Condoms As A War Weapon

জল-মাইন বাঁচাতে ‘কন্ডোম কভার’! পাক রণতরী ওড়াতে মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে ফাঁদ পাতে ভারতীয় নৌবাহিনী

১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ভিয়েতনামের গোপন অভিযানে অপ্রত্যাশিত ভাবে সামরিক কৌশলে স্থান করে নেয় কন্ডোম। আশ্চর্যজনক মনে হলেও বিশ্ব জুড়ে একাধিক সামরিক ময়দানে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে কাজে লাগানো হয়েছিল কন্ডোমকে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৫ ১২:১৫
Share:
০১ ১৮

অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ ও যৌনরোগ এড়াতে কন্ডোমের ব্যবহার শুরু হয় মানবসমাজে। সাড়ে তিন হাজার বছর আগে প্রাচীন মিশরের কিশোর রাজার সমাধি থেকে গরু বা ছাগলের পাতলা চামড়া দিয়ে তৈরি কন্ডোম পাওয়া গিয়েছিল। পঞ্চদশ শতকে যখন যৌন রোগ সিফিলিস আছড়ে পড়ে ফ্রান্সের সেনাদলে, তখন কন্ডোম ব্যবহার আবশ্যিক হয়ে পড়ে।

০২ ১৮

সেই সময় থেকে প্রাণীদেহের পাতলা চামড়া দিয়ে কন্ডোম তৈরির বহুল ব্যবহার শুরু হয়। শুধু তা-ই নয়, মাছের নাড়িভুঁড়ি ব্যবহার করেও তৈরি হয়েছে কন্ডোম। ১৮৬০ থেকে শুরু হয় আধুনিক কন্ডোমের সাম্রাজ্যবিস্তার। ১৮৪৪ সালের আগে রবার কন্ডোম পেটেন্ট করা হয়েছিল। ১৮৫৫ সাল থেকে এটি বাজারে বিক্রি শুরু হয়। ১৯২০-এর দশকে ল্যাটেক্স কন্ডোমের মুখ দেখে বিশ্ব।

Advertisement
০৩ ১৮

গর্ভনিরোধক হিসাবে যার উৎপত্তি, সেই কন্ডোম যুদ্ধে কী ভূমিকা নিয়েছিল? শুনতে আশ্চর্যজনক মনে হলেও বিশ্ব জুড়ে একাধিক সামরিক ময়দানে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে কাজে লাগানো হয়েছে কন্ডোমকে। যুদ্ধক্ষেত্রের কৌশলে প্রায়শই দৈনন্দিন জিনিসপত্রকে কৌশলগত হাতিয়ারে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। সে সবের মধ্যে ঠাঁই করে নিয়েছে কন্ডোমও।

০৪ ১৮

১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ভিয়েতনামের গোপন অভিযানে গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা অপ্রত্যাশিত ভাবে সামরিক কৌশলে স্থান করে নিয়েছে। প্রতিরক্ষা ইতিহাসের এই অজ্ঞাত অধ্যায়টি প্রমাণ করে যে এই ধরনের অপ্রত্যাশিত জিনিসগুলি মূল ব্যবহারিক উদ্দেশ্যের বাইরেও অনেক বেশি কার্যকরী।

০৫ ১৮

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের ৩ তারিখ। তার অনেক আগে থেকেই সীমান্তে বাড়ছিল উত্তেজনা। বর্তমান বাংলাদেশ, অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং সেনা। ১৩ দিনের মাথায় ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনার যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে পাক বাহিনী, জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ।

০৬ ১৮

ক্যাপ্টেন এমএনআর সামন্ত এবং সাংবাদিক সন্দীপ উন্নিথানের লেখা ‘অপারেশন এক্স দ্য আনটোল্ড স্টোরি অফ ইন্ডিয়া’স কভার্ট নেভাল ওয়ার ইন ইস্ট পাকিস্তান’ নামের বইয়ে রয়েছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেখানে বলা হয়েছে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ভারতীয় নৌবাহিনী একটি গোপন অভিযান শুরু করেছিল।

০৭ ১৮

এই অভিযানে কন্ডোমকে অস্ত্রের সুরক্ষাকবচ হিসাবে ব্যবহার করেছিল ভারতীয় নৌসেনা। দু’দেশের মধ্যে সম্মুখসমরের সূচনা করার আগে ভারতীয় নৌবাহিনী পাকিস্তানের পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টি করার জন্য এই গোপন অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

০৮ ১৮

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে ঘাঁটি বসিয়ে ফেলেছিল। খাদ্য, অস্ত্র-সহ অন্যান্য জিনিসপত্রের প্রয়োজন ছিল। পাকিস্তান সেনার কাছে এই জিনিসপত্র পরিবহণের জন্য জাহাজ ব্যবহার করা হত। সেই জাহাজগুলিকে নিশানা করতে চেয়েছিল ভারতীয় নৌসেনা। কিন্তু লক্ষ্যভেদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল সমু্দ্রের জল।

০৯ ১৮

১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় ভারতীয় নৌবাহিনী একাধিক ফ্রন্টে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করেছিল। এমনকি পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় বিমানঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল। ভারতীয় নৌবাহিনীর লক্ষ্যবস্তুগুলির মধ্যে একটি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) চট্টগ্রাম বন্দর। নৌবাহিনীর পরিকল্পনা ছিল লিম্পেট মাইন পুঁতে পাকিস্তানি জাহাজগুলিকে উড়িয়ে দেওয়া।

১০ ১৮

সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে ভারতীয় প্রতিরক্ষা দফতর হাজার হাজার কন্ডোম অর্ডার করেছিল। কী ভাবে কাজে লাগানো হয়েছিল সেগুলিকে?

১১ ১৮

পাকিস্তানের নৌবাহিনীর ‘নেটওয়ার্ক’ ভাঙা ও অস্ত্রশস্ত্র, রসদের জোগান ব্যাহত করার জন্য লিম্পেট মাইন ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারতীয় নৌবাহিনী। জলপথে সাঁতার কেটে লক্ষ্যবস্তুতে ছোট ছোট মাইনগুলিকে আটকে দিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় ভারতীয় নৌসেনা। এই মাইনগুলি জলের নীচে আটকে রাখার প্রয়োজন ছিল। কেবল দক্ষ ডুবুরিরাই এই কাজটি করতে পারতেন।

১২ ১৮

লিম্পেট মাইন হল এক ধরনের বিস্ফোরক। চুম্বকের সাহায্যে কোনও জাহাজের ধাতব অংশের সঙ্গে শক্ত ভাবে লেগে থাকে। এর নামকরণ করা হয়েছে ‘লিম্পেট’ নামক সামুদ্রিক শামুকের অনুকরণে। কারণ এই সামুদ্রিক প্রাণীটিও পাথর বা অন্যান্য কঠিন বস্তুকে শক্ত ভাবে আঁকড়ে থাকে। এগুলি সাধারণত ডুবুরিরা জাহাজের নীচে বসিয়ে আসেন। পরবর্তী কালে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জাহাজের ক্ষতি করে এগুলি।

১৩ ১৮

ভারতীয় বাহিনীতে মাত্র কয়েক জন হাতেগোনা দক্ষ সাঁতারু ছিলেন, যাঁরা কয়েক কিলোমিটার সাঁতার কেটে সমুদ্রের নীচে যেতে পারতেন। তাই ভারতীয় নৌবাহিনী ভারতে পালিয়ে আসা বাংলাদেশি শরণার্থীদের মধ্যে থেকে বেছে বেছে কয়েক জনকে দীর্ঘ সময় ধরে সাঁতার কাটার প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে।

১৪ ১৮

পাক জাহাজগুলিকে বিস্ফোরণে ধ্বংস করার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার জন্য প্রতি ব্যাচে প্রায় ৩০০ জন শরণার্থীকে ৫-১০ কিলোমিটার সাঁতার কাটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই গোপন পরিকল্পনার বাস্তব রূপ দেওয়ার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ছিল।

১৫ ১৮

কারণ মাইনগুলি জলের সংস্পর্শে আসার ৩০ মিনিটের মধ্যে বিস্ফোরিত হত। এই জটিল সমস্যার জন্য ভারতীয় নৌবাহিনী সমাধান খুঁজতে শুরু করে। সাঁতারুরা যখন জলের নীচে থাকবেন তখন সময়ের হেরফের হলে এগুলি বিস্ফোরিত হতে পারত। ওই সময়টুকু জলের মধ্যে মাইনগুলিকে নিরাপদ রাখাটা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এই সমস্যার জন্য আধুনিক সমাধান প্রয়োজন। সেই সমাধান ছিল কন্ডোম!

১৬ ১৮

নৌবাহিনীর কর্তারা বুঝতে পারেন, যদি মাইন প্লাগগুলিকে কন্ডোম দিয়ে ঢেকে রাখা হয়, তা হলে এটি সহজে জলের সংস্পর্শে আসতে পারবে না। তাড়াতাড়ি বিস্ফোরণ ঘটবে না। নৌবাহিনী শীঘ্রই প্রচুর কন্ডোমের বরাত দেয়। ভারতীয় নৌসেনাদলের পরিকল্পনা নিয়ে সদর দফতরে প্রশ্ন ওঠে। বিশদে ব্যাখ্যা করার পর সদর দফতর থেকে কন্ডোম ব্যবহারের ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

১৭ ১৮

ডুবুরিরা তাঁদের শরীরে আটকানো বেশ কয়েকটি কন্ডোম পরানো মাইন জাহাজগুলির গায়ে আটকে আসতে পেরেছিলেন। মাইনগুলি স্থাপন করার সময় প্লাগগুলিকে ভিজে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছিল পাতলা রবারের আচ্ছাদনগুলি। সময়মতো মাইনগুলি বিস্ফোরিত হয়ে পাকিস্তানি জাহাজগুলিকে উড়িয়ে দেয়। বলা বাহুল্য, অভিযানটি সফল হয়েছিল।

১৮ ১৮

শুধু ’৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার জিআই সেনাবাহিনী তাদের অস্ত্রের সুরক্ষার জন্য কন্ডোম ব্যবহার করত। এ ছাড়াও ভিয়েতনামের যুদ্ধে কন্ডোমের ব্যবহার ছিল বহুল। নদী-নালা-জলাভূমির পরিবেশে সেনার রাইফেলগুলি জল-কাদায় মাখামাখি হয়ে মাঝেমাঝেই আটকে যেত। জলাভূমির মধ্য দিয়ে চলাফেরার সময় বন্দুক শুকনো রাখতে তাদের মাথায় এসেছিল কন্ডোমের কথা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement