Opium capital of the world

মাইলের পর মাইল জুড়ে অনিয়ন্ত্রিত চাষ! আফিম ব্যবসার ভরকেন্দ্র হয়ে নিজের কবর নিজেই খুঁড়ছে পাকিস্তান? চিন্তায় দিল্লিও

আনুষ্ঠানিক ভাবে নিষিদ্ধ করার পর থেকে আফিম বা পোস্ত গাছের চাষ প্রায় ৯৫ শতাংশ কমেছে। ২০২৩ সালে এক ঝটকায় ৬ হাজার ২০০ টন থেকে মাত্র ৩৩৩ টনে নেমে আসে আফিম চাষের পরিমাণ। আর এই সুযোগের ফয়দা তুলতে শুরু করেছে আফগানিস্তানের পড়শি দেশ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:৫৩
Share:
০১ ১৯

একটা সময় অন্যতম রোজগারের মাধ্যম ছিল আফিম চাষ। বিশ্ববাজারে সেই নেশার খোরাক বেচে লক্ষ লক্ষ ডলার কামিয়েছে তালিবান। কোটি কোটি টাকার মাদকের বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল হিন্দুকুশের পাদদেশের এই রাষ্ট্রে। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে পুরোপুরি ভোল পাল্টে ফেলেন তালিবান মাথারা।

০২ ১৯

২০২১ সালের অগস্টে দ্বিতীয় বার গৃহযুদ্ধে জিতে কাবুলে ক্ষমতা দখলের পরেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তালিবান মুখপাত্র জ়বিউল্লা মুজাহিদ। জানিয়েছিলেন, প্রথম তালিবান জমানার উল্টো পথে হেঁটে আফগানিস্তানে আফিমের চাষ এবং মাদকের কারবার বন্ধ করতে সক্রিয় হবে সংগঠনটি।

Advertisement
০৩ ১৯

কয়েক বছর আগেও তালিবান সংগঠনের আর্থিক ভিত্তির অন্যতম ‘স্তম্ভ’ ছিল আফিম চাষ এবং মাদক উৎপাদন। বেশ কয়েক বছর আগে প্রকাশিত একটি আন্তর্জাতিক রিপোর্ট জানিয়েছিল, ড্রাগের ব্যবসা এবং চোরাচালান থেকে তালিবানের বার্ষিক আয় ছিল প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

০৪ ১৯

তালিবান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ড্রাগ তৈরির কারখানা ছিল বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চক্রের। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তালিবান কমান্ডারদের বন্দুকের নলের সামনে আফিম চাষ করতে বাধ্য হতেন আফগান কৃষকেরা। বিশ্বের ৮০% আফিম উৎপাদিত হত আফগানিস্তান থেকেই। তবে বর্তমানে তালিব শাসকদের কড়াকড়ির ফলে আফিম চাষে মন্দা দেখা দিয়েছে।

০৫ ১৯

আনুষ্ঠানিক ভাবে নিষিদ্ধ করার পর থেকে আফিম বা পোস্ত গাছের চাষ প্রায় ৯৫ শতাংশ কমেছে সে দেশে। ২০২৩ সালে একঝটকায় ৬ হাজার ২০০ টন থেকে মাত্র ৩৩৩ টনে নেমে আসে আফিম চাষের পরিমাণ। আর এই সুযোগের ফয়দা তুলতে শুরু করেছে আফগানিস্তানের পড়শি দেশ। আফিম চাষের নতুন ভরকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে পাকিস্তান।

০৬ ১৯

সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, উপগ্রহচিত্রে ধরা পড়েছে বালোচিস্তানে মাইলের পর মাইল খেত জুড়ে মাথা তুলেছে পোস্ত গাছ। পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমের এই অশান্ত অংশে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে আফিম সাম্রাজ্যের নয়া রাজধানী। আফিম চাষের উপর নিষেধাজ্ঞার ফলে আফগান চাষিরা পাকিস্তানের দিকে সরে এসেছেন।

০৭ ১৯

আফগান বিশেষজ্ঞ এবং ভাগচাষিদের যোগসাজশে কাবুলের আফিমের সিংহাসন পূর্ব দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আফগান সীমান্ত-সংলগ্ন বালোচিস্তানের কয়েকটি গ্রামে আফিম চাষকেই জীবিকা করেছেন বাসিন্দারা। ইসলামিক স্টেটের মতো বেশ কয়েকটি সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠীর আবাসস্থল ঘিরে আফিম চাষের বাড়বাড়ন্ত নয়াদিল্লির মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহলের একাংশ।

০৮ ১৯

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের বহু কৃষক উন্নত সেচ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশাল জমিকে আফিম উৎপাদনের জন্য পোস্ত খামারে পরিণত করছেন। সেগুলির কিছু কিছু আকারে পাঁচ হেক্টরেরও বেশি। মাদক পাচারের ‘কিং পিন’দের মাথায় যে পাকিস্তানের হাত রয়েছে তা নিয়ে বার বার সরব হয়েছে নয়াদিল্লি।

০৯ ১৯

আফিমের কাঁচামাল হল পোস্ত। প্রাকৃতিক ভাবে চাষ করলে এর থেকে মেলে দু’টি উপাদান। সেগুলি হল, মরফিন ও কোডেইন। এই মরফিনেই রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে হেরোইন তৈরি করেন মাদক পাচারকারীরা। হেরোইন তৈরির ক্ষেত্রে বিশাল জমিতে পোস্ত চাষ আবশ্যক।

১০ ১৯

উত্তর ও পশ্চিম ভারত, বিশেষত পঞ্জাব, কাশ্মীর, রাজস্থান, গুজরাত ও মহারাষ্ট্রে ‘মাদক সন্ত্রাসবাদ’ শুরু করে পাকিস্তান মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলি। মাদক পাচারের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে হাতিয়ারের চোরাচালান। মাদকের আনাগোনা বাড়লে সেই এলাকা যে সন্ত্রাসবাদীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হবে, তা বলাই বাহুল্য।

১১ ১৯

পাকিস্তানের বালোচিস্তানে আফিম চাষ ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বালোচ প্রদেশে মাত্র দু’টি ছোট ছোট এলাকায় ৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পোস্ত চাষের রমরমার ছবি ধরা পড়েছে উপগ্রহচিত্রে। সেই চাষজমির পরিমাণ আফগানিস্তানের দু’টি প্রদেশের ৮ হাজার একরকে ছাপিয়ে গিয়েছে।

১২ ১৯

বালোচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চলের দুর্গম সীমান্তপথ দিয়ে সহজে আফিম চোরাচালান হয়। অসুরক্ষিত দুর্গম সীমান্তপথকেই এখন আন্তর্জাতিক মাদক পরিবহণের প্রধান রাস্তা হিসাবে ব্যবহার করছে মাদক চোরাচালানকারীরা।

১৩ ১৯

স্থানীয় শক্তিশালী জঙ্গিগোষ্ঠী, পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের মদতে মাদক মাফিয়ারা সেই আফিম আন্তর্জাতিক বাজারে ছড়িয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করে। পুরোটাই চলে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে ছড়িয়ে পড়ে কোটি কোটি ডলারের আফিম ও হেরোইন।

১৪ ১৯

আমেরিকার কূটনীতিক এবং বিদেশনীতি বিশেষজ্ঞ জ়ালমে খলিলজাদ জানিয়েছেন, এমনিতেই বারুদের স্তূপের উপর বসে রয়েছে বালোচিস্তান। পাকিস্তানের সরকারের সঙ্গে শত্রুতা কয়েক দশকের। দিনের পর দিন বালোচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করছে পাকিস্তান। জনগণের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আর সেই দাবিতেই বালোচিস্তানের প্রাদেশিক সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

১৫ ১৯

বালোচিস্তানের বুকে যদি আফিম চাষের রমরমা বাড়তে থাকে তা পাকিস্তানের পক্ষেও খুব একটা শুভ হবে না। জ়ালমের মতে, মাদক চাষের দাবি যদি সত্যি হয়, তা হলে পাকিস্তানের নিজেরই অনেক ঝুঁকি রয়েছে। সন্ত্রাস ও সহিংস গোষ্ঠীগুলিকে অর্থ জোগাবে মাদক থেকে আসা কাঁচা ডলার।

১৬ ১৯

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, মাদকের ব্যবসা বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এবং বালোচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ)-সহ বেশ কয়েকটি জঙ্গিগোষ্ঠীকে প্রচুর অর্থের জোগান দিতে পারে। ফলে এই অঞ্চলের রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে।

১৭ ১৯

বালোচিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে ১ হাজার ২৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ অসুরক্ষিত সীমান্ত রয়েছে। কঠোর মরুভূমিতে ফসল চাষের প্রযুক্তিগত জ্ঞান নিয়ে বালোচ কৃষকদের সহায়তা করতে সীমান্ত পেরিয়ে চলে আসছেন আফগানি আফিম কারবারিরা। বেশির ভাগ আফগান কৃষক হয় জমিতে কাজ করেন অথবা ভাড়া দেন। স্থানীয় বালোচদের সহায়তা ছাড়া জমি পাওয়া এবং আফিম চাষ করা খুবই কঠিন।

১৮ ১৯

আফিম ব্যবসার বিশেষজ্ঞ ডেভিড ম্যান্সফিল্ড দ্য টেলিগ্রাফকে জানিয়েছেন, পাকিস্তানের যে ছবি উঠে এসেছে তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। যে ভাবে অনিয়ন্ত্রিত হারে সে দেশে আফিম চাষ হচ্ছে তা আফগানিস্তানেও দেখা যায়নি। এমনকি যে বছর আফগানিস্তান সর্বাধিক আফিম চাষ করেছিল তখনও এমন চিত্র উঠে আসেনি।

১৯ ১৯

আফগানিস্তান একসময় বিশ্বের ৮০ শতাংশ আফিম এবং ইউরোপের ৯৫ শতাংশ হেরোইন সরবরাহকারী দেশ হিসাবে পরিচিত ছিল। নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে শ্রমশক্তি ও দক্ষতা এখন সরে এসেছে পাকিস্তানে। ফাঁকা জায়গা ক্রমে ক্রমে দখল করছে পাকিস্তান। আন্তর্জাতিক মাদক বাজার দখল করছে এমন একটি দেশ যারা ২০০১ সালে আফিম চাষ মুক্ত দেশ বলে নিজেদের ঘোষণা করেছিল।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement