Atacama Desert

ফিরল ‘ডেসিয়ের্তো ফ্লোরিডো’! বিশ্বের প্রাচীন ও শুষ্কতম ‘মৃত্যু উপত্যকা’য় হঠাৎ ফুলের মেলা, কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে প্রকৃতি?

প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে প্রায় এক লক্ষ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে আটাকামা মরুভূমি। মরু অঞ্চলটিতে বছরে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র ১৫ মিলিমিটার। প্রকৃতির আপন খেয়ালে শুষ্ক ঊষর ধু-ধু মরুপ্রান্তরে আবার দেখা দিতে চলেছে আশ্চর্য এক দৃশ্য।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৫ ১৬:০৭
Share:
০১ ১৬

ঊষর মরুর বাদামি শরীরে পড়তে চলেছে রঙের বাহার। প্রকৃতির আপন খেয়ালে শুষ্ক ঊষর ধু-ধু মরুপ্রান্তরে আবার দেখা দিতে চলেছে আশ্চর্য এক দৃশ্য। প্রায় তিন বছর পর বাহারি ফুলের সাজে সেজে উঠতে চলেছে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও শুষ্কতম মরুভূমিটি।

০২ ১৬

রহস্যে মোড়া চিলির আটাকামা মরুভূমি। মরুভূমির মাইলের পর মাইল এলাকা জুড়ে পুরু বালির স্তর। পাঁচ থেকে সাত বছর অন্তর বালির প্রান্তরে ঘটে এই আশ্চর্য ঘটনা। প্রকৃতির বিস্ময় এই ঘটনাকে বলা হয় ‘ডেসিয়ের্তো ফ্লোরিডো’। অর্থাৎ ফ্লাওয়ারিং ডেজ়ার্ট বা মরুভূমিতে ফুলের মেলা।

Advertisement
০৩ ১৬

শুষ্ক জনবিরল মরুভূমিতে ফুলের গালিচা বোনার প্রস্তুতি প্রকৃতি শুরু করে দিয়েছে এ বছরও। ২০২২ সালে শেষ বারের মতো আটাকামার শুষ্ক দেহ ঢেকে গিয়েছিল রঙিন ফুলের চাদরে। তার তিন বছর পর আবার ফুলের জলসা বসতে চলেছে। আটাকামা মরুভূমিতে সাধারণত প্রতি পাঁচ থেকে সাত বছর অন্তর, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে (তখন চিলিতে বসন্তকাল) বড় বড় ফুল ফোটে।

০৪ ১৬

চিলির জাতীয় অরণ্য সংস্থার সংরক্ষিত এলাকার প্রধান জর্জ কারাবানতেস জানিয়েছেন যে, সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ‘ডেসিয়ের্তো ফ্লোরিডো’ (মরুভূমিতে ফুল ফোটা) শুরু হবে। সেই ফুলের সমাহার অক্টোবরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছোবে এবং নভেম্বরের প্রথমার্ধেই তা মরুর বুক থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে।

০৫ ১৬

ফুল ফোটার সময় এলে অন্তত ২০০ রকম ফুলে ভরে যায় গোটা আটাকামা। যে বছর এখানে হঠাৎ করে বেশি বৃষ্টিপাত হয়, সেই বছরই রংবেরঙের ফুল ফোটে। বৃষ্টিপাতের ফলে মাটি চাপা বীজ অঙ্কুরিত হয় এবং ফুল ফোটে। এই ভাবে ফুলে ছেয়ে যায় আটাকামা মরুভূমি। শুষ্ক ভূমিতে নতুন প্রাণের জন্ম হয়।

০৬ ১৬

প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে প্রায় ১ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এই মরুভূমি। চিলিতে অবস্থিত আটাকামা মরুভূমি হল পৃথিবীর উপকূলবর্তী মরুভূমির মধ্যে একটি। এর এক পাশে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগর ও অন্য দিক ঘিরে রেখেছে পেরু, বলিভিয়া ও আর্জেন্টিনা।

০৭ ১৬

আটাকামা মরুভূমিকে বিশ্বের শুষ্কতম মরুভূমি বলে মনে করা হয়। কারণ এর পূর্ব দিকে বাতাস প্রবেশের পথে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আন্দিজ় পর্বতমালা। সুউচ্চ পর্বতমালা মরুভূমির দু’পাশ থেকে ভেসে আসা বায়ু এবং তার সঙ্গে ভেসে আসা মেঘ আটকে দেয়। ফলে এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ শূন্যের কোঠায় নেমে আসে মাঝেমধ্যেই। মরু অঞ্চলটিতে বছরে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র ১৫ মিলিমিটার।

০৮ ১৬

অত্যন্ত শুষ্কতার কারণে এই মরুভূমিতে প্রাণের অস্তিত্ব প্রায় নেই বললেই চলে। তাই আটাকামাকে স্থানীয় অধিবাসীরা ‘ভ্যালি অফ ডেথ’ বা মৃত্যু উপত্যকা বলে থাকেন।

০৯ ১৬

ফুলের চাদরটি উত্তরে ‘টোটোরাল’ এলাকা থেকে এই অঞ্চলের দক্ষিণ প্রান্তে ‘ক্যালেটা চানারাল দে এসেইতুনো’ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে গাছে হলুদ, সাদা, গোলাপি, লাল হরেক রঙের ফুল ফুটতে থাকে। ফুলগাছগুলি বড় হয়ে উঠলে একসময় ফুলে ঢাকা গালিচার মতো দেখতে লাগে গোটা মরুভূমিটিকে।

১০ ১৬

২০১৫ সালে এই মরুভূমিতে আশীর্বাদস্বরূপ বৃষ্টিপাতের ঢল নেমেছিল। প্রকৃতির দয়ায় সে বছর প্রচুর ফুল ফুটেছিল এখানে। মরুভূমির বালির নীচে চলে যাওয়া বৃষ্টির জল পেয়ে সুপ্ত বীজের অঙ্কুরোদ্গম ঘটে। ধীরে ধীরে শেকড় ও পাতা গজিয়ে বড় হতে থাকে এই গাছ। বালির নীচে পর্যাপ্ত জল জমে থাকে বলে এদের বেড়ে উঠতে বেগ পেতে হয় না।

১১ ১৬

২০১৫-এর পর ২০১৭ সালেও আটাকামার বুকে ঘটে এই আশ্চর্য ঘটনা। পাঁচ-সাত বছর অন্তর যে ফুলের জলসা বসে তা মাত্র দু’বছরের মধ্যেই ফিরে আসে এখানে। ২০১৭ সালে আবার নানা রঙের ফুলে ছেয়ে যায় আটাকামার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। কারণ সেই বছরও মে মাসে অপ্রত্যাশিত বৃষ্টি হয় এখানে।

১২ ১৬

২০১৫ সালে প্রশান্ত মহাসাগরে এসেছিল এল নিনো। সেই সময়ই মরুভূমি ভরে উঠেছিল ফুলে ফুলে। চিলির পন্টিফিকাল ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিদ্যার অধ্যাপক আনা মারিয়া মুজিকা তাঁর একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, ফুল ফোটার সঙ্গে এল নিনো সম্পর্কিত।

১৩ ১৬

সমুদ্রের জলের গতিবিধির দিকে যাঁরা নজর রাখেন, তাঁরা ছাড়া এল নিনোকে হয়তো অনেকেই চেনেন না। এটি একটি উষ্ণ সামুদ্রিক স্রোত, যার প্রভাব পড়ে বিভিন্ন দেশের আবহাওয়ায়। পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল ঘেঁষে পেরু, একুয়াদোর বরাবর কোনও কোনও বছর ডিসেম্বর মাস নাগাদ এক প্রকার দক্ষিণমুখী উষ্ণ স্রোতের সৃষ্টি হয়। এরই নাম এল নিনো।

১৪ ১৬

দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে এল নিনো নিম্নচাপের সৃষ্টি করে, যার ফলে ওই এলাকায় অসময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। শাপে বর হয় স্থানীয় অধিবাসীদের। এই বৃষ্টিপাতই প্রাণ সঞ্চার করে মাটির গভীর লুকিয়ে থাকা কয়েকশো প্রজাতির ফুলের বীজে।

১৫ ১৬

দক্ষিণ আমেরিকায় প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলবর্তী এলাকায় মোটামুটি ভাবে ৩ থেকে ৭ বছর অন্তর এল নিনোর প্রভাব দেখা যায়। ফুল ফোটার সময়ের মধ্যে ব্যবধানও মোটামুটি পাঁচ থেকে সাত বছর। এল নিনোর সঙ্গে ডেসিয়ের্তো ফ্লোরিডোর সম্পর্কের কথা বলা হলেও ২০২২ সালে এখানে অদ্ভুত বৈপরীত্য দেখা গিয়েছিল।

১৬ ১৬

সে বছর এল নিনোর বদলে লা নিনার প্রকোপ ছিল বেশি। প্রশান্ত মহাসাগরে জলতলের তাপমাত্রা কম হলে তাকে লা নিনা বলা হয়। এর ফলে বর্ষার প্রভাব প্রতিকূল থাকে। তবে ওই বছর আটাকামায় ফুল ফোটা বন্ধ হয়নি। এই অস্বাভাবিকতা ভাবিয়ে তুলেছিল পরিবেশবিদদেরও।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement