সংগ্রহশালা মানে মাথায় আসে প্রাচীনকালের সামগ্রী সযত্নে রাখার জায়গা। যেমন কলকাতার জাদুঘর। প্রাচীন ইতিহাসের নানা জিনিসের খোঁজ মেলে সেখানে। জানা যায় বহু পুরনো তথ্য।
এমন জাদুঘর তো আরও অনেক জায়গাতেই রয়েছে। কিন্তু যদি এমন সংগ্রহশালার খোঁজ পান, যেখানে শুধুই রয়েছে প্রস্রাবাগার! বিষয়টা অবাক করার মতো হলেও ভারতেই রয়েছে এমন সংগ্রহশালা।
দেশের রাজধানীতেই শৌচাগার নিয়ে একটি সংগ্রহশালা রয়েছে। নয়াদিল্লির পালাম-ডাবরি মার্গে অবস্থিত মহাবীর এনক্লেভের সুলভ ভবন হল এই সংগ্রহশালার ঠিকানা। ৩৩ বছরের পুরনো এই সংগ্রহশালার নাম ‘সুলভ ইন্টারন্যাশনাল মিউজ়িয়াম অফ টয়লেট’।
১৯৯২ সালে তৈরি হয় এই সংগ্রহশালা। বিন্দেশ্বর পাঠকের তত্ত্বাবধানে তৈরি হয় এটি। বিন্দেশ্বর একজন সমাজবিজ্ঞানী এবং সমাজসেবক ছিলেন। মূলত স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতেই এমন সংগ্রহশালা তৈরি করেছিলেন তিনি।
১৯৭৩ সালে ভারতের প্রথম সুলভ শৌচালয় তৈরি হয় এই বিন্দেশ্বরেরই উদ্যোগে। তবে দিল্লিতে নয়, বিহারের আরায়। বহু বছর ধরে স্বাস্থ্য সচেতনতার স্বার্থে কাজ করেছেন বিন্দেশ্বর। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে নানা পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।
দিল্লির এই শৌচাগার সংগ্রহশালায় ৫০টি দেশের শৌচাগার সংক্রান্ত বিভিন্ন সামগ্রী রাখা রয়েছে। সেগুলি সবই প্রাচীন কাল, মধ্যযুগ এবং আধুনিক সময়ের নিরিখে সাজানো রয়েছে।
প্রাচীন যুগের মানুষ কেমন শৌচাগার ব্যবহার করতেন, সেই সমস্ত কিছু জানা যায় এই সংগ্রহশালায় গেলে। এমনকি সেই প্রাচীন সময় থেকে কী ভাবে শৌচাগারের বিবর্তন হয়েছে তা-ও দেখতে পারবেন দর্শক।
পুরনো দিনের শৌচাগার, চেম্বার পট, ভিক্টোরিয়ান কায়দার টয়লেট সিট, বিডে রয়েছে। এখানে ১১৪৫ সালের জিনিসও রাখা রয়েছে। শুধু তাই নয়, আধুনিক যুগের উন্নত প্রযুক্তির শৌচাগারও দেখতে পাওয়া যাবে।
কী কী দেখতে পাবেন সংগ্রহশালায়? মধ্যযুগের ট্রেজ়ার চেস্টের আকারের কমোড, বইয়ের তাকের আকারে লুকোনো টয়লেট, ফ্লাশ পট, রোমান সম্রাটদের সোনার ও রূপার টয়লেট পট দেখতে পাওয়া যাবে সেখানে।
এখানেই শেষ নয়। এ ছাড়াও ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ কিং লুই কেমন শৌচাগার ব্যবহার করতেন তা-ও দেখতে পাওয়া যাবে। তাঁর রাজসভায় যেমন শৌচাগার ছিল, ঠিক তেমন শৌচাগারের নিদর্শন রাখা রয়েছে ভারতের এই সংগ্রহশালায়।
এ ছাড়া শৌচাগার বিষয়ক বিভিন্ন কমিক, কবিতা এবং কার্টুন আঁকা রয়েছে সেখানে। সবই বিন্দেশ্বর তৈরি করিয়েছিলেন স্বাস্থ্য সচেতনতার কথা ভেবে।
৩২০০–২৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মানুষ কেমন শৌচাগার ব্যবহার করতেন তা-ও চাক্ষুষ করা যাবে এই সংগ্রহশালায় গেলে। ১৮৫০ সালে বাথরুমে কী ধরনের আসবাবপত্র ব্যবহার হত তা-ও জানা যাবে সংগ্রহশালায় গেলে।
সম্পূর্ণ সংগ্রহশালা ঘুরে দেখতে সময় লাগবে দেড় থেকে দু’ঘণ্টা। আরও একটি চমকপ্রদ বিষয় রয়েছে। এখানে প্রবেশ অবাধ। এমন সংগ্রহশালা দেখতে চাইলে কোনও টাকাই লাগবে না।
তবে সংগ্রহশালায় রাখা বেশির ভাগ সামগ্রীই প্রাচীন কালের প্রস্রাবাগারের নকশার আদলে বানানো। সে সময়ের শৌচাগারে ব্যবহৃত জিনিসগুলি তো বর্তমানে নেই। তাই প্রত্নতাত্ত্বিক খনন থেকে প্রাপ্ত তথ্য, নকশা ও চিত্র দেখে হুবহু সামগ্রীগুলি বানানো হয়েছে।
শুধু ভারতেই নয় শৌচাগার নিয়ে এমন সংগ্রহশালা পৃথিবীর আরও নানা জায়গায় রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, জাপানে গেলেও দেখা যাবে এমন সংগ্রহশালা।