বলিউডে নাকি দুই নায়িকার মধ্যে ভাল সম্পর্ক কখনওই তৈরি হয় না। নায়িকা সমসাময়িক এবং সফল হলে তো নয়ই। শীর্ষস্থান দখল করে রাখার জন্য কেউ কারওকে এক ইঞ্চি জায়গা ছেড়ে দিতে রাজি নন। অতীতেও এর উদাহরণ ছিল। বলিউডের সমসাময়িক নায়িকাদের মধ্যে গলায় গলায় ভাবের তেমন কোনও নজির নেই।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও সাক্ষাৎকারে মাঝেমাঝে তারকা অভিনেত্রীরা বন্ধুত্ব নিয়ে যা দাবি করেন তা সবটাই লোকদেখানো বলে মনে করা হয়। একসঙ্গে চলচ্চিত্রে কাজ করতে গিয়ে দুই নায়িকার মন কষাকষি কটু কথা ও হাতাহাতি পর্যন্ত গড়িয়েছে এমন নজির বলিউডে ভূরি ভূরি। সেই তালিকায় আছেন করিনা কপূর খান। তাঁর সঙ্গে সহ-অভিনেত্রীদের সম্পর্ক নাকি মোটেই ভাল নয়।
নিন্দকদের কথায়, করিনার সঙ্গে বি-টাউনের বেশির ভাগ অভিনেত্রীর সম্পর্ক মধুর নয়। যাঁরা করিনার কাছের বন্ধু, তাঁরা কেউই করিনার সাফল্যের ধারেকাছে আসেন না। ‘গসিপ কুইন’ বেবো প্রচারের সমস্ত আলো নিজের দিকে রাখতেই ভীষণ পছন্দ করেন। তিনি যেখানে মধ্যমণি নন, সেখানে তিনি থাকতে চান না।
বাঙালি অভিনেত্রী বিপাশা বসু থেকে শুরু করে দেশি গার্ল প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার সঙ্গে করিনার আকচা-আকচি নিয়ে একসময় সরগরম ছিল বলিউড। ২০০১ সালে ‘অজনবী’ ছবির শুটিংয়ে সহ-অভিনেত্রীকে ‘কালো বেড়াল’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন বেবো। শোনা যায়, রাগের মাথায় এক জন অন্য জনকে থাপ্পড়ও কষিয়েছিলেন। সেই থেকেই মুখ দেখাদেখি বন্ধ দুই সুন্দরী অভিনেত্রীর।
করিনা এবং প্রিয়ঙ্কা দু’জনকেই বলিপাড়ার শীর্ষ অভিনেত্রী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। দু’টি ছবিতে একসঙ্গে কাজ করার সময় তাঁদের ‘ক্যাটফাইট’ সংবাদ শিরোনামে এসেছিল। ‘অ্যায়েতরাজ়’ এবং ‘ডন’-এর মতো ছবিগুলি করার সময় তাঁদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। প্রিয়ঙ্কার উচ্চারণ নিয়ে মজা করেন করিনা। ছেড়ে কথা বলেননি দেশি গার্ল। যোগ্য জবাব দেন করিনাকে।
দুই সহ-অভিনেত্রী ছাড়াও আরও একজনের সঙ্গে করিনার সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়েছিল। দু’জনেই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ভবিষ্যতে পরস্পরের সঙ্গে কোনও কাজ করবেন না। কয়েক বছর আগে সেই ধনুকভাঙা পণ অবশ্য দু’জনেই ত্যাগ করেছেন। কোনও সহ-অভিনেত্রী নন। করিনা বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলিউডের পরিচালক-প্রযোজক একতা কপূরের সঙ্গে।
তাঁদের বিবাদের সূত্রপাত হয় ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মুম্বই’-এর সিক্যুয়েলের সময়। অক্ষয় কুমার ও ইমরান খান অভিনীত এই ছবিতে করিনাকে নায়িকা হিসাবে পেতে চেয়েছিলেন একতা। ২০১৩ সালে মিলন লুথারিয়ার পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মুম্বই দোবারা’। এই ছবিটির প্রযোজক ছিলেন একতা ও তাঁর মা শোভা কপূর।
ইমরানের বিপরীতে জেসমিন শেখের চরিত্রের জন্য একতার পছন্দ ছিলেন করিনা। কারণ সেই সময় করিনা পর পর হিট ছবি উপহার দিয়ে চলেছিলেন বলিউডকে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের পেজ থ্রি জুড়ে নানা চর্চা হত করিনাকে নিয়ে। জ়িরো ফিগার থেকে প্রেমের সম্পর্ক, পারিশ্রমিক ও নানা গসিপের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন কপূর বংশের এই ‘স্টারকিড’।
তাঁকে এই ছবিতে সই করানোর জন্য করিনার কাছে চিত্রনাট্য পড়তে পাঠিয়েছিলেন প্রযোজক একতা। বিভিন্ন সূত্রের দাবি, সেই চিত্রনাট্য নাকি ছুঁয়েই দেখেননি বেবো, পড়া তো দূরস্থান! চিত্রনাট্য না শুনেই একতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দেন করিনা।
এই ঘটনায় গোসা হয় জিতেন্দ্র-কন্যার। বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মুম্বই দোবারা’র প্রস্তাব আসার সময়েই করিনার কাছে আরও একটি সিনেমার প্রস্তাব এসেছিল। মধুর ভন্ডারকর তাঁর ‘হিরোইন’ সিনেমাটির জন্য করিনার দ্বারস্থ হন। আপাদমস্তক নায়িকাকেন্দ্রিক ছবির চিত্রনাট্য পড়ে করিনা সেটিকেই বেছে নিয়েছিলেন বলে জানা যায়।
একতার চিত্রনাট্যকে গুরুত্ব না দেওয়ার অন্যতম কারণ ছিল সেই ছবিতে একাধিক তারকার সমাবেশ। তিনি মনে করেছিলেন, একাধিক নায়কসর্বস্ব ওই ছবিতে নায়িকার কোনও জায়গাই নেই। সেই তুলনায় মধুরের ছবিটি নায়িকাকেন্দ্রিক হওয়ার জন্য সেটিকে তুলনায় নিরাপদ মনে করেছিলেন করিনা। আরও একটি বিষয়ও এর সঙ্গে জড়িত ছিল বলে বলিউডের অন্দরে কানাঘুষো চলছিল।
‘হিরোইন’ সিনেমার প্রস্তাব নিয়ে মধুর প্রথমে গিয়েছিলেন ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনের কাছে। বিশ্বসুন্দরী সেই ছবিতে কাজ করতে রাজি হননি। ফলে ছবিটি হস্তগত হয় করিনার। ঐশ্বর্যার ছেড়ে যাওয়া সিনেমায় কাজ করতে রাজি হয়ে যান করিনা।
এই ঘটনা একতার কানে যেতে বিষয়টি ভাল ভাবে নেননি টেলিভিশন কুইন। একটা সময়ে ছোটপর্দা জুড়ে ছিল তাঁরই আধিপত্য। বিনোদন জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজস্ব মেধা ও পরিশ্রমের জোরে। টেলিভিশনের জনপ্রিয় ধারাবাহিক প্রযোজনার মাধ্যমে পথ চলা শুরু একতা কপূরের।
ছোটপর্দার সফরের পরে ধীরে ধীরে বলিউডে নিজের জায়গা তৈরি করেন একতা। সেই সময় একতার কয়েকটি ছবি বক্স অফিসে সাফল্যও লাভ করেছিল। ছোটপর্দা ও বড়পর্দায় নামজাদা প্রযোজক হিসাবে করিনার এই অপমান মুখ বুজে মেনে নেননি একতাও। যদিও তিনি করিনার সঙ্গে সম্মুখসমরে উপস্থিত হননি। তবে বেশ কয়েক দিন অনলাইনে একটি ব্যাঙ্গাত্মক স্ট্যাটাস লিখে রেখেছিলেন।
সেটি দেখে অনেকেই বলেছিলেন এটি বেবো ও পরিচালক মধুরের উদ্দেশে লেখা হয়েছিল। যে দু’টি সিনেমা নিয়ে একতা ও করিনার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি শুরু হয়েছিল তার একটিও বিশেষ সাফল্যের মুখ দেখেনি। বক্স অফিসে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয় মধুরের ‘হিরোইন’। দর্শকের মনে দাগ কাটতে পারেনি একতার ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মুম্বই দোবারা’ও।
মাঝখান থেকে করিনা ও একতার মুখ দেখাদেখি বন্ধ ছিল বেশ কয়েক বছর। দুই তারকা-সন্তানই স্থির করে নিয়েছিলেন একসঙ্গে আর কোনও দিন কাজ করবেন না তাঁরা। প্রকাশ্যে দু’জনেই তা ঘোষণা করেন। পরে অবশ্য বরফ গলে। একতার প্রযোজনা সংস্থা ‘বালাজি মোশন পিকচার্স’। ‘বীরে দি ওয়েডিং’, ‘ক্রিউ’তে অভিনয় করেন করিনা। এই দুটি সিনেমার প্রযোজক ছিল একতার প্রযোজনা সংস্থাই।
এক দশক আগে যাঁর সঙ্গে চূড়ান্ত মন কষাকষি হয়েছিল তাঁর সঙ্গে জুটি বেঁধে ২০২১ সালে জীবনের নতুন ইনিংসে পা রেখেছিলেন বেবো। একতা কপূর ও হনসল মেহতার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘দ্য বাকিংহাম মার্ডারস’ ছবি প্রযোজনা করেন তিনি। সেই সময় বেবো বলেছিলেন, ‘‘একতা কপূরকে পরিবারিক সূত্রে বহু বছর ধরে চিনি। এই ছবিতে প্রযোজনার সুযোগ পেয়ে সম্মানিত বোধ করছি।’’