২০ বছর বয়সে বড় পর্দায় প্রথম অভিনয়। নবাগত অভিনেতার কেরিয়ারের প্রথম ছবির প্রযোজনা এবং পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তাঁর বাবা। কিন্তু মুক্তির পর সেই ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। তাই অভিনয় থেকে মুখ ফিরিয়ে আবার পড়াশোনায় মন দিয়েছিলেন অভিনেতা। সাত বছর ধরে বড় পর্দা থেকে ‘উধাও’ থাকা সেই নায়কই বর্তমানে চলচ্চিত্রজগতের খ্যাতনামী তারকা। সেই অভিনেতা হলেন ফাহাদ ফাসিল।
১৯৮২ সালের অগস্ট মাসে কেরলে জন্ম ফাহাদের। বাবা-মা, দুই বোন এবং ভাইয়ের সঙ্গে সেখানেই থাকতেন ফাহাদ। তাঁর বাবা মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রির স্বনামধন্য ছবিনির্মাতা ছিলেন।
শৈশব থেকেই ফাহাদের আগ্রহ ছিল ক্যামেরার সামনে কাজ করার। তাই স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ হতেই অভিনয় করবেন বলে উৎসাহী হয়ে ওঠেন ফাহাদ।
২০০২ সালে ফাহাদের বাবর পরিচালনা এবং প্রযোজনায় ‘কাইয়েথুম দুরথ’ নামের মালয়ালম ভাষার একটি ছবি মুক্তি পায়। সেই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় ফাহাদকে। কিন্তু সেই ছবি বক্স অফিসে তেমন ভাল ফল করেনি।
কেরিয়ারের প্রথম ছবিতে অভিনয় করে কটাক্ষের শিকারও হয়েছিলেন ফাহাদ। কানাঘুষো শোনা যায় যে, তারকা-পুত্রের অভিনয় দর্শকের মনে ধরেনি। প্রথম ছবির ব্যর্থতা এবং সমালোচনা সহ্য করতে পারেননি ফাহাদ। তাই আর অভিনয় না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন তিনি।
অভিনয় ছেড়ে উচ্চশিক্ষার জন্য কেরল ছেড়ে আমেরিকায় চলে যান ফাহাদ। আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করার জন্য পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। কিন্তু তাঁর মন পড়েছিল অভিনয়ের দিকেই। তাই মাঝপথে অভিনয় ছেড়ে আবার কেরলে ফিরে যান ফাহাদ।
দক্ষিণের অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায় যে, আমেরিকায় থাকার সময় প্রয়াত বলি অভিনেতা ইরফান খানের একটি ছবি দেখেছিলেন ফাহাদ। তা দেখার পর আবার অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার শুরু করার অনুপ্রেরণা পান ফাহাদ। তাই পড়াশোনা ছেড়ে ভারতে চলে যান তিনি।
অভিনয় শিখবেন বলে নিজেকে সময় দিয়েছিলেন ফাহাদ। কেরিয়ারের প্রথম ছবি মুক্তির পর সাত বছর বড় পর্দা থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিলেন তিনি। দীর্ঘ বিরতি নেওয়ার পর আবার অভিনয় করতে শুরু করেন তিনি।
২০০৯ সালে আবার মালয়ালম ভাষার ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় ফাহাদকে। দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার পর আর হেরে যেতে হয়নি তাঁকে। একের পর এক দক্ষিণী ছবিতে অভিনয় করতে থাকেন তিনি।
কম সময়ের মধ্যে অভিনয়জগতে পরিচিতি তৈরি করে ফেলেন ফাহাদ। পেশার দৌলতেই মনের মানুষকে খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি।
২০১৪ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ব্যাঙ্গালোর ডেজ়’। মালয়ালম এই ছবিতে ফাহাদের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন দক্ষিণের নামকরা অভিনেত্রী নাজ়রিয়া নাজ়িম। বড় পর্দায় স্বামী-স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করতে করতে বাস্তবেও প্রেমে পড়ে যান ফাহাদ এবং নাজ়রিয়া।
কানাঘুষো শোনা যায় যে, নাজ়রিয়া এবং ফাহাদের পরিবারের সদস্যেরা একে অপরকে আগে থেকে চিনতেন। তবে সেই পরিচয় আরও গভীর হয় একসঙ্গে অভিনয় করার সময়।
গুঞ্জন শোনা যায় যে, ‘ব্যাঙ্গালোর ডে়জ়’ ছবিতে অভিনয় করার সময় একে অপরের আরও কাছাকাছি আসেন ফাহাদ এবং নাজ়রিয়া। তাঁরা দু’জনে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে ফাহাদ এবং নাজ়রিয়ার আংটিবদলের অনুষ্ঠান হয়। সেই বছরের অগস্ট মাসে বিয়ে হয়ে যায় দুই তারকার।
অভিনয়ের পাশাপাশি নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা খুলেছেন ফাহাদ। সেই সংস্থায় ফাহাদের সঙ্গে হাত লাগিয়েছেন নাজ়রিয়াও।
মালয়ালম ভাষার ছবির পাশাপাশি তামিল এবং তেলুগু ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা যায় ফাহাদকে। ২০২১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ়’ ছবিতে পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করে বিশেষ নজর কাড়েন ফাহাদ।
২০২৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পুষ্পা ২: দ্য রুল’ ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে ফাহাদকে। তা ছাড়াও ‘বরাথন’, ‘কুম্বলঙ্গি নাইট্স’, ‘সুপার ডিলাক্স’, ‘ট্রান্স’, ‘জোজি’, ‘মালিক’, ‘আবেশম’ এবং ‘বোগেনভিলিয়া’র মতো একাধিক দক্ষিণী ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তারকা-সন্তান।