ছ’বছর ধরে বলিউডজগতের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু বড় পর্দায় মাত্র একটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। সে ছবিটিও বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। তার পর থেকে দোরে দোরে ঘুরেও কাজের সুযোগ পাননি তিনি। নায়িকা হয়েও প্রচারে ছিলেন না। শেষমেশ শাহরুখ খানের পুত্র আরিয়ান খানের নজরে পড়লে ভাগ্যের চাকা ঘোরে সহর বাম্বার।
১৯৯৯ সালে হিমাচল প্রদেশের শিমলায় জন্ম সহরের। বাবা-মা এবং বোনের সঙ্গে সেখানেই থাকতেন তিনি। শিমলা থেকে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য মুম্বই চলে যান সহর। অবশ্য মুম্বই যাওয়ার নেপথ্যে অন্য একটি কারণও ছিল।
শৈশব থেকেই অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন সহর। তিনি ভেবেছিলেন, পড়াশোনা শেষ করে অভিনয় নিয়েই কেরিয়ার গড়বেন। মুম্বইয়ের একটি কলেজ থেকে স্নাতক হন তিনি।
স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর মুম্বইয়ের একটি কলেজ থেকে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ে স্নাতকোত্তর হন সহর। পড়াশোনা শেষ করেই অভিনয়ের জন্য নানা জায়গায় অডিশন দিতে শুরু করেন তিনি।
বাঁধাধরা রোজগার ছিল না বলে মুম্বইয়ের একটি হস্টেলে থাকতেন সহর। আরও আট জন মহিলা সহরের সঙ্গে সেই হস্টেলের একই ঘরে থাকতেন। গন্তব্য যত দূরেই হোক না কেন, খরচ কমানোর জন্য লোকাল ট্রেনেই যাতায়াত করতেন সহর।
২০১৬ সালে এক মোবাইল প্রস্তুতকারী সংস্থা দ্বারা আয়োজিত সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন সহর। কত্থকেও পারদর্শী তিনি। বিজ্ঞাপনে অভিনয়ের জন্য অডিশন দিতে শুরু করেন সহর। কিন্তু সহজে কাজের সুযোগ পেতেন না তিনি।
দোরে দোরে অডিশন দিয়েও লাভ হত না সহরের। বহু জায়গা থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হার মানার পাত্রী ছিলেন না সহর। এক তারকা-পুত্রের সঙ্গে জুটি বেঁধে বড় পর্দায় অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। সেই প্রস্তাব পেয়ে আর ফেরাননি সহর।
২০১৯ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘পল পল দিল কে পাস’ ছবিটি। এই ছবিতে বলি অভিনেতা সানি দেওলের পুত্র কর্ণ দেওলের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল সহরকে। দু’জনের কেরিয়ারের প্রথম ছবি ছিল সেটি। কিন্তু বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে ছবিটি।
কেরিয়ারের প্রথম ছবি ব্যর্থ হওয়ায় বিপদে পড়ে সহরের পেশাগত জীবন। বড় পর্দায় কাজের সুযোগ পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। সহরের দাবি, প্রথম ছবি মুক্তির পর তিনি অভিনয়ের জন্য হাতেগোনা কয়েকটি প্রস্তাব পেয়েছিলেন বটে। কিন্তু কোনও চরিত্রই তাঁর পছন্দ হয়নি। তাই সেই প্রস্তাবগুলি ফিরিয়ে দেন সহর।
‘পল পল দিল কে পাস’ ছবি মুক্তির পর টানা দু’বছর সহরের অভিনয় দেখা যায়নি। ২০২১ সালে ওটিটির পর্দায় মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দ্য এম্পায়ার’ এবং ‘দিল বেকারার’ নামের দু’টি ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করতে দেখা যায় সহরকে।
২০২২ সালে বলি অভিনেতা ইমরান হাশমির সঙ্গে একটি মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয় করেন সহর। সেই গানটি গেয়েছিলেন সঙ্গীতশিল্পী বি প্রাক। তার পর আবার দু’বছরের বিরতি।
২০২৪ সালে ওটিটির পর্দায় মুক্তি পায় ‘দ্য মিরান্ডা ব্রাদার্স’ নামের স্পোর্টস ড্রামা ঘরানার একটি হিন্দি ছবি। বলি অভিনেতা হর্ষবর্ধন রানে এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এই ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় সহরকে।
বড় পর্দায় একটি মাত্র ছবিতে অভিনয়ের পর ওটিটির প্ল্যাটফর্মেই টুকটাক অভিনয় করতে দেখা যেত সহরকে। ছ’বছর ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত থেকেও বিশেষ নামডাক হচ্ছিল না তাঁর।
শাহরুখ-পুত্র আরিয়ানের নজর পড়তেই সহরের কেরিয়ারের ভাগ্যের চাকা অন্য দিকে মোড় নেয়। বৃহস্পতিবার ওটিটির পর্দায় মুক্তি পেয়েছে ‘দ্য ব্যাড্স অফ বলিউড’। এই সিরিজ়ের মাধ্যমে পরিচালনার জগতে হাতেখড়ি হল আরিয়ানের। ‘দ্য ব্যাড্স অফ বলিউড’ ওয়েব সিরিজ়ে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছেন সহর।
এক সাক্ষাৎকারে আরিয়ান প্রসঙ্গে সহর বলেন, ‘‘আরিয়ান তাঁর কাজের মধ্যে সব সময় ডুবে থাকতেন। এক দিনও ছুটি নিতে দেখিনি আরিয়ানকে। শুটিং না থাকলেও কাজের সঙ্গেই নিজেকে যুক্ত রাখতেন তিনি। নেপথ্যসঙ্গীত কোন দৃশ্যে, কতটা ব্যবহার করা যায় তা-ও নজরে রাখতেন আরিয়ান।’’
আরিয়ানের সিরিজ়ে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের পর রাতারাতি আলোর রোশনাইয়ের কেন্দ্রে পৌঁছে গিয়েছেন সহর। ছ’বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে ‘স্ট্রাগল’ করার পর অবশেষে স্বপ্নপূরণ হল তাঁর। তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি কী পরিকল্পনা করেছেন তা এখনও জানাননি সহর।
ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে চর্চা হোক, তা পছন্দ করেন না সহর। ২০১৯ সালে এক সাক্ষাৎকারে নায়িকাকে তাঁর প্রেমজীবন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘‘এখন সিঙ্গল রয়েছি।’’ তার পর আর সহর তাঁর প্রেমজীবন নিয়ে শিরোনামে আসেননি।
সমাজমাধ্যমে সক্রিয় থাকেন সহর। ইতিমধ্যেই নিজস্ব অনুরাগীমহল তৈরি করে ফেলেছেন তিনি। ইনস্টাগ্রামের পাতায় এখনও পর্যন্ত তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা তিন লক্ষের গণ্ডি পার করে গিয়েছে।