India Pakistan War

চার দিন লড়লেই শেষ হবে গোলাবারুদ! ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ অস্ত্রভান্ডার নিয়ে আস্ফালন যুদ্ধপাগল পাক ফৌজের

ভারতকে যুদ্ধের হুমকি দেওয়া পাকিস্তানের সেনাবাহিনী মারাত্মক ভাবে ভুগছে হাতিয়ার এবং গোলাবারুদের সঙ্কটে। সূত্রের খবর, পুরোদস্তুর যুদ্ধ হলে মাত্র চার দিন লড়াই চালাতে পারবে ইসলামাবাদ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২৫ ১৫:০৯
Share:
০১ ২০

কখনও সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করা। কখনও আবার পহেলগাঁও জঙ্গিহানার বদলার প্রস্তুতি। নয়াদিল্লির কূটনৈতিক চালে বেসামাল পাকিস্তান। অস্তিত্বরক্ষায় তাই ভারতকে ক্রমাগত পরমাণু যুদ্ধের হুমকি দিয়ে চলেছেন ইসলামাবাদের নেতা-মন্ত্রীরা। চাপ বজায় রাখতে ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষাও চালিয়েছে সেখানকার ফৌজ। কিন্তু, যুদ্ধের জিগির তোলা রাওয়ালপিন্ডির সেনা অফিসারেরা কত দিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন? প্রকাশ্যে এল তারই চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট।

০২ ২০

সূত্রের খবর, বর্তমানে গোলাবারুদের মারাত্মক সঙ্কটে ভুগছে পাক ফৌজ। গোলন্দাজ বাহিনীর হাতে কামানের গোলা প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে ভারতের সঙ্গে পুরোদস্তুর যুদ্ধ বাধলে মাত্র চার দিন তা চালানোর ক্ষমতা রয়েছে সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের। একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে এমনটাই জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএনআই।

Advertisement
০৩ ২০

পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত তিন বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে কিভকে বিপুল সংখ্যায় হাতিয়ার ও গোলাবারুদ সরবরাহ করেছে ইসলামাবাদ। এ ছাড়া ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে অস্ত্রের জোগান দিয়ে গিয়েছে পাক সরকার। মুনিরের ফৌজের গোলবারুদের সঙ্কটের নেপথ্যে এগুলিকে মূল কারণ বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।

০৪ ২০

মূলত দু’ভাবে হাতিয়ার ও গোলাবারুদ পেয়ে থাকে ইসলামাবাদের সেনা। বাহিনীতে এর বড় অংশই আসে পাকিস্তানের অস্ত্র কারখানাগুলি থেকে। এ ছাড়া চিন, তুরস্ক বা আমেরিকা থেকে অত্যাধুনিক কিছু হাতিয়ার আমদানি করেন রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি জেনারেলরা। সূত্রের খবর, ইউক্রেন এবং হামাসকে সরবরাহ করার দরুন বর্তমানে সেনার জন্য বিপুল পরিমাণে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নির্মাণের জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির ওই সমস্ত অস্ত্র কারখানা।

০৫ ২০

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রটি সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, যুদ্ধ শুরু হলে একটানা ৯৬ ঘণ্টার বেশি লড়াই করতে পারবে না মুনিরের ফৌজ। কারণ, পাক গোলন্দাজ বাহিনীর কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে এম১০৯ হাউইৎজ়ার কামানে ব্যবহৃত ১৫৫ মিলিমিটার গোলা নেই। সঙ্কট রয়েছে রাশিয়ার তৈরি বিএম-২১ গ্রাড সিস্টেমের ১২২ মিলিমিটার রকেটের।

০৬ ২০

পহেলগাঁও হামলার পর গত ২ মে রাওয়ালপিন্ডির সেনা সদর দফতরে কোর কমান্ডারদের একটি বিশেষ বৈঠক করে পাক ফৌজ। সূত্রের খবর, সেখানে গোলবারুদের সঙ্কটের বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সংশ্লিষ্ট বৈঠকে হাজির ছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির। পরে এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) এই সংক্রান্ত খবর ছড়িয়ে পড়ে। যদিও সরকারি ভাবে এই নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেনি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের সরকার।

০৭ ২০

তবে গোয়েন্দাদের দাবি, সংঘাতের আবহে পর্দার আড়ালে থেকে পাকিস্তানকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে সাহায্য করে যাচ্ছে চিন ও তুরস্ক। ইসলামাবাদের বায়ুসেনার বহরে রয়েছে বেজিঙের তৈরি জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান। সম্প্রতি সেই লড়াকু জেটগুলির ছবি প্রকাশ করে নয়াদিল্লিকে ‘ভয়’ দেখানোর নিষ্ফল চেষ্টা চালান রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা। আর তখনই হাতিয়ার সরবরাহের বিষয়টি গোয়েন্দাদের নজরে আসে।

০৮ ২০

গত ২৭ এপ্রিল তিনটি জেএফ ১৭ যুদ্ধবিমানের ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় পাক বিমানবাহিনী। জেটগুলি পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত ছিল। উল্লেখ্য, দৃষ্টিশক্তির বাইরে (বিয়ন্ড ভিস্যুয়াল রেঞ্জ) হামলা চালানোর ক্ষমতা রয়েছে এই মারণাস্ত্রের। ফলে মাঝ-আকাশের ডগফাইটে চিনা পিএল-১৫ ভারতীয় বিমানবাহিনীর মাথাব্যথার কারণ হতে পারে, বলছেন সাবেক সেনাকর্তারা।

০৯ ২০

জনপ্রিয় প্রতিরক্ষা সংবাদ সংস্থা ক্ল্যাশরিপোর্টের প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে দ্য ইউরেশিয়ান টাইমস জানিয়েছে, ‘পিপল্স লিবারেশন আর্মি’ বা পিএলএ বায়ুসেনার অস্ত্রাগার থেকে সংশ্লিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে ইসলামাবাদের হাতে তুলে দিয়েছে বেজিং। শুধু তা-ই নয়, পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে, এই ধরনের আরও হাতিয়ার পাক ফৌজকে সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ড্রাগন সরকার।

১০ ২০

বেজিঙের সরকারি সংস্থা ‘অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন অফ চায়না’র তৈরি পিএল-১৫কে এককথায় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বলা যেতে পারে। রেডার নিয়ন্ত্রিত সক্রিয় হাতিয়ার এটি। ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা ২০০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার। শব্দের পাঁচ গুণের চেয়ে বেশি (ফাইভ ম্যাক প্লাস) গতিতে ছোটার ক্ষমতা রয়েছে এই হাতিয়ারের।

১১ ২০

গত বছরের নভেম্বরে ঝুহাই এয়ারশোয়ে ভাঁজ করা পাখনা যুক্ত পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রদর্শন করে পিএলএ বিমানবাহিনী। এর রফতানি ভ্যারিয়েন্টটির পাল্লা ১৪৫ কিলোমিটার বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু সূত্রের খবর, পাক বায়ুসেনার প্রকাশ করা ছবিতে যে ক্ষেপণাস্ত্রগুলি দেখা গিয়েছে সেগুলির পাল্লা আরও বেশি। সংঘাতের আবহে চিন যে গোপনে গোপনে ইসলামাবাদকে সাহায্য করে চলেছে, এই ঘটনাই তার প্রমাণ, বলছেন সাবেক ফৌজি অফিসারেরা।

১২ ২০

অন্য দিকে, ২৮ এপ্রিল দক্ষিণ পাকিস্তানের করাচি বায়ুসেনা ঘাঁটিতে অবতরণ করে তুরস্কের সি-১৩০ই হারকিউলিস মালবাহী বিমান। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, ওই বিমানে বিপুল পরিমাণ হাতিয়ার, গোলাবারুদ এবং যুদ্ধের সরঞ্জাম পাঠিয়েছে আঙ্কারা। যদিও পত্রপাঠ সেই দাবি খারিজ করে দেয় ‘ইউরোপের রুগ্ন মানুষ’।

১৩ ২০

করাচিতে অবতরণ করা তুরস্কের মালবাহী বিমানের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি থাকায় সংঘাতের আবহে নয়াদিল্লির উদ্বেগ আরও বেড়েছে। এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) ছড়িয়ে পড়া খবর অনুযায়ী, পাকিস্তানে মোট ছ’টি সি-১৩০ই হারকিউলিস বিমান নামিয়েছে তুর্কি বায়ুসেনা। আরব সাগরের উপর দিয়ে সেগুলিকে উড়িয়ে আনা হয়। করাচি বায়ুসেনা ঘাঁটিতে নাকি সেগুলি দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়েছিল।

১৪ ২০

এর্ডোগান প্রশাসন অবশ্য করাচিতে মালবাহী বিমানের অবতরণের কথা স্বীকার করে নিয়েছে। তাঁদের দাবি, জ্বালানি ভরার জন্য একটি সি-১৩০ই হারকিউলিস বিমানকে সেখানে নামানো হয়। কিন্তু তার পরেও এ ব্যাপারে সন্দেহ যে পুরোপুরি কেটে গিয়েছে, এমনটা নয়।

১৫ ২০

এর মধ্যেই আবার ৪ মে করাচি বন্দরে ‘টিসিজি বুয়ুকাদা’ নামের একটি যুদ্ধজাহাজ পাঠায় তুরস্ক। সামুদ্রিক সুরক্ষায় পাক নৌসেনার সঙ্গে ওই রণতরী যৌথ মহড়ায় যোগ দেবে বলে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে ইসলামাবাদ। পাশাপাশি, পাকিস্তানের পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা তুরস্ক নৌবাহিনীর সৈনিকদের ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে।

১৬ ২০

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ইসলামাবাদের হাতে থাকা ডুবোজাহাজের মেরামতি ও আধুনিকীকরণের দায়িত্ব নিয়েছে তুরস্ক। গত ৩০ এপ্রিল রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি জেনারেলদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন তুর্কি বায়ুসেনা প্রধান। ঐতিহাসিক ভাবে অবশ্য ইসলামাবাদ ও আঙ্কারার সম্পর্ক বেশ মধুর। বিশ্লেষকদের একাংশ তাই মনে করেন, যুদ্ধ বাধলে তুরস্কের ‘অন্ধ’ সমর্থন পাবে পাকিস্তান।

১৭ ২০

বছর কয়েক আগে পাক ফৌজকে অতিশক্তিশালী বের‌্যাক্টার টিবি২ এবং আকিনসি নামের দু’টি ড্রোন সরবরাহ করে তুরস্ক। এর মধ্যে প্রথমটি কেনার ব্যাপারে আগ্রহী ছিল নয়াদিল্লি। এ ছাড়া ইসলামাবাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘কান’ নামের পঞ্চম প্রজন্মের একটি যুদ্ধবিমান তৈরি করছে তুরস্ক। গত বছর দুই দেশের মধ্যে এই সংক্রান্ত একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়।

১৮ ২০

২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখোয়ার জইশ-ই-মহম্মদ সন্ত্রাসবাদীদের গুপ্ত ঘাঁটিতে বিমানহানা চালায় ভারতীয় বায়ুসেনা। ওই সময়ে চুপ করে বসে থাকেনি ইসলামাবাদ। এ দেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে উপত্যকায় আক্রমণ শানানোর চেষ্টা করে প্রতিবেশী দেশটির বিমানবাহিনী। কিন্তু, তাঁদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয় ভারতীয় বায়ুসেনা।

১৯ ২০

নয়াদিল্লির বিমানহানার বদলা নিতে মার্কিন লড়াকু জেট এফ-১৬ নিয়ে হামলা করতে এসেছিল পাক বিমানবাহিনী। কিন্তু, রাশিয়ার তৈরি মিগ-২১ বাইসন থেকে গুলি চালিয়ে ওই যুদ্ধবিমানগুলির একটিকে ধ্বংস করেন উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। তবে তাঁর বিমানটিও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে (পাকিস্তান অকুপায়েড কাশ্মীর বা পিওকে) ভেঙে পড়লে ইসলামাবাদের হাতে বন্দি হন অভিনন্দন।

২০ ২০

প্রাথমিক ভাবে বায়ুসেনার ওই পাইলটকে ছাড়তে রাজি ছিল না সে সময়ের ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাক সরকার। ফলে সরাসরি যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দেয় ভারত। এতে মারাত্মক চাপে পড়ে অভিনন্দনকে ছেড়ে দেয় ইসলামাবাদ। শুধু তা-ই নয়, বাহিনী যে মারাত্মক ভাবে গোলাবারুদের সমস্যায় ভুগছে, তা স্পষ্ট করেছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান কমর জাভেদ বাজ়ওয়া।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement