Socotra

এশিয়ায় যুদ্ধের অশনি সঙ্কেত? আরব থেকে ইরান, ১৩২ কিমির ছোট্ট দ্বীপ কেন সকলের পাখির চোখ!

খাতায়কলমে সোকোত্রা দ্বীপ ইয়েমেনের অন্তর্গত। এই দ্বীপের মূল ভূখণ্ডের দৈর্ঘ্য মাত্র ১৩২ কিলোমিটার। ভৌগোলিক অবস্থান সোকোত্রাকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:৫৬
Share:
০১ ২১

ভারত মহাসাগরের বুকে আফ্রিকার কোল ঘেঁষে ছোট্ট দ্বীপ সোকোত্রা। ছোট-বড় কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে সোকোত্রা দ্বীপপুঞ্জ গড়ে উঠেছে। এই দ্বীপের প্রাকৃতিক বৈচিত্র শিরোনামে উঠে এসেছে বার বার। প্রকৃতির বিচিত্র রূপের কারণে দ্বীপটি গবেষকদের আকর্ষণের কেন্দ্রে।

০২ ২১

কিন্তু শুধু প্রকৃতির বৈচিত্র নয়, সোকোত্রা দ্বীপের রাজনৈতিক তাৎপর্যও গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এই দ্বীপের ভূমিকা রয়েছে। দ্বীপটিকে নজরে রেখেছে এশিয়ার বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র। আমেরিকার নজরও এড়ায়নি সোকোত্রা।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

Advertisement
০৩ ২১

খাতায়কলমে সোকোত্রা ইয়েমেনের অন্তর্গত। এই দ্বীপের মূল ভূখণ্ডের দৈর্ঘ্য মাত্র ১৩২ কিলোমিটার। মূলত আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ সোকোত্রায় বাস করেন। তাঁদের ধর্ম ইসলাম।

০৪ ২১

সোকোত্রার জনসংখ্যা খুব বেশি নয়। মেরেকেটে ৬০ হাজার মানুষ এই দ্বীপে থাকেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ শিয়া এবং বাকি ৫০ শতাংশ সুন্নি মুসলমান।

০৫ ২১

ভৌগোলিক অবস্থান সোকোত্রাকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। ইয়েমেন থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে সোকোত্রা, এডেন উপসাগরের একেবারে মুখে অবস্থান করছে। মাঝসমুদ্রের এই দ্বীপ যেন একটি প্রবেশদ্বার।

০৬ ২১

এশিয়া এবং ইউরোপের মাঝে জলপথে বাণিজ্যিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এই সোকোত্রা। সারা বিশ্বের ৩০ শতাংশ বাণিজ্যিক পণ্য এই দ্বীপের উপর দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছয়।

০৭ ২১

প্রতি দিন প্রায় ৩০ লক্ষ তেলের ট্যাঙ্ক পারস্য উপসাগর থেকে বেরিয়ে ভারত মহাসাগরে আসে। তার পর সেগুলি আরব সাগর পেরিয়ে এডেন উপসাগরে পৌঁছয়। রেড সি-র উপর দিয়ে সেই তেল চলে যায় ইউরোপে। এডেন উপসাগরেক ‘প্রবেশদ্বার’ সোকোত্রাই এ ক্ষেত্রে বণিকদের একমাত্র ভরসা।

০৮ ২১

সোকোত্রার উপর দখলদারি তাই বিশ্ববাণিজ্যে প্রভাব বিস্তার করতেও সাহায্য করবে বলে মত অনেকের। সেই সঙ্গে পশ্চিম এশিয়ার রাজনৈতিক এবং সামাজিক ঘটনাপ্রবাহেও সোকোত্রার নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা থাকবে।

০৯ ২১

সোকোত্রার এই ভৌগোলিক তাৎপর্যের কারণে দ্বীপটিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ঝাঁপিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ। ইরান থেকে শুরু করে কাতার, এমনকি ভারত পর্যন্ত দ্বীপটির দিকে নজর রেখেছে। তবে সোকোত্রায় আধিপত্যের লড়াইয়ে সবার আগে উঠে আসে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির নাম।

১০ ২১

খাতায়কলমে ইয়েমেনের অন্তর্গত হলেও সোকোত্রার সমাজ, সংস্কৃতির সঙ্গে দেশটি খাপ খায় না। ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ সোকোত্রাকে এক দিকে যেমন চূড়ান্ত সমস্যায় ফেলেছে, অন্য দিকে তেমনই দ্বীপের মানুষকে ইয়েমেন থেকে আরও বিচ্ছিন্ন করে তুলেছে।

১১ ২১

২০১৪ সালে ইয়েমেনের অভ্যন্তরীণ শিয়া গোষ্ঠী আনসার আল্লাহের অভ্যুত্থানে দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং রাজধানী সানা দখল করে নেন আন্দোলনকারীরা। আনসার আল্লাহ গোষ্ঠীর সদস্যদের হোসিও বলা হয়।

১২ ২১

বলা হয়, ইয়েমেনের এই গৃহযুদ্ধে বাইরে থেকে মদত দেয় বেশ কয়েকটি দেশ। এক দিকে রয়েছে আমেরিকা এবং অন্য কিছু উপসাগরীয় দেশ, যারা বর্তমান প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদিকে সমর্থন করে। অন্য দিকে রয়েছে ইরান, যারা সমর্থন করে শিয়া গোষ্ঠী হোসিদের।

১৩ ২১

সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সোকোত্রা দ্বীপে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করতে চায় কেন? এর অন্যতম কারণ হল ইয়েমেনের এই বিদ্রোহী হোসিদের উপর নজরদারি চালানো। কিছু দিন আগে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র হানা হয়েছিল, যার দায় স্বীকার করেছিল হোসিরা। সোকোত্রায় ক্ষমতা পেলে তাদের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে সংশ্লিষ্ট দেশ।

১৪ ২১

২০১৫ সালে বিধ্বংসী এক সাইক্লোন আছড়ে পড়ে সোকোত্রা দ্বীপে। বহু প্রাণহানি, বহু ক্ষয়ক্ষতি হয় দ্বীপ জুড়ে। এই সাইক্লোনকে হাতিয়ার করেই মানবিকতার খাতিরে সোকোত্রায় পা রাখে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি।

১৫ ২১

সোকোত্রায় ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত মানুষদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল দু’টি দেশই। তারা সোকোত্রায় হাসপাতাল নির্মাণ এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করে। দুর্গতদের পুনর্বাসন এবং ত্রাণের বন্দোবস্ত করে দেয়। শুধু তাই নয়, নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে সোকোত্রায় ৫ হাজার সেনাও মোতায়েন করে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি।

১৬ ২১

২০১৮ সালের মধ্যে সোকোত্রায় সামরিক প্রাধান্য অনেকখানি বাড়িয়ে ফেলে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। তারা দ্বীপে নতুন করে ঝাঁ-চকচকে রাস্তাঘাট নির্মাণ, স্কুল-কলেজ তৈরি এবং হাসপাতাল গঠনের জন্য অনেক টাকা বিনিয়োগ করে। এমনকি, দ্বীপের পুলিশ-প্রশাসন, আমলাদের বেতনও দিতে শুরু করে।

১৭ ২১

ইয়েমেনের হাদি সরকারের প্রতি সোকোত্রাবাসী বরাবরই ক্ষুব্ধ। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির এই তৎপরতায় দ্বীপের মানুষ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হন। যাবতীয় উন্নয়নমূলক কাজ সোকোত্রায় প্রশংসা কুড়িয়েছে।

১৮ ২১

সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সোকোত্রায় নিজেদের একটি বিমানঘাঁটিও তৈরি করে ফেলেছে। অসমর্থিত সূত্রের দাবি, সোকোত্রা দখলে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির পাশে রয়েছে ইজ়রায়েল।

১৯ ২১

সোকোত্রায় সংযুক্ত আরব আমিরশাহির এই তৎপরতা আবার ভাল চোখে দেখেনি সৌদি আরব। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সৌদিকে পরোয়া না করেই এডেন উপসাগরীয় এলাকায় লড়াইয়ে নামতে চাইছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি।

২০ ২১

অনেকের মতে, সোকোত্রার প্রাকৃতিক বৈচিত্রকে হাতিয়ার করে এই দ্বীপকে পর্যটনের কেন্দ্রে পরিণত করতে চায় সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। তারা সৌদির সঙ্গে টেক্কা দিয়ে সোকোত্রায় দ্বিতীয় দুবাই বানাতে চায়। সোকোত্রার স্থানীয় প্রশাসনের নাকি এতে সায় নেই। তবে আপাতত জনগণের সমর্থন রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গেই।

২১ ২১

সোকোত্রায় সংযুক্ত আরব আমিরশাহির আধিপত্য সেখানকার মানুষের জন্য লাভজনক হবে কি না, তা সময় বলবে। তবে এশিয়ার রাজনীতিতে সোকোত্রার এই উত্থান নিঃসন্দেহে প্রভাব ফেলতে চলেছে। এমনকি, ১৩২ কিলোমিটারের এই দ্বীপকে কেন্দ্র করে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে যুদ্ধ বেধে যাওয়াও অসম্ভব নয়।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement