Military Drone

ট্যাঙ্ক, কপ্টার বা সমুদ্রের গভীরে হামলা, ড্রোন শক্তিতে এগিয়ে কোন দেশ? তালিকায় কত নম্বরে ভারত?

আত্মঘাতী বিস্ফোরণ হোক বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। আধুনিক সময়ে নিমেষে যুদ্ধের গতি বদলে দিচ্ছে ড্রোন। কোন দেশের কাছে কত সংখ্যায় রয়েছে চালকবিহীন এই অত্যাধুনিক হাতিয়ার? ভারতের অস্ত্রাগারে ড্রোনের সংখ্যাই বা কত?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:৩৪
Share:
০১ ২৪

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষ হোক বা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ। আধুনিক বিশ্বে লড়াইয়ের ময়দানে খেলা ঘোরাচ্ছে ড্রোন। শত্রুপক্ষের ট্যাঙ্ক বা সাঁজোয়া গাড়ি উড়িয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে হামলাকারী হেলিকপ্টারকে মাঝ আকাশে ধ্বংস করা— সব কাজেই সিদ্ধহস্ত এই মানববিহীন উড়ুক্কু যান। ফলে যত দিন যাচ্ছে, ততই ড্রোনকে এক রকম ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ হিসাবে গড়ে তুলতে উঠেপড়ে লেগেছে বিশ্বের তাবড় শক্তিধর দেশ।

০২ ২৪

দুনিয়ার যাবতীয় সেনা ড্রোনকে মোটামুটি ভাবে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে একটি হল চালকবিহীন নজরদারি উড়ুক্কু যান। মূলত গুপ্তচরবৃত্তির কাজে এগুলিকে ব্যবহার করে ফৌজ। শত্রুর গতিবিধি জানতে এবং সীমান্ত সুরক্ষায় এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত হল আত্মঘাতী ড্রোন। এ ছাড়াও ক্ষেপণাস্ত্র এবং বোমা নিয়ে উড়ে গিয়ে নিখুঁত নিশানায় হামলা করার মানববিহীন উড়ুক্কু যানও রয়েছে।

Advertisement
০৩ ২৪

তবে এই তিন শ্রেণি ছাড়াও হাতিয়ার, গোলা-বারুদ বা রসদ রণক্ষেত্রে বা দুর্গম এলাকায় পৌঁছে দিতে ড্রোনের বহুল ব্যবহার শুরু করেছে বহু দেশের ফৌজ। এরই সঙ্গে সমুদ্রের গভীরে ডুবোজাহাজের পাশাপাশি ড্রোন হামলা চালানোর প্রযুক্তিও রয়েছে হাতেগোনা ‘সুপার পাওয়ার’ কয়েকটি রাষ্ট্রের হাতে। এই অস্ত্রটিকে উন্নত থেকে উন্নততর করতে বর্তমানে কোটি কোটি ডলার খরচ করছে আমেরিকা, রাশিয়া, চিন, ফ্রান্স, জার্মানি, তুরস্ক বা ইরানের মতো দেশ। পিছিয়ে নেই ভারতও।

০৪ ২৪

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ফৌজিশক্তির নিরিখে বিশ্বের কোন দেশ কোথায় দাঁড়িয়ে, সেই তালিকা প্রকাশ করেছে ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স’। সেই সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রথম স্থান পেয়েছে আমেরিকা। বলা বাহুল্য, দুনিয়ার সমস্ত দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ড্রোন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর হাতেই।

০৫ ২৪

সূত্রের খবর, ছোট, বড় এবং মাঝারি মিলিয়ে ১৩ হাজারের বেশি ড্রোন ব্যবহার করে আমেরিকান বাহিনী। এর ৬০ শতাংশই মোতায়েন রয়েছে নজরদারির কাজে। এ ছাড়া ‘জেনারেল অ্যাটোমিক্স’ প্রতিরক্ষা সংস্থা নির্মিত ২৭৫টি ‘এমকিউ-৯ রিপার’ এবং ১৩৪টি ‘এমকিউ-১টি গ্রে ইগল’ হামলাকারী মানববিহীন উড়ুক্কু যানও রয়েছে ওয়াশিংটনের বাহিনীর অস্ত্রাগারে।

০৬ ২৪

যুক্তরাষ্ট্রের বায়ুসেনা আবার ব্যবহার করে ‘নর্থরপ গ্রুমম্যান’ সংস্থার তৈরি ‘আরকিউ-৪ গ্লোবাল হক’ নামের ড্রোন। নজরদারি থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, একাধিক কাজে এই চালকবিহীন যানগুলিকে ব্যবহার করা যায়। সমুদ্রের গভীরে নিঃশব্দে আক্রমণ শানাতে নতুন প্রজন্মের ড্রোন নির্মাণের গবেষণায় বর্তমানে জোর দিয়েছে ওয়াশিংটন।

০৭ ২৪

‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’-এর প্রকাশিত শক্তিশালী রাষ্ট্রের তালিকায় প্রথম ১০-এ নেই তুরস্ক। কিন্তু ড্রোন শক্তির নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তারা। তুর্কি সেনার অস্ত্রাগারে রয়েছে ১,৪২১টি ড্রোন। এই সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বৃদ্ধি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আঙ্কারা।

০৮ ২৪

গত কয়েক বছরে ঘরের মাটিতে তৈরি ‘বের‌্যাক্টার টিবি-২’ নামের ফৌজি ড্রোনের জন্য বার বার খবরের শিরোনামে এসেছে তুরস্ক। ২০২০ সালে নাগোর্নো কারাবাখ কব্জা করতে আর্মেনিয়া সীমান্তে হামলা চালায় আজ়ারবাইজান। ফলে মধ্য এশিয়ায় এক কালের সোভিয়েত রাশিয়াভুক্ত দু’টি দেশের মধ্যে বেধে যায় যুদ্ধ। সেই লড়াইয়ের রং রাতারাতি বদলে দিয়েছিল ‘বের‌্যাক্টার টিবি-২’।

০৯ ২৪

তুরস্কের ড্রোনটির লম্বা দূরত্ব পেরিয়ে গিয়ে শত্রুর উপর হামলা চালানোর ক্ষমতা রয়েছে। এর সাহায্যেই আর্মেনিয়ার একের পর এক সেনা ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি এবং ফৌজি বাঙ্কার ওড়াতে সক্ষম হয় আজ়ারবাইজানের বাহিনী। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধেও ‘বের‌্যাক্টার টিবি-২’-র বহুল ব্যবহার করেছে কিভের সেনা। ভারতের প্রতিবেশী পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের কাছে এই তুর্কি ড্রোন রয়েছে।

১০ ২৪

‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’-এর তালিকায় দ্বিতীয় স্থান পেলেও ড্রোন শক্তির দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সেনাবাহিনীর হাতে সব মিলিয়ে রয়েছে হাজারের সামান্য কিছু বেশি মানববিহীন উড়ুক্কু যান। এর অধিকাংশই নজরদারির কাজে ব্যবহার করে মস্কোর ফৌজ।

১১ ২৪

বিশ্বের তৃতীয় শক্তিশালী চিনের ‘পিপল্‌স লিবারেশন আর্মি’ বা পিএলএ আবার প্রচুর সংখ্যায় ড্রোন ব্যবহার করে। সমুদ্রের গভীরে ডুবোজাহাজকে ওড়ানোর মতো রিমোট কন্ট্রোল চালিত যান রয়েছে ড্রাগন সেনার হাতে। সেগুলির পোশাকি নাম ‘উইং লুং-এক্স’। এ ছাড়া ‘আর-৬০০০’ নামের আরও একটি ড্রোন রয়েছে বেজিঙের অস্ত্রাগারে।

১২ ২৪

চিনা লালফৌজের মোট চালকবিহীন যানের সংখ্যা অবশ্য জানা যায়নি। তবে আমেরিকার ‘এমকিউ-৯ রিপার’-এর মতো হুবহু এক দেখতে ড্রোন ব্যবহার করে পিএলএ। বর্তমানে বিশ্বের প্রথম ড্রোনবাহী রণতরী নির্মাণে জোর দিয়েছে বেজিং। এতে ড্রাগনের হাতে যে বিপুল সংখ্যায় মানববিহীন উড়ুক্কু যান রয়েছে, তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে।

১৩ ২৪

তবে জলের তলায় চলাচলে সক্ষম ড্রোনের নিরিখে ফ্রান্সকে সবচেয়ে বেশি নম্বর দিয়েছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা। শত্রুর পেতে রাখা ওয়াটার-মাইনকে নষ্ট করার ক্ষমতা রয়েছে প্যারিসের নৌবাহিনীর হাতে থাকা ড্রোনের। আবার একই ভাবে ওই ড্রোন দিয়েই সমুদ্রে মাইন বিছিয়ে শত্রুর রণতরী ধ্বংস করতে পারে তারা। তবে সব মিলিয়ে দেশটির কাছে ৫৯১টির মতো চালকবিহীন রিমোট যান রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

১৪ ২৪

আত্মঘাতী ঘাতক ড্রোনের কথা বললে অবশ্যই আসবে ইরানের নাম। পারস্য উপসাগরের তীরের শিয়া মুলুকটির ‘ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কোর’ ব্যবহার করে ‘শাহেদ-১৩৬’ নামের মানববিহীন উড়ুক্কু যান। তেহরানের থেকে পাওয়া এই ড্রোন দিয়েই ইউক্রেনের একাধিক ছবির মতো সাজানো শহরকে ছারখার করেছে রুশ ফৌজ। তবে ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’র (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) সাহায্যে ইরানি ড্রোনকে মাঝ আকাশে ধ্বংস করা সম্ভব।

১৫ ২৪

গত দেড় বছর ধরে পশ্চিম এশিয়ায় চলা হামাস এবং হিজ়বুল্লার সঙ্গে যুদ্ধে ড্রোন শক্তিতে গোটা দুনিয়াকে রীতিমতো চমকে দিয়েছে ইজ়রায়েল। ইহুদি ফৌজের কাছে রয়েছে হেরন এবং হারমেস-৯০০ মতো বিভিন্ন ধরনের হামলাকারী ড্রোন। আবার শুধুমাত্র হাত দিয়ে ছুড়ে ওড়ানো যায়, এমন মানববিহীন উড়ুক্কু যানও ব্যবহার করে আরব দুনিয়ার ইহুদি রাষ্ট্র।

১৬ ২৪

ড্রোন শক্তির দিক থেকে বিশ্বে ছ’নম্বর স্থানে রয়েছে ভারত। এ দেশের তিন বাহিনীর অস্ত্রাগারে রয়েছে ৬৫০-৭০০ মানববিহীন উড়ুক্কু যান। সমুদ্রের গভীরে চলাচলে সক্ষম ড্রোন অবশ্য এখনও নেই নয়াদিল্লির কাছে। এই প্রযুক্তি ফ্রান্সের থেকে পাওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত পর্যায়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গিয়েছে।

১৭ ২৪

ভারতীয় ফৌজ দেশি এবং বিদেশি দু’ধরনের ড্রোনই ব্যবহার করে। চিন এবং পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশীকে মোকাবিলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের থেকে ৩১টি ‘এমকিউ-৯ রিপার’ কিনেছে নয়াদিল্লি। এই মানববিহীন যানগুলি থেকে ‘হেলফায়ার’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে সহজেই শত্রু সংহার করতে পারবে এ দেশের সেনা।

১৮ ২৪

এ ছাড়া ইজ়রায়েলি ‘হেরন’ ড্রোনেরও বহুল ব্যবহার করে ভারতীয় ফৌজ। চালকবিহীন রিমোট যানের সংখ্যা এবং শক্তি বাড়াতে বেসরকারি উদ্যোগকে কাজে লাগিয়েছে কেন্দ্র। চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে বেঙ্গালুরুতে চলবে অ্যারো ইন্ডিয়া শো। সেখানে শব্দের ১০ গুণ বেগে ছুটতে পারে এমন ড্রোন নিয়ে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে স্থানীয় সংস্থা ‘কিউ আলফা-অ্যারোস্পেস’-এর। তাদের ওই ড্রোনের পোশাকি নাম ‘আরএসএস-১৫০’।

১৯ ২৪

পাশাপাশি, এ দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও তৈরি করেছে একাধিক ড্রোন। সেই তালিকায় রয়েছে তাপস, রুস্তম এবং ঘাতক। এগুলির অধিকাংশই পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তিন বাহিনীতে এগুলির ব্যবহার শুরু হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

২০ ২৪

সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি বেশ কয়েকটি ঘাতক ড্রোন বর্তমানে ব্যবহার করছে ভারতীয় সেনা। এর মধ্যে অন্যতম হল ‘খড়্গ শক্তি’। অগস্টে ‘ন্যাশনাল অ্যারোস্পেস ল্যাবরেটরিজ’-এর (এনএএল) হাত ঘুরে প্রথম বার প্রকাশ্যে আসে এই শক্তিশালী স্বদেশি কামিকাজ়ে ড্রোন। মাত্র ৩০ হাজার টাকায় এই ধরনের এক একটি ড্রোন তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনা।

২১ ২৪

জাপানি শব্দ কামিকাজ়ের অর্থ হল ‘ঐশ্বরিক বাতাস’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আত্মঘাতী জাপানি যুদ্ধবিমানের পাইলটদের বলা হত কামিকাজ়ে। বর্তমানে আত্মঘাতী হামলা চালাতে সক্ষম ড্রোনগুলির দুনিয়া জুড়ে এই ধরনের নামকরণ করা হয়েছে।

২২ ২৪

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, সেকেন্ডে ৪০ মিটার গতিতে উড়তে পারে খড়্গ। ৭০০ গ্রাম বিস্ফোরক নিয়ে ওড়ার ক্ষমতা রয়েছে এর। দেড় কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুকে এক ঝটকায় উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে খড়্গের জুড়ি মেলা ভার। ড্রোনটি ওজনে হালকা হওয়ায় খুব সহজেই এটিকে ওড়াতে পারবেন সৈনিকেরা।

২৩ ২৪

ভারতীয় সেনায় খড়্গই প্রথম আত্মঘাতী ড্রোন, তা কিন্তু নয়। চলতি বছরের জুন থেকে ‘নাগাস্ত্র-১’ নামের একটি কামিকাজ়ে উড়ুক্কু যান ব্যবহার করা শুরু করেছে ফৌজ। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ওই ড্রোনটির নির্মাণকারী সংস্থা হল নাগপুরের ‘ইকোনমিক এক্সপ্লোসিভ লিমিটেড’।

২৪ ২৪

এ ছাড়াও শিল্প সংস্থা টাটার তৈরি অ্যাডভান্স লয়েটারিং সিস্টেম ‘এএলএস-৫০’, ইজ়রায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ়ের ‘স্পাইক ফায়ারফ্লাই’ এবং পোলিশ সংস্থা ওয়ারমেটের ‘এলবিট স্কাইস্ট্রাইকার’ ব্যবহার করে ভারতীয় সেনা। পাশাপাশি সেনাকে শক্তিশালী করতে ‘জোনেট জেএম-১’ লোটারিং ড্রোনের ১৫০ ইউনিট কিনছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement