Operation Sindoor

মাটিতে মিশে গেল কসাব-হেডলির প্রশিক্ষণকেন্দ্র! কেন বেছে বেছে ন’টি জঙ্গিশিবিরেই আঘাত করল ভারত?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২৫ ০৭:৫৬
Share:
০১ ১৬

মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে থাকা জঙ্গিঘাঁটিগুলির মধ্যে ন’টি জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর জন্য এই ন’টি জায়গাই নির্বাচন করে দিয়েছিল ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা।

০২ ১৬

গোয়েন্দা সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে, যে ন’টি জায়গায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়েছে তার চারটি পাকিস্তানে। বাদবাকি পাঁচটি জায়গা পাক অধিকৃত কাশ্মীরে। বহাওয়ালপুর, মুরিদকে এবং সিয়ালকোট— মূলত এই তিন জায়গাই ছিল গোয়েন্দা সংস্থা নির্দেশিত ‘টার্গেট এলাকা’।

Advertisement
০৩ ১৬

২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হওয়ার পর পাল্টা এই অভিযান চালানো হয়। বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রচুর সূত্র কাজে লাগিয়ে ন’টি জায়গা চিহ্নিত করেছিল ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা। সেই নির্দেশ পৌঁছোয় সেনার কাছে। শুরু হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর তোড়জোড়। তার পরেই আসে প্রতিশোধের পালা।

০৪ ১৬

যে সব জায়গা নিয়ে গোয়েন্দারা ‘ইনপুট’ দিয়েছিলেন, তার মধ্যে ছিল জইশ-ই-মহম্মদের শক্ত ঘাঁটি বহওয়ালপুর এবং লশকর-ই-ত্যায়বার সদর দফতর মুরিদকে। সন্ত্রাসী শিবিরগুলিকে ধ্বংস করতে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী মাত্র ২৫ মিনিট সময় নিয়েছে।

০৫ ১৬

লাহোর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরের বহাওয়ালপুর শহরটিকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের শক্ত ঘাঁটি বলে দাবি করা হয়। পাকিস্তানের দক্ষিণ পঞ্জাবের বহাওয়ালপুরের জামিয়া মসজিদ শুভান আল্লা ছিল অন্যতম প্রধান লক্ষ্যবস্তু। এই ঘাঁটিটি হাওয়ালপুর জেলার করাচি মোড়ে বহাওয়ালপুরের উপকণ্ঠে ৫ নম্বর জাতীয় সড়কে (করাচি-তোরখাম জাতীয় সড়কে) অবস্থিত ছিল।

০৬ ১৬

আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই শিবিরটি ছিল জইশের সদর দফতর। ১৮ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত এই শিবিরেই জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষা এবং নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হত। জইশের শীর্ষনেতারাও এখানে বৈঠক করতেন। জইশের প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ আজ়হার ও তাঁর পরিবারের সদস্যেরাও এই শিবিরে থাকতেন বলে জানা গিয়েছে।

০৭ ১৬

‘অপারেশনাল হেডকোয়ার্টার’ হিসাবে কাজ করত বহাওয়ালপুরের এই ঘাঁটিটি। ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামা হামলা-সহ সন্ত্রাসী পরিকল্পনার আঁতুড়ঘর হিসাবে এটি চিহ্নিত করা হয়। হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীরা এই শিবিরেই প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন বলে গোয়েন্দা সংস্থার হাতে তথ্য উঠে এসেছিল।

০৮ ১৬

পাকিস্তানের এই ক্যাম্পাসে বসে বিনা বাধায় কাজ করত জইশ জঙ্গিরা। ক্যাম্পাসের অদূরেই রয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্ট। কয়েকটি সূত্রের দাবি, এই বহাওয়ালপুরেই একটি গোপন পরমাণু ঘাঁটি রয়েছে। ২০০০ সালে মাসুদ আজহার জইশ-ই-মহম্মদ গঠন করেন।

০৯ ১৬

ভারতে একাধিক ছোটবড় সন্ত্রাসবাদী হামলার নেপথ্যে ছিল এই সংগঠন। এ ছাড়া বহাওয়ালপুরের কিছু কিছু জায়গায় অপর পাক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লশকর-এ-ত্যায়বার জঙ্গিরাও সক্রিয় বলে অভিযোগ।

১০ ১৬

২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত আর এক শক্ত ঘাঁটি মারকাজ় ত্যায়বা হল লশকরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণকেন্দ্র। ৮২ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত এই কেন্দ্রটি পাকিস্তানের পঞ্জাবের শেখুপুরার মুরিদকে অবস্থিত। আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ১৮-২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জঙ্গিশিবিরটি ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর নিশানায় ছিল।

১১ ১৬

কারণ ২৬/১১ হামলার জঙ্গি আজমল কসাব এবং ষড়যন্ত্রকারী ডেভিড কোলম্যান হেডলি এখানে প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন। শোনা যায়, মারকাজ় ত্যায়বা কমপ্লেক্সের মধ্যে মসজিদ ও গেস্ট হাউস নির্মাণের জন্য ওসামা বিন লাদেন ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন। প্রতি বছর বিভিন্ন কোর্সে প্রায় হাজার শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এখানে। কমপ্লেক্সের ভিতরে রয়েছে মাদ্রাসা, বাজার, সদস্যদের আবাসিক এলাকা, খেলার মাঠও।

১২ ১৬

সিয়ালকোটের মেহমুন জোয়া শিবিরটি আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হিজ়বুল মুজাহিদিনের সবচেয়ে বড় শিবিরগুলির মধ্যে অন্যতম এটি। ওই শিবির থেকে সন্ত্রাসীদের জম্মুর কাঠুয়ায় সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছিল। ২০১৬ সালে পাঠানকোট বিমানঘাঁটির যে হামলায় আট জন সৈনিক নিহত হন, সেটিও এখানেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

১৩ ১৬

লশকরের আরও একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র হল মুজফ্‌ফরাবাদের শাওয়াইনাল্লা শিবির। পাক অধিকৃত কাশ্মীর-ভারত সীমান্ত থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এটি। ২০২৪ সালের অক্টোবরে সোনমার্গ, গুলমার্গ আক্রমণ এবং ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও আক্রমণের নেপথ্যে থাকা জঙ্গিরা এখানে প্রশিক্ষণ পেয়েছিল।

১৪ ১৬

এই ঘাঁটিতে একটি ফায়ারিং রেঞ্জ, প্রশিক্ষণক্ষেত্র, প্রশিক্ষণ নিতে আসা জঙ্গিদের জন্য মাদ্রাসা এবং প্রায় ৪০টি কক্ষ রয়েছে। শিবিরটি মুজফ্‌ফরাবাদ-নীলুম রোডের চেলাবন্দি ব্রিজের কাছে অবস্থিত।

১৫ ১৬

নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কোটলি গুলপুর লশকর ঘাঁটি। এই ঘাঁটির সন্ত্রাসীরা জম্মু ও কাশ্মীরের রাজৌরি এবং পুঞ্চ জেলায় সক্রিয় ছিল। পুঞ্চ এবং তীর্থযাত্রীদের বাসের উপর হামলার নেপথ্যেও এই ঘাঁটির হাত ছিল। ২০২৪ সালের ৯ জুন লশকরের জঙ্গিরা একটি বাসে গুলি চালালে ন’জন তীর্থযাত্রী নিহত হন। বাসটি খাদে পড়ে যায়।

১৬ ১৬

এই ঘাঁটিগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বহাওয়ালপুরের ঘাঁটিটি। এখানে ভারতীয় সেনার প্রাণঘাতী হামলাতেই প্রাণ হারান মাসুদ আজ়হারের পরিবারের ১০ জন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন মাসুদের বোন এবং শ্যালকও! সর্বশেষ খবর থেকে জানা যায়, বহাওয়ালপুরের ওই ক্যাম্পাসে বসেই আবার নতুন করে জঙ্গি হামলার ছক কষছিলেন আজ়হার। মনে করা হচ্ছে সেই তথ্যের ভিত্তিতেই বহাওয়ালপুরে জইশের ঘাঁটিতে হামলা চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement