Pakistan’s Drone Attack

‘হুল’ ফোটাতে মৌমাছির মতো ঝাঁকে ঝাঁকে হামলা! তুরস্কের ‘সোয়ার্ম’ ড্রোনে সেনাঘাঁটি ওড়ানোর ছক পাকিস্তানের

৮ ও ৯ মে দেশের তিনটি রাজ্য এবং একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ঝাঁকে ঝাঁকে ড্রোন পাঠিয়ে হামলার চেষ্টা করে পাকিস্তান। এগুলিকে ‘সোয়ার্ম’ ড্রোন বলছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৫ ১৪:১৩
Share:
০১ ১৯

মৌমাছির মতো ঝাঁক বেঁধে আক্রমণ। কোনওটার গায়ে বাঁধা বিস্ফোরক। কোনওটার কাজ আবার শুধুই গুপ্তচরবৃত্তি। এ রকম শয়ে শয়ে ড্রোন পাঠিয়ে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের একাধিক সেনাছাউনিকে নিশানা করার নিষ্ফল চেষ্টা চালিয়েছে পাকিস্তান। এ হেন মানববিহীন উড়ুক্কু যানগুলির পোশাকি নাম ‘সোয়ার্ম ড্রোন’। সেগুলিকে অবশ্য গুলি চালিয়ে মাঝ-আকাশেই ধ্বংস করে ভারতীয় সেনা।

০২ ১৯

গত ৮ এবং ৯ মে জম্মু-কাশ্মীর, পঞ্জাব, রাজস্থান এবং গুজরাতের একাধিক জায়গায় ঝাঁকে ঝাঁকে ড্রোন পাঠিয়ে আক্রমণের ঝাঁজ বাড়ায় পাক সেনা। সঙ্গে সঙ্গেই সক্রিয় হয়ে ওঠে ভারতীয় সেনার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ফলে ড্রোনগুলিকে চিহ্নিত করতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। বিপদ এড়ানো গেলেও এই ধরনের মানববিহীন উড়ুক্কু যানগুলি কতটা ভয়ঙ্কর, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

Advertisement
০৩ ১৯

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, মূলত ঝাঁক বেঁধে হামলা চালানোয় সিদ্ধহস্ত সোয়ার্ম ড্রোন পরিচালিত হয় কৃত্রিম মেধার (আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স বা এআই) দ্বারা। একসঙ্গে উড়লেও তাদের একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধার কোনও আশঙ্কা নেই। যে কোনও পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারে এই সোয়ার্ম ড্রোন। এগুলিতে থাকে অ্যাক্সিলোমিটার, জাইরোস্কোপ, ম্যাগনেটোমিটার, ক্যামেরা এবং অত্যাধুনিক সেন্সর, যা আশপাশের এলাকা চিহ্নিতকরণ (পড়ুন নেভিগেট) এবং তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।

০৪ ১৯

এই ঝাঁকে ছোট-বড় মিলিয়ে বিভিন্ন আকারের মানববিহীন উড়ুক্কু যান থাকতে পারে। সর্বাধিক ১০ হাজারের বেশি ড্রোনের ঝাঁক পাঠিয়ে হামলা চালানোর নজিরও পৃথিবীতে রয়েছে। তবে সূত্রের খবর, পাক সোয়ার্ম ড্রোনের ঝাঁকে ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ মানববিহীন যান। এর মাধ্যমে ইলেকট্রনিক যুদ্ধ, পেলোড পুনরুদ্ধার, গুপ্তচরবৃত্তি এবং ছোট আকারের বিধ্বংসী হামলার পরিকল্পনা ছিল ইসলামাবাদের, বলছেন বিশ্লেষকেরা।

০৫ ১৯

সোয়ার্ম ড্রোনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, ঝাঁকের মধ্যে পর পর এগুলির বেশ কয়েকটিকে ধ্বংস করলেও বাকিগুলি ঠিক কাজ করতে থাকে। ঐতিহ্যবাহী সামরিক সরঞ্জামের তুলনায় এগুলি বেশ সস্তা। ভারতীয় সেনা জানিয়েছে, এই ধরনের আগ্রাসনে তুরস্কের তৈরি সোঙ্গার ড্রোন ব্যবহার করছে পাক বাহিনী। মানববিহীন যানের ধ্বংসাবশেষের ফরেন্সিক পরীক্ষায় সেই তথ্য মিলেছে বলে স্পষ্ট করা হয়েছে।

০৬ ১৯

২০১৯ সালের এপ্রিলে সোঙ্গার ড্রোনের প্রথম উৎক্ষেপণ করে তুরস্কের প্রতিরক্ষা সংস্থা অ্যাসিসগার্ড। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এটিকে বহরে শামিল করে তুর্কি সশস্ত্র বাহিনী। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি সোঙ্গারই ছিল আঙ্কারার প্রথম সশস্ত্র ড্রোন। কত সাল থেকে এবং কী পরিমাণে এটি পাক বাহিনীতে রয়েছে, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়।

০৭ ১৯

সোঙ্গার ড্রোন মোটামুটি ভাবে ১৪০ সেন্টিমিটার চওড়া। সর্বোচ্চ ৪৫ কেজি ওজন নিয়ে ওড়ার ক্ষমতা রয়েছে এর। এতে কোনও ওজন না চাপালে আধ ঘণ্টা থেকে ৩৫ মিনিট টানা উড়তে পারে। পাঁচ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত এর রিয়্যাল-টাইম ভিডিয়ো সম্প্রচারের সক্ষমতা রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন হাজার মিটার এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩০০ মিটার উচ্চতায় যেতে পারে এই তুর্কি ড্রোন।

০৮ ১৯

সংশ্লিষ্ট মানববিহীন উড়ুক্কু যানটিকে দিন এবং রাত দুই সময়েই ব্যবহার করা যায়। এতে নজরদারি এবং অনুসন্ধান কাজের জন্য একটি নজরদারি ক্যামেরা এবং একটি আগ্নেয়াস্ত্র বসানো ক্যামেরা রয়েছে। ম্যানুয়াল এবং অটোমেটিক— দু’টি মোডেই উড়তে পারে এই ড্রোন। রিমোট কন্ট্রোলারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও নিজের থেকে সেনাঘাঁটিতে ফিরে আসার ক্ষমতা রয়েছে সোঙ্গারের।

০৯ ১৯

ফৌজি অপারেশনের সময়ে নিজের লক্ষ্য খুঁজে নিতে গ্লোবাল পজ়িশনিং সিস্টেম (জিপিএস) এবং রাশিয়ার নেভিগেশন পদ্ধতি জিএলওএনএএসএস ব্যবহার করে তুরস্কের তৈরি এই ড্রোন। হাতিয়ারের উপর ভিত্তি করে এই মানববিহীন যানের পাঁচ ধরনের শ্রেণিবিভাগ রয়েছে। এর সম্পূর্ণ তালিকা রয়েছে অ্যাসিসগার্ডের ওয়েবসাইটে। সেগুলি হল সোঙ্গার ৫.৫৬ x ৪৫ মিমি অ্যাসল্ট রাইফেল, সোঙ্গার ২×৪০ মিমি গ্রেনেড লঞ্চার, সোঙ্গার ৬×৪০ মিমি ড্রাম টাইপ গ্রেনেড লঞ্চার, সোঙ্গার ৩×৮১ মিমি মর্টার গ্রিপার এবং সোঙ্গার ৮ x টিয়ার/স্মোক গ্রেনেড লঞ্চার।

১০ ১৯

প্রসঙ্গত, তুরস্কের এই ড্রোন থেকে গুলি ছোড়ার ক্ষেত্রে অপারেটরের অনুমোদন প্রয়োজন। সোঙ্গারের অ্যাসল্ট রাইফেলটিতে ৫.৫৬×৪৫ মিলিমিটারের বুলেট ব্যবহার হয়। আমেরিকার নেতৃত্বাধীন নেটো শক্তিজোটভুক্ত দেশগুলি এই ক্যালিবারের গুলি ব্যবহার করে।

১১ ১৯

গ্রেনেড লঞ্চার সোঙ্গার থেকে ৪০০-৪৫০ মিটারের মধ্যে দু’টি গ্রেনেড ছোড়া সম্ভব। বেশি মাত্রায় গ্রেনেড ছোড়ার জন্য ড্রাম টাইপ সোঙ্গার ব্যবহার করে তুর্কি সেনা। এর থেকে ২×৪০ মিলিমিটারের মোট ছ’টি গ্রেনেড দিয়ে হামলা করা সম্ভব।

১২ ১৯

অ্যাসিসগার্ডের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, সোঙ্গার থেকে মোট আটটি স্মোক গ্রেনেড ছোড়া যায়। সোজা উড়ে গিয়ে সেগুলি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। মূলত সামরিক সম্পদ নষ্ট করার জন্যেই এই ড্রোনগুলিকে তৈরি করা হয়েছে। পাক সেনা এই ড্রোনের কোন শ্রেণিটি ব্যবহার করছে, তা অবশ্য জানা যায়নি।

১৩ ১৯

৮ ও ৯ মে রাতে পাকিস্তানের ড্রোন হামলা আটকাতে বেশ কয়েকটি হাতিয়ার ব্যবহার করেছে ভারতীয় ফৌজ। সূত্রের খবর, সেই তালিকায় রয়েছে রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এ ছাড়াও এল-৭০ বন্দুক, জ়ু-২৩এমএম অ্যান্টি এয়ারক্রাফ্‌ট বন্দুক এবং শিল্কা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ড্রোন আটকাতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

১৪ ১৯

স্বল্প উচ্চতায় প্রতিপক্ষের ড্রোন, যুদ্ধবিমান বা ক্ষেপণাস্ত্রকে গুলি করে নামানোর ক্ষেত্রে এল-৭০র জুড়ি মেলা ভার। এর নির্মাণকারী সংস্থা হল সুইডেনের বফোর্স। এটি প্রকৃতপক্ষে ৪০ এমএম ‘অ্যান্টি এয়ারক্রাফ্‌ট’ বন্দুক। নিখুঁত ভাবে হামলা করার জন্য এই বন্দুকটিকে অত্যাধুনিক করেছে ভারতীয় সেনা।

১৫ ১৯

জ়ু-২৩ এমএম হল প্রকৃতপক্ষে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমানে রাশিয়া) তৈরি ‘অ্যান্টি এয়ারক্রাফ্‌ট’ বন্দুক। এর মারণক্ষমতা অনেক বেশি। খুব অল্প উচ্চতায় প্রতিপক্ষের কোনও ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এলেই সঙ্গে সঙ্গে তা চিহ্নিত করে ধ্বংস করতে পারে এই হাতিয়ার।

১৬ ১৯

শিল্কার অপর নাম জেডএসইউ-২৩-৪। এটি একটি রেডার পরিচালিত ‘অ্যান্টি এয়ারক্রাফ্‌ট’ বন্দুক। ড্রোন ধ্বংস করতে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর। এ ছাড়াও পাক ড্রোন ওড়াতে ব্যবহার হয়েছে ‘আনম্যান্‌ড এরিয়াল সিস্টেম’ (ইউএএস)।

১৭ ১৯

ভারতীয় সেনার কর্নেল পদমর্যাদার অফিসার সোফিয়া কুরেশি জানিয়েছেন, এর জবাবে পাকিস্তানের রফিকি, মুরিদ, চাকলালা এবং রহিম ইয়ার খান বায়ুসেনা ঘাঁটিতে আকাশপথে হামলা চালিয়েছে এ দেশের বিমানবাহিনী। এ ছাড়া সুক্কুর এবং চুনিয়ায় পাক সেনাঘাঁটি, পসরুর এবং সিয়ালকোটের বিমানঘাঁটিতেও হামলা করা হয়েছে।

১৮ ১৯

অন্য দিকে পাক সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, রাওয়ালপিন্ডির নুর খান, সিন্ধ প্রদেশের সুক্কুর, চাকওয়ালের মুরিদ বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসলামাবাদ ভুয়ো খবর ছড়িয়ে চলেছে বলে ফের এক বার সতর্ক করেছেন ভারতীয় বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। এ দেশের বিদ্যুৎ কাঠামোয় সাইবার হানা, বায়ুসেনা এবং ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের ঘাঁটি উড়িয়ে দেওয়ার দাবিকে রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি জেনারেলদের মিথ্যাচার বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

১৯ ১৯

তবে পাকিস্তানের মুহুর্মুহু ড্রোন হামলায় আদমপুর, উধমপুর, ভাতিন্ডার মতো কিছু কিছু জায়গায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শ্রীনগর, অবন্তিপুর, উধমপুরের চিকিৎসাকেন্দ্র, স্কুলগুলিকে নিশানা করেছে পাকিস্তানি সেনা। এ সব এলাকায় উচ্চ গতির ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্নেল কুরেশি।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement