়ে ভারতীয় কোনও বীর সেনার বিজয়ের গাথা দেখা যাবে ছবিটিতে।
ইতিমধ্যেই মাধবন, অক্ষয় এবং সঞ্জয়ের সঙ্গে বাস্তবের কিছু চরিত্রের মিল খুঁজে পেয়েছেন সিনেমা নিয়ে চর্চা করা অনুরাগীরা। দর্শকের দাবি, মাধবন অভিনীত অজয় সান্যাল চরিত্রটি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের উপর ভিত্তি করে তৈরি।
তবে ছবির মূল ঝলকে বিশেষ নজর কেড়েছে অক্ষয় অভিনীত চরিত্রটি। ভয় ধরিয়েছে তাঁর বলা ডায়লগ এবং মারপিটের দৃশ্য। সিনেবোদ্ধাদের অনেকেই বিষয়টি নিয়ে খোঁজাখুঁজি চালিয়ে দাবি করছেন, ‘ধুরন্ধর’ ছবিতে অক্ষয়ের চরিত্র করাচির এককালের সন্ত্রাস তথা কুখ্যাত মাফিয়া রেহমান ডাকাইতের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত। অনেকে আবার রেহমানের চেহারার সঙ্গেও মিল খুঁজে পেয়েছেন অক্ষয় অভিনীত চরিত্রের।
ঘটনাচক্রে, ‘ধুরন্ধর’ ছবিতে অক্ষয় অভিনীত চরিত্রের নামও রেহমান ডাকাইত। কিন্তু সত্যিই কি ‘ধুরন্ধর’-এ কুখ্যাত পাক মাফিয়া রেহমান ডাকাইতের চরিত্রে অভিনয় করছেন অক্ষয়? অনেকে তেমন দাবি করলেও ছবির নির্মাতাদের তরফে সে কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়নি।
ছবিমুক্তির পর দর্শকের মনের ধোঁয়াশা কাটবে। তার আগে একনজরে দেখে নেওয়া যাক কে ছিলেন এই রেহমান।
রেহমান ডাকাইত়ের আসল নাম ছিল সর্দার আব্দুল রেহমান বালোচ। খুব কম বয়সেই অপরাধজগতে হাতেখড়ি হয় রেহমানের। ধীরে ধীরে ক্ষমতাবৃদ্ধি করে পাক আন্ডারওয়ার্ল্ডের ‘বেতাজ বাদশা’ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন গ্যাংস্টার হিসাবে।
রেহমানের জন্ম ১৯৮০ সালে। বাবা মহম্মদ এবং মা খাদিজা বিবি। রেহমানের বাবা এবং কাকা ছিলেন কুখ্যাত মাদক পাচারকারী। ১৯৬৪ সাল থেকে মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। অল্প বয়স থেকে মাদক ব্যবসায় হাত পাকাতে শুরু করেন রেহমানও।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে ছুরি মেরে খুনের অভিযোগ উঠেছিল রেহমানের বিরুদ্ধে। কেউ কেউ দাবি করেন, ১৯৯৫ সালে নিজের মাকেও খুন করেছিলেন তিনি। প্রতিপক্ষ গ্যাংয়ের সদস্যের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে সন্দেহেই নাকি মাকে খুন করেছিলেন তিনি।
২০০১ সাল নাগাদ রেহমানের প্রভাব বৃদ্ধি পেতে শুরু করে করাচি এবং আশপাশের এলাকায়। তাঁর মূল ঘাঁটি ছিল করাচির কাছে ল্যারি শহরে। তবে করাচি এবং সংলগ্ন এলাকাতেও তাঁর ভয়ে কাঁপত সাধারণ মানুষ।
শোনা যায়, রেহমান এতটাই নির্মম ছিলেন যে, করাচির মানুষ তাঁর নাম মুখে আনতেও ভয় পেতেন। আবার করাচি এবং আশপাশের এলাকায় প্রচলিত ছিল, রেহমান কোনও মানুষ ছিলেন না, ছিলেন সাক্ষাৎ শয়তান।
পাকিস্তানে রেহমানের মূল প্রতিপক্ষ ছিলেন আরশাদ পাপ্পু নামে অন্য এক গ্যাংস্টার। ২০০০ সালের গোড়ার দিকে, মাদক, তোলাবাজি এবং এলাকা দখল নিয়ে আরশাদের সঙ্গে রেহমানের বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করে। রক্তাক্ত হয়ে ওঠে ল্যারি।
পাকিস্তানে রাজনীতিতে প্রবেশের উচ্চাকাঙ্ক্ষাও দেখেছিলেন রেহমান। তার জন্য অনেক চেষ্টাও করেছিলেন। তবে সে ভাবে সফল হননি। সেই সূত্রে অনেক তাবড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে নাকি ওঠাবসা ছিল তাঁর।
প্রতাপ বাড়িয়ে ২০০৮ সালে ‘পিপল্স আমান কমিটি (পিএসি)’ নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী তৈরি করেছিলেন রেহমান। বলা হয় ‘পাকিস্তান পিপল্স পার্টি’র সঙ্গে সরাসরি যোগ ছিল এই গোষ্ঠীর।
করাচিতে সংগঠিত অপরাধ এবং গ্যাং যুদ্ধে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল পিএসি-র বিরুদ্ধে। সংগঠনটির কার্যকলাপ প্রথমে ল্যারিতে সীমাবদ্ধ ছিল। শীঘ্রই করাচির অন্যান্য বালোচ জনবহুল এলাকা, যেমন ডালমিয়া, মালির, গদাপ, মাওয়াচ গোথ, এমনকি সিন্ধু ও বালোচিস্তানের কিছু নিকটবর্তী শহর ও গ্রামেও নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে পিএসি।
২০০৮ থেকে অপরাধজগতে রেহমানের প্রভাব আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাঁকে দমন করতে উঠেপড়ে লাগে প্রশাসন। ২০০৯ সালে করাচি পুলিশের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন রেহমান এবং তাঁর গ্যাং।
২০০৯ সালেই পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় রেহমানের। রেহমানের মৃত্যুর পর, পিএসি-র মাথায় বসেন উজাইর বালোচ নামে এক প্রভাবশালী সদস্য। বলা হয়, ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত পাকিস্তান পিপল্স পার্টির সমর্থক গোষ্ঠী হিসাবে কাজ করেছিল পিএসি। ২০১১ সালে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।