নায়ক-নায়িকাদের জীবনচর্চা নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় তাঁদের জীবন যেন সোনায় মোড়া। দুঃখ, কষ্ট, অভাব কিছুই যেন ছুঁতে পারে না তাঁদের। কিন্তু বাস্তবেই কী তাই?
জিয়া খান, দক্ষিণী অভিনেত্রী সিল্ক স্মিতা-সহ আরও বেশ কিছু নাম রয়েছে, যাঁরা বিষণ্ণতার অসুখে ভুগেছেন দীর্ঘ দিন। মনের অসুখ সাড়াতে না পেরে অনেকে অভিনেতা-অভিনেত্রীই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। অনেক সময় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে মৃত্যুর গুজবও উঠেছিল।
তেমনই এক গুজব উঠেছিল একসময়ের নামজাদা দক্ষিণী অভিনেত্রী কণক মহালক্ষ্মীকে নিয়ে। তিনি মারা গিয়েছেন এমন গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। কেন হঠাৎ এমন গুজব উঠেছিল? এখন কেমন আছেন কণক?
কণক দক্ষিণ ভারতের বেশ পরিচিত নাম। এক সময়ে চুটিয়ে অভিনয় করেছেন। দর্শককে উপহার দিয়েছেন একের পর এক হিট ছবি। নামী অভিনেতাদের সঙ্গেও একাধিক কাজ আছে তাঁর।
কণকের পরিবার সিনেমা জগতের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দাদুর দাদু ছিলেন রঘুপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু। তাঁকে তেলুগু সিনেমার জনক এবং দক্ষিণ ভারতে প্রথম সিনেমা হলের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। কণকের মা দেবিকা ছিলেন বিখ্যাত অভিনেত্রী।
চলচ্চিত্র পরিবারের মেয়ে হওয়ায় অভিনেত্রী হিসাবে উত্থানে খুব বেশি লড়াই করতে হয়নি কণককে। অভিনয়ে তাঁর পারদর্শিতা দর্শকের বেশ মন কেড়েছিল।
১৯৮৯ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে কণকের অভিষেক হয় সিনেমায়। তামিল ভাষায় তাঁর প্রথম ছবি ‘কারাকাট্টাক্কারান’। সে সময়ের দক্ষিণেয় বিখ্যাত অভিনেতা রমারজনের বিপরীতে অভিনয় করেন কণক। ছবি মুক্তির পর রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান কণক।
তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি অভিনেত্রীকে। ‘পেরিয়া ইদাথু পিল্লাই’, ‘পেরিয়া ভিতু পান্নাকরণ’, ‘থাঙ্গামানা রাসা’, ‘ভিয়েতনাম কলোনি’-সহ একের পর এক হিট ছবি করেছেন। বেশ কিছু মালয়ালম ছবিতে অভিনয় করেছেন কণক।
সব মিলিয়ে মোট ৫০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। তবে ছবির প্রস্তাব এলেই রাজি হতেন না কণক। এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছবি বাছাই বেশ ভাবনাচিন্তা করে করতেন তিনি।
মালয়ালম ছবি করে তিনি আরও বেশি সাফল্য পেয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে সিদ্দিক-লাল পরিচালিত ‘গডফাদার’ তাঁর পেশাগত জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ৪০০ দিনের বেশি প্রেক্ষাগৃহে চলেছিল ছবিটি, যা মালয়ালম ছবির জগতে আগে কখনও হয়নি।
তবে সিনেমা জগতের সঙ্গে তাঁর লেনদেন মাত্র ১০ বছরের। ১৬ বছর থেকে ২৬ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করেন তিনি। অভিনেতা বিবেকের সঙ্গে ‘বিরলুক্কেথা বিক্কাম’ ছবিটি তাঁর শেষ কাজ। তার পরই রাতারাতি যেন উবে যান অভিনেত্রী।
কোনও পার্টি বা অনুষ্ঠানেও আর দেখা যায়নি কণককে। লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশনের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে। যদিও কী কারণে অভিনেত্রী এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা প্রকাশ্যে কখনওই বলেননি তিনি।
অনেকেই বলেন, মায়ের মৃত্যু এবং সংসার ভেঙে যাওয়ায় কণক আর প্রচারের আলোয় রাখতে চাননি নিজেকে। অবসাদে ভুগতেন বলেও উল্লেখ রয়েছে বেশ কিছু প্রতিবেদনে। তবে কণকের মুখ থেকে এ বিষয়ে কিছুই জানতে পারেননি তাঁর অনুরাগীরা।
কণকের বাবা দেবদাস অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। কণক খুব ছোট থাকতেই তাঁর বাবা-মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তার পর থেকে মায়ের ভালবাসাতেই বড় হয়েছেন তিনি। সিনেমায় আসাও মায়ের অনুপ্রেরণাতেই।
২০০২ সালে অভিনেত্রীর মা চিরতরে তাঁকে ছেড়ে চলে যান। মায়ের মৃত্যুর পর বাবা কণকের সান্নিধ্যে আসেন। যদিও তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক ভাল ছিল না। অভিনেত্রীর বাবা অভিযোগ করেন, দেবিকার সম্পত্তির কাগজ জাল করেছেন কণক। যদিও তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন তিনি।
পাল্টা কণক মায়ের মৃত্যুর জন্য তাঁর বাবাকে দায়ী করেন। একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কনক বলেছিলেন, “আমার মায়ের কেরিয়ার নষ্ট করার পিছনে বাবা দায়ী। পাশাপাশি আমার জীবনের সব দুঃখ-দুর্ভোগও তাঁর জন্য। আমার নামে মিথ্যা খবর ছড়ানো হচ্ছে।”
কণক নেশায় ডুবে থাকেন, এমন খবরও প্রচার করেছিলেন অভিনেত্রীর বাবা। একটি প্রতিবেদনে কণক তাঁর বাবার বিরদ্ধে এই নিয়েও অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘বাবার খারাপ আচরণের জন্য আমি ওর সঙ্গে কথা বলি না। আমি নাকি ড্রাগের নেশায় ডুবে থাকি! এমন মিথ্যে প্রচার করা হচ্ছে আমার নামে।’’
মায়ের মৃত্যুর পর সব কিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন কণক। সিনে জগতের কারও সঙ্গে সে ভাবে যোগাযোগ ছিল না। তবে কণক নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে সরিয়ে নেন তাঁর বিয়ের পর।
২০০৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়া নিবাসী ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুথুকুমারকে বিয়ে করেছিলেন কণক। ভালবেসেই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন দু’জনে। তাঁদের বিয়েতে কোনও মিডিয়ার প্রচার ছিল না।
মায়ের মৃত্যুর পর বিবাহিত জীবন কণককে যেন বাঁচার রসদ জুগিয়েছিল। কিন্তু সেটাও টিকল না বেশি দিন। ১৫ দিন পর কনকের স্বামী হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যান। শত চেষ্টা করেও কণক তাঁকে খুঁজে পাননি।
কয়েক বছরের মধ্যে পর পর দু’টি বেদনাদায়ক ঘটনা কণককে সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে দেয়। শেষ ২০১৮ সালে একটি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তার পর ২০২৩ সালে দক্ষিণ ভারতীয় অভিনেত্রী কুট্টি পদমিনি কনকের সঙ্গে একটি ছবি দিয়েছিলেন সমাজমাধ্যমে।
২০২৩-এর পর আর কোনও খবর নেই কণকের। বেশ কয়েক বছর আগে তাঁর মৃত্যুর গুজবও ছড়িয়ে পড়ে। পরে এক সাক্ষাৎকারে তা নিয়ে মুখ খোলেন অভিনেত্রী। চেন্নাইয়ে নিজের মতো করে থাকতেই বেশি পছন্দ করছেন এক সময়ের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী।