ইউক্রেন সংঘাত বদলে যাবে নেটো বনাম রাশিয়ায়? চক্রব্যূহ ভাঙতে পরমাণু হাতিয়ার ব্যবহার করবে মস্কো? ক্রেমলিনের শরীরী ভাষায় সেই লক্ষণ ফুটে উঠতেই আতঙ্কে ভুগছে ইউরোপ তথা গোটা বিশ্ব। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, যুদ্ধ আসন্ন বুঝতে পেরে ইতিমধ্যেই তার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই আবহে তাঁর ‘তুরুপের তাস’ হয়ে উঠেছে বেলারুশ। শত্রুর উপর আণবিক হামলা চালাতে প্রতিবেশী দেশটির জমিও রাশিয়া ব্যবহার করতে পারে বলে তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।
সম্প্রতি, গুপ্তচর উপগ্রহের তোলা বেলারুশের একটি সেনাঘাঁটির ছবি গণমাধ্যমে ফাঁস হতেই ইউরোপ জুড়ে শুরু হয় হইচই। সেখানে রুশ ফৌজকে একাধিক বাঙ্কারে পরমাণু হাতিয়ার জড়ো করতে দেখা গিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, গত কয়েক মাসে আণবিক অস্ত্রে সজ্জিত মস্কোর লড়াকু জেটগুলির সঙ্গে লাগাতার মহড়া চালিয়েছে মিনস্কের বিমানবাহিনী। এ ছাড়া সীমান্ত লাগোয়া দেশটিতে ক্রেমলিন দূরপাল্লার পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে থাকতে পারে বলেও দানা বেঁধেছে সন্দেহ। যদিও সরকারি ভাবে এই নিয়ে মুখ খোলেনি কোনও পক্ষই।
একটা সময়ে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নেরই অংশ ছিল বেলারুশ। ১৯৯১ সালে সোভিয়েতের পতন হলে স্বাধীনতা পায় মিনস্ক। যদিও মস্কোর প্রতি আনুগত্যে কখনওই চিড় ধরেনি তাদের। আর তাই সোভিয়েত জমানার যাবতীয় পরমাণু হাতিয়ার ক্রেমলিনকে ফিরিয়ে দিতে দু’বার ভাবেননি সেখানকার রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা। গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকের মাঝামাঝি পৌঁছে আণবিক অস্ত্র নির্মাণ করবে না বলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি সারে বেলারুশ। এতে সর্বাধিক স্বস্তি পেয়েছিলেন পুতিন এবং তাঁর পূর্বসূরিরা।
১৯৯৪ সাল থেকে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন আলেকজান্ডার গ্রিগোরিভিচ লুকাশেঙ্কো। কুর্সিতে বসেই পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করেন তিনি। একাধিক বার পুরনো সোভিয়েত ফিরিয়ে আনার কথাও বলতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। চলতি বছরের নভেম্বরে মিনস্কের একটি অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ‘‘আমরা আবার পরমাণু অস্ত্র ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। এটা বিরাট সাফল্য। আমাদের এই পদক্ষেপ পশ্চিমি শক্তির টনক নড়িয়ে দেবে।’’
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা অবশ্য বেলারুশে পরমাণু অস্ত্র মোতায়েনের বিষয়টিকে পুতিনের ‘মাস্টারস্ট্রোক’ বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ, আণবিক হাতিয়ার না থাকা সত্ত্বেও নেটো-ভুক্ত একাধিক রাষ্ট্রে ওই গণবিধ্বংসী অস্ত্র রেখেছে আমেরিকা। ইউরোপের সামরিক জোটটিকে ব্যবহার করে মস্কোকে ঘিরে ফেলার পরিকল্পনায় ১০০ শতাংশ সাফল্য পেয়েছে ওয়াশিংটন। এরই পাল্টা পদক্ষেপ হিসাবে মিনস্কের হাতে পরমাণু অস্ত্র তুলে দিয়েছে ক্রেমলিন, বলছেন সাবেক সেনাকর্তারা।
সোভিয়েতের পতনের পর রাশিয়াকে একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ইউরোপীয় সামরিক জোট ‘উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা’ বা নেটো (নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজ়েশন)। তার মধ্যে অন্যতম হল পরমাণু শক্তিবিহীন কোনও রাষ্ট্রে আণবিক হাতিয়ার মোতায়েন করবে না আমেরিকা, ব্রিটেন বা ফ্রান্স। মস্কোর অভিযোগ, বাস্তবে তা হয়নি। পোল্যান্ডের মতো ক্রেমলিনের সীমান্ত সংলগ্ন দেশেও ওই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ রেখেছেন তারা। আর তাই শঠে শাঠ্যং নীতিতে বেলারুশের সেনাঘাঁটিতে পরমাণু হাতিয়ার রাখার সিদ্ধান্ত পুতিন নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
পশ্চিমি গণমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেলারুশকে বাদ দিলে কালিনিনগ্রাদে আণবিক অস্ত্র মজুত রেখেছে মস্কো। মূল রুশ ভূখণ্ড থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত এই এলাকাটি পুরোপুরি ভাবে শত্রু পরিবেষ্টিত। সংঘাত পরিস্থিতিতে ঝটিতি আক্রমণে কালিনিনগ্রাদ ছিনিয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে নেটোর হাতে। সেই বিপদ আঁচ করে সেখানে পরমাণু হাতিয়ার মোতায়েন রেখেছে ক্রেমলিন। গত দু’বছরে এলাকাটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মজবুত করেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।
গত ২১ অক্টোবর পরমাণু অস্ত্রবহনে সক্ষম ‘৯এম৭৩০ বুরেভেস্টনিক’ (স্টর্ম পেট্রল) ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালায় মস্কো। ক্রেমলিনের দাবি, উৎক্ষেপণের পর ১৪ হাজার কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে ওই হাতিয়ার, যা আকাশে ছিল অন্তত ১৫ ঘণ্টা! সংশ্লিষ্ট হাতিয়ারটি যাবতীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) ভেদ করে আক্রমণ শানাতে পারবে বলে দাবি করেছেন রুশ প্রতিরক্ষা গবেষকেরা।
ওই ঘটনার সাত দিনের মাথায় (পড়ুন ২৮ অক্টোবর) একটি সামরিক হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে ফের বোমা ফাটান পুতিন। বলেন, ‘‘পরমাণু শক্তিচালিত সীমাহীন পাল্লার ড্রোনের পরীক্ষায় ১০০ শতাংশ সাফল্য পেয়েছে মস্কো।’’ হাতিয়ারটির পোশাকি নাম ‘পোসাইডন’। একে আদপে একটি টর্পেডো বলে ব্যাখ্যা করছেন পশ্চিমি প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা। দু’টি অস্ত্রেরই দ্রুত উৎপাদন যে ক্রেমলিন শুরু করতে চলেছে, তা একরকম স্পষ্ট করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
সামরিক হাসপাতাল চত্বরে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পুতিন বলেন, ‘‘পোসাইডন ড্রোনটিকে একটি ডুবোজাহাজ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজের ১০০ ভাগ ছোট আণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দ্বারা চালিত হয় এই স্বয়ংক্রিয় মনুষ্যবিহীন সাবমার্সিবল (ডুবো) যান।’’ এর পাশাপাশি আরও উন্নত সারমাট ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। মস্কোর এই পদক্ষেপের পর আণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় নামে আমেরিকাও।
অক্টোবরের শেষের দিকে মার্কিন যুদ্ধ দফতরকে (আগে নাম ছিল প্রতিরক্ষা দফতর) অবিলম্বে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশ দেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্ষীয়ান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই নিয়ে নিজের সমাজমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ ফলাও করে পোস্ট দিতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। একে সংঘর্ষের উস্কানি হিসাবে দেখছেন দুনিয়ার তাবড় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা। যদিও সমাজমাধ্যমে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প।
‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ যুক্তরাষ্ট্রের বর্ষীয়ান প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অস্ত্রের পরীক্ষামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে ওই নির্দেশ দিতে হয়েছে তাঁকে। পরমাণু অস্ত্রের মারাত্মক ধ্বংসাত্মক শক্তির কারণে তিনি এগুলিকে ঘৃণা করেন। কিন্তু, তাঁর কাছে অন্য কোনও বিকল্প ছিল না। এ ব্যাপারে নাম করে পাকিস্তানকে নিশানা করেন তিনি। যদিও ট্রাম্পের দাবি নিয়ে সরকারি ভাবে বিবৃতি দেয়নি ইসলামাবাদ।
ট্রাম্পের যুক্তি, বর্তমানে পরমাণু অস্ত্রের শক্তির দিক থেকে প্রথম স্থানে রয়েছে আমেরিকা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় হল যথাক্রমে রাশিয়া ও চিন। কিন্তু আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মস্কো ও বেজিং যৌথ ভাবে আণবিক অস্ত্রের নিরিখে যুক্তরাষ্ট্রের সমান হবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। এ বছরের জুনে কোন দেশের হাতে কত পরমাণু অস্ত্র রয়েছে, তার সংখ্যা প্রকাশ করে সুইডিশ প্রতিরক্ষা নজরদারি সংস্থা ‘স্টকহলোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ বা সিপ্রি। তারা অবশ্য এ ব্যাপারে ক্রেমলিনকে এগিয়ে রেখেছে।
গত ১৬ জুন বার্ষিক গবেষণামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করে সিপ্রি। সেখানে বলা হয়, ন’টি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আণবিক হাতিয়ার রয়েছে রাশিয়ার কাছে। দ্বিতীয় স্থানে আছে আমেরিকা। এই দুই দেশের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা যথাক্রমে ৫,৪৫৯ এবং ৫,১৭৭। ট্রাম্প অবশ্য জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রথম মেয়াদে (২০১৭-’২১) মজুত থাকা আণবিক হাতিয়ারের নবীকরণ এবং তার সংস্কারে সাফল্য পেয়েছিলেন তিনি। ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ অবশ্য এ ব্যাপারে আর কোনও তথ্য দেননি তিনি।
সুইডিশ প্রতিরক্ষা নজরদার সংস্থাটির দাবি, ২০২৪ সাল থেকে ধাপে ধাপে পরমাণু অস্ত্রভান্ডার বৃদ্ধি করেছে ভারত। বর্তমানে নয়াদিল্লির ঝুলিতে রয়েছে ১৮০টি আণবিক হাতিয়ার। পাকিস্তান অবশ্য এই গণবিধ্বংসী হাতিয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারেনি। ইসলামাবাদের অস্ত্রাগারে আছে ১৭০টি পরমাণু অস্ত্র। অন্য দিকে সংখ্যা বাড়িয়ে ৬০০ আণবিক হাতিয়ার তৈরি করে ফেলেছে চিন, যা চিরশত্রু এই দুই প্রতিবেশীর তুলনায় অনেকটাই বেশি।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমেরিকা পরমাণু পরীক্ষা চালালে চুপ করে বসে থাকবে না রাশিয়া। পরবর্তী পর্যায়ে চিন, ব্রিটেন, ফ্রান্স এমনকি ভারত এবং পাকিস্তানকেও আণবিক পরীক্ষা করতে দেখা যেতে পারে। গণবিধ্বংসী হাতিয়ারের প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ায় ইতিমধ্যেই ওই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ তৈরি করার কথা বলেছে জার্মানি। যদিও সরকারি ভাবে সেই প্রক্রিয়া এখনও শুরু করেনি বার্লিন।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে পরমাণু অস্ত্রের প্রতিযোগিতার সূত্রপাত হয় গত শতাব্দীর ৫০-এর দশকে। ওই সময় মস্কোর সঙ্গে ‘ঠান্ডা লড়াই’য়ে জড়িয়ে পড়ে ওয়াশিংটন। কিন্তু, ১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলে সেই পেশি প্রদর্শন একরকম থেমে গিয়েছিল। ২১ শতকে তা ফের নতুন করে শুরু করলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাবেক সেনাকর্তাদের কেউ কেউ মনে করেন, আগের তুলনায় অনেক বেশি ভয়ঙ্কর হতে চলেছে এ বারের প্রতিযোগিতা।
১৯৪৯ সালের এপ্রিলে জন্ম হওয়া মার্কিন নেতৃত্বাধীন নেটোর বর্তমান সদস্যসংখ্যা ৩২। এর মিলিটারি কমিটির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন ইটালীয় নৌসেনাপ্রধান অ্যাডমিরাল জ়িউসেপ্পে কাভো ড্রাগনে। সম্প্রতি, ‘আগ্রাসী’ রাশিয়ার বিরুদ্ধে আগাম ‘আক্রমণাত্মক’ পদক্ষেপের পক্ষে সওয়াল করেছেন তিনি। ফলে ইউরোপের বাজারে পারদ চড়ছে বলেই মনে করছেন সাবেক সেনাকর্তা থেকে দুঁদে কূটনীতিকেরা।
প্রাক্তন ফৌজ়ি কমান্ডারেরা মনে করেন, নেটো বনাম রাশিয়া যুদ্ধ বাধলে একসঙ্গে মস্কোর উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে আমেরিকা-সহ পশ্চিম ইউরোপের ৩২ দেশ। তখন পুতিনের হাতে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ ছাড়া অন্য কোনও রাস্তা থাকবে না। প্রকারান্তরে সেই হুমকি অবশ্য দিয়ে রেখেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘যদি ইউরোপ হঠাৎ আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করতে চায়, আমরা তার জন্য এখনই প্রস্তুত।’’
কেউ কেউ আবার মনে করেন রাশিয়াকে ধ্বংস করতে আগাম পরমাণু হামলা চালাবে নেটো। সে ক্ষেত্রেও ‘মৃত হাতে’ (ডেড হ্যান্ড) প্রতিশোধমূলক গণবিধ্বংসী হাতিয়ার প্রয়োগ করবে মস্কো। সোভিয়েত যুগে এই প্রযুক্তি তৈরি করে ক্রেমলিন। এটি একটি আধা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা যেখানে রুশ সামরিক নেতৃত্ব পুরোপুরি নিঃশেষ হয়ে গেলে নিজের থেকে সক্রিয় হয়ে শত্রুর উপর আছড়ে পড়বে একের পর এক রুশ পরমাণু বোমা। এ-হেন ‘ডেড হ্যান্ড’ সম্পূর্ণ কার্যকর রয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ।