India Pakistan Conflict

প্রমাণ লোপাটে ‘ইঁদুরের গর্তে’ জঙ্গি লুকোচ্ছে পাকিস্তান? নিয়ন্ত্রণরেখায় বারুদ-বর্ষণ কি সময় কেনার কৌশল?

পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর থেকেই জম্মু-কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় লাগাতার গুলিবর্ষণ করে চলেছে পাকিস্তানের সেনা। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত জঙ্গিদের বাঙ্কারে লুকোতে নয়া ছক ইসলামাবাদের? উঠছে প্রশ্ন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০২ মে ২০২৫ ১৪:২০
Share:
০১ ১৯

পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর থেকেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চড়ছে পারদ। নয়াদিল্লি বদলার সুযোগ খুঁজছে বুঝতে পেরে বেপরোয়া হয়ে পড়েছে ইসলামাবাদ। জম্মু-কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় (লাইন অফ কন্ট্রোল বা এলওসি) লাগাতার গুলিবর্ষণ করে চলেছে পাক ফৌজ। পাল্টা জবাব দিচ্ছে ভারতীয় সেনা। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, ছক কষেই এলওসিতে এই উস্কানি দিচ্ছেন রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি জেনারেলরা।

০২ ১৯

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের (পাকিস্তান অকুপায়েড কাশ্মীর বা পিওকে) নিয়ন্ত্রণরেখায় রয়েছে একগুচ্ছ জঙ্গি লঞ্চ প্যাড। সেগুলির কোনওটা প্রশিক্ষণ শিবির, কোনওটাকে আবার ভারতে ঢুকে হামলার জন্য ব্যবহার করে থাকে ইসলামাবাদের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসীরা। পহেলগাঁও হামলার পর প্রমাণ লোপাটে দ্রুত ওই লঞ্চ প্যাডগুলি খালি করতে চাইছে পাক গুপ্তচর সংস্থা ‘ইন্টার সার্ভিসেস ইনটেলিজেন্স’ বা আইএসআই।

Advertisement
০৩ ১৯

বিশ্লেষকদের দাবি, সেই লক্ষ্যেই এলওসিতে লাগাতার বারুদ-বর্ষণ করছে পাক ফৌজ। ইসলামাবাদ ভাল করেই জানে এতে ভারতীয় সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বর্ডার সিকিয়োরিটি ফোর্স বা বিএসএফ) নজর ঘোরানো যাবে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে খালি করে ফেলা যাবে যাবতীয় জঙ্গি লঞ্চ প্যাড।

০৪ ১৯

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, পিওকের সমস্ত জঙ্গিনেতা ও সন্ত্রাসীদের নিরাপদ বাঙ্কারে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করেছে পাক সেনা। স্থানান্তরিত করা হচ্ছে জঙ্গি লঞ্চ প্যাডগুলির হাতিয়ার ও গোলাবারুদ। এ ছাড়াও প্রশিক্ষণের দায়িত্ব থাকা আইএসআইয়ের চর ও সাবেক সৈনিকদের দ্রুত এলাকা ছাড়তে বলেছে ইসলামাবাদ।

০৫ ১৯

পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন কেল, সার্ডি, দুধনিয়াল, আথমুকাম, জুরা, লিপা, পাছিবান, ফরোয়ার্ড কাহুতা, কোটলি, খুইরাত্তা, মান্ধার, নিকাইল, চামানকোট এবং জানকোট এলাকায় ছড়িয়ে আছে এই সমস্ত সন্ত্রাসী ক্যাম্প। একসঙ্গে এতগুলি ক্যাম্প খালি করা মোটেই সহজ নয়। আর তাই এলওসিতে আগুন ছড়াচ্ছে ইসলামাবাদের বাহিনী।

০৬ ১৯

পহেলগাঁও হামলার দায় স্বীকার করে প্রথমে বিবৃতি দেয় লশকর-এ-ত্যায়বার ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। পরে অবশ্য ১৮০ ডিগ্রি বেঁকে হামলার কথা অস্বীকার করে তারা। গোয়েন্দাদের দাবি, টিআরএফ দাবার বোড়ে মাত্র। কাশ্মীরে পর্যটক হত্যাকাণ্ডের মূল চক্রী ২৬/১১ মুম্বই হামলার মাস্টারমাইন্ড তথা লশকরের প্রতিষ্ঠাতা-প্রধান হাফিজ় সইদ।

০৭ ১৯

কুখ্যাত জঙ্গি হাফিজ়ের বাড়ি পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে। সন্ত্রাসবাদের এই বিষধর সাপটিকে থেঁতলে মারতে ভারতীয় সেনা বা বিমানবাহিনী বড় আকারের ফৌজি অভিযান চালাবে বলে ইতিমধ্যেই ছড়িয়েছে জল্পনা। আর তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে তাঁর নিরাপত্তা আঁটসাঁট করেছে পাক গুপ্তচর বাহিনী আইএসআই, খবর সূত্রের।

০৮ ১৯

লাহোরের মহল্লা জ়োহর টাউন এলাকায় হাফিজ়ের বাসস্থান এবং তাঁর সঙ্গীদের গতিবিধি নিয়ে সম্প্রতি কয়েকটি ভিডিয়ো ফুটেজ প্রকাশ্যে আসে। সেখানে লশকর প্রধানের বাড়ির চার কিলোমিটার ব্যাসার্ধ জুড়ে উচ্চ রেজ়োলিউশনের সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে বলে দেখা গিয়েছে। পাশাপাশি তাঁর বাড়ি ঘিরে রেখেছে পাক পুলিশ, আধা সেনা এবং সশস্ত্র জঙ্গিদের একটি দল। চলছে ড্রোন নজরদারি।

০৯ ১৯

ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি, জম্মু-কাশ্মীরে কাজ চালানো ছায়া সংগঠনগুলিকে সন্ত্রাসবাদী আদর্শে দীক্ষিত করাই কেবল নয়, সীমান্তের ও পার থেকে পরিকাঠামো এবং প্রযুক্তিগত সাহায্যও জোগান হাফিজ়। এই কাজে তাঁর ডান হাত তথা লশকরের ‘ডেপুটি’ সইফুল্লা কাসুরি। এই জঙ্গি নেতার এখনও কোনও খোঁজ মেলেনি।

১০ ১৯

ভারতীয় সেনা জানিয়েছে, গত ২৪ এপ্রিল থেকে নিয়ন্ত্রণরেখায় লাগাতার সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে চলেছে পাকিস্তান। ১ মে পর্যন্ত টানা আট দিন জম্মু-কাশ্মীরের কুপওয়ারা, বারামুলা, পুঞ্চ, নওশেরা এবং আখনুর— এই পাঁচ জায়গায় সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে গুলি চালায় ইসলামাবাদের বাহিনী। পহেলগাঁও কাণ্ডের বদলা নিতে নয়াদিল্লি কতটা প্রস্তুত, এর মাধ্যমে বুঝে নিতে চাইছে তারা। অন্য দিকে সজাগ রয়েছে ভারতীয় সেনাও।

১১ ১৯

সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উত্তেজনার আবহে ২৯ এপ্রিল রাতে পাক সেনার ডিজিএমও-র সঙ্গে হটলাইনে কথা বলেন ভারতীয় ফৌজের ডিজিএমও (ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই। সূত্রের খবর, ওই কথোপকথনে ইসলামাবাদকে কড়া বার্তা দেন তিনি। তবে তাতে যে কাজের কাজ হয়নি, তা বলাই বাহুল্য।

১২ ১৯

এলওসি এলাকায় সংঘর্ষবিরতি কার্যকর করতে ২০০৩ সালে একমত হয় নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদ। ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ভারত ও পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতি চুক্তি পুনর্নবীকরণ করেছিল। খাতায়কলমে এই নিয়ম এখনও বহাল রয়েছে। কিন্তু, অতীতেও দু’দেশের সেনা পরস্পরের বিরুদ্ধে সংঘর্ষবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে।

১৩ ১৯

সূত্রের খবর, সংঘর্ষবিরতি চুক্তির প্রাথমিক পর্যায়ে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ডিজিএমও-প্রতিনিধি স্তরে প্রত্যেক বৃহস্পতিবার একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হত। ওই ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’-এ ব্রিগেডিয়ার স্তরের অফিসারেরা যোগ দিতেন। কিন্তু পরবর্তী সময় তা অনিয়মিত হয়ে পড়ে।

১৪ ১৯

উত্তেজনার এই আবহে ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করেছে ভারত। পাশাপাশি, পশ্চিম সীমান্ত বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক জ্যামার। সূত্রের খবর, এর ফলে পাকিস্তানি সেনার বিমান যে ‘গ্লোবাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম’ (জিএনএসএস) ব্যবহার করে লক্ষ্যবস্তুর অবস্থান স্থির করে, তা অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কমবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার ক্ষমতা।

১৫ ১৯

পাকিস্তানের সেনাবিমান লক্ষ্যবস্তুর অবস্থান জানার জন্য জিপিএস (আমেরিকা), গ্লোনাস (রাশিয়া), বেইডু (চিন)— এই তিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এ বার এই তিন প্রযুক্তিকেই মাত দেবে ভারতীয় জ্যামিং প্রযুক্তি, জানিয়েছে নয়াদিল্লির একটি সূত্র।

১৬ ১৯

গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর পরই সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করে নয়াদিল্লি। সঙ্গে সঙ্গে এই ইস্যুতে সুর চড়ায় পাকিস্তান। নদীর জল বন্ধ হলে তাকে যুদ্ধ হিসাবে দেখা হবে বলে স্পষ্ট করেছে শাহবাজ় শরিফের প্রশাসন। শুধু তা-ই নয়, ইসলামাবাদের একাধিক নেতা পরমাণু হামলার হুমকিও দিয়েছেন।

১৭ ১৯

১৯৭১ সালের বাংলাদেশ যুদ্ধে সম্পূর্ণ ভাবে পর্যুদস্ত হওয়ার ঠিক পরের বছর (পড়ুন ১৯৭২) ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সংঘাতের আবহে তা স্থগিত করার হুমকি দিয়েছে ইসলামাবাদ। এই চুক্তি স্থগিত হলে নিয়ন্ত্রণরেখা গুরুত্ব হারাবে। ফলে সেখানে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার রয়েছে আশঙ্কা। তাই আগেভাগে উস্কানি দিচ্ছে পাকিস্তান, মত বিশ্লেষকদের।

১৮ ১৯

অন্য দিকে, জঙ্গিহানার বদলার যাবতীয় দায়িত্ব জল-স্থল-বিমানবাহিনীর উপর ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রত্যাঘাত শানাতে তিন সেনাই লাগাতার যুদ্ধাভ্যাস শুরু করেছে। ফলে আতঙ্কিত পাকিস্তান। বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাওয়ার কূটনৈতিক চাল দিতে চেষ্টার কসুর করছে না ইসলামাবাদ।

১৯ ১৯

তবে সে দিক থেকে পাকিস্তান কিছুটা ব্যাকফুটে রয়েছে, তা বলাই যায়। জঙ্গি হামলার নিন্দা করেছে আমেরিকা, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো তাবড় বিশ্বশক্তি। তবে পরমাণু শক্তিধর দুই দেশকেই সংযত হতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং চিন। এই পরিস্থিতিতে সংঘাতের জল কোন দিকে গড়ায়, সেটাই এখন দেখার।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement