Rinku Singh

ধৈর্য আর সাহসের মিশেল! বদলে যাওয়া রিঙ্কুর জায়গা পাকা বিশ্বকাপের দলে, নির্বাচকরা দেখছেন?

মারকাটারি ব্যাটিং করা ছাড়া কি অন্য কোনও গিয়ার রয়েছে রিঙ্কুর গাড়িতে? তিনি কি কেবলই টপ গিয়ারে চলা এসইউভি? মঙ্গলবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল, রিঙ্কু অন্য ধাতুতে গড়া।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:২৬
Share:
০১ ১৭

গত আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলার পুরস্কার পেয়েছিলেন ভারতীয় দলে ডাক পেয়ে। কেকেআর তারকা রিঙ্কু সিংহ জাতীয় দলের চিনিয়ে চলেছে নিজের জাত। এ বার সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। রিঙ্কুর ব্যাট যে ভাবে চলছে, তাতে তিনি আশাবাদী হতেই পারেন।

০২ ১৭

বাউন্সি উইকেটই হোক, কিংবা পাটা পিচ— সিংহের ব্যাটের দাদাগিরি চলে সর্বত্র। দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অবশ্য রিঙ্কু দেখালেন, শুধু ঝড় তোলা নয়, দরকারে ধরে ইনিংস গড়তেও তাঁর জুড়ি নেই।

Advertisement
০৩ ১৭

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অত্যন্ত দ্রুত পরিণত হয়ে উঠছেন কেকেআরের রিঙ্কু। টি-টোয়েন্টির খেলায় তিনি এখন ভারতের অন্যতম বড় স্তম্ভ। সাধারণত, শেষ দিকে ব্যাট হাতে নামতে দেখা যায় রিঙ্কুকে। তার পর শুরু হয় আতশবাজির প্রদর্শনী। তবে মঙ্গলবারের দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠ দেখল এক অন্য রিঙ্কুকে।

০৪ ১৭

মারকাটারি ব্যাটিং করা ছাড়া কি অন্য কোনও গিয়ার রয়েছে রিঙ্কুর গাড়িতে? তিনি কি কেবলই টপ গিয়ারে চলা এসইউভি? মঙ্গলবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল, রিঙ্কু অন্য ধাতুতে গড়া। পিচে নেমে পরিস্থিতি বুঝে ঠিক করেন, চালাবেন না ধরে খেলবেন। বাউন্স আর গতি সামলাতে যে ধরনের স্কিল দরকার হয়, রিঙ্কুর মধ্যে তা রয়েছে ভরপুর।

০৫ ১৭

খানিকটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের কিং রিচার্ডসের মতো। অনেকে অবশ্য একে বাড়াবাড়ি বলে অভিহিত করবেন, কিন্তু রিঙ্কুর খেলায় যে ভিভের ছায়া রয়েছে, তা তো অস্বীকার করার উপায় নেই! একার হাতে বিপক্ষের বোলারদের টুঁটি চেপে ধরে মাঠের বাইরে ফেলে দেওয়া— ভিভ, সহবাগদের সহজাত ছিল। ইদানীং রিঙ্কুর মধ্যেও সেই ঝলক।

০৬ ১৭

মঙ্গলবার, ভারতীয় ইনিংসের ৫.৫ ওভারের মাথায় রিঙ্কু যখন ব্যাট করতে নামেন, তখন দলের রান ৩ উইকেটে ৫৫। ইতিমধ্যেই সাজঘরে দুই ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল (শূন্য), শুভমন গিল (শূন্য) এবং তিন নম্বরে নামা তিলক বর্মা (২৯)।

০৭ ১৭

জীবনের প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। সেখানে গিয়ে প্রাথমিক ভাবে কমবয়সিদের ঘাবড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। গতি, বাউন্সের সঙ্গেও মানিয়ে নেওয়া সহজ নয় মোটেই। তার উপর সাততাড়াতাড়ি একগাদা উইকেট পড়ে গিয়েছে। কী করবেন রিঙ্কু? জল্পনা রিঙ্কুর প্রথম বল খেলা পর্যন্ত সঙ্গী ছিল জনতার।

০৮ ১৭

রিঙ্কু জানতেন, এই পরিস্থিতিতে আরও উইকেট পড়লে হার বাঁচানো কঠিন হবে। মাঠে নেমে রিঙ্কু তাই মন দেন ইনিংস গড়ার কাজে। উইকেটের অন্য প্রান্তে আগ্রাসী মেজাজে থাকা অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবকে সঙ্গ দিলেন ঠান্ডা মাথায়। যখন যেমন প্রয়োজন, খুচরো রান নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখলেন। ক্যাপ্টেন সূর্যের সঙ্গে জুটিতে উঠল ৭০ রান।

০৯ ১৭

যে পেল্লায় সাইজ়ের ছক্কা হাঁকানোর জন্য রিঙ্কুকে চিনেছে আসমুদ্রহিমাচল, তাঁর ব্যাট থেকে শেষ ওভারের আগে পর্যন্ত একটিও ছক্কা দেখা যায়নি। অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১৯তম ওভারের প্রথম বলটিই উড়ে গেল মাঠের বাইরে। ছোট আকারের ছয় মারেন রিঙ্কু। ডেথ ওভারে একটি ছক্কা খাওয়ার পর বোলার নিশ্চিত হলেন, তিনি লাইন এবং লেংথ বদলে ফেলবেন পুরোপুরি।

১০ ১৭

বোলার যে ছক কষছেন, তা মাথায় ছিল রিঙ্কুরও। জানতেন, প্রথম বলে ছয় খাওয়ার পর বোলার কী কী ভাবছেন। অতঃপর এল সেই দ্বিতীয় বল। দ্বিতীয় ছক্কাটি যেন আরও বড়। এহ বাহ্য, ২২ গজ থেকে মারা বল সোজা উড়ে গিয়ে ভেঙে দিল মিডিয়া বক্সের কাচ।

১১ ১৭

এই মুহূর্তে ভারতীয় টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব যেন কুড়ি ওভারের খেলার এক নতুন আঙ্গিক খুলে দিয়েছেন। বিশ্বের হাতেগোনা কয়েক জন ব্যাটার যেমন, ম্যাক্সওয়েল, বাটলার, হেনরিক ক্লাসেন বা মিলাররা অনেকটা সেই ঘরানার ব্যাটার। সেই তালিকায় সম্ভবত নবতম সংস্করণ কেকেআরের রিঙ্কু।

১২ ১৭

ভারতীয় মারকুটে ব্যাটারদের মধ্যে সাধারণত একটা জিনিস লক্ষ্য করা যায়। পিচ পাটা হলে তাঁরা প্রায় সকলেই ফুল ফোটান। কিন্তু বল একটু এ দিক-ও দিক করলেই সমস্ত জারিজুরি শেষ। বাউন্স আর গতির সামনে আজও অসহায় দেখায় বহু ভারতীয় ব্যাটারকে। রিঙ্কুর ক্ষেত্রে তেমনটা বলা যাবে না। তিনি বাউন্স পছন্দ করেন। সূর্যের মতোই বোলারের গতি ব্যবহার করে বল মাঠের বাইরে ফেলে দেন অনায়াসে।

১৩ ১৭

ভারতীয় দলের পাঁচ নম্বরে নিজের জায়গা প্রায় পাকা করে ফেলেছেন কেকেআর তারকা। এ বার তাঁর লক্ষ্য বিশ্বকাপের বিমানেও উঠে পড়া। ইদানীং যেমন ব্যাটিং করছেন রিঙ্কু, তাতে তাঁকে বাদ দেওয়ার সাহস নির্বাচকেরা দেখাবেন কি? প্রশ্ন এখন সেটাই। কিন্তু রিঙ্কুর ব্যাট যে দলকে ক্রমাগত নির্ভরতা যুগিয়ে যাচ্ছে, ভারতের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার পর এ বার দক্ষিণ আফ্রিকাতেও দেখা যাচ্ছে।

১৪ ১৭

রিঙ্কুর প্রশংসা শোনা গিয়েছে সুনীল গাওস্কর, ডেল স্টেনের মতো কিংবদন্তিদের মুখে। গাওস্কর বলছিলেন, ‘‘রিঙ্কুর এই উত্থান বুঝিয়ে দিচ্ছে, খুব কঠিন পরিস্থিতি থেকে উঠে এসেও ক্রিকেটে সাফল্য লাভ করা যায়।’’ স্টেনও মুগ্ধ রিঙ্কুর ব্যাটিংয়ে। স্টেনের মন্তব্য, ‘‘রিঙ্কুকে দেখে মনে হয়, কখনও যেন চাপেই পড়ে না।’’

১৫ ১৭

সাধারণত সূর্যের দলের পাঁচ নম্বরে নামেন যে ব্যাটার, তিনি খুব বেশি বল খেলার সুযোগ পান না। কিন্তু মঙ্গলবার ছিল অন্য এক দিন। রিঙ্কুকে ব্যাট দোলাতে দোলাতে নামতে দেখা গেল, খেলার বয়স তখন মাত্র ৫ ওভার। অর্থাৎ, দল ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে। সেই পরিস্থিতিতে নেমেও রিঙ্কু খেললেন সাবলীল ভাবে। প্রথমে সূর্যকে সহায়তা দিয়ে গড়লেন বড় রানের জুটি। সূর্য ফিরতেই স্বমূর্তি ধরলেন কেকেআর তারকা।

১৬ ১৭

ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাটারের জাত চেনা যায় কঠিন পরিস্থিতিতে। ঠিক যেমন, মঙ্গলবার রিঙ্কু নেমেছিলেন ম্যাচের পঞ্চম ওভার শেষ হওয়ার আগেই। বোলাররা আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটছেন। রিঙ্কু কিন্তু নিজের স্বাভাবিক খেলা বদলে ফেললেন মুহূর্তের মধ্যে। তুলে মারা নয়, জুটি গড়তে যা যা করার দরকার, কেকেআর তারকা তা-ই করে গেলেন।

১৭ ১৭

রিঙ্কু কিন্তু স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। যে স্বপ্ন বলে, ব্যর্থতার গ্লানি ঝেড়ে ফেলে আবার স্বমহিমায় ফিরে আসার রূপকথাস্বরূপ কাহিনি। প্রয়োজন মতো নিজেকে আমূল বদলে ফেলার সাহস। আর বুকভরা আত্মবিশ্বাস। এ ভাবেই ফিরে আসতে হয়। বিশ্বকাপের দল নির্বাচকদের চোখ এড়িয়ে যায়নি নিশ্চয়ই।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement