Trump on Pakistan F-16 Fleet

এফ-১৬ রক্ষণাবেক্ষণের নামে ইসলামাবাদকে সাড়ে তিন হাজার কোটি! ট্রাম্পের ‘পাক প্রেমে’ দুশ্চিন্তায় দিল্লি

এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পাক সরকারকে প্রায় ৪০ কোটি ডলার অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা। একে কূটনৈতিক দিক থেকে নয়াদিল্লির হার বলে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে বিরোধী দল কংগ্রেস।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৪৩
Share:
০১ ২০

ফের ১৮০ ডিগ্রির পাল্টি! এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পাকিস্তানকে প্রায় ৪০ কোটি ডলার অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। আর সেই খবর প্রকাশ্যে আসতেই বিষয়টিতে প্রমাদ গুনেছে নয়াদিল্লি। অন্য দিকে একে নরেন্দ্র মোদী সরকারের কূটনৈতিক পরাজয় বলে উল্লেখ করে সুর চড়িয়েছে অন্যতম বিরোধী দল কংগ্রেস।

০২ ২০

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এ বার ওয়াশিংটনের থেকে ৩৯.৭ কোটি ডলার পাচ্ছে ইসলামাবাদ। তবে টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ শর্ত চাপিয়েছে আমেরিকা। সেখানে বলা হয়েছে, এই লড়াকু জেট কেবলমাত্র সন্ত্রাসবাদ দমনে ব্যবহার করতে পারবেন রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা।

Advertisement
০৩ ২০

ওয়াশিংটনের শর্তে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে। কোনও অবস্থাতেই এফ-১৬ ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার বা মোতায়েন করা যাবে না বলে পাক সেনাকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। মার্কিন তদারকি কর্মসূচির অধীনে ইসলামাবাদকে এফ-১৬ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টাকা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। আমেরিকার এই কঠোর বিধিনিষেধ রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা কতটা মেনে চলবেন, তা নিয়ে অবশ্য যথেষ্ট সন্দিহান প্রতিরক্ষা মহল।

০৪ ২০

গত শতাব্দীর ৬০-এর দশক থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উন্নয়নমূলক কর্মসূচির জন্য আর্থিক সাহায্য দিয়ে আসছে আমেরিকা। এর জন্য ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা’র (ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট বা ইউএসএইড) মাধ্যমে ফি বছর কোটি কোটি ডলার বিলি করত ওয়াশিংটন। গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের শপথ নিয়েই সাময়িক ভাবে তা স্থগিত করার নির্দেশ দেন ট্রাম্প।

০৫ ২০

ইউএসএইড অবশ্য দু’টি দেশের ক্ষেত্রে বন্ধ করেননি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট। তারা হল, ইজ়রায়েল এবং মিশর। এ ছা়ড়া বিদেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কিছু ক্ষেত্রে ৫৩০ কোটি ডলার অনুদান বিলির অনুমতি দিয়েছেন ট্রাম্প। পাকিস্তান নিয়ে তিনি বা তাঁর কিচেন ক্যাবিনেটের সদস্যদের ইতিবাচক কোনও কথা বলতে শোনা যায়নি। এই অবস্থায় হঠাৎ করে এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ইসলামাবাদের হাতে ওয়াশিংটনের বিপুল ডলার গুঁজে দেওয়াকে সন্দেহের চোখে দেখছেন অনেকেই।

০৬ ২০

২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্পের প্রথম শাসনকালে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি ঘটেছিল। ওই সময়ে সন্ত্রাসবাদ দমনে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ না করায় পাক সরকারের উপর বেজায় চটেছিলেন এই বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা। ২০১৮ সালে কলমের এক খোঁচায় রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তাদের নিরাপত্তা সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দেন তিনি।

০৭ ২০

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বাতিল করেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট তথা ডেমোক্রেটিক নেতা জো বাইডেন। ২০২২ সালে সেপ্টেম্বরে এফ-১৬ লড়াকু জেটের বহর বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের থেকে ৪৫ কোটি ডলার পায় ইসলামাবাদ। এর জন্য নয়াদিল্লির কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছিল বাইডেন প্রশাসন।

০৮ ২০

অবস্থা বেগতিক দেখে এ ব্যাপারে বিবৃতি দেয় ওয়াশিংটন। সেখানে বলা হয়েছিল, ইসলামাবাদের এফ-১৬ বহরকে অত্যাধুনিক করা হচ্ছে না। তবে চুক্তি অনুযায়ী এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থ দিতে বাধ্য যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানায়, লড়াকু জেটটির জন্য নতুন ধরনের একটি ক্ষেপণাস্ত্র পাক বায়ুসেনাকে সরবরাহ করবে আমেরিকার প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগন।

০৯ ২০

এক ইঞ্জিন বিশিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের সুপারসনিক যুদ্ধবিমান এফ-১৬-এর দু’টি কোড নাম রয়েছে। একটি হল, ‘ফাইটিং ফ্যালকন’ এবং অপরটি ‘ভাইপার’। ১৯৭৪ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু করে জেনারেল ডায়নামিক্স। পরবর্তী কালে লড়াকু জেটটির উৎপাদনের দায়িত্ব পায় লকহিড মার্টিন নামের মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থা। এখনও পর্যন্ত সাড়ে চার হাজারের বেশি এই যুদ্ধবিমান তৈরি করেছে আমেরিকা।

১০ ২০

বর্তমানে পাক বায়ুসেনার কাছে রয়েছে ৮৫টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। এর মধ্যে ৭৫টি ব্যবহার করছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের লড়াকু জেটকে ইসলামাবাদের বিমানবাহিনীর শিরদাঁড়া বলা যেতে পারে। কিন্তু, বার বার এর সাহায্যে ভারত বা আফগানিস্তানের নিরীহ নাগরিকদের নিশানা করা হয়েছে বলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

১১ ২০

২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফের কনভয়ে আত্মঘাতী হামলা চালায় পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ। এর ১২ দিনের মাথায় (পড়ুন ২৬ ফেব্রুয়ারি) নিয়ন্ত্রণরেখা এব‌ং পাক অধিকৃত কাশ্মীর পেরিয়ে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বালাকোটে বিমানহানা চালায় ভারতীয় বায়ুসেনা। জইশের জঙ্গি ঘাঁটিগুলিকেই নিশানা করেন তাঁরা।

১২ ২০

ওই ঘটনার পরের দিনই এফ-১৬ বিমান নিয়ে ভারতের আকাশসীমায় ঢোকে পাক বায়ুসেনা। বিষয়টি নজর আসতেই রুশ লড়াকু জেট মিগ-২১ বাইসন নিয়ে তাঁদের তাড়া করেন ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। শুধু তা-ই নয়, একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানকে ধ্বংস করতেও সক্ষম হন তিনি। আকাশের ওই লড়াইয়ে নিজের বিমানটিও হারান অভিনন্দন। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে তাঁকে বন্দি করে ইসলামাবাদের ফৌজ।

১৩ ২০

ভারতের উইং কম্যান্ডারকে অবশ্য বেশি দিন আটকে রাখতে পারেনি পাক সরকার। নয়াদিল্লির চাপে দ্রুত তাঁকে ছাড়তে হয়েছিল। বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে এফ-১৬ ধ্বংসের বিষয়টি অস্বীকার করে ইসলামাবাদ। অন্য দিকে এর একাধিক প্রমাণ সারা দুনিয়ার সামনে এনে রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি অফিসারদের মুখোশ খুলে দেন এ দেশের বায়ু সেনাকর্তারা।

১৪ ২০

অন্য দিকে ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা সেনা প্রত্যাহার করলে সেখানে দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় ফেরে তালিবান। এর পরই হিন্দুকুশের কোলের দেশটির সঙ্গে পাকিস্তানের সীমান্ত-সংঘাত তীব্র হয়েছে। কারণ দুই দেশের মধ্যে থাকা ডুরান্ড লাইনকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বলে মানতে নারাজ তালিবান নেতৃত্ব।

১৫ ২০

এই পরিস্থিতিতে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো পাক ফৌজকে নিশানা করছে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপি। মূলত খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশটিকে নিয়ে স্বাধীন ‘পাশতুনিস্তান’ তৈরির স্বপ্ন দেখছে এই সশস্ত্র গোষ্ঠী। ইসলামাবাদ অবশ্য টিটিপিকে জঙ্গি সংগঠনের তকমা দিয়েছে। আফগানিস্তানের তালিবান সরকার তাঁদের পূর্ণ মদত দিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে শাহবাজ় শরিফ সরকারের।

১৬ ২০

গত বছরের ডিসেম্বরে টিটিপির কোমর ভাঙতে সীমান্ত লাগোয়া আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে বিমানহামলা চালায় পাকিস্তান। এই অপারেশনেও এফ-১৬ লড়াকু জেট ব্যবহার করে ইসলামাবাদের বায়ুসেনা। এতে শিশু, মহিলা-সহ বেশ কিছু নিরীহ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে শেহবাজ় সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি দেয় আমু দরিয়ার তীরের তালিবান সরকার।

১৭ ২০

গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বর থেকে আফগানিস্তান সীমান্তে পাক ফৌজের উপর আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়িয়েছে টিটিপি। ঠিক সেই সময়ে এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের থেকে ইসলামাবাদের অর্থ প্রাপ্তিকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, এর ফলে আফগানিস্তানের ভিতরে আরও বেশি করে বিমানহানা চালাবে পাক বায়ুসেনা।

১৮ ২০

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সময়ে ইসলামাবাদকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক নিরাপত্তার অংশীদার বলে উল্লেখ করে আমেরিকা। ২০২২ সালের মার্চে মার্কিন বিদেশ দফতরের থেকে প্রকাশিত একটি নথিতে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। আর সেই কারণেই নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে বলা জানিয়েছিল আমেরিকা।

১৯ ২০

বাইডেন প্রশাসনের যুক্তি ছিল, পাক বাহিনীকে আর্থিক সাহায্য করলে দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক ভারসাম্য নষ্ট হবে না। ট্রাম্পের আমলে সেটা কতটা বজায় থাকবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেওয়া অনুদান বন্ধ করার ব্যাপারে যখন-তখন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বর্ষীয়ান রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট।

২০ ২০

চলতি বছরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভারত সফরে আসার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল। আর সেটাকে কাজে লাগিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের উপর নয়াদিল্লি যে কূটনৈতিক চাপ তৈরি করবে তা বলাই বাহুল্য। অন্য দিকে, এ ব্যাপারে আফগানিস্তান কী ভাবে প্রতিক্রিয়া দেয়, সে দিকেও তাকিয়ে রয়েছে কূটনৈতিক মহল।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement