Two Missile Corvettes INS Khanjar and Kora

সাগরে তুফান তুলে রাত-দিন টহল, জিরিয়ে নিতে ক্ষেপণাস্ত্রের রণসাজে কলকাতার ঘাটে ভিড়েছে ‘খঞ্জর-কোরা’

ফ্রন্টলাইন গাইডেড মিসাইল করভেট বা ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী স্বল্পপাল্লার যুদ্ধজাহাজ দুটি বঙ্গোপসাগর ও গভীর সমুদ্রে টহল দিয়ে বে়ড়ায়। দুটি যুদ্ধজাহাজই বর্তমানে নির্দিষ্ট অভিযানের জন্য বঙ্গোপসাগরে মোতায়েন করা রয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:৫৩
Share:
০১ ১৮

খাস কলকাতার বুকে ঘাঁটি গাড়ল জোড়া যুদ্ধজাহাজ। শত্রুপক্ষকে নিমেষে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন দু’টি রণতরীর দর্শন মিলবে কলকাতার খিদিরপুর ডকে। নেভি ডে-এর আগে ভারতীয় নৌবাহিনীর দু’টি যুদ্ধজাহাজ আইএনএস কোরা ও আইএনএস খঞ্জর নোঙর করেছে কলকাতা বন্দরে।

০২ ১৮

বঙ্গোপসাগরের মোতায়েন থাকা দুই অতন্দ্র প্রহরীকে সাধারণ মানুষের দর্শনের সুযোগ করে দিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী। শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত কলকাতা বন্দরেই স্থির থাকবে জাহাজ দু’টি। বিভিন্ন নৌ মহড়া ও অভিযানে অংশ নেওয়া রণপোত দু’টিকে চাইলেই চাক্ষুষ করতে পারবেন আমজনতা।

Advertisement
০৩ ১৮

নৌসপ্তাহ উদ্‌যাপন উপলক্ষে কলকাতায় ফিরেছে ঘরের ছেলে। কারণ আইএনএস কোরা ও আইএনএস খঞ্জর, দু’টিরই আঁতুড়ঘর গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স। আপাতত দু’টি যুদ্ধজাহাজই নির্দিষ্ট অভিযানের জন্য বঙ্গোপসাগরে মোতায়েন করা রয়েছে।

০৪ ১৮

ফ্রন্টলাইন গাইডেড মিসাইল করভেট বা ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী স্বল্পপাল্লার যুদ্ধজাহাজ দু’টি বঙ্গোপসাগর ও গভীর সমুদ্রে টহল দিয়ে বে়ড়ায়। ৫ থেকে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা। ভূমি থেকে ভূমি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণে সক্ষম এই করভেট জাহাজগুলি।

০৫ ১৮

করভেট হল একটি ছোট যুদ্ধজাহাজ। এগুলির ওজন সাধারণত ৫০০ থেকে ২০০০ টনের মধ্যে হয়। উপকূলীয় নিরাপত্তায় টহল, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ, শত্রুপক্ষের প্রতি দ্রুত আক্রমণ শানাতে পারঙ্গম এই করভেটগুলি। চোখের নিমেষে সমুদ্রের বুক থেকে শত্রুশিবিরে বিধ্বংসী আঘাত হানতে তৈরি থাকে নৌবাহিনীর এই বিশেষ জাহাজ।

০৬ ১৮

পূর্বাঞ্চলীয় নৌবহরের অন্যতম সম্পদ এই জোড়া করভেট। সারা বছর ধরে বঙ্গোপসাগর ও গভীর সমুদ্রে টহল দেয় এরা। ভারতের সামুদ্রিক সীমান্ত সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছে এই দুই জাহাজকে। ১৯৮৮ সালে তৈরি হয় আইএনএস খঞ্জর। ১৯৯১ সালে নৌবাহিনী এটিকে অধিগ্রহণ করে।

০৭ ১৮

পি-২৫ শ্রেণির গাইডেড মিসাইল করভেট বা খুকরি শ্রেণির নকশা দিয়ে তৈরি জাহাজগুলির মধ্যে অন্যতম আইএনএস খঞ্জর। এই যুদ্ধযানটি থেকে তিন রকম বন্দুক ব্যবহার করা সম্ভব। মূলত তিন ধরনের বন্দুক রয়েছে এই জাহাজে— দূরপাল্লার, মাঝারিপাল্লার এবং স্বল্পপাল্লার। বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান সাগরে এর অবিচ্ছিন্ন টহলদারি ভারতের সামুদ্রিক অঞ্চলের সুরক্ষাকে আরও আঁটসাঁট করে তুলেছে।

০৮ ১৮

আইএনএস খঞ্জর মূলত একটি ৭৬ মিমি ওটিও মেলারা প্রধান বন্দুক এবং জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত একটি রণতরী। ভূপৃষ্ঠের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। খুকরি শ্রেণির জাহাজের দক্ষতা এটির নকশার মধ্যেই নিহিত রয়েছে। জাহাজটির বৈশিষ্ট্যই হল এর আকার, ক্ষিপ্র গতি এবং আঘাতের শক্তি।

০৯ ১৮

অনুসন্ধান ও উদ্ধার (এসএআর) অভিযান এবং উপকূলীয় নজরদারিতেও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছে করভেট জাহাজটি। অত্যাধুনিক সেন্সর এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার সাহায্যে অন্যান্য জাহাজের সঙ্গে সমন্বয় তৈরি করতে সক্ষম খঞ্জর। ফলে যৌথ মহড়া এবং সামুদ্রিক অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এই রণপোতটি।

১০ ১৮

বর্তমানে জাহাজটির নেতৃত্বে আছেন কমোডর রনি চৌপো। আনন্দবাজার ডট কমকে তিনি জানান, ৩৪ বছরের তরুণ জাহাজটি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চালিয়েছে। এই রণতরীর গতি, ক্ষিপ্রতা ও ক্ষমতার জন্য এটিকে ‘গ্রে ফেরারি’ নামেও ডাকা হয়ে থাকে।

১১ ১৮

জাহাজটির ভারবহন ক্ষমতা ১৩৫০ টন। এই যুদ্ধজাহাজের দৈর্ঘ্য ৯১.১ মিটার। অস্ত্রসজ্জিত ‘আইএনএস খঞ্জর’ চেতক বা ধ্রুবের মতো একটি হেলিকপ্টার বহনে সক্ষম।

১২ ১৮

১৯৯৮ সালে নৌবাহিনীতে জায়গা করে নেওয়া আইএনএস কোরা হল প্রথম পি-২৫এ ক্লাস করভেট যুদ্ধজাহাজ। এটিকে নেপালের কিংবদন্তি জাতীয় তরবারির নামে নামকরণ করা হয়েছে।

১৩ ১৮

আইএনএস কোরার প্রাণশক্তি এর ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতার মধ্যেই নিহিত। এটি চারটি কোয়াড লঞ্চার দিয়ে সজ্জিত। প্রাণঘাতী জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে সক্ষম এই করভেটটি। ফলে এটি নৌবাহিনীতে ‘কিলার করভেট’ নামেও পরিচিত।

১৪ ১৮

একটি ৭৬ মিমির একে-১৭৬ বন্দুক এবং দু’টি ৩০ মিমি একে-৬৩০ বন্দুক ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ এবং আকাশ হুমকির বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে জাহাজটিকে। অত্যাধুনিক রাডার, ইলেকট্রনিক ওয়ারস্যুট এবং সেন্সর যে কোনও সামুদ্রিক সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত করে তুলেছে রণতরীটিকে। সে কারণে জাহাজটিকে করভেট শ্রেণির মধ্যে সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ এবং শক্তিশালী বলে মনে করা হয়।

১৫ ১৮

নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তির পর আইএনএস কোরা বেশ কয়েকটি বড় অভিযানে দক্ষতা প্রমাণ করেছে। এটি প্রায়শই পূর্ব নৌ কমান্ডের বিভিন্ন অভিযানে মোতায়েন করা হয়। সিমবেক্সের মতো আন্তর্জাতিক মহড়া এবং ট্রোপেক্সের মতো মেগা-থিয়েটার মহড়ায় জাহাজটি অংশগ্রহণ করে তার দক্ষতা প্রমাণ করেছে।

১৬ ১৮

জাহাজটির দক্ষতা কেবল যুদ্ধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। উপকূলীয় নজরদারি অভিযানেও সমান ভাবে কার্যকরী এটি। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সমুদ্রপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে করভেট জাহাজগুলির মধ্যে অন্যতম আইএনএস কোরা।

১৭ ১৮

এই রণতরীর ভারবহন ক্ষমতা ১৪০০ টন। ক্ষেপণাস্ত্র, কামান ছাড়াও এতে রয়েছে একে-১৭৬ ও একে-৬৩০ অস্ত্র ব্যবস্থা। হেলিকপ্টার পরিচালনার সুবিধাও রয়েছে আইএনএস কোরায়। শত্রুপক্ষের যে কোনও জলপথ ও আকাশপথে হুমকি মোকাবিলায় সদাসর্বদা সজাগ দৃষ্টি থাকে এটির।

১৮ ১৮

আইএনএস কোরাকে ভারতীয় নৌবাহিনীর স্বনির্ভরতার প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। রাডার ক্রস-সেকশন নকশা আধুনিক সামুদ্রিক সমরকৌশলের জন্য একে উপযুক্ত করে তুলেছে। এই শ্রেণির জাহাজটি ভারতের নতুন প্রজন্মের করভেটের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। আজও তা ভারতীয় জলসীমা রক্ষার জন্য বিভিন্ন ভূমিকায় ব্যবহৃত হচ্ছে। গত ২৫ বছর ধরে ক্রমাগত সংস্কারের মাধ্যমে, জাহাজটি কর্মক্ষমতা বজায় রেখেছে। বঙ্গোপসাগর জুড়ে টহল দেওয়া ছাড়াও বিদেশি জাহাজের গতিবিধির উপর নজরদারি করে থাকে জাহাজটি।

ছবি: ঋত্বিক দাস ও সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement