India Pakistan Conflict

ডোভালকে ‘চেকমেট’ করতে আসরে শরিফ-ঘনিষ্ঠ মালিক, খেলা ঘোরাবেন পাকিস্তানের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা?

ভারতের সঙ্গে সংঘাতের আবহে তিন বছর ধরে শূন্য থাকা জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে এ বার গুপ্তচর বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মহম্মদ আসিম মালিককে নিয়োগ করলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। ২০২১ সালের মে মাসে কূটনীতিবিদ মইন ইউসুফকে ওই পদের দায়িত্ব দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৫ ১৫:৫৯
Share:
০১ ২০

পহেলগাঁও কাণ্ডের বদলার সুযোগ খুঁজছে ভারত। অন্য দিকে নয়াদিল্লির রুদ্ররূপ দেখে ভয়ে কাঁটা হয়ে আছে পাকিস্তান। এই পরিস্থিতিতে সুরক্ষা ব্যবস্থা আঁটসাঁট করতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজ়ার বা এনএসএ) নিয়োগ করল ইসলামাবাদ। ওই পদে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মহম্মদ আসিম মালিককে বসিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ।

০২ ২০

গত তিন বছর ধরে এনএসএ পদটি শূন্য রেখেছিল ইসলামাবাদ। ভারতের সঙ্গে সংঘাতের আবহে তড়িঘড়ি সেখানে সেনার পদস্থ অফিসারকে নিয়ে আসার ঘটনাকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা। লেফটেন্যান্ট জেনারেল মালিক পাক গুপ্তচর সংস্থা ‘ইন্টার সার্ভিসেস ইনটেলিজেন্স’ বা আইএসআইয়ের প্রধানের পদে রয়েছেন। এখন থেকে এনএসএর অতিরিক্ত দায়িত্বভার সামলাতে হবে তাঁকে। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে শরিফ প্রশাসন।

Advertisement
০৩ ২০

পাক সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বরে আইএসআই ডিরেক্টরের দায়িত্ব পান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মালিক। লেফটেন্যান্ট জেনারেল নদিম অঞ্জুমের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। ২০২১ সালের মে মাসে কূটনীতিবিদ মইন ইউসুফকে ওই পদের দায়িত্ব দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। কিন্তু ২০২২ সালের এপ্রিলে ওই সরকারের পতনের পর থেকে পাক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদটি শূন্য ছিল।

০৪ ২০

পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের সরগোদা জেলায় একটি সম্পন্ন পরিবারে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মালিকের জন্ম হয়। তাঁর বাবা ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার গুলাম মহম্মদ মালিক। তিনিও পাক ফৌজে লেফটেন্যান্ট জেনারেলের পদ পেয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালে বালোচিস্তান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন আইএসআইয়ের বর্তমান ডিরেক্টর।

০৫ ২০

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে মালিকের অন্তর্ভুক্তি হয় ১৯৮৯ সালে। ১২ নম্বর বালোচ রেজিমেন্টের অফিসার হিসাবে সামরিক জীবন শুরু করেন তিনি। পাকিস্তান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য তাঁকে ‘সোর্ড অফ অনার’ দেওয়া হয়েছিল।

০৬ ২০

পরবর্তী কালে ইসলামাবাদের জাতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বালোচিস্তানের রাজধানী কোয়েটার কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মালিক। আধুনিক যুদ্ধকৌশল আয়ত্তের জন্য একটা সময় বিদেশে পাড়ি দেন তিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ট লিভেনওয়ার্থ এবং ব্রিটেনের রয়্যাল কলেজ অফ ডিফেন্স স্টাডিজ়ের ডিগ্রি রয়েছে তাঁর।

০৭ ২০

দেশে ফিরে ভারত-পাক সম্পর্ক নিয়ে ইসলামাবাদের জাতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন অধুনা গুপ্তচর বাহিনীর প্রধান। পাহাড়ের যুদ্ধ নিয়ে তাঁর লেখা ‘মাউন্টেন ওয়ারফেয়ার: দ্য নিড ফর স্পেশালাইজ় ট্রেনিং’ বইটির আলাদা কদর রয়েছে। বালোচিস্তানে ৪১তম পদাতিক ডিভিশন এবং খাইবার-পাখতুনখোয়ার ওয়াজিরিস্তানে একটি পদাতিক ব্রিগেডে নেতৃত্বে দিয়েছেন তিনি।

০৮ ২০

২০২১ সালের অক্টোবরে মালিকের মেজর জেনারেল থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেলে পদোন্নতি হয়। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়া তাঁকে রাওয়ালপিন্ডি সেনা সদরের অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল বা এজির দায়িত্ব দেন। পরবর্তী কালে আইএসআইয়ের সাবেক ডিরেক্টর লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়েজ হামিদের কোর্ট মার্শাল প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল মহম্মদ আসিম মালিকের।

০৯ ২০

বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, ভারতীয় সেনা, গোয়েন্দা ও গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং বা ‘র’-এর অপারেশনের ব্যাপারে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল আইএসআইয়ের প্রধান। সেই কারণেই তাঁকে এনএসএ পদে বসিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ়। এতে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এবং গুপ্তচর সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করা সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

১০ ২০

গত ৩০ এপ্রিল সাত বছর পর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্ষদ পুনর্গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর অলোক জোশীকে তার প্রধান নিয়োগ করেছেন তিনি। এনএসএ পদে অবশ্য রয়ে গিয়েছেন অজিত ডোভাল। তার পরেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসাবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মালিকের নাম ঘোষণা করল পাকিস্তান। ফলে এই ঘটনাকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

১১ ২০

ভারতের সঙ্গে সংঘাতের আবহে পাক সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির ক্ষমতা দখল করতে চলেছেন বলে ইতিমধ্যেই জল্পনা ছড়িয়েছে। এই অবস্থায় এনএসএ হিসাবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মালিকের নিযুক্তি ইসলামাবাদের রাজনীতিকে অন্য খাতে নিয়ে যেতে পারে বলে ইতিমধ্যেই পূর্বাভাস দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা। আইএসআইয়ের ডিরেক্টর শরিফের ঘনিষ্ঠ বলে জানা গিয়েছে।

১২ ২০

নব্বইয়ের দশকের শেষ পর্বে পাক প্রধানমন্ত্রী পদে থাকাকালীন শাহবাজ়ের দাদা নওয়াজ় শরিফ তৎকালীন পাক সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মুশারফের ‘বিরোধী’ হিসাবে পরিচিত লেফটেন্যান্ট জেনারেল খাজা জিয়াউদ্দিন বাটকে আইএসআই প্রধান নিয়োগ করেন। এর কিছু দিনের মধ্যেই সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখল করেন মুশারফ। গদি হারিয়ে বহু দিন দেশছাড়া ছিলেন নওয়াজ়।

১৩ ২০

অন্য দিকে সংঘাতের আবহে পাকিস্তানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করেছে নয়াদিল্লি। সূত্রের খবর, পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় অত্যাধুনিক জ্যামার বসিয়েছে মোদী সরকার। এতে পাক বিমানবাহিনী যে ‘গ্লোবাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম’ (জিএনএসএস) ব্যবহার করে লক্ষ্যবস্তুর অবস্থান স্থির করে, তা অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কমবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার ক্ষমতা।

১৪ ২০

নয়াদিল্লির একটি সূত্র বলছে, পাকিস্তানের সেনাবিমান লক্ষ্যবস্তুর অবস্থান জানার জন্য জিপিএস (আমেরিকা), গ্লোনাস (রাশিয়া), বেইডু (চিন)— এই তিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এগুলি উপগ্রহের মাধ্যমেও লক্ষ্যবস্তুর অবস্থান জানতে পারে। ভারতের জ্যামিং প্রযুক্তি তিনটেকেই মাত দেবে বলে দাবি করা হয়েছে।

১৫ ২০

গত ৩০ এপ্রিল পাকিস্তানের বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধের কথা ঘোষণা করে মোদী সরকার। এর জন্য জারি হয়েছে ‘নোটিস টু এয়ার মিশন’ (এনওটিএএম)। ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, “পাকিস্তানে নথিভুক্ত বিমান বা পাকিস্তান দ্বারা পরিচালিত বিমান ভারতের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে না। সামরিক বিমানের ক্ষেত্রেও এই নির্দেশিকা প্রযোজ্য হবে।”

১৬ ২০

ভারতের এই পদক্ষেপে আর্থিক ভাবে ধাক্কা খাবে ইসলামাবাদ। কারণ এর ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়াগামী পাকিস্তানের বিমানগুলি সমস্যায় পড়বে। গন্তব্যে পৌঁছোতে তাদের অতিরিক্ত এক-দু’ঘণ্টা সময় লাগবে। জ্বালানিও পুড়বে অনেক বেশি। ফলে সফরের খরচ বৃদ্ধি পাবে।

১৭ ২০

গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হামলার পর টানা ছ’রাত নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গুলি চালায় পাক সেনা। সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উত্তেজনার আবহে ২৯ এপ্রিল রাতে পাক সেনার ডিজিএমও-র সঙ্গে হটলাইনে কথা বলেন ভারতীয় ফৌজের ডিজিএমও (ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই। সূত্রের খবর, ওই কথোপকথনে ইসলামাবাদকে সতর্ক করেন তিনি।

১৮ ২০

যদিও এই ফোনালাপের পরেও রাতে গুলিবর্ষণ অব্যাহত রাখে পাক সেনা। এমনকি, ৩০ এপ্রিল রাতে নিয়ন্ত্রণরেখার পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীরের পরগওয়াল সেক্টরে আন্তর্জাতিক সীমানাতেও গোলাবর্ষণ করে ইসলামাবাদের বাহিনী। প্রতিটা ক্ষেত্রেই পাল্টা জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনা।

১৯ ২০

এলওসি এলাকায় সংঘর্ষবিরতি কার্যকর করতে ২০০৩ সালে একমত হয় নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদ। ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ভারত ও পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতি চুক্তি পুনর্নবীকরণ করেছিল। খাতায়কলমে এই নিয়ম এখনও বহাল রয়েছে। কিন্তু, অতীতেও দু’দেশের সেনা পরস্পরের বিরুদ্ধে সংঘর্ষবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে।

২০ ২০

শুধু এলওসিতে সংঘর্ষবিরতি ভঙ্গ নয়, পঞ্জাবের আন্তর্জাতিক সীমান্তেও প্রথা ভেঙে রিষড়াবাসী বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউকে পাক রেঞ্জার্স আটক করায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এই আবহে দুই ডিজিএমও-র হটলাইন-বার্তালাপ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement