Taiwan Missile

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ড্রাগন বধের হাতিয়ার বানিয়ে ফেলল তাইওয়ান! প্রতিবেশীর ‘বাড়বাড়ন্তে’ কি রণহুঙ্কার দেবে বেজিং?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রথম বার রণতরী ধ্বংসকারী ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করল প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ান। এর সাহায্যে আদৌ কি চিনা ‘আগ্রাসন’ ঠেকাতে পারবে তারা?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:০৯
Share:
০১ ১৯

কখনও রণতরীর চক্রব্যূহ তৈরি করা। কখনও আবার লড়াকু জেট উড়িয়ে ভয় দেখানো। তাইওয়ানকে গিলতে একরকম মরিয়া হয়ে উঠেছে চিন। ‘আগ্রাসী’ ড্রাগনের লম্ফঝম্ফে এত দিন ভয়ে কাঁটা হয়ে ছিল ওই প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র। কিন্তু, আর নয়। আতঙ্ক কাটিয়ে এ বার পাল্টা মার দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সাবেক ফরমোজ়া। সেই লক্ষ্যে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র তৈরি করল তারা। গোটা প্রকল্পের নেপথ্যে রয়েছে আরও এক ‘মহাশক্তি’র হাত, নাম যুক্তরাষ্ট্র।

০২ ১৯

চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর সদ্য তৈরি করা একটি ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রকাশ্যে আনে তাইওয়ান। হাতিয়ারটির পোশাকি নাম ‘বারাকুডা-৫০০’। কিছু দিনের মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রে একটি প্রতিরক্ষা প্রদর্শনী হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে যে সংশ্লিষ্ট ‘ব্রহ্মাস্ত্র’টিকে স্বমহিমায় দেখতে পাওয়া যাবে, তা বলাই বাহুল্য। হাতিয়ারটির পাল্লা এবং মারণক্ষমতা সংক্রান্ত তথ্য এখনও প্রকাশ্যে আনেনি সাবেক ফরমোজ়া দ্বীপ।

Advertisement
০৩ ১৯

সংবাদসংস্থা ‘রয়টার্স’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রটি তৈরিতে হাত রয়েছে তাইপে অ্যারোস্পেস এবং ‘ন্যাশনাল চুং-শান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজ়ি’ বা এনসিএসআইএসটির। দ্বিতীয় সংস্থাটি পুরোপুরি ভাবে দ্বীপরাষ্ট্রের ফৌজ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ‘বারাকুডা-৫০০’র নকশা নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা স্টার্টআপ ‘আন্দুরিল ইন্ডাস্ট্রিজ়’।

০৪ ১৯

গত জুনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধি করার কথা ঘোষণা করেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে। ওই সময়েই ওয়াশিংটনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সাবেক ফরমোজ়া দ্বীপের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা যে একাধিক হাতিয়ার তৈরি করবেন, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যদিও মাত্র তিন মাসের মধ্যে আমেরিকার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বানানো ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র তাইপে সামনে আনতে পারবে, তা কেউ ভাবেনি। ফলে এই ঘটনার অন্য তাৎপর্য রয়েছে, বলছেন বিশ্লেষকেরা।

০৫ ১৯

তাইওয়ানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। কিন্তু, তা সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক ভাবে পরিচালিত দ্বীপরাষ্ট্রটিকে রক্ষা করার এক রকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে আমেরিকা। শুধু তা-ই নয়, তাইপে ফৌজের আমদানি করা হাতিয়ারের সিংহভাগ আসে আমেরিকা থেকে। এ ছাড়া সামরিক সরঞ্জামও মূলত ওয়াশিংটনের থেকে কিনে থাকে সাবেক ফরমোজ়া দ্বীপ।

০৬ ১৯

‘বারাকুডা-৫০০’কে প্রথম বার প্রকাশ্যে আনার পর গণমাধ্যমে মুখ খোলেন এনসিএসআইএসটি। সংস্থার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘চিনকে আক্রমণ করতে হলে রণতরীতে হামলা করা ছাড়া দ্বিতীয় রাস্তা নেই। আমাদের ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র সেগুলিকে অনায়াসে ডোবাতে সক্ষম। যুদ্ধজাহাজের দলগত আক্রমণকে প্রতিহত করার কথা মাথায় রেখে এর নকশা তৈরি করা হয়েছে।’’

০৭ ১৯

সংশ্লিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্রটিকে কতকটা বিস্ফোরকবোঝাই ড্রোনের আকার দেওয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, বেশ কিছু ক্ষণ ভেসে থাকার পর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা চালাতে পারবে ‘বারাকুডা-৫০০’। খুব দ্রুত এর ব্যাপক উৎপাদন শুরু হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে তাইওয়ান প্রশাসন। তবে ক্ষেপণাস্ত্রটির অধিকাংশ তথ্যই গোপন রাখার চেষ্টা করছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় ওই দ্বীপরাষ্ট্র।

০৮ ১৯

এনসিএসআইএসটির সভাপতি লি শিহ-চিয়াং সংবাদসংস্থা ‘রয়টার্স’কে বলেছেন, ‘‘আমরা প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। গত কয়েক বছরে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি আমূল পাল্টে গিয়েছে। তার সর্বশেষ নমুনা রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাতে দেখা গিয়েছে। ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির সময় এই বিষয়গুলি মাথায় রাখা হয়েছিল। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ‘বারাকুডা-৫০০’তে ব্যবহার করা হয়েছে।’’

০৯ ১৯

অন্য দিকে, এ ব্যাপারে মুখ খোলেনি যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা ‘আন্দুরিল ইন্ডাস্ট্রিজ়’। সূত্রের খবর, স্থানীয় ভাবে তৈরি করলে প্রতিটি ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য তাইওয়ানের খরচ হবে ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৪৯৩ ডলার। লি জানিয়েছেন, ‘বারাকুডা-৫০০’র নির্মাণখরচ এর নীচে নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

১০ ১৯

‘রয়টার্স’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাইওয়ানের সঙ্গে ইউক্রেনের তুলনা টেনেছেন এনসিএসআইএসটির সভাপতি। তাঁর কথায়, ‘‘পূর্ব ইউরোপের দেশটির চেয়ে আমরা অনেক বেশি বিপজ্জনক জায়গায় রয়েছি। কারণ, স্থলপথে সামরিক সরঞ্জাম পাওয়ার সুযোগ রয়েছে কিভের। সেখানে আমাদের প্রতিরোধ গড়ে লড়তে হবে। প্রাথমিক ভাবে শত্রুর রণতরী ধ্বংস করতে পারলে, তাদের পিছু হটতে বাধ্য করা যাবে।’’

১১ ১৯

২০৩০ সালের মধ্যে ‘মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন’ বা জিডিপির (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) পাঁচ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে খরচ করবে তাইওয়ান। আগামী আর্থিক বছরে (পড়ুন ২০২৬-’২৭) সামরিক খাতে ব্যয়বরাদ্দ ৩.৩ শতাংশ বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি পশ্চিমি দুনিয়ার সমর্থন নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় ওই দ্বীপরাষ্ট্র।

১২ ১৯

গত জুনে চিনা ‘আগ্রাসন’ নিয়ে গণমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেন তাইওয়ান সেনাবাহিনীর এক পদস্থ কর্তা। তিনি জানিয়েছেন, মে মাসে দু’টি বিমানবাহী যুদ্ধপোত এবং অন্তত এক ডজন রণতরী গিয়ে গোটা দ্বীপকে ঘিরে ফেলে বেজিঙের ‘পিপল্‌স লিবারেশন আর্মি’ বা পিএলএ-র নৌবাহিনী। ১ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত পীত সাগর এবং দক্ষিণ চিন সাগরে ৭০-এর বেশি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রেখেছিল ড্রাগন। পরে ধীরে ধীরে সেগুলিকে অন্যত্র সরিয়ে নেয় তারা।

১৩ ১৯

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাইওয়ান ফৌজের ওই কর্তার দাবি, গোটা দ্বীপটিকে কব্জা করার জন্য মূলত দুটো পন্থা নিয়েছে চিন। প্রথমত, নৌবাহিনী দিয়ে ঘিরে ধরে মানসিক চাপ তৈরি করছে বেজিং। তাতে তাইওয়ানবাসীর লড়াকু মানসিকতায় চিড় ধরবে বলে মনে করেন ড্রাগন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। দ্বিতীয়ত, ছলে-বলে-কৌশলে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দ্বীপরাষ্ট্রের শাসনভার ছাড়তে বাধ্য করার চেষ্টাও চালাচ্ছেন তিনি।

১৪ ১৯

তাইওয়ানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, মে মাসে শুধু যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেই ক্ষান্ত হয়নি বেজিং। দ্বীপরাষ্ট্রের উপর দিয়ে যখন-তখন লড়াকু জেট উড়িয়েছে ড্রাগন সেনা। সেগুলির অধিকাংশকেই বিমানবাহী রণতরী থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল। তবে কিছু লড়াকু জেটকে মূল চিনা ভূখণ্ড থেকে উড়িয়েছিল পিএলএ। জিনপিং ফৌজের এ-হেন আগ্রাসী মনোভাবে দ্বীপরাষ্ট্র জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

১৫ ১৯

সাবেক ফরমোজ়া দ্বীপের সেনা সূত্রকে উদ্ধৃত করে ‘দ্য ইউরেশিয়ান টাইম্‌স’ ওই সময় লেখে, তাইওয়ানবাসীর পালানোর সমস্ত রাস্তা বন্ধ করতে মিয়াকো প্রণালীতে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে চিন। প্রশান্ত মহাসাগরের এই এলাকার অপর নাম কেরামা গ্যাপ। দু’টি জাপানি দ্বীপের মধ্যবর্তী ওই জায়গাটির ভূ-কৌশলগত আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। একে জাপান সাগরের প্রবেশদ্বার বলা যেতে পারে। ফলে এই নিয়ে টোকিয়ো আপত্তি জানালেও তাতে আমল দেয়নি ড্রাগনের নৌসেনা।

১৬ ১৯

অন্য দিকে চিনা বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, গত বছর তাইওয়ানকে সাত হাজার কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করেছে আমেরিকা। সেই হাতিয়ারগুলির অধিকাংশই এখনও হাতে পায়নি দ্বীপরাষ্ট্রের সেনা। এই ঘটনাকে ‘যুদ্ধের উস্কানি’ বলে মনে করে বেজিং। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রের থেকে পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেল্‌থ’ শ্রেণির এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পেতে চলেছে তাইপে ফৌজ।

১৭ ১৯

তাইওয়ানকে আলাদা দেশ হিসাবে মান্যতা দিতে রাজি নয় চিন। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রটিকে তাদের দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করে বেজিং। কয়েক বছর আগে এই নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন ড্রাগনভূমির প্রেসিডেন্ট তথা সিপিসির চেয়ারম্যান শি। তিনি বলেন, ‘‘তাইওয়ানের চিনের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় কেউ বাধা দিতে পারবে না।’’

১৮ ১৯

প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রটির উপর বেজিঙের এ-হেন ‘অবৈধ’ দাবিকে আমেরিকার পাশাপাশি মানতে অস্বীকার করেছে জাপানও। টোকিয়ো মনে করে, ড্রাগন ফৌজ তাইওয়ান দখল করলে তাঁদের পরবর্তী লক্ষ্য হবে জাপান। ইতিমধ্যেই তাদের বেশ কয়েকটি দ্বীপের উপর অধিকার দাবি করেছে জিনপিং সরকার। এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে তীব্র হচ্ছে সংঘাত।

১৯ ১৯

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা মনে করেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজের হাতে নিতে তাইওয়ানকে দখল করতে চায় চিন। বেজিং এই লক্ষ্যে সফল বলে সেখানে আমেরিকার প্রবেশ কঠিন হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে অর্থনীতি, সামরিক এবং মহাকাশ গবেষণা-সহ প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে ড্রাগন। ফলে আগামী দিনে দুই ‘সুপার পাওয়ার’-এর সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউই।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement