Nomikai

হা-ক্লান্ত মনকে শান্তি দেওয়ার চেষ্টা! গোপন কথাটি গোপন রাখার শর্তে ‘বিশেষ’ পার্টির আয়োজন হয় যে দেশের অফিসে

সারা সপ্তাহ ধরে কাজের চাপ সামলে সপ্তাহান্তে সহকর্মীদের মন ফুরফরে রাখতে মদ্যপানের আয়োজন করা হয়। তা ছাড়া কোনও প্রজেক্ট শেষ হলে, অফিসে কোনও নতুন সহকর্মী যোগ দিলে অথবা পুরনো সহকর্মী অবসরগ্রহণ করলেও আসর বসে সহকর্মীদের।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:১৩
Share:
০১ ২৩

কাজের সূত্রে দিনের ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা সহকর্মীদের সঙ্গে কাটাতে হয়। তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক তেতো হয়ে গেলে তার প্রভাব পড়ে কর্মজীবনেও। কাজ করার স্পৃহা কমে যায়, নেতিবাচক চিন্তাও ঘোরাফেরা করতে শুরু করে। তাই কর্মক্ষেত্রকে আরও বন্ধুত্বপূর্ণ করে তোলার জন্য অফিসের পর মদ্যপানের আসর জমানোর প্রথা রয়েছে জাপানে।

০২ ২৩

অফিসের সমস্ত কাজ সারার পর সহকর্মীরা এমন কোনও রেস্তরাঁয় দেখা করেন যেখানে খাবারের পাশাপাশি সুরাপানও করা যায়। জাপানে এই প্রথা ‘নোমিকাই’ নামে পরিচিত।

Advertisement
০৩ ২৩

‘নোমিকাই’ শব্দটি ‘নোমু’ এবং ‘কাই’ নামের দু’টি জাপানি শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ একসঙ্গে মদ্যপান করা। সংস্থার কর্মীরা অফিসের পর মদ্যপানের আসরে যোগ দেবেন, এমনই নিয়ম রয়েছে জাপানে। তবে যখন খুশি সে আসর বসে না। বিশেষ পরিস্থিতিতে আসরের আয়োজন করে সংস্থাই।

০৪ ২৩

সারা সপ্তাহ ধরে কাজের চাপ থাকলে সপ্তাহান্তে সহকর্মীদের মন ফুরফুরে রাখতে মদ্যপানের আসরের আয়োজন করা হয়। তা ছাড়াও কোনও প্রজেক্ট শেষ হলে, অফিসে কোনও নতুন সহকর্মী যোগ দিলে অথবা পুরনো সহকর্মী অবসরগ্রহণ করলে উক্ত ব্যক্তির উদ্দেশে নোমিকাইয়ের আয়োজন করা হয়।

০৫ ২৩

সংস্থার ঊর্ধ্বতনই যে সব সময় নোমিকাই আয়োজনের দায়িত্বভার নেবেন, এমনটা নয়। অফিসের যে কোনও সহকর্মীই সেই দায়িত্ব নিতে পারেন। তবে যে ব্যক্তির উদ্দেশে নোমিকাইয়ের আয়োজন করা হয়, তাঁকে আয়োজকের দায়িত্ব দেওয়া হয় না।

০৬ ২৩

খাওয়াদাওয়ার আয়োজন কোন রেস্তরাঁয় করা হবে তা নির্বাচন করার দায়িত্ব থাকে নোমিকাইয়ের আয়োজকের উপর। জাপানে এমন কতকগুলি রেস্তরাঁ রয়েছে যা ‘ইজ়াকায়া’ নামে পরিচিত।

০৭ ২৩

‘ইজ়াকায়া’ রেস্তরাঁর বিশেষত্ব হল, সেখানে খাবারের পাশাপাশি মদও পরিবেশন করা হয়। তা ছাড়া বড় দলের বসার জন্য সেই রেস্তরাঁগুলির ভিতর আলাদা জায়গাও থাকে। সাধারণত নোমিকাই আয়োজনের জন্যই সেই বিশেষ জায়গাগুলি বরাদ্দ। নোমিকাইয়ের আয়োজক সেই তালিকা থেকে একটি রেস্তরাঁ নির্বাচন করার পর সহকর্মীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করতে শুরু করেন।

০৮ ২৩

খাওয়াদাওয়া এবং পানীয় বাবদ কত টাকা খরচ করা হবে তা আগে থেকেই ঠিক করে ফেলেন নোমিকাইয়ের আয়োজক। সেই অনুযায়ী তহবিলও তৈরি করা হয়।

০৯ ২৩

অফিসের সকল সহকর্মীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন নোমিকাইয়ের আয়োজক। তবে, অফিসের অধস্তন কর্মীরা তুলনামূলক ভাবে কম টাকাও দিতে পারেন।

১০ ২৩

অর্থ সংগ্রহ করার পর তা আয়োজক অথবা সংস্থার ঊর্ধ্বতনের কাছে জমা রাখা হয়। তার মধ্যেই রেস্তরাঁর বিলের খরচ মেটানো বাধ্যতামূলক। যদি বিল মেটানোর পর কিছু টাকা বেঁচে যায়, তা হলে তা পরবর্তী নোমিকাইয়ের জন্য জমিয়ে রাখা হয়। আর সহকর্মীদের মধ্যে সেই টাকা হিসাব অনুযায়ী ভাগ করে দেওয়া হয় না।

১১ ২৩

নোমিকাই আসরের বিশেষ নিয়মকানুন রয়েছে। রেস্তরাঁয় ঢুকে যে কোনও আসনে বসে পড়তে পারেন না সহকর্মীরা। পদ অনুযায়ী বসতে হয় তাঁদের।

১২ ২৩

রেস্তরাঁর দরজার কাছাকাছি আসনে কখনও বসেন না সংস্থার অধিকর্তা। দরজা থেকে সবচেয়ে দূরে যে আসন থাকে, তা বরাদ্দ থাকে সংস্থার অধিকর্তার জন্য। তার পর ঊর্ধ্বতন কর্মীরা এক একটি আসনে বসে প়ড়েন। দরজার সবচেয়ে কাছের আসনে বসতে হয় সবচেয়ে নিচুতলার কর্মীকে।

১৩ ২৩

নোমিকাইয়ের আসর শুরু হয় আয়োজকের ভাষণ দিয়ে। তার পর সংস্থার অধিকর্তা সহকর্মীদের উদ্দেশে অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতা করেন। বক্তৃতা শেষ হলে শুরু হয় খাওয়াদাওয়া।

১৪ ২৩

নোমিকাইয়ের মূল আকর্ষণ হল সুরাপান। অফিসের যে সহকর্মীরা মদ্যপান করেন না, তাঁরা অন্য যে কোনও পানীয় নিতে পারেন। চা, ফলের শরবতও পান করা যেতে পারে। কিন্তু পানীয়ের গ্লাস ফাঁকা হয়ে গেলে নোমিকাইয়ের নিয়মানুযায়ী তা নিজে থেকে ভর্তি করা যাবে না।

১৫ ২৩

সাধারণত সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মীদের পানীয় গ্লাস থেকে ফুরিয়ে গিয়েছে কি না, সে দিকে নজর রাখেন অধস্তনেরা। পানীয় শেষ হয়ে গেলে অধস্তনেরাই আবার গ্লাস পূর্ণ করে দেন।

১৬ ২৩

অধস্তন কর্মীদের গ্লাস ফাঁকা থাকলেও তা আবার পূর্ণ করতে দ্বিধা বোধ করেন না সংস্থার ঊর্ধ্বতনেরা। তাঁরাই অধস্তনদের মদ পরিবেশন করে দেন। তবে পরিবেশনের সময় কখনও বাধা দেওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে, ঊর্ধ্বতনদের মানা করলে হিতে বিপরীত হওয়ারও আশঙ্কা থাকে।

১৭ ২৩

মদ পরিবেশন করার সময় বিশেষ নিয়ম মেনে গ্লাসটি ধরতে হয়। দু’হাত দিয়ে গ্লাসটি মুড়ে ধরে তা ধরে রাখার নিয়ম রয়েছে নোমিকাইয়ের আসরে উপস্থিত অতিথিদের।

১৮ ২৩

যে সহকর্মীরা মদ থেকে শতহস্ত দূরে থাকেন, তাঁরাও গ্লাস ফাঁকা রাখতে পারেন না। যদি তাঁর মদ্যপান করতে না চান তা হলে যে কোনও রকম ঠান্ডা পানীয় ঢেলে তাঁর গ্লাসটি সব সময় পূর্ণ রাখতে হয়। নোমিকাইয়ের নিয়ম অনুযায়ী, গ্লাস কখনওই ফাঁকা রাখা চলে না।

১৯ ২৩

সংস্থায় যোগ দেওয়া নতুন কর্মী অথবা সংস্থা থেকে যে পুরনো সহকর্মী বিদায় জানাবেন তাঁকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য মদের গ্লাস উঁচু করে ধরেন অন্য সহকর্মীরা। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও পালন করতে হয় বিশেষ নিয়ম। উক্ত ব্যক্তির যা উচ্চতা, তার চেয়ে অনেকটাই নীচে গ্লাস ধরে শুভেচ্ছা জানাতে হয়।

২০ ২৩

নোমিকাইয়ের আসর ভেঙে যাওয়ার পর আবার নতুন করে আসর শুরু হয়। তবে সেই আসরে অংশগ্রহণ করা বাধ্যতামূলক নয়। যে সহকর্মীরা আরও মদ্যপান করতে চান, তাঁরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে সেই রেস্তরাঁ থেকে বেরিয়ে অন্যত্র চলে যান। জাপানের প্রচলন অনুযায়ী, দ্বিতীয় আসরের নাম ‘নিজিকাই’।

২১ ২৩

নিজিকাইয়ের আসর ভেঙে যাওয়ার পর আবার তৃতীয় আসরও বসতে পারে। যদি দ্বিতীয় আসরে থাকা সহকর্মীদের সুরাপান করে মন না ভরে, তা হলে তৃতীয় আসরের আয়োজন করেন তাঁরা। জাপানে তা ‘সানজিকাই’ নামে পরিচিত।

২২ ২৩

নোমিকাইয়ের পরবর্তী দু’টি আসরে মদ্যপানের পাশাপাশি নাচগানও হতে পারে। তবে, এই দুই আসরের খরচ নিজেদের পকেট থেকেই দিতে হয়। কোনও সহকর্মী যদি মদ পান করে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন, তা নিয়ে অফিসে কখনও আলোচনা করা হয় না।

২৩ ২৩

জাপানের বাসিন্দাদের মতে, নোমিকাইয়ের ফলে অধস্তনদের সঙ্গে ঊর্ধ্বতনের দূরত্ব কমে। সহকর্মীদের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হয়, ফলে তাঁরা অফিসে আরও মিলেমিশে কাজ করতে পারে। সংস্থার উৎপাদনও সামগ্রিক ভাবে বৃদ্ধি পায়।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement