পহেলগাঁও কাণ্ডের বদলা নিতে মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তানের মাটিতে প্রত্যাঘাত করে ভারত। শুরু হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। এর পর বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং বায়ুসেনার উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ। সঙ্গে ছিলেন ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। তার পর থেকেই চর্চায় দুই বাহিনীর এই দুই মহিলা অফিসার। এই প্রেক্ষাপটে সোফিয়ার যমজ বোনও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন।
১৯৭৪ সালে গুজরাতের বডোদরায় জন্ম সোফিয়া এবং তাঁর যমজ বোন শায়না সুনসারার। পরিবারের অনেকেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁদের বাবা একাত্তরের যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলে। তাঁদের কাকা বিএসএফ-এ কর্মরত ছিলেন। তবে শৈশব থেকে শায়নার আগ্রহ ছিল ফ্যাশনজগতের প্রতি।
একাধিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়েছিলেন শায়না। অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। বডোদরার ‘ওয়ান্ডার উওম্যান’ নামে অধিক পরিচিত তিনি।
রাইফেল শুটিংয়ের জন্য স্বর্ণপদক পাওয়া শায়না ভারতীয় সেনার ক্যাডেট ছিলেন। শায়নার ইনস্টাগ্রাম বায়ো অনুযায়ী ২০১৮ সালে ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
২০১৯ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ‘বিশ্ব গান্ধী পুরস্কার’-এর মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি দূত হিসেবে স্বীকৃতি পান শায়না।
বিনোদন জগতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন শায়না। সমাজমাধ্যমে নিজের পরিচয় মডেল, অভিনেতা এবং সহ-প্রযোজক হিসাবে দেন তিনি।
সোফিয়ার যমজ বোনের অনুরাগীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে শায়নার অনুগামী সংখ্যা ২৯ হাজারের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।
পরিবেশ নিয়েও সচেতন থাকেন শায়না। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, গুজরাত জুড়ে এক লক্ষ বৃক্ষরোপণ করেছেন তিনি।
পাকিস্তানের মাটিতে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর সেনার সাংবাদিক বৈঠকে প্রত্যাঘাতের বিষয়ে ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সোফিয়া এবং ব্যোমিকার উপর। ‘অপারেশন সিঁদুর’ কী ভাবে, কেন করা হল পাকিস্তানের মাটিতে প্রত্যাঘাতের পর বুধবার সেনার সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন দু’জনে।
১৯৯৭ সালে জৈব রসায়ন নিয়ে স্নাতকোত্তর করেন সোফিয়া। ভারতীয় সেনার সামরিক যোগাযোগ ও ইলেকট্রনিক্স অভিযান সহায়ক শাখা সিগন্যাল কর্পসের অন্যতম শীর্ষ আধিকারিক সোফিয়া।
সেনাবাহিনীর একাধিক যুগান্তকারী সাফল্যের সঙ্গে যুক্ত সোফিয়া। কর্নেল সোফিয়া ২০০৬ সালে কঙ্গোয় রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিবাহিনীর সামরিক পর্যবেক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
২০১৬ সালে ১৮টি দেশের সামনে ভারতের সামরিক মহড়ায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সোফিয়া। প্রথম মহিলা হিসাবে এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন তিনি।
২০১৬ সালে সোফিয়া ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল। পুণের সেই সামরিক মহড়া ছিল ভারতে আয়োজিত সবচেয়ে বড় বিদেশি সামরিক মহড়া। ২ থেকে ৮ মার্চের মহড়ায় যোগ দিয়েছিল জাপান, চিন, আমেরিকা, রাশিয়ার মতো দেশ। আর কোনও দেশের মহড়ার নেতৃত্বে মহিলা ছিলেন না।