P Chandrasekaran

গ্রামে পাকা রাস্তা নেই, বিয়ের জন্য জমানো টাকা দিয়ে গ্রামবাসীদের রাস্তা উপহার দিলেন যুবক

চন্দ্রশেখরণের বাড়ি তামিলনাড়ুর ভিলুপুরম জেলার ভানুর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে নল্লাভুর গ্রামে। এই গ্রামে সাড়ে তিনশো পরিবারের বাস। প্রায় ২৫ বছর ধরে এই গ্রামে পাকা রাস্তা নেই।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:৫২
Share:
০১ ১৫

প্রায় ২৫ বছর ধরে গ্রামে পাকা রাস্তা নেই। গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে বার বার গিয়েও বিশেষ লাভ হয়নি। বরং এই রাস্তা তৈরি নিয়ে প্রশাসনের উদাসীন মনোভাবই বার বার প্রকাশ পেয়েছে। তাই রাস্তা তৈরির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন গ্রামেরই যুবক পি চন্দ্রশেখরণ। রাস্তা তৈরি করতে নিজের বিয়ের জন্য জমানো শেষ পুঁজিটুকু খরচ করলেন তিনি।

০২ ১৫

চন্দ্রশেখরণের বাড়ি তামিলনাড়ুর ভিলুপুরম জেলার ভানুর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে নল্লাভুর গ্রামে। সর্বসাকুল্যে সাড়ে তিনশো পরিবারের বাস এই গ্রামে।

Advertisement
০৩ ১৫

গ্রামে যাতায়াত করার জন্য মোট সাতটি রাস্তা রয়েছে। এর মধ্যে চন্দ্রশেখরণের পরিবার-সহ আরও ৫০ পরিবার বাস করেন ঈশ্বরন কোয়েল স্ট্রিটে।

০৪ ১৫

কিন্তু তাঁদের বাড়ির সামনের এই রাস্তা দীর্ঘ দিন ধরেই ভাঙাচোরা। বর্ষাকালে কাদা প্যাচপেচে রাস্তায় চলতে-ফিরতে আছাড় খেতে হত গ্রামবাসীদের। কখনও আবার ভাঙা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় ছোটখাটো দুর্ঘটনার মুখেও পড়তে হত স্থানীয়দের।

০৫ ১৫

গ্রাম থেকে পড়াশোনা শেষ করে চন্দ্রশেখরণ বর্তমানে চেন্নাইয়ের একটি সফটওয়্যার সংস্থায় কর্মরত। চন্দ্রশেখরণ আজীবন গ্রামের পাকা রাস্তার স্বপ্ন দেখে এসেছেন।

০৬ ১৫

গ্রামের রাস্তা পাকা করা নিয়ে বার বার গ্রাম পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হয়েছেন চন্দ্রশেখরণ। বহু টালবাহানার পর প্রশাসনের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, গ্রামের রাস্তা পাকা করার মতো টাকা এই মুহূর্তে হাতে নেই। টাকা এলে তবেই রাস্তা সারাইয়ের কাজ শুরু করা সম্ভব।

০৭ ১৫

চন্দ্রশেখরণ ঠিক করেন, গ্রামের রাস্তা পাকা করার জন্য আর কারও হাত-পা ধরবেন না। নিজেই গ্রামের রাস্তা পাকা করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবেন।

০৮ ১৫

তিনি হিসাব করে দেখেন এই ২৮০ মিটার লম্বা রাস্তা পাকা করতে খরচ হবে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। হাতে টাকা বলতে বিয়ের জন্য জমিয়ে রাখা সাড়ে ১০ লক্ষ টাকা। স্বপ্নপূরণ করতে শেষমেশ সেই টাকা দিয়েই রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন চন্দ্রশেখরণ।

০৯ ১৫

তামিলনাড়ুর একটি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় চন্দ্রশেখরণ বলেন, “আমাদের গ্রামে শেষ বার যখন রাস্তা তৈরি হয়েছিল তখন আমি প্রাথমিকের ছাত্র। এর পর আমি পড়াশোনা শেষ করে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করছি। কিন্তু এত বছরে এই রাস্তার আর কোনও উন্নতি হয়নি।”

১০ ১৫

চন্দ্রশেখরণ জানান, গ্রামের রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, প্রতি দিন অন্তত এক জন গ্রামবাসী কাদামাখা রাস্তায় পিছলে পড়ে আহত হতেন।

১১ ১৫

চন্দ্রশেখরণের বাবা এক জন ছোট ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিণী। অতিমারি আবহে বাড়ি থেকে কাজ করছিলেন চন্দ্রশেখরণ। যখনই তিনি কাজ থেকে বিরতি পেতেন, তখনই নতুন রাস্তা তৈরির অনুরোধ নিয়ে পঞ্চায়েত এবং ব্লক উন্নয়ন অফিসে হাজির হতেন। কিন্তু সরকারি আধিকারিকরা তাঁকে জানান, তহবিল না পেলে গ্রামের রাস্তা নতুন করে তৈরি করা সম্ভব হবে না।

১২ ১৫

এই রাস্তা তৈরি করতে হুমকির মুখেও পড়তে হয় চন্দ্রশেখরণকে। নিজের টাকায় রাস্তা তৈরির প্রস্তাব নিয়ে সরকারি আধিকারিকদের কাছে যাওয়ার পর তাঁরা চন্দ্রশেখরণকে আনুমানিক খরচের অর্ধেক দিতে বলেন। কিন্তু পরে তিনি দেখেন সরকার রাস্তা তৈরি করতে যে টাকা বরাদ্দ করেছে তা যথেষ্ট নয়। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজের সঞ্চয় থেকেই এই রাস্তা বানাবেন।

১৩ ১৫

প্রথম দিকে রাস্তা তৈরির জন্য পুরো টাকা খরচ করার অনুমোদন পাননি চন্দ্রশেখরণ। চন্দ্রশেখরণের বাবা এস পেরুমল এবং মা পি লক্ষ্মী জানান, স্থানীয় কিছু রাজনীতিবিদ চন্দ্রশেখরণকে রাস্তা তৈরির কাজ থামাতে বলেন। হুমকিও দেন। কিন্তু কোনও হুমকির কাছে মাথা না ঝুঁকিয়ে চন্দ্রশেখরণ জুলাই মাসে ২৮০ মিটার লম্বা, ১৪ ফুট চওড়া, ১৫ সেমি পুরু পাকা রাস্তা তৈরির কাজ শেষ করেছেন।

১৪ ১৫

চন্দ্রশেখরণ জানান, ভিলুপুরম জেলা গ্রামীণ উন্নয়ন সংস্থার কিছু কর্মকর্তা তাঁকে নিজস্ব তহবিলে রাস্তা তৈরির জন্য ভিলুপুরম জেলা কালেক্টরের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি পেতে সাহায্য করেছিলেন।

১৫ ১৫

চন্দ্রশেখরণের প্রতিবেশী এ এজুমালাই জানিয়েছেন, গ্রামের এই রাস্তা এখন হিংসার কারণ। সবাই চাইছে তাঁদের পাড়াতেও চন্দ্রশেখরণের মতো কেউ থাকুন। গ্রামবাসীদের দাবি, সরকার যেন চন্দ্রশেখরণকে সংবর্ধনা দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement