Pakistan’s Chinese Weapon

ফাটলই না পাক জেট থেকে ছোড়া চিনা ক্ষেপণাস্ত্র! ভারতের সঙ্গে ডগফাইটে ভেঙে চৌচির বেজিঙের ‘অস্ত্র-গুমর’

পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর ছোড়া চিনের তৈরি পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্রটি লড়াইয়ের ময়দানে কাজ না-করায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে বেজিং। অক্ষত অবস্থায় সংশ্লিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্রটিকে পঞ্জাবের হোশিয়ারপুরে উদ্ধার করেছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২৫ ০৭:৫৪
Share:
০১ ১৯

যুদ্ধবিমান, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) পর ক্ষেপণাস্ত্র। চার দিনের ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে একের পর এক হাতিয়ার ব্যর্থ হওয়ায় প্রশ্নের মুখে চিনা অস্ত্রের কার্যকারিতা। বেজিঙের কোনও কিছুই যে অভেদ্য নয়, এই লড়াইয়ে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ভারতীয় ফৌজ। দুই প্রতিবেশীর সংঘর্ষবিরতির পর সেই সব ছবি প্রকাশ্যে আসতেই প্রবল অস্বস্তিতে ড্রাগন সরকার।

০২ ১৯

গত ৭ মে মধ্যরাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের (পাকিস্তান অকুপায়েড জম্মু-কাশ্মীর বা পিওজেকে) মোট ন’টি জায়গায় হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের গুপ্তঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনা। ওই সময়ে এ দেশের বিমানবাহিনীকে প্রতিহত করতে চিনের তৈরি বিশেষ একটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইসলামাবাদ। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, বেজিঙের ওই অস্ত্রের বেশির ভাগই কোনও রকমের বিস্ফোরণ ঘটাতে পারেনি।

Advertisement
০৩ ১৯

পাক বিমানবাহিনীর ব্যবহার করা ওই চিনা ক্ষেপণাস্ত্রটির নাম পিএল-১৫। ভারতীয় লড়াকু জেটকে ধ্বংস করতে সংশ্লিষ্ট অস্ত্রটি যে ছোড়া হয়েছিল, গত ৯ মে-র সাংবাদিক বৈঠকে তা স্বীকার করে নেয় ইসলামাবাদ। বিস্ফোরণ না-হওয়ায় এ দেশের সীমান্তবর্তী গ্রামে এসে পড়ে একটি পিএল-১৫। অক্ষত অবস্থায় এলাকাবাসীরাই সেটিকে উদ্ধার করে প্রশাসনের হাতে তুলে দেন।

০৪ ১৯

চিনা পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্রটি পাক বিমানবাহিনীতে ‘থান্ডারবোল্ট-১৫’ নামে পরিচিত। মূলত ডগফাইটের সময় এটিকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দৃষ্টিশক্তির বাইরে গিয়ে আঘাত হানার ক্ষমতা রয়েছে এই আকাশ থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্রের (এয়ার টু এয়ার মিসাইল)। হাতিয়ারটির নির্মাণকারী সংস্থার নাম চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন (সিএএসআইসি)।

০৫ ১৯

উল্লেখ্য, ‘থান্ডারবোল্ট-১৫’-এর নকশা তৈরি করেছে চিনের ৬০৭ ইনস্টিটিউট। এর গতিবেগ ম্যাক ৫ (পড়ুন শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি) বলে দাবি করে এসেছে বেজিং। পিএল-১৫-এ রয়েছে ডুয়েল পাল্‌স সলিড প্রোপেল্যান্ট রকেট মোটর। যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়ার পর ক্ষেপণাস্ত্রটিকে গতির ঝড় তোলার ক্ষেত্রে ওই মোটরই সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা নিয়ে থাকে বলে জানা গিয়েছে।

০৬ ১৯

বেজিঙের এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ২০০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার। তবে পাকিস্তানকে বিক্রি করা পিএল-১৫গুলি সর্বোচ্চ ১৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম। বিশ্লেষকদের দাবি, কোন যুদ্ধবিমান থেকে এই অস্ত্রটি ব্যবহার করা হচ্ছে, তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিছু কিছু লড়াকু জেটের থেকে এটি ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্তই ছোড়া যায়। অর্থাৎ, যুদ্ধজাহাজের উপর নির্ভর করে এর পাল্লা।

০৭ ১৯

সূত্রের খবর, চিনা ক্ষেপণাস্ত্রটি ২০ থেকে ২৫ কেজি উচ্চ বিস্ফোরক নিয়ে উড়তে সক্ষম। জেএফ-১৭ ব্লক থ্রি, জে-১০সি এবং জে-২০র মতো অত্যাধুনিক লড়াকু জেটে ব্যবহার করার জন্য পিএল-১৫ তৈরি করেছে বেজিং। এই যুদ্ধবিমানগুলির নির্মাণকারী দেশও ড্রাগন। এর মধ্যে জেএফ-১৭ লড়াকু জেট রয়েছে পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর বহরে।

০৮ ১৯

মাঝ-আকাশে ডগফাইটের সময়ে যুদ্ধবিমান, অ্যাওয়াক্স বিমান, ট্যাঙ্কার এবং মালবাহী বিমানকে নিশানা করতে পারে পিএল-১৭। এ হেন উচ্চমূল্যের ক্ষেপণাস্ত্র কাজ না করায় হতাশ পাক বায়ুসেনা। পঞ্জাবের হোশিয়ারপুর থেকে সেটিকে উদ্ধার করেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা।

০৯ ১৯

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে শুধুমাত্র চিনের ‘থান্ডারবোল্ট-১৫’ ক্ষেপণাস্ত্রটি কাজ করেনি এমন নয়। বেজিঙের তৈরি দু’টি জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানকে উড়িয়ে দেয় এ দেশের বিমানবাহিনী। একে বড় ক্ষতি বলে উল্লেখ করে বিবৃতি দেয় পাক সেনার জনসংযোগ শাখা (ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন বা আইএসপিআর)।

১০ ১৯

নয়াদিল্লির প্রত্যাঘাতের পর ৮ এবং ৯ মে রাতে ভারতের একাধিক বায়ুসেনা ঘাঁটি লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালায় পাকিস্তান। এতে ফল হয় হিতে বিপরীত। নয়াদিল্লি ড্রোন দিয়েই পাল্টা প্রত্যাঘাত শানিয়ে ধ্বংস করে দেয় পাক পঞ্জাব প্রদেশের লাহৌরের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সেখানে চিনের তৈরি এইচকিউ-৯পি মোতায়েন রেখেছিল ইসলামাবাদ, খবর সূত্রের।

১১ ১৯

পাক ফৌজের দাবি, ইজ়রায়েলি ‘হারোপ’ দিয়ে লাহৌরের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে উড়িয়েছে ভারত। গত কয়েক দশক ধরে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এই হাতিয়ারটিকে সযত্নে অস্ত্রাগারে সাজিয়ে রেখেছিল নয়াদিল্লি। মোক্ষম সময়ে এর এক আঘাতেই দিশেহারা হয়ে পড়ে ইসলামাবাদ।

১২ ১৯

৭ মে-র অভিযানের পোশাকি নাম রাখা হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। সূত্রের খবর, এর মাধ্যমে পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে স্ক্যাল্প ক্ষেপণাস্ত্র এবং হ্যামার বোমা ব্যবহার করে ভারতীয় বিমানবাহিনী। সেগুলিও চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয় চিনের এইচকিউ-৯পি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

১৩ ১৯

‘অপারেশন সিঁদুর’-এ মার খাওয়ার পরই ভুয়ো খবর ছড়াতে থাকে পাকিস্তান। এই নিয়ে সে দেশের পার্লামেন্ট ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’তে বিবৃতি দেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘মোট ৮০টি যুদ্ধবিমান নিয়ে পাকিস্তানের ছ’টি জায়গায় হামলা চালিয়েছে ভারত। এর মধ্যে মোট পাঁচটি বিমানকে উড়িয়ে দেওয়া গিয়েছে, যার দু’টি ফরাসি জেট রাফাল। সেগুলি ভারতের জম্মু-কাশ্মীর এবং পঞ্জাবের ভাতিন্ডায় ছিটকে গিয়ে পড়ে।’’ এর জন্য পাক বায়ুসেনার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।

১৪ ১৯

‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’তে শাহবাজ়ের ওই মন্তব্যের পর আরও এক কদম এগিয়ে বিবৃতি দেন পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার। তিনি বলেন, ‘‘ভারতীয় যুদ্ধবিমান, বিশেষত ফরাসি জেট রাফাল ধ্বংস করতে আমাদের বিমানবাহিনী জে-১০সি লড়াকু জেট ব্যবহার করেছে। চিনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এগুলি আমরা তৈরি করেছি।’’ তাঁর এ হেন বক্তব্যের পরেই পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়ে বিষয়টিকে পুরোপুরি ভুয়ো বলে উড়িয়ে দেয় বেজিং।

১৫ ১৯

এই ইস্যুতে চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র লিন জ়িয়ান বলেন, ‘‘জে-১০সি লড়াকু জেট নিয়ে যে দাবি করা হচ্ছে, সেই সংক্রান্ত কোনও তথ্য আমাদের হাতে নেই।’’ তাঁর ওই বক্তব্যের পর মিথ্যাচার ধরা পড়ায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়ে ইসলামাবাদ।

১৬ ১৯

স্বল্প সময়ের এই সংঘর্ষে পাকিস্তানের একাধিক বায়ুসেনা ঘাঁটিতে আগুন ঝরায় ভারতীয় বায়ুসেনা। এর জেরে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করে নিয়েছে ইসালামাবাদ। অন্য দিকে বেশ কিছু গণমাধ্যম এবং সমাজমাধ্যমে হামলার সময়কার ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। সেখানে পাক বায়ুসেনা ছাউনিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা গিয়েছে। যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম।

১৭ ১৯

গত ১০ মে এই ইস্যুতে বিবৃতি দেন ভারতীয় সেনার কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ। তাঁরা বলেন, পাকিস্তানের রফিকি, মুরিদ, চাকলালা এবং রহিম ইয়ার খান বায়ুসেনা ঘাঁটিতে আকাশপথে হামলা চালানো হয়েছে। এ ছাড়া নিশানা করা হয় সুক্কুর এবং চুনিয়ায় পাক সেনাঘাঁটি, পসরুর এবং সিয়ালকোটের বিমানঘাঁটি। যুদ্ধবিমান থেকে এই আক্রমণ শানানো হয়েছে বলে স্পষ্ট করেন তাঁরা।

১৮ ১৯

তবে নয়াদিল্লির তরফে এই বিবৃতি জারি করার আগেই বায়ুসেনা ঘাঁটিতে হামলার বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলে ইসলামাবাদ। পাক সেনাবাহিনীর জনসংযোগ শাখার (ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন বা আইএসপিআর) মুখপাত্র আহমেদ শরিফ চৌধরি জানিয়ে দেন, রাওয়ালপিন্ডির নুর খান, চালওয়ালের মুরিদ এবং পঞ্জাব প্রদেশের ঝাং জেলার রফিকি বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত হেনেছে ভারত।

১৯ ১৯

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, একের পর এক চিনা হাতিয়ার ব্যর্থ হওয়া এবং পাক বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলার পরই সংঘর্ষবিরতির জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে পাকিস্তান। শেষে আমেরিকার মধ্যস্থতায় সীমান্তে বন্ধ হয় গোলাবর্ষণ। যদিও ‘হেরে’ গিয়েও যুদ্ধবিরতির জন্য কোনও রকমের আবেদন করা হয়নি বলে গলা ফাটিয়েছে পাকিস্তান।

সব ছবি: সংগৃহীত। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement