এক দিকে বলিউডের ডাকসাইটে সুন্দরী অভিনেত্রী। অন্য দিকে বলিপাড়ার ‘হি ম্যান’-এর পুত্র। তবে তারকা-পুত্র হয়েও অভিনেত্রীর সামনে নাকি ভয়ে থরথর করে কাঁপছিলেন অভিনেতা। মিথ্যা কথা বলে শৌচালয়ে যাওয়ার নাম করে শুটিং ফ্লোরে শ্রীদেবীকে ছেড়ে ‘নিরুদ্দেশ’ হয়ে গিয়েছিলেন বলি অভিনেতা ধর্মেন্দ্রের পুত্র সানি দেওল।
কখনও ‘তারিখ পে তারিখ…’, কখনও আবার ‘ঢাই কিলো কা হাত’ দেখিয়ে দর্শককে মজিয়ে রাখেন সানি। কিন্তু শ্রীদেবীর সামনে দাঁড়ালেই নাকি ভয়ে কুঁকড়ে যেতেন তিনি। এমনকি, শুটিংয়ের সময় সেট ছেড়ে কয়েক ঘণ্টার জন্য পালিয়েও গিয়েছিলেন অভিনেতা। অন্য দিকে, শট দেওয়ার জন্য তৈরি হয়ে বসেছিলেন শ্রীদেবী।
১৯৮৯ সালে প্রেক্ষাগৃহে পঙ্কজ পরাশরের পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘চালবাজ’। শ্রীদেবীর সঙ্গে এই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল সানিকে। এই সিনেমার শুটিংয়ের সময়ই নাকি ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন অভিনেতা।
সিদ্ধার্থ কন্ননকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সানির ভয় পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছিলেন পরিচালক পঙ্কজ। শ্রীদেবী যে সানির জন্য টানা দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিলেন, সে কথা জানাতেও ভোলেননি তিনি।
অভিনয়ের পাশাপাশি নৃত্যেও পারদর্শী ছিলেন শ্রীদেবী। ‘চালবাজ’ ছবির ‘না জানে কাহা সে’ গানটির শুটিং নিয়ে কৌতূহলী হয়ে পড়েছিলেন শ্রীদেবী। সানির সঙ্গে এই গানের দৃশ্যে অভিনয় করতে হত তাঁকে।
পঙ্কজ জানিয়েছিলেন, ‘না জানে কাহা সে’ গানটির শুটিং তিন দিনের মধ্যে শেষ করতে হত তাঁদের। কী ভাবে প্রতিটি দৃশ্য আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায় তা নিয়ে মতামত রাখছিলেন শ্রীদেবী। নায়িকার মতামত শুনে রাজিও হয়ে গিয়েছিলেন পরিচালক।
নৃত্য পরিচালনার জন্য ‘চালবাজ’-এর সেটে ডাক পড়েছিল কোরিয়োগ্রাফার সরোজ খানের। গানের দৃশ্যে কেমন ভাবে নাচা হবে তা শ্রীদেবী এবং সানিকে শিখিয়ে দিতে গিয়েছিলেন তিনি। শ্রীদেবীর সঙ্গে তা নিয়ে আলাদা ভাবে কথাও হয়েছিল সরোজের।
পঙ্কজ সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘সরোজ আমায় জানিয়েছিলেন যে, ম্যাডাম (শ্রীদেবী) খুব খুশি। অনেক নতুন আঙ্গিকও তুলে ধরেছেন তিনি।’’ সরোজের কথা শুনে পঙ্কজ নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেই গানের দৃশ্যে সানির নাচের অংশ রাখতে।
পরিচালকের নির্দেশমতো সেটে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন সরোজ এবং শ্রীদেবী। সানিকে যে শ্রীদেবীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নাচতে হবে সে কথা অভিনেতাকে জানিয়েছিলেন সরোজ। কিন্তু কোরিয়োগ্রাফারের কথা শোনার পরেই নাকি সেখান থেকে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছিলেন সানি।
পঙ্কজের দাবি, শৌচালয়ে যাওয়ার নাম করে ‘নিরুদ্দেশ’ হয়ে গিয়েছিলেন সানি। তাঁকে পুরো ফ্লোরে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অন্য দিকে, শট দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিলেন শ্রীদেবী। অভিনেতাকে ছাড়া শুট করা যাবে না বলে তাঁকেও অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। নির্দেশনার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন সরোজও।
সাক্ষাৎকারে পঙ্কজ জানিয়েছিলেন যে, দু’ঘণ্টা সানির জন্য অপেক্ষা করছিলেন শ্রীদেবী। তার পর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল তাঁর। সেটের মধ্যে চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘‘তোমাদের নায়ক কোথায়?’’ তার পরই ঝড়ের মতো সেটে প্রবেশ করেছিলেন সানি।
দু’ঘণ্টা তিনি কোথায় ছিলেন সে বিষয়ে কারও সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা করেননি সানি। বরং তাড়াতাড়ি শুটিং শুরু করে নিজের শট দিয়ে দেন অভিনেতা। শ্রীদেবীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নাচ করে সেখানে উপস্থিত লোকজনের প্রশংসাও কুড়োন তিনি।
পরিচালক পঙ্কজের কথায়, শ্রীদেবী যে হেতু দুর্দান্ত নাচ করতেন তাই তাঁর সঙ্গে পারফর্ম করতে নাকি ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন সানি। তাই নাচের দৃশ্যের শুটিং শুরুর আগে ভয় পেয়ে ‘নিরুদ্দেশ’ হয়ে গিয়েছিলেন। পরে ভয় নিয়ন্ত্রণে এলে নিজেই সেটে পৌঁছে যান অভিনেতা।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় যে, শ্রীদেবীকে নাকি বেশ খানিকটা সমঝে চলতেন সানি। নায়িকার সঙ্গে ঠাট্টা-ইয়ার্কির সম্পর্ক ছিল না তাঁর। এক সাক্ষাৎকারে শ্রীদেবী প্রসঙ্গে বেশ কিছু মন্তব্যও করেছিলেন সানি।
সানির প্রিয় নায়িকা কে, প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়েছিলেন, বলিউডের সকল অভিনেত্রীর সঙ্গেই তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে শ্রীদেবীর সঙ্গে পারস্পরিক মেলামেশা খুবই কম ছিল তাঁর।
শ্রীদেবী প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে সানি বলেছিলেন, ‘‘শ্রীদেবীর সঙ্গে আমার বেশি কথাবার্তাই হত না। শ্রীদেবী যে ভাবে নিজেকে সকলের সামনে তুলে ধরতেন হয়তো তা দেখেই বেশি ঘনিষ্ঠ হতে পারিনি। তিনি দুর্দান্ত এক অভিনেত্রী ছিলেন। সেটের মধ্যেই তিনি কোনও দৃশ্যে তাৎক্ষণিক বদল আনতে পারতেন। শ্রীদেবীর সঙ্গে কাজ করার সময় সর্বদা নিজেকে সতর্ক রাখতে হত।’’