Nur Khan Airbase

নিজেদের ছাউনিতেই পা রাখার অনুমতি নেই পাক সেনার! ‘সিঁদুর’-এ ধ্বংস নুর খানের ‘ভাগ্যবিধাতা’ অন্য দেশ?

‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তাকে কেন্দ্র করে চলা চার দিনের ‘যুদ্ধে’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে পাকিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নুর খান বায়ুসেনা ঘাঁটিকে একরকম ধ্বংস করেছে ভারতীয় বাহিনী। সংশ্লিষ্ট ছাউনিটির মালিকানা আমেরিকার হাতে রয়েছে বলে বিস্ফোরক দাবি করেছেন ইসলামাবাদের এক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২৫ ০৮:০১
Share:
০১ ১৯

পাকিস্তানকে ‘শিক্ষা’ দিতে নুর খান বায়ুসেনা ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ভারত। কিন্তু, ওই ছাউনির মালিকানা কি আদৌ ইসলামাবাদের হাতে রয়েছে, না কি বহিরাগত কোনও শক্তির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সংশ্লিষ্ট বায়ুসেনা ঘাঁটি? পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির এক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞর কথায় তুঙ্গে উঠেছে সেই জল্পনা। যদিও বিষয়টি নিয়ে সরকারি ভাবে কোনও বিবৃতি দেয়নি শাহবাজ় শরিফ সরকার বা রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা।

০২ ১৯

পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের অন্যতম হলেন ইমতিয়াজ গুল। ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ়’-এর একজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর পদে রয়েছেন তিনি। সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে তাঁর একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে যায়। সেখানে গুলকে নুর খান বায়ুসেনা ঘাঁটি নিয়ে একাধিক চমকপ্রদ তথ্য দিতে শোনা গিয়েছে। তাঁর দাবি, সংশ্লিষ্ট ছাউনিটি নাকি মোটেই ইসলামাবাদের বিমানবাহিনীর নয়। এর মালিকানা রয়েছে আমেরিকার কাছে। ভাইরাল ভিডিয়োটির সত্যতা অবশ্য যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম।

Advertisement
০৩ ১৯

সমাজমাধ্যমে পোস্ট হওয়া ভিডিয়োয় গুল দাবি করেছেন, ‘‘পাক ফৌজি অফিসারদের নুর খান বিমানঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি নেই। কারণ, ওটা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের সামরিক মালবাহী বিমান সেখানে প্রায়ই অবতরণ করে। সেগুলিতে কী ধরনের পণ্য আনা-নেওয়া করা হচ্ছে, তা কখনওই ইসলামাবাদের কাছে প্রকাশ করতে রাজি হয় না আমেরিকা।’’

০৪ ১৯

এ ব্যাপারে একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন পাক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ গুল। তাঁর দাবি, এক বার নাকি ইসলামাবাদের সেনাবাহিনীর এক পদস্থ কর্তা নুর খান ঘাঁটিতে নামা একটি মার্কিন সামরিক মালবাহী বিমানকে আটকে দেন। জিজ্ঞাসা করেন, এতে কী কী পণ্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? যুক্তরাষ্ট্রের ফৌজি কমান্ডারেরা কোনও প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তাঁকে ‘অনধিকার চর্চা’ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন। বিষয়টি নিয়ে তর্কাতর্কি বেধে গেলে আমেরিকান সৈন্যরা পাক সেনার ওই পদস্থ অফিসারের মাথায় পিস্তল ঠেকান বলেও দাবি করেন গুল।

০৫ ১৯

ইমতিয়াজের ওই ভিডিয়ো ঝ়ড়ের গতিতে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই প্রকাশ্যে চলে এসেছে একাধিক প্রশ্ন। সেই কারণেই কি ভারত-পাক যুদ্ধ বন্ধ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল আমেরিকা? তড়িঘড়ি নয়াদিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স? ভারতের প্রত্যাঘাতে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সম্পত্তি নষ্ট হওয়ার দাবিও করেছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশ। যদিও এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে ওয়াশিংটন।

০৬ ১৯

অন্য দিকে, নুর খান ঘাঁটিতে ভারতের প্রত্যাঘাতে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে পাক সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উঠেছে তথ্য গোপনের অভিযোগ। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, নয়াদিল্লির ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রে ছাউনিটি প্রায় ধ্বংস হওয়ায় প্রাণ হারান স্কোয়াড্রন লিডার পদমর্যাদার একাধিক অফিসার। সূত্রের খবর, হামলার সময় সেখানে ছিলেন তুরস্ক-সহ বিদেশি সেনাবাহিনীর অফিসার ও সৈনিকেরা। তাঁদেরও মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এই ব্যাপারে তথ্য দিতে নিমরাজি ইসলামাবাদ।

০৭ ১৯

তবে এর উল্টো যুক্তিও রয়েছে। পাক-মার্কিন সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, গুল আসলে ২০০১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত চলা মার্কিন-আফগান যুদ্ধের সময়কার কথা। লড়াই চলাকালীন যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী যথেচ্ছ ভাবে ব্যবহার করত নুর খান বায়ুসেনা ঘাঁটি। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় হাতিয়ার, রসদ এবং গোলাবারুদ যেত আফগানিস্তানের কাবুলে। সেই কারণে সেখানে প্রায়ই অবতরণ করত ওয়াশিংটনের সামরিক মালবাহী বিমান।

০৮ ১৯

২০২১ সালে তালিবান নেতৃত্ব দ্বিতীয় বারের জন্য হিন্দুকুশের কোলের দেশটিতে ক্ষমতায় ফিরলে সেখানে চিনা প্রভাব বাড়তে শুরু করে। সূত্রের খবর, বর্তমানে আফগানিস্তানের বদগাম বিমানঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশে চলে গিয়েছে ড্রাগনের হাতে। সেই কারণে পাকিস্তানের নুর খান ছাউনি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে গুল যে ভাবে বলছেন, ততটা নিয়ন্ত্রণ আমেরিকার রয়েছে কি না, তা নিয়ে অবশ্য যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

০৯ ১৯

কৌশলগত দিক থেকে পাকিস্তানের নুর খান ঘাঁটির আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। পাক সেনাবাহিনীর সদর দফতর রাওয়ালপিন্ডি সংলগ্ন এই ছাউনি থেকে রাজধানী ইসলামাবাদের দূরত্ব মেরেকেটে ১০ কিলোমিটার। ইসলামাবাদের বিমানবাহিনীর বড় অংশ এখান থেকেই পরিচালিত হয় বলে জানা গিয়েছে।

১০ ১৯

নুর খান বায়ুসেনা ঘাঁটির আগের নাম ছিল চাকলালা। বেনজির ভুট্টো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটিকে ঘিরে রেখেছে এটি। সংশ্লিষ্ট ছাউনির ভিতরে রয়েছে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ কলেজ। ইসলামাবাদের অধিকাংশ অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান এই ঘাঁটিতে থাকার সম্ভাবনা প্রবল, বলছেন সাবেক সেনা অফিসারেরা।

১১ ১৯

বিশ্লেষকদের কথায়, পাক বায়ুসেনার রসদ সরবরাহের প্রাণকেন্দ্র হল নুর খান বিমানঘাঁটি। সারা বছর এখানে মোতায়েন থাকে সি-১৩০ হারকিউলিস এবং সিএন-২৩৫-এর মতো মালবাহী ফৌজি বিমান। এগুলির মাধ্যমে এখান থেকেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরের (পাকিস্তান অকুপায়েড কাশ্মীর বা পিওকে) রসদ এবং সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে থাকে ইসলামাবাদের বিমানবাহিনী।

১২ ১৯

পাশাপাশি, আকাশপথে নজরদারি ও প্রত্যাঘাতের দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘এয়ার মোবিলিটি উইং’ এবং ‘এয়ার ডিফেন্স কমান্ড’-এর সদর দফতরও রয়েছে নুর খান বিমানঘাঁটিতে। এর পাশেই রয়েছে স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান্‌স ডিভিশনের সদর দফতর। পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ এবং তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব রয়েছে এই বিভাগের উপর।

১৩ ১৯

পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমগুলির একাংশের দাবি, নিখুঁত নিশানায় ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে ক্ষতি হয়েছে নুর খান ছাউনি সংলগ্ন ভূগর্ভস্থ পরমাণু অস্ত্রভান্ডারের। সেখানে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হওয়ার আশঙ্কাকে একেবারেই উড়িয়ে দেয়নি তারা। বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিষয়টি নজরে আসায় প্রমাদ গোনে আমেরিকাও। তাই ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতিতে এতটা আগ্রহী ছিল ওয়াশিংটন।

১৪ ১৯

পাকিস্তানে কোনও আণবিক বিকিরণ হচ্ছে কি না, তা নিয়ে এখনও সরকারি ভাবে কোনও বিবৃতি দেয়নি ‘আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা’ বা আইএইএ (ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি)। স্থানীয় অনলাইন ব্যবহারকারী এবং ‘ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স’-এর বিশ্লেষকদের দাবি, ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের প্রভাব দেখা গিয়েছে। সেই কারণে দ্রুত তাঁদের স্থানান্তরিত করেছে ইসলামাবাদ।

১৫ ১৯

এই আবহে চলতি বছরের মে মাসের মাঝামাঝি আমেরিকার বিচক্রাফ্‌ট বি৩৫০ ‘এরিয়াল মেজারিং সিস্টেম’ বিমান ইসলামাবাদে অবতরণ করায় অনেকেই দু’য়ে দু’য়ে চার করেন। সংশ্লিষ্ট বিমানটির গতিবিধি ‘ফ্লাইটট্রেডার২৪’ নামের ট্র্যাকারে ধরা পড়েছিল। সাধারণত কোনও জায়গায় পরমাণু বিস্ফোরণ বা দুর্ঘটনা ঘটলে, বিপদের গুরুত্ব বুঝতে এই বিমানটি ব্যবহার করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও এই সমস্ত তথ্যের সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম।

১৬ ১৯

অনলাইন ব্যবহারকারীরা দাবি করেন, মার্কিন জ্বালানি বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন যে বিচক্রাফ্‌ট বিমানটি ইসলামাবাদে নামে, তার নম্বর ছিল ‘এন১১১এসজেড’। জাপানের ফুকুশিমা পরমাণু বিপর্যয়ের সময়ে এটিকে ব্যবহার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। বিমানটিতে ছিল গামা রে সেন্সর এবং রিয়্যাল টাইম ম্যাপিংয়ের সরঞ্জাম। পাকিস্তানে এর অবতরণ নিয়ে সরকারি ভাবে কোনও বিবৃতি দেয়নি ওয়াশিংটন।

১৭ ১৯

বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, কম উচ্চতায় ওড়ার ক্ষমতাসম্পন্ন যুক্তরাষ্ট্রের বিচক্রাফ্‌ট বিমানটি স্থল এবং বাতাসে তেজস্ক্রিয় দূষণ শনাক্ত করতে সক্ষম। পরমাণু বিস্ফোরণ বা তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ঘটলে বাতাসে মিশে যায় বেশ কিছু আইসোটোপ। সেগুলিকেও চিনতে পারে মার্কিন জ্বালানি বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন ওই বিমান। হঠাৎ করে তার ইসলামাবাদে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সন্দেহ দানা বেঁধেছিল।

১৮ ১৯

গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান পর্যটক-সহ ২৬ জন। এর পরই ইসলামাবাদকে কড়া ‘শাস্তি’ দিতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীর বা পিওজেকের (পাকিস্তান অকুপায়েড জম্মু-কাশ্মীর) ন’টি জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারত। এই অভিযানের নাম রাখা হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। এতে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।

১৯ ১৯

নয়াদিল্লির এই পদক্ষেপের পর উত্তর-পশ্চিম ভারতের একাধিক রাজ্যে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করার চেষ্টা করে পাকিস্তান। আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে সেগুলিকে মাঝ-আকাশেই ধ্বংস করতে সক্ষম হয় এ দেশের বাহিনী। ইসলামাবাদ আক্রমণ বন্ধ করায় গত ৯ মে রাতে পাকিস্তানের ১১টি বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। সেই তালিকায় ছিল নুর খানও। এই আঘাতের পরই সংঘর্ষবিরতিতে প্রস্তাব দেয় শরিফ সরকার। ফলে আপাতত থেমেছে সংঘর্ষ।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement