বিয়ে করলেন খান স্যর! সম্প্রতি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন খ্যাতনামী ইউটিউবার তথা শিক্ষক। ভিডিয়োর মাধ্যমে নিজের বিয়ের খবর নিজেই জানিয়েছেন তিনি। একটি ভিডিয়োবার্তায় প্রকাশ করেছেন যে, বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তিনি। ভারত-পাক সংঘাতের মধ্যেই গোপনে বিয়ে সেরেছেন তিনি। কাকপক্ষীতেও জানতে পারেনি খান স্যরের নতুন জীবনে প্রবেশের খবর।
বিয়ের কথা লাজুক মুখে স্বীকার করছেন ছাত্রদের প্রিয় এই শিক্ষক। এমনই একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষকের বিয়ের খবরে ছাত্র-ছাত্রীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। ভিডিয়োয় খান স্যর জানান, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা চলাকালীনই তিনি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান করে বিয়ে সেরে ফেলেছেন। কারণ বিয়ের তারিখ পূর্বনির্ধারিত ছিল। ঘটনাচক্রে সেই মুহূর্তে দেশের উপর হামলা হয়।
সেই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বিয়ের খবর প্রচারে অনীহা ছিল তাঁর। দেশের সঙ্কটের সময়ে ব্যক্তিগত আনন্দ ও উৎসবকে প্রচারের আলোয় আনতে চাননি তিনি। তাই এই গোপনীয়তা। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই নিজেই এই সুখবর দিয়েছেন তাঁর প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের। বিয়ের খবর দেওয়ার পাশপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের আরও মন ভাল করা খবর জানিয়েছেন এই শিক্ষক।
চুপিসারে বিয়ে সারলেও ছাত্র-ছাত্রীদের কথা ভেবে তাঁদের জন্য বিশেষ আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। খান স্যর ছাত্র-ছাত্রীদের বলেন, “আমি এই খবরটা প্রথমেই তোমাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে এসেছি। আমি আজ যা হয়েছি, সেটা তোমাদের জন্যই। আমার অস্তিত্ব রয়েছে তোমাদের ঘিরেই।’’ তাই ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পৃথক ভাবে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন তিনি। সেই অনুষ্ঠানটি হবে ৬ জুন।
আগামী ২ জুন প্রথামাফিক বৌভাত বা রিসেপশন। সেই অনুষ্ঠানের ডিজিটাল আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে বলে খবর। পটনায় আয়োজিত হবে সেই অনুষ্ঠান। নিমন্ত্রণ পেয়ে বেজায় খুশি ছাত্র-ছাত্রীরা। স্যরের জীবনসঙ্গিনী কে হলেন তা নিয়ে কৌতূহল ছড়িয়ে পড়েছে তাঁদের মধ্যে। কাকে বিয়ে করলেন খান স্যর? পাত্রীর নাম পরিচয় জানার জন্য উৎসুক সকলেই।
দাম্পত্যসঙ্গীর পরিচয় জানানোর বিষয়ে কিছুটা অনুৎসাহী এই শিক্ষক। বিয়ে নিয়ে খুব বেশি তথ্য প্রকাশ্যে আনতে চাননি খান স্যর। সংবাদমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, খান স্যরের স্ত্রীর নাম এ এস খান। যদিও তাঁর কোনও পরিচয়, পেশা, পারিবারিক বিবরণ সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি।
বিয়ে কী ভাবে সম্পন্ন হল তা জানাতে গিয়ে খান স্যর বলেন, ‘‘প্রথমে আমি বিয়ে স্থগিত রেখে সীমান্তে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করা সৈন্যদের সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার বাবা-মায়ের পরিকল্পনায় সব কিছু ঠিক হয়ে গিয়েছিল। তাঁদের হতাশ করতে চাইনি আমি।’’ মূলত ভাইদের পরামর্শেই তাঁর বাবা-মা তাঁকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন বলে জানিয়েছেন খান স্যর।
পরিবারের চাপের মুখে হাল ছেড়ে দিতে বাধ্য হন তিনি। অনাড়ম্বর ভাবে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলেন খান স্যর। তিনি পরিবারকে জানান, একটি শর্তেই বিয়েতে রাজি হবেন। বিয়ের দিন কাউকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে না।
শিক্ষকতার অদ্ভুত কৌশলের জন্য পরিচিত এবং খুবই জনপ্রিয় খান স্যর। ছাত্রদের মধ্যে তিনি ‘খান স্যর’ নামেই বেশি পরিচিত। কখনওই নিজের নাম প্রকাশ্যে আনেননি। ফলে ছাত্ররাও তাঁর আসল নাম জানতেন না। পরে জানা যায়, খান স্যরের আসল নাম ফয়জ়ল খান। উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের বাসিন্দা।
একটা সময় পর্যন্ত নিজের আসল নাম প্রকাশ্যে আনেননি ফয়জ়ল। এ প্রসঙ্গে এক ব্যক্তির দাবি, খান স্যর যে কোচিং সেন্টার চালান সেখানে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীকে কঠোর ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কখনওই যেন তাঁর আসল নাম বা ব্যক্তিগত নম্বর শেয়ার না-করা হয়।
খান স্যরের আসল ‘ইউএসপি’ তাঁর পড়ানোর পদ্ধতি। আর তাতেই মজেছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। নাম নিয়ে কারও খুব একটা মাথাব্যথা নেই। ফলে মুখে মুখে উচ্চারিত হওয়া ‘খান স্যর’ নামেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন তিনি। সমাজমাধ্যমে জনপ্রিয় এই শিক্ষক এবং ইউটিউবারকে নিয়ে জনসাধারণের মনে কৌতূহলও ব্যাপক। শোনা যায় তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা কয়েক লাখ।
পটনায় ‘খান জিএস রিসার্চ সেন্টার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালান তিনি। ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন তাঁর পড়ানোর ভিডিয়ো শেয়ার করার জন্য। তাঁর পড়ানোর অদ্ভুত কৌশলের জন্য শুধু পটনা নয়, দেশ জুড়ে খ্যাতি রয়েছে এই শিক্ষকের। ইউটিউবে তাঁর চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লক্ষেরও বেশি।
ইলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ভূগোলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তাঁর বাবা এক জন সেনাকর্তা ছিলেন। মা গৃহিণী। তাঁর এক দাদা ছিলেন সেনার কমান্ডো। জানা গিয়েছে, শৈশব থেকেই পড়াশোনায় ভাল খান স্যর। এনডিএ পরীক্ষায় পাশ করেছেন। কিন্তু নির্বাচিত হননি।
ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও বেশ কয়েক বার বিতর্কে জড়িয়েছেন এই খান স্যর। ২০২১ সালে ফ্রান্স-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে তিনি একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেছিলেন। সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের একটি অংশ তাঁকে পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলেন।
রেলের নিয়োগে দুর্নীতি ঘিরে গত ২৬ জানুয়ারি হিংসায় জ্বলে উঠেছিল বিহার। ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, রেলের সম্পত্তি ভাঙচুর চালানোর মতো ঘটনা ঘটান পরীক্ষার্থীরা। পটনার সেই হিংসায় মদত জোগানোর অভিযোগ উঠেছিল এই ইউটিউবারের বিরুদ্ধে।
আটক হওয়া পরীক্ষার্থীদের বয়ানের উপর ভিত্তি করে ‘খান স্যর’-এর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়। এক সাক্ষাৎকারে খান স্যর জানিয়েছিলেন, হিংসার ঘটনায় যদি তাঁর কোনও ভূমিকা থাকে তা হলে তাঁকে অবশ্যই গ্রেফতার করা উচিত। তবে এই হিংসার জন্য তিনি রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ডকেই (আরআরবি) দায়ী করেছিলেন।