রাস্তা থেকে বাতিল জিনিস, আবর্জনা সংগ্রহ করে ও বেচে সংসার চালান অনেক দরিদ্র মানুষ। ভারত তো বটেই, বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশেই দেখা মেলে এই পেশার মানুষজনের। কেউ অভাবে বাধ্য হয়ে আবর্জনা সংগ্রহের পেশা বেছে নেন। বহু মানুষ আবার নিছক নেশার বশে রাস্তাঘাট, পার্ক বা বড় বড় অনুষ্ঠান থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করে থাকেন।
এমনই এক জন হলেন নিউ সাউথ ওয়েল্স সেন্ট্রাল কোস্টের ৩৬ বছর বয়সি ড্যামিয়ান গর্ডন। চাকরি করে যেটুকু অবসর সময় পেতেন, সেই সময়টা তিনি ব্যয় করতেন আবর্জনা সংগ্রহে। তিনি শহরের রাস্তা, সৈকত, পার্ক এবং অন্যান্য প্রকাশ্য স্থান থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পাত্র সংগ্রহ করতে শুরু করেন। তাঁর এই যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৭ সাল থেকে।
বছরের পর বছর রাস্তাঘাট এবং উৎসবে ফেলে দেওয়া ক্যান সংগ্রহ করে কাটিয়েছেন তিনি। এই উদ্যোগের সূচনা প্রথমে খুব ছোট করে শুরু হয়েছিল। ধীরে ধীরে তাঁর অধ্যবসায়ের ফল বড় আকারে ফিরে আসে গর্ডনের কাছে। এর ফলে শেষ পর্যন্ত গর্ডনের হাতে যে সম্পদ জমা হয়েছে, তা হল একটি বাড়ি!
বেশির ভাগ মানুষের কাছে খাবার বা পানীয়ের ক্যানগুলি ময়লা ফেলার পাত্রে ফেলা একটি ক্ষণিকের কাজ। ড্যামিয়ানের কাছে এটি সাত বছরের পরিশ্রম। প্রায় এক দশক ধরে এই তরুণ ফেলে দেওয়া ক্যান এবং বোতল সংগ্রহ করে সেগুলিকে জীবন বদলে দেওয়ার মতো সম্পদে পরিণত করেছিলেন।
তাঁর এই নিষ্ঠার ফল পেতে সময় লাগলেও শেষ পর্যন্ত তাঁর কাছে একটি বাড়ি কেনার জন্য পর্যাপ্ত সঞ্চয় তহবিল জমা হয়। তা থেকে তিনি বাড়ি কেনার কিস্তির টাকা মেটানোর সুযোগ পেয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। এই আট বছরে তিনি ৪ লক্ষ ৫০ হাজারেরও বেশি ক্যান এবং বোতল সংগ্রহ করেছিলেন। এর প্রতিটি অস্ট্রেলিয়ার ‘রিটার্ন অ্যান্ড আর্ন’ প্রকল্পের অধীনে বিক্রি করে ১০ সেন্ট করে পাওয়া যেত।
এই প্রকল্পের সুযোগ নিয়েই গর্ডন কয়েক লক্ষ টাকা বা়ড়তি উপার্জনে সক্ষম হন। সংবাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, অস্ট্রেলিয়াবাসী এই তরুণ শুধুমাত্র পাত্র ফেরত দিয়েই ৪০ লক্ষ টাকা আয় করেছেন। সেই টাকা দিয়ে নিলামে দুই কামরাবিশিষ্ট একটি বাড়ি কেনেন তিনি।
এই বাড়তি উপার্জন আলাদা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করতেন গর্ডন। কত টাকা জমা পড়ত সে দিকে কোনও নজরই দিতেন না। সেই টাকা থেকে বিশেষ কোনও খরচ করেননি তিনি। তাই কয়েক বছর পরে ধীরে ধীরে সঞ্চিত অর্থ একটি মোটা অঙ্কে পরিণত হয়।
এই সমস্ত পুনর্ব্যবহারযোগ্য পাত্র সংগ্রহ করার জন্য গর্ডন একটি বিশেষ কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠিত হওয়া সঙ্গীত উৎসবে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করা। সেখানে প্রচুর পরিত্যক্ত পাত্র পাওয়ার সুযোগ ঘটত তাঁর। অস্ট্রেলিয়া বছরে ৫০০টিরও বেশি উৎসব আয়োজন করে। গর্ডন এই সুযোগগুলি কাজে লাগিয়ে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে হাজার হাজার ক্যান সংগ্রহ করেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গর্ডন জানান, তিনি সঙ্গীত উৎসবের সংস্কৃতিতে জড়িত হতে চেয়েছিলেন। সেখানে পড়ে থাকা পাত্রগুলি তাঁকে সংগ্রহ করতে উৎসাহিত করেছিল। স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করার সময় নানা অভিজ্ঞতারও সাক্ষী হয়েছিলেন গর্ডন।
তিনি বলেন, ‘‘আমি মঞ্চের উল্টো দিক পরিষ্কার করতে গিয়ে বহু বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেছি। যেমন ‘দ্য প্রিসেটস’, ‘স্নিকি সাউন্ড সিস্টেম’-এর মতো সঙ্গীত জগতের বিখ্যাত ব্যক্তিত্বেরা। মঞ্চের পিছনে এবং গ্রিন রুমে কাজ করার সময় শিল্পীদের অজানা বিষয়ের সাক্ষী হয়েছিলেন বলে জানান গর্ডন।
গর্ডনের ‘সংগ্রহশালায়’ কেবল ক্যানই একা স্থান পায়নি। তিনি প্রচুর পরিমাণে পরিত্যক্ত জিনিসপত্রও সংগ্রহ করেন বলে জানিয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে ক্যাম্পিংয়ের সরঞ্জাম থেকে শুরু করে আলো, কাউবয় টুপিও। একবার তিনি অংশগ্রহণকারীদের ফেলে যাওয়া প্রচুর শুকনো খাবারও উদ্ধার করেছিলেন। সেই খাবার সপ্তাহের পর সপ্তাহ তাঁর খাবারের চাহিদা পূরণ করেছিল বলে উল্লেখ করেছিলেন গর্ডন।
পুরনো জিনিসপত্র সংগ্রহ করার এই ‘বাতিক’ তিনি ছোট থেকেই পেয়েছিলেন বলে জানান গর্ডন। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এই তরুণ ফিরে যান শৈশবে। মায়ের হাত ধরে ‘টিপ শপে’ ঘুরে বেড়াতেন তিনি। সেখানে নানা পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিস নিয়ে ঘুরতেন মা ও ছেলে।
বাড়ি কেনার পর স্থানীয় কাউন্সিলের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান থেকে উদ্ধার করা আসবাবপত্র দিয়ে তার নতুন বাড়ি সাজিয়ে চলেছেন গর্ডন। ‘রিটার্ন অ্যান্ড আর্ন’ নামের প্রকল্পটি চালায় যে সংস্থা, তার সিইও ড্যানিয়েল স্মলির মতে, গর্ডনের ফেরত দেওয়া পাত্রের সংখ্যা তাঁদের রেকর্ড করা তালিকার সর্বোচ্চ। তিনি বলেন, ‘‘এ রকম গল্পই আমায় প্রতি দিন সকালে ঘুম উঠে কাজে আসতে বাধ্য করে।’’