IAF Sudarshan Chakra

‘সুদর্শন চক্রের’ আঘাতে ধ্বংস লড়াকু জেট, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন! রুশ অস্ত্রের পরাক্রমে ‘ত্রাহি মাম’ বলছে পাকিস্তান

পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা আটকে দিয়ে খবরের শিরোনামে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ভারতের এই ‘সুদর্শন চক্র’ই ভেস্তে দিচ্ছে ইসলামাবাদের যাবতীয় আগ্রাসন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২৫ ১৩:০৯
Share:
০১ ১৯

ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসা ড্রোন থেকে শুরু করে ক্ষেপণাস্ত্র। মাঝ-আকাশেই পাকিস্তানের একের পর এক হামলা আটকে খবরের শিরোনামে ভারতের ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম)। নয়াদিল্লির এই দুর্ভেদ্য বর্মের নাম এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ। রাশিয়ার তৈরি এই অস্ত্রেই চিরশত্রুর যাবতীয় আক্রমণের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে এ দেশের ফৌজ।

০২ ১৯

‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর গত ৭ এবং ৮ মে রাতে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের ১৫টি শহরের সেনাছাউনি এবং ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় পাক সেনা। ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পরিকল্পনা ছিল ইসলামাবাদের। কিন্তু, পশ্চিমের প্রতিবেশীর সেই মনস্কামনা পূরণ হয়নি। দ্রুত যাবতীয় ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে চিহ্নিত করে মাঝ-আকাশেই সেগুলিকে ধ্বংস করে রুশ এস-৪০০।

Advertisement
০৩ ১৯

২০১৮ সালে মস্কোর থেকে মোট পাঁচটি এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনে ভারত। এর জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ৫৪৩ কোটি ডলারের চুক্তি করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই মোতাবেক এস-৪০০র তিনটি ব্যাটারি ভারতীয় বায়ুসেনাকে সরবরাহ করে ক্রেমলিন। আরও দু’টি এখনও আসা বাকি। এ দেশের বিমানবাহিনী আবার আদর করে এর নাম রেখেছে ‘সুদর্শন চক্র’।

০৪ ১৯

সূত্রের খবর, পাক হামলা আটকাতে ২০২১ সালে পঞ্জাবে এস-৪০০ মোতায়েন করে ভারত। এ ছাড়া চিন সীমান্তেও ‘সুদর্শন চক্র’কে সক্রিয় রেখেছে নয়াদিল্লি। হাতিয়ারটির মোট তিনটি অংশ রয়েছে। সেগুলি হল, অত্যাধুনিক রেডার, কমান্ড-কন্ট্রোল এবং ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসাবে একে গণ্য করা হয়।

০৫ ১৯

উল্লেখ্য, ২০০৭ সাল থেকে এস-৪০০ ব্যবহার করেছে রুশ ফৌজ। এর নির্মাণকারী সংস্থার নাম এনপিও অ্যালমাজ়। হাতিয়ারটির দু’রকমের পাল্লা রয়েছে। ‘সুদর্শন চক্র’র অ্যারে রেডার ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং যুদ্ধবিমানকে চিহ্নিত করতে সক্ষম। তবে এস-৪০০র ক্ষেপণাস্ত্রগুলির পাল্লা আবার সর্বোচ্চ ৪০০ কিলোমিটার। মার্কিন নেতৃত্বাধীন ইউরোপীয় শক্তিজোট নেটো আবার এর নাম দিয়েছে এসএ-গ্রোলার।

০৬ ১৯

মস্কোর এই হাতিয়ারের ব্যবহার মোটেই সহজ নয়। শত্রুপক্ষের কোনও ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র বা যুদ্ধবিমান ভারতের আকাশসীমার দিকে ছুটে এলে প্রথমে সেটিকে চিহ্নিত করবে এস-৪০০র অ্যারে রেডার। এর পর সেই তথ্য যাবে কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল ইউনিটের কাছে। সেখানে হামলাকারী ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র বা যুদ্ধবিমানের রাস্তা বুঝে নিয়ে শানানো হবে পাল্টা প্রত্যাঘাত। একেবারে শেষ পর্যায়ে এর লঞ্চার থেকে বেরিয়ে আসবে ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র।

০৭ ১৯

এ হেন ভারতের ‘সুদর্শন চক্র’-এ মোট তিন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। সেগুলির পাল্লা যথাক্রমে ৪০ কিলোমিটার, ১২০ কিলোমিটার এবং ২০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার। এর মোট লঞ্চারের সংখ্যা ৭২। সেখান থেকে একসঙ্গে ৩৮৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যায়। ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় উড়ে গিয়ে শত্রুর ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং যুদ্ধবিমানকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে বায়ুসেনার ‘সুদর্শন চক্র’র।

০৮ ১৯

বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, একসঙ্গে ১০০-র বেশি লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত এবং তা নিষ্ক্রিয় করা রুশ এস-৪০০র বাঁয়ে হাত কা খেল। গোটা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি গাড়ির উপরে থাকায় সেটিকে অনায়াসেই এক জায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আবার বাহিনী চাইলে রেডার ও কমান্ড-কন্ট্রোল ইউনিট থেকে কিছুটা দূরে লঞ্চারকে নিয়ে গিয়ে সেখান থেকে ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে।

০৯ ১৯

৭ এবং ৮ মে, পরপর দু’দিন রাতে উত্তর-পশ্চিম ভারতের একাধিক সেনাছাউনি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালায় ইসলামাবাদ। তাতে অবশ্য তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পাক ফৌজের পুরো পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যে সক্রিয় ছিল তা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে নয়াদিল্লি। তবে সেখানে ‘সুদর্শন চক্র’র নাম সরকারি ভাবে উচ্চারণ করেনি মোদী সরকার।

১০ ১৯

অন্য দিকে, এই হামলার প্রত্যুত্তর দিতে গিয়ে ড্রোনের মাধ্যমে লাহৌরকে নিশানা করে ভারতীয় ফৌজ। আর তাতেই ধ্বংস হয় পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সূত্রের খবর, চিনের তৈরি এইচকিউ-৯পি নামের অস্ত্র ব্যবস্থাকে সেখানে মোতায়েন রেখেছিলেন রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি জেনারেলরা। ইজ়রায়েলি আত্মঘাতী ড্রোন হারোপের সাহায্যে সেটিকে এ দেশের বাহিনী উড়িয়েছে বলে খবর প্রকাশ্যে এসেছে।

১১ ১৯

এই ঘটনায় ইসলামাবাদের পাশাপাশি মুখ পুড়েছে বেজিঙেরও। কারণ, এইচকিউ-৯পি নামের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে রুশ এস-৩০০র (এস-৪০০র আগের ভার্সান) সমতুল্য বলে এত দিন দাবি করে এসেছে ড্রাগন সরকার। কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে পুরোপুরি ব্যর্থ হল এই হাতিয়ার। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও চিহ্নিত করতে পারেনি চিনের এইচকিউ-৯পি।

১২ ১৯

২০০১ সাল থেকে এইচকিউ-৯ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করছে চিনের ‘পিপল্স লিবারেশন আর্মি’ বা পিএলএ। এস-৪০০র মতো এরও তিনটি ইউনিট রয়েছে। তবে এই হাতিয়ারের রেডারটির পাল্লা ১২০ থেকে ২০০ কিলোমিটার বলে দাবি করে এসেছে বেজিং। অস্ত্রটির একাধিক ভার্সান রয়েছে। তার মধ্যে পি নামের ভ্যারিয়েন্টটি বিশেষ ভাবে পাকিস্তানের জন্য তৈরি বলে জানিয়েছিল ড্রাগন।

১৩ ১৯

বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, রুশ প্রযুক্তিকে নকল করে এস-৪০০ তৈরি করে চিন। সেই কারণেই যুদ্ধের ময়দানে একেবারেই কাজ করেনি সেটি। এই ধরনের জটিল হাতিয়ারের প্রযুক্তি নকল করা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, বর্তমানে চিনের তৈরি হাতিয়ারই বেশি পরিমাণে ব্যবহার করছে পাক ফৌজ। সেই তালিকায় রয়েছে কামান, যুদ্ধবিমান থেকে ছোট অস্ত্রও।

১৪ ১৯

৮ মে সকালে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হওয়ায় মরিয়া হয়ে ওঠে ইসলামাবাদ। জম্মু, উধমপুর, পঠানকোটের মতো উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের ফৌজি ছাউনিগুলিকে নিশানা করার চেষ্টা করে পাক বিমানবাহিনী। কিন্তু, তাতে ফল হয় হিতে বিপরীত। পাকিস্তানের একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান এবং দু’টি জেএফ-১৭ লড়াকু জেটকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে উড়িয়ে দেয় ভারতীয় বাহিনী।

১৫ ১৯

এই ঘটনাতেও চিনা হাতিয়ারের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, জেএফ-১৭ বেজিঙের সংস্থার তৈরি যুদ্ধবিমান। এস-৪০০র কবচ ভেদ করা তার পক্ষে যে সম্ভব হয়নি, তা বলাই বাহুল্য। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের কেউ কেউ আবার বলছেন, পাক লড়াকু জেট ধ্বংস করতে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করেছে ভারত। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই হাতিয়ারটির নির্মাণকারী সংস্থা হল প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও (ডিফেন্স রিসার্চ ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন)।

১৬ ১৯

নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে এ হেন সংঘাতের আবহে শান্তি ফেরাতে তৎপর হয়েছে আমেরিকা। ৮ মে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো। পরে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গেও কথা হয় তাঁর। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শরিফকে ভারত আক্রমণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

১৭ ১৯

চলতি বছরের ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান পর্যটক-সহ ২৬ জন। ওই ঘটনার বদলা নিতে ৭ মে মধ্যরাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের (পাক অকুপায়েড জম্মু-কাশ্মীর বা পিওজেকে) ন’টি জায়গায় সন্ত্রাসবাদীদের গুপ্ত ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় ফৌজ। এই অভিযানের পোশাকি নাম ছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’।

১৮ ১৯

কিন্তু এই ঘটনার পরই আগ্রাসী হয়ে ওঠে ইসলামাবাদ। উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের সেনাছাউনিগুলি নিশানা করতে থাকে পাক সেনা। সেখানেই নিজের জাত চিনিয়েছে ‘সুদর্শন চক্র’ তথা রুশ এস-৪০০। পাশাপাশি এর ফলে প্রত্যাঘাত শানাতে বাধ্য হয় এ দেশের বাহিনী। রাজস্থান সীমান্তেও পাকিস্তান সেনাবাহিনী গোলা বর্ষণ করেছে বলে খবর প্রকাশ্যে এসেছে।

১৯ ১৯

গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও দুর্দান্ত ভাবে কাজ করেছে মস্কোর এস-৪০০। এর বর্ম ভেদ করে রাশিয়ার ভিতরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পারেনি কিভ। পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতে আরও একবার পরিত্রাতা হয়ে সামনে এল ক্রেমলিনের এই বর্ম। অন্য দিকে, চিনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যর্থ হওয়ায় বেজিঙের হাতিয়ারের দুনিয়াব্যাপী চাহিদা যে আগামী দিনে কমবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement