US on Taliban

গায়ে জঙ্গি জামা, বৈধ নয় সরকার, তালিবানের ৪০০ কোটি ডলার বেমালুম ‘হজম’ করল আমেরিকা!

আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ৪০০ কোটি ডলার হিমায়িত অবস্থায় রয়েছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। ওই টাকা তালিবানের হাতে তুলে দিতে নারাজ ওয়াশিংটন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:০৫
Share:
০১ ২২

দিনেদুপুরে আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের কোটি কোটি ডলার ‘চুরি’! সমস্ত টাকা পকেটে পুরল আমেরিকা! এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কাবুল ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি হওয়ার আশঙ্কা। যদিও তা আমল দিতে নারাজ আটলান্টিকের পারের ‘সুপার পাওয়ার’।

০২ ২২

দীর্ঘ দিন ধরেই আমেরিকার কাছে গচ্ছিত রয়েছে আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের বিপুল অর্থ। সেই টাকা ফেরত চেয়ে ইতিমধ্যেই সুর চড়িয়েছে তারা। কিন্তু এই অর্থ পাওয়ার কোনও বৈধ অধিকারই তালিবানের নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার।

Advertisement
০৩ ২২

বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছে আফগানিস্তানে আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী আমেরিকান নজরদারি সংস্থা। তাদের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, তালিবানকে এখনও স্বীকৃতি দেয়নি ওয়াশিংটন। শুধু তা-ই নয়, কাবুলের শাসকদের উপর পুরনো নিষেধাজ্ঞাগুলিও জারি রয়েছে। ফলে টাকা ফেরতের প্রশ্নই ওঠে না।

০৪ ২২

চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি এই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে আফগানিস্তান পুনর্গঠন দফতরের সিনিয়র ইনস্পেক্টর জেনারেল (স্পেশ্যাল ইনস্পেক্টর জেনারেল ফর আফগানিস্তান রিকনস্ট্রাকশান বা সিগার)। সেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের হাতে রয়েছে তালিবানের ৪০০ কোটি ডলার। সেই টাকা আদৌ ফেরত দেওয়া হবে কি না, নতুন করে খতিয়ে দেখবেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

০৫ ২২

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ছাড়াও এ ব্যাপারে আমেরিকার পার্লামেন্ট ‘কংগ্রেস’-এর ঘোরতর আপত্তি রয়েছে। আর তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সেখানকার সদস্যেরাও বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানা গিয়েছে। ২০২২ সালে একটি সুইস তহবিলে আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের হিমায়িত ৩৫০ কোটি ডলার স্থানান্তরিত করে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার।

০৬ ২২

আফগানিস্তান পুনর্গঠন দফতরের সিনিয়র ইনস্পেক্টর জেনারেল জানিয়েছেন, ওই টাকাই বর্তমানে বেড়ে ৪০০ কোটি ডলারে পৌঁছে গিয়েছে। প্রসঙ্গত, সুইস তহবিলটি থেকে একটি টাকাও তালিবানের হাতে তুলে দেয়নি ওয়াশিংটন। যদিও আফগানিস্তানের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে ওই তহবিল তৈরি করা হয়েছিল।

০৭ ২২

ট্রাম্প প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তালিবান একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ছাড়া আর কিছু নয়। আর তাই তাদের হাতে কোটি কোটি ডলার তুলে দেওয়ার অর্থ ‘খাল কেটে কুমির আনা’। ওই টাকা কাবুলের শাসকেরা হাতে পেলে তা জঙ্গি কার্যকলাপে ব্যবহৃত হবে না, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই।

০৮ ২২

দ্বিতীয়ত, আমেরিকা ছাড়াও রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তালিবানের উপর। টাকা ফেরত না নেওয়ার নেপথ্যে এই বিষয়টিকেও ঢাল হিসাবে খাড়া করেছে ওয়াশিংটন। অন্য দিকে, এই ইস্যুতে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে আফগানিস্তান।

০৯ ২২

তালিবানের অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, আফগানিস্তানের বিদেশি মুদ্রাভান্ডারের ৯০০ কোটি ডলার হিমায়িত করে রেখেছে আমেরিকা। ওই টাকা স্থানান্তরের ব্যাপারে ওয়াশিংটন সদর্থক ভূমিকা নিচ্ছে না। একে ভাল চোখে দেখতে নারাজ তালিবানের শীর্ষনেতারা।

১০ ২২

আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে গত কয়েক দশক ধরে বিপুল খরচ করছে আমেরিকা। যদিও তালিবানের দাবি, ওয়াশিংটনের এই সিদ্ধান্ত হিন্দুকুশের কোলের দেশটির অর্থনীতিতে তেমন প্রভাব ফেলেনি। যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকা টাকা ফেরতের জন্য আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে কাবুলের শাসক।

১১ ২২

সিগারের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর এখনও পর্যন্ত দেশটির পুনর্গঠনে ৩৭১ কোটি ডলার খরচ করেছে ওয়াশিংটন। এই অর্থের সিংহভাগই গিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের বিভিন্ন সংস্থার তহবিলে।

১২ ২২

চলতি বছরে আমু দরিয়ার তীরের দেশটিকে অনুদান হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের আরও ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য ইজ়রায়েল এবং মিশর বাদে সমস্ত দেশের অনুদান বন্ধ রেখেছেন। ফলে ওই টাকা আদৌ কাবুল পাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

১৩ ২২

সিগার জানিয়েছে, আমেরিকার আর্থিক অনুদান আফগানিস্তানকে দুর্ভিক্ষের মুখে পড়া থেকে রক্ষা করতে পারে। পাশাপাশি, এটা তালিবানকে আর্থিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে কিছুটা সাহায্য করবে।

১৪ ২২

তবে যুক্তরাষ্ট্র টাকা দিলেও অপহরণ, নারী অধিকার খর্ব এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসেনি তালিবান। হিন্দুকুশের কোলের দেশটিকে এখনও সন্ত্রাসবাদীদের ‘নিরাপদ স্বর্গ’ বলেই রিপোর্টে উল্লেখ করেছে সিগার।

১৫ ২২

সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে এ ব্যাপারে একটি সাক্ষাৎকার দেন আমেরিকান সংস্থাটির অডিট ও পরিদর্শনের ডেপুটি ইনস্পেক্টর জেনারেল ক্রিস বোর্জেসন। তাঁর কথায়, ‘‘উৎস থেকে নগদ যত দূরে যাবে, ততই কমবে স্বচ্ছতার পরিমাণ। এটা ঠিক যে আফগানিস্তান পুনর্গঠনে সর্বাধিক টাকা দিয়েছে ওয়াশিংটন। কিন্তু তালিবানকে পুরোপুরি বিশ্বাস করা হয়তো সম্ভব নয়।’’

১৬ ২২

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের দাবি, আমেরিকার থেকে টাকা ফেরত না পেলে চিন এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার রাস্তায় হাঁটতে পারে তালিবান। হিন্দুকুশের কোলের দেশটির খনি শিল্পে ইতিমধ্যেই বড় বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে বেজিং।

১৭ ২২

পাশাপাশি, আফগানিস্তানের রাস্তায় মধ্য এশিয়ায় যোগাযোগ বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে চিনা প্রেসিডেন্ট তথা চেয়ারম্যান শি জিনপিঙের। আর তাই খুব দ্রুত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের আওতায় কাবুলকে নিয়ে আসার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে তাঁর সরকার।

১৮ ২২

অন্য দিকে, গত বছরের ডিসেম্বরে তালিবানের উপর থেকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমা সরিয়ে নিয়েছে রাশিয়া। ধীরে ধীরে সেখানে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে মস্কো। এর জন্য ক্রেমলিন যে হাতিয়ার এবং টাকা দিয়ে আফগানিস্তানের শাসকদের মন জয় করার চেষ্টা করবে, তা বলাই বাহুল্য।

১৯ ২২

চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সংসদে বাজেট পেশ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সেখানে ২০২৫-’২৬ আর্থিক বছরে বিদেশ মন্ত্রকের জন্য ৬,৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন তিনি। এই অর্থের একটি অংশ তালিবানকে আর্থিক অনুদান হিসাবে ধার্য করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

২০ ২২

বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, আসন্ন অর্থবর্ষে (পড়ুন ২০২৫-’২৬) আফগানিস্তানকে অনুদান হিসাবে দেওয়া হবে ১০০ কোটি টাকা। গত আর্থিক বছরে এই অঙ্ক ছিল প্রায় দ্বিগুণ, অর্থাৎ ২০০ কোটি। অনুদান হ্রাসের কারণ ব্যাখ্যা করেনি নয়াদিল্লি।

২১ ২২

গত কয়েক বছর ধরেই হিন্দুকুশের কোলের দেশটিকে ‘মানবিক সাহায্য’ দিয়ে চলেছে ভারত। এর মধ্যে রয়েছে ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং দানাশস্য বিলি। আগামী দিনেও তা চলবে বলে জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।

২২ ২২

২০২১ সালে দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতের ব্যাপারে নরম মনোভাব নিয়ে চলছে আফগান তালিবান। নয়াদিল্লির তরফে বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রীও কাবুলের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আমু দরিয়ার তীরে ভারত দ্রুত পরিকাঠামোগত প্রকল্পের কাজ শুরু করুক, চাইছে তালিবান।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement